Banner Advertise

Sunday, March 29, 2015

[chottala.com] এ নির্বাচন যেন না হয় আরেক প্রহসন



এ নির্বাচন যেন না হয় আরেক প্রহসন

জি. মুনীর

২৯ মার্চ ২০১৫,রবিবার, ১৬:৫৯



আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারির নানা বিতর্কে বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এক মহানির্বাচনী প্রহসনের জন্ম দিয়ে আজ ক্ষমতায়। সারা দুনিয়া বলেছে এবং এখনো বলছে, এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়নি। অতএব, সবার অংশগ্রহণে দ্রুত আরেকটি সংসদ নির্বাচন আয়োজনই এর একমাত্র সমাধান। নইলে এর মাধ্যমে দেশে জন্ম নেবে নানা রাজনৈতিক উপসর্গ। মন্তব্য যথার্থ। কারণ, ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচন ইতোমধ্যেই গোটা দেশকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। গণতন্ত্রকে খাদের কিনারে এনে দাঁড় করিয়েছে। দেশে বিরাজ করছে চরম এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা। এর মাশুল গুনছে দেশের মানুষ। চার দিকে শুধু দুর্ভোগ আর দুর্ভোগ। এ দুর্ভোগ মেটানোর ব্যাপারে সরকারের নেই কোনো ইতিবাচক সাড়া। এর বদলে সরকার ব্যস্ত বিরোধী পক্ষকে গালমন্দ আর দমনপীড়ন করে নির্মূল করে পার পেয়ে যাওয়ার প্রয়াসে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে গণতন্ত্রের যে ব্যত্যয় ঘটেছে, এর শুদ্ধায়ন তো দূরের কথা, এ রাজনৈতিক সঙ্কটের অস্তিত্ব স্বীকার করার সৎ সাহসটুকু পর্যন্ত এ সরকার হারিয়ে বসে আছে। আছে শুধু জনমতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সরকারি নেতাদের প্রতিদিন জামার আস্তিন গুটিয়ে হাত-পা নেড়ে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার বিপ্রতীপ ঘোষণা, আর সরকারবিরোধীদের নির্মূল করার উদ্বাহু আস্ফালন। চার দিকের মানুষ যে ভিন্ন কিছু ভাবছে, দাবি করছে, মনে করছে- সে দিকে সরকারের কোনো নজর নেই।

সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকে বলা হয়েছে- 'অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরকারকে সংলাপে বসতে হবে।' এ ছাড়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে, ইইউ ছয়টি বিষয়ে সরকারের মন্তব্য জানতে চাইবে : প্রথমত, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে বিরোধী দলের সাথে রাজনৈতিক সংলাপের আয়োজন করতে সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে তদন্ত বা কোন ধরনের উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। তৃতীয়ত, বিরোধী নেতাকর্মীদের জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়া ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এখনো কেন বন্ধ হয়নি, তা বন্ধ করতে সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে। চতুর্থত, বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে- এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী। পঞ্চমত, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরকার কেন বাধা সৃষ্টি করছে। সবশেষে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক হত্যায় উৎসাহ জোগাচ্ছে- এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী?

এখানে বর্ণিত যেসব বিষয় ইইউ বাংলাদেশ সরকারের কাছে জানতে চাইবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তা দৃষ্টে এটি স্পষ্ট, ইইউ সদস্য দেশগুলো মনে করে- ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ছিল না; দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হচ্ছে; সরকার দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত; বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি অবাধে পালন করা যাচ্ছে না; বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনপীড়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার হচ্ছে। সরকার যে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর ব্যাপক নিপীড়ন চালাচ্ছে, তারই প্রতিফলন রয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে। গত ২৩ মার্চ এ পত্রিকায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে 'অ্যামিড পলিটিক্যাল কেওস, বাংলাদেশ ফিয়ার্স অ্যা রাইজ ইন মিলিট্যান্সি' শীর্ষক এক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়- 'বিরোধী দলগুলোর ওপর চলমান নিপীড়ন অব্যাহত থাকলে এখানে জঙ্গিবাদের উত্থান হতে পারে। বাংলাদেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের ভয়াবহ দমনপীড়ন দেশটিতে ক্ষোভ ও ভীতি বাড়িয়ে তুলছে। পুলিশ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করছে এবং বিরোধী দলগুলোর বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করে রেখেছে।'

সরকারবিরোধীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে যে দেশের বাইরেও অসন্তুষ্টি ছিল, তার একটি প্রমাণ মেলে যখন গত বছরের অক্টোবরের দিকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েটি দেশ এই অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে অস্ত্র রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তখন আমাদের পুলিশের অস্ত্রের বিকল্প বাজার ব্রাজিলের শরণাপন্ন হতে হয়। এ দিকে র‌্যাব বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, এ অভিযোগ তুলে সম্প্রতি র‌্যাবের গোয়েন্দাবিষয়ক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আটকে দিয়েছে, এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে দেখা গেছে। বাংলাদেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর কী ধরনের ও কী মাত্রায় দমনপীড়ন চলছে, তা কিছুটা আন্দাজ-অনুমান করা যায় গত ২৫ মার্চের দৈনিক ইনকিলাবের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম থেকে। শিরোনামটি ছিল এমন : 'গুম খুন গ্রেফতার আতঙ্কে ৩০ লাখ নেতাকর্মীর ফেরারি জীবন : নতুন তালিকা নিয়ে আজ থেকে ডিএমপির বিশেষ অভিযান'। রিপোর্টে উল্লিখিত তথ্য মতে, গুম ও গ্রেফতারের আতঙ্কে বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রায় ৩০ লাখ নেতাকর্মী তিন মাস ধরে বাড়িঘর-ছাড়া। মামলা-হামলা, হয়রানি-নির্যাতন ও গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু হওয়ার ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত জোটের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে মাঠকর্মীরা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এভাবে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক তৎপরতা শূন্যের কোটায় নামিয়ে দিয়ে খালি মাঠে ফাঁকা গোল দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে তাড়াহুড়ো করে নেমে পড়েছে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। আগে যেখানে নির্বাচন কমিশন বলেছিল জুনের আগে তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সম্ভব নয়, এখন সেই নির্বাচন কমিশনই ২৮ এপ্রিলে সে নির্বাচন করতে যাচ্ছে। এই তাড়াহুড়ো যে সরকারপক্ষের একটি অতি চালাকি প্রবণতা, তা বোঝার জন্য খুব জ্ঞানগরিমার প্রয়োজন পড়ে না। দেশের সাধারণ জনও বুঝতে সক্ষম, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের এভাবে মামলা-হামলা দমনপীড়ন, গুম-খুন করে এবং অবশিষ্টদের এসব আতঙ্কে আতঙ্কিত করে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে আর যাই হোক, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন করা যাবে না। আর এ ধরনের নির্বাচনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের সংজ্ঞায়ও ফেলা যাবে না। সরকারকে মনে রাখতে হবে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটসহ এ দেশের নিবন্ধিত দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অভিযোগ তুলে। এখান আবার যদি সেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নতুন বিতর্ক সামনে আনা হয়, তবে সিটি করপোরেশনের এই নির্বাচন বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরো ঘনীভূত করে তুলবে। বিএনপি অনেকটা শর্তসাপেক্ষেই এই নির্বচনে অংশ নিতে যাচ্ছে : নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট করা হলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা যেকোনো সময় তা বয়কটের ঘোষণা দেবে। তখন গোটা সিটি করপোরেশনের বিষয়টি নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন উভয়ের জন্যই সৃষ্টি করবে একটি লেজেগোবরে অবস্থা। আর চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট আরো জটিল পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে।

সরকার এই নির্বাচনকে সবার গ্রহণযোগ্য করে তোলার ব্যাপারে কতটুকু আন্তরিক পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসবে, দৃশ্যমান নানা কারণেই সে ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা লক্ষ করেছি, সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে সন্ত্রাসীদের হালনাগাদ তালিকায় নতুন করে যোগ করা হচ্ছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নাম। ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের টার্গেট করে চলছে ব্লক রেইড। খবরে প্রকাশ, ২৪ মার্চ রাত থেকে শুরু হয়েছে এ ব্লক রেইড। অনেকেরই আশঙ্কা, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা যাতে নির্বাচনে অংশ নেয় কিংবা জোটের প্রার্থীদের পক্ষে অবাধে অংশ নিতে না পারে, সে লক্ষ্য নিয়েই শুরু করা হয়ছে এই ব্লক রেইড। বলার অপেক্ষা রাখে না, সিটি করপোরেশন নির্বাচন কাগজে-কলমে নির্দলীয় হলেও কার্যত প্রার্থী নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রচারকাজ পর্যন্ত সবই চলে দলীয়ভাবে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী জোটের ৩০ লাখ নেতাকর্মীকে ফেরারি রেখে আসন্ন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন যে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই হবে না, সেটুকু এখনই নিশ্চিত বলে দেয়া যায়। কারণ, তফসিল ঘোষণার পরই সরকার-সমর্থিতরা মনোনয়নপত্র তুলেই গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও তাদের পক্ষে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। এ জন্য এরই মধ্যে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। অপর দিকে পুলিশ আতঙ্কে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসমর্থিতরা নির্বাচনী মাঠে নেই। পুলিশ কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলন করে বলছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ও কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। বিবিসি বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনী পরিচয়ে সরকারবিরোধীদের ধরে নেয়ার ঘটনাও বাড়ছে। অতএব সরকারবিরোধী মহলের প্রার্থীরা কতটুকু নির্বিঘ্নে এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন, সে ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশের অবকাশ থাকে বৈকি!

নির্বাচন তখনই অর্থবহ হয়, যখন নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটে। আর নির্বাচন প্রহসনে রূপ নেয়, যখন এতে জনমতের প্রতিফলন খুঁজে পাওয়া যায় না। এ সত্য বিবেচনা থেকেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সবার কাছেই এটি একটি প্রহসন বলে বিবেচিত। ঠিক যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আজ সরকার আসন্ন তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন করতে যাচ্ছে, তাতে এ সরকারের আমলের ইতিহাসে আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের ঘটনার নতুন সংযোজন ঘটে কি না, সে আশঙ্কা অনেকের।

সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ব্যাপারে আশঙ্কার উপাদান বেশুমার। এর মধ্যে একটি বিষয় হচ্ছে- সরকার এক দিকে খালি মাঠে গোল দেয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে নতুন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন করার ব্যাপারে মরিয়া, অপর দিকে সরকার দ্বৈতনীতি অনুসরণ করে মামলার জালে জড়িয়ে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিধিদের অপসারণের অপতৎপরতায় লিপ্ত। একটি সহযোগী দৈনিক জানিয়েছে, গত এক বছরে সরকার বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থক নির্বাচিত অন্তত ২৫ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত বা সরিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া মামলা দিয়ে কমপক্ষে ২৫ জনকে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য করেছে। কিন্তু এর বিপরীতে সরকার-সমর্থক স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কারো কারো বিরুদ্ধে নানা ধরনের মামলা কিংবা অভিযোগ থাকলেও তারা নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে কারো কারো বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ থাকলেও মাসের পর মাস ছুটি পাচ্ছেন। কারো বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও গ্রেফতার হচ্ছেন না। এমনকি একজন সাজাপ্রাপ্ত হয়েও জামিন নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট ঘটনার বিবরণ রয়েছে ওই দৈনিকটির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।

সবশেষে বলব, সরকার যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়েই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নিক না কেন, এ নির্বাচন সরকারের সামনে হাজির করেছে নানা চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করে সরকার এর ভূলুণ্ঠিত ভাবমর্যাদা কতটুকু পুনরুদ্ধার করতে পারবে, সেটাই দেখতে চায় দেশবাসী। একই সাথে কূটনৈতিক মহলও সেদিকে সজাগ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে। দ্বিতীয়ত, সরকারকে মনে রাখতে হবে- এ নির্বাচন শুধু ভালোভাবে সম্পন্ন করলেই সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে, এমন ভাবনা সরকারের কারো মাথায় থেকে থাকলে তা এখনই মাথা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে যে সঙ্কট চলমান তা-ও যথাসম্ভব দূর করায় সরকারকেই ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে যথার্থই উল্লেখ করা হয়েছে, অস্থিতিশীলতার দ্বারপ্রান্তে এখন বাংলাদেশ। আর বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনের একমাত্র পথ সমঝোতা। তাই সংলাপ নয়, সমঝোতা নয়, ১৯৮৯ সালের নির্বাচন নয়- এসব পুরনো গানের ভাঙা ক্যাসেট বাজানো বন্ধ করে দ্রুত সংলাপে বসে দেশবাসীকে চলমান দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করার এই একাটই পথ। ভিন্ন কিছু ভাবার অর্থ নতুন বিপদ ডেকে আনা।

- See more at: http://dev.dailynayadiganta.com/detail/news/11398#sthash.KNbogoTg.dpuf


__._,_.___

Posted by: Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com>


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___

[chottala.com] আইনশৃঙ্খলা রক্ষা



এবনে গোলাম সামাদ

২৯ মার্চ ২০১৫,রবিবার, ১৬:৫১



আইনশৃঙ্খলা রক্ষা


একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা হলো রাষ্ট্রের প্রধান প্রাথমিক করণীয় বিষয়। মানুষ শান্তিতে বাস করতে চায়। প্রগতির লক্ষণ হলো, একটা দেশের মানুষ কতটা শান্তিতে বাস করতে পারছে। ছোট শিশুরা রাজনীতি করে না, কিন্তু পত্রপত্রিকা খুললেই আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি, বহু শিশু অপহৃত হচ্ছে। শিশু অপহরণ করে অপহরণকারীরা দাবি করছে মুক্তিপণ। শিশুর বাবা-মা তা দিতে না পারলে খুন করা হচ্ছে তাদের। পত্রপত্রিকায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অপহরণের ঘটনাও অহরহ প্রকাশিত হচ্ছে। তবে এ দুই অপহরণের চরিত্রকে এক করে দেখার সুযোগ নেই। যদিও সব অপহরণই গর্হিত কাজ এবং উন্নত রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিচায়ক নয়। সব দেশেই পুলিশ প্রশাসন আছে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজন পূরণের জন্য। অন্য দিকে সেনাবাহিনী পূরণ করে বহিরাক্রমণ থেকে দেশ রার প্রয়োজন। আমাদের দেশে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উভয়ই আছে। আমরা একটি আদর্শ দুনিয়ায় বাস করছি না। মানবজীবনে রয়েছে প্রচুর অসঙ্গতি। সাধারণভাবে মানুষ শান্তি চাইলে শান্তি রক্ষার জন্য রাষ্ট্রকে পালন করতে হয় বিশেষ ভূমিকা। যে রাষ্ট্র এই ভূমিকা পালনে যতটা সম, তা দিয়েই হতে হয় সেই রাষ্ট্রের সার্থকতার বিচার।

এক সময় আমাদের দেশে শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটত না। সাবেক পাকিস্তান আমলেও এটা ঘটেনি। কিন্তু বাংলাদেশ হওয়ার পর এটা ঘটতে পারছে। আগে আমরা খবরের কাগজে পড়তাম, কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশু অপহরণ ঘটে। অপহরণকারীরা মার্কিন ধনকুবেরদের শিশু অপহরণ করে। মুক্তিপণ পেয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। কিন্তু এখন আমাদের দেশে শিশু অপহরণ ঘটছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনকুবের আমাদের দেশে নেই। কী করে, কী কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এ দেশে শিশু অপহরণ ঘটতে পারছে, সেটা ভেবে দেখা দরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নানা দেশ থেকে মানুষ যেয়ে নাগরিক হচ্ছে সে দেশের। এদের মধ্যে থাকছে মারাত্মক অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিরাও। এদের নিয়ন্ত্রণ করা যথেষ্ট কঠিন কাজ। কিন্তু বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাইরে থেকে মানুষ আসছে না। তবুও বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। বিশেষ করে শিশু অপহরণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের মাত্রা।

ইতিহাসে দেখি, যোগ্যতা ও সদিচ্ছা থাকলে একজন ব্যক্তির পক্ষে মারাত্মক অপরাধ দমন সম্ভব। দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্রিটিশ আমলে লর্ড বেন্টিংকের শাসনকালের (১৮২৮-১৮৩৫) কথা উল্লেখ করা যায়। এ সময় দেশে ঠগী বলে এক ভয়ঙ্কর দস্যু সমাজ ছিল। যারা লোকের বন্ধু সেজে পরে তাদের খুন করে সর্বস্ব অপহরণ করত। ঠগীরা ছিল খুবই সুসংহত। সারা ব্রিটিশ ভারতে এদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১২ লাখের কাছাকাছি। লর্ড বেন্টিংক মেজর শ্লিম্যান (Major Sleeman)-এর সাহায্যে করেছিলেন ঠগীদের দমন। শ্লিম্যান ঠগীদের দলে যোগ দেন। তিনি ঠগীদের সাঙ্কেতিক ভাষা শেখেন। তারপর ঠগীদের ভেতরে থেকেই আরম্ভ করেন ঠগী দমন করতে। তিনি হত্যা করেন তিন হাজার ঠগী নেতা। ফলে ঠগীরা হয়ে পড়েন ছত্রভঙ্গ। হতে পারে ঠগী দমন। এটা করতে তার সময় লেগেছিল প্রায় সাত বছর (১৮৩১-১৮৩৭)। একজন ঠগী স্বীকার করেছিল, সে ৭১৯ জন মানুষকে হত্যা করে তার সর্বস্ব অপহরণ করেছিল। ঠগীরা লোক খুন করত মানুষের গলায় সিল্কের রুমালের ফাঁস জড়িয়ে। তাদের হাতে কোনো অস্ত্র থাকত না। ঠগীরা পথিকজনের সাথী হতো। তাদের সাহায্য করত। সুযোগ পেলে রেশমি রুমালের ফাঁস জড়িয়ে করত তাদের খুন। অপহরণ করত তাদের সর্বস্ব। এজন্য তাদের নাম হয়েছিল ঠগ। ঠগীরা বলত লোক ঠকানো অপরাধ নয়। এভাবে নরহত্যাও অপরাধ নয়। তারা করত মা ভবানীর পূজা। মা ভবানীর নির্দেশেই তারা বেছে নিয়েছে এই পথ। তাদের কর্মের পিছে আছে ধর্মের সমর্থন। ঠগীরা এক দিকে যেমন ছিল দস্যু সম্প্রদায়, তেমনি আবার হয়ে উঠেছিল একটি ধর্ম সম্প্রদায়। আমি আমার ছেলেবেলায় শুনেছি, আমাদের রাজশাহী অঞ্চলে একদল ডাকাত আছে, যারা মা কালীর পূজা দিয়ে ডাকাতি করতে যায়। হিন্দু যুবকেরা বছরে এক দিন রাতে চুরি করতে বের হতো এবং কিছু না কিছু চুরি করত। যাকে বলা হতো 'নষ্ট-চন্দ্র'। নষ্ট-চন্দ্র ছিল তাদের ধর্মবিশ্বাসের অঙ্গ। তারা মনে করত, নষ্ট-চন্দ্রের রাতে চুরি করলে তাদের পুণ্য হবে। আজকের নীতিচেতনার সাথে অতীতের নীতিচেতনার বহু দিক থেকেই মিল নেই। অতীতে অনেক দেশেই মানুষ মনে করেছে জনদস্যুতা কোনো অপরাধ নয়, বরং গৌরবের বস্তু। মানুষ জলদস্যুতা করেছে খ্যাতিমান হওয়ার জন্য। কিন্তু এখন আমরা আর তা মনে করি না। মানুষের নীতিচেতনার পেছনে কাজ করছে একটি বিশেষ দর্শন। তা হলো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা। যা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে তাই হলো নৈতিকতার ভিত্তি। নৈতিকতার আর কোনো অন্তিম ভিত্তি নেই।

আমাদের দেশে হঠাৎ করেই যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এতটা অবনতি ঘটতে পেরেছে, তা নয়। একদল মানুষ এ দেশে করতে চেয়েছেন শ্রেণিশত্রু খতমের রাজনীতি। এরা মনে করেছেন, যারাই একটু বিত্তবান অথবা সচ্ছল, তাদের খুন করতে হবে। খুন করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে গরিব-রাজ। গরিব-রাজ এরা প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। কিন্তু এদের মধ্যে কেউ কেউ গরিব-রাজ প্রচেষ্টার মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন বিত্তবান। এদের তুলনা করা যায় কতকটা সেই আমলের ঠগীদের সাথে। দেশে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন করতে গেলে এই ঠগীদের দমন করতে হবে। না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হতে পারবে না।
আমরা বলেছি, যোগ্যতা ও নিষ্ঠা থাকলে অপরাধ দমন সম্ভব। আমরা দৃষ্টান্ত দিয়েছি লর্ড বেন্টিংকের। আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হতে হলে এ রকম ব্যক্তির আসতে হবে ক্ষমতায়। পত্রিকায় খবর পড়ে বিস্মিত হলাম, শিশু অপহরণের অপরাধে পুলিশের লোকও জড়িত হয়ে পড়ছে। প্রচলিত প্রবচনে বলা হয়- সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে সে সরিষার সাহায্যে ভূত তাড়ানো যাবে না। পুলিশ প্রশাসনকে করতে হবে আত্মশুদ্ধি। রাজনীতির ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো বাধ্য হচ্ছেন এমন কিছু করতে, যা তাদের মনঃপূত নয়। কিন্তু শিশু অপহরণ ব্যাপারটা কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। এটাকে কঠোর হাতে দমন করা তাই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে অসম্ভব নয়। কেননা এর জন্য তাদের পড়তে হবে না ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কোপানলে।
লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

- See more at: http://dev.dailynayadiganta.com/detail/news/11390#sthash.w4ywEwUp.dpuf


__._,_.___

Posted by: Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com>


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___