গ্রামীণ ব্যাংক কমিশনের প্রতিবেদন
শেয়ারধারী নারীরা গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক নন
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১৮-০২-২০১৩« আগের সংবাদ
ঋণগ্রহীতা নারী শেয়ারধারীরা গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক নন। শেয়ার কেনার মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানার অধিকার সমর্থনযোগ্য নয়। আর সরকারই গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ।
সরকার গঠিত গ্রামীণ ব্যাংক কমিশনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর কাছে ১৩৭ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। তবে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে শুধু গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে কমিশন মতামত প্রকাশ করেছে। অন্য সহযোগী ৫৪টি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পর্যায়ক্রমে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ার সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণগ্রহীতাদের 'শেয়ার' মালিকানার কোনো প্রমাণ নয়। এটা হলো একধরনের 'আমানতের সনদ' অথবা 'স্থায়ী আমানত'। এই ধরনের শেয়ার হলো মালিকানার প্রমাণ ছাড়া ব্যাংক মূলধনের অংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৬৫ শতাংশ শেয়ারধারী তাঁদের মালিকানা সম্পর্কে সচেতন নন।
আর উচ্চ আদালতের রুলের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংক নয়, এটি একটি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। গ্রামীণ ব্যাংকের আইনগত অবস্থান নিয়ে আর কোনো বিতর্ক নেই। উচ্চ আদালতই তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ঋণগ্রহীতা সদস্য তাহসিনা খাতুন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, 'ঋণগ্রহীতা শেয়ারধারীদের মালিকানা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হলে এর প্রতিবাদ করা হবে। নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের ধ্বংস দেখতে চাই না।' এত দিন ধরে যে নিয়মে গ্রামীণ ব্যাংক এত দূর এসেছে, সেই নিয়মই থাকা উচিত বলে তিনি মত দেন।
গত বছরের ১২ মে সাবেক সচিব মামুন উর রশীদকে প্রধান করে গ্রামীণ ব্যাংক কমিশন গঠন করা হয়। এর অন্য সদস্যরা হলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন, হিসাববিদ মোসলেউদ্দীন আহমেদ। পরিকল্পনা কমিশনের মহাপরিচালক এম এ কামালকে সদস্যসচিব করা হলেও পরে সেই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে গ্রামীণ ব্যাংকের আইনগত অবস্থান, মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কিছু বক্তব্যের জবাবও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক হতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ জন্য কমপক্ষে স্কুল ও মাদ্রাসার কোনো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত বলে মনে করে কমিশন। এ ছাড়া ঋণখেলাপি কেউ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হতে পারবেন না—এমন সুপারিশও করেছে কমিশন।
আবার কোনো স্বাধীন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ঋণগ্রহীতা শেয়ারধারী রয়েছেন কি না, তা নিরীক্ষা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে ঋণগ্রহীতা শেয়ারধারীরা কীভাবে নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেবেন, তার একটি নীতিমালা তৈরির সুপারিশও করা হয়েছে।
পরিচালক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন আনার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রতি তিন বছর অন্তর একযোগে নয়জন পরিচালক নির্বাচন করা হয়। নতুন সুপারিশ অনুযায়ী, প্রতিবছর তিনজন করে পরিচালক নির্বাচিত হবেন। আর নির্বাচন পরিচালিত হবে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এমন কারও নেতৃত্বে।
এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা দিতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি ঘোষণা দেওয়া জরুরি বলে মনে করছে কমিশন।
গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮৯ সাল থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা (নির্বাচিত ও মনোনীত) মূলত অকার্যকর। সরকার মনোনীত চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা, নীতিনির্ধারণী জ্ঞান ও করপোরেট ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতা বিবেচনা করা দরকার। এ ছাড়া তাঁদের চিন্তাভাবনাকে কর্মক্ষেত্রে রূপদানে সক্ষমতা থাকতে হবে।
প্রতিবেদনে মুহাম্মদ ইউনূসের কিছু বক্তব্যে জবাব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেবে। এই প্রসঙ্গে কমিশন বলেছে, যখন গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুটি আলোচনায় আসে, তখন সব বিষয়ে তদন্তে সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ড. ইউনূস।
http://prothom-alo.com/detail/date/2013-02-18/news/330101
__._,_.___