আল কায়েদা স্টাইলে বিএনপির কর্মকা-? অজ্ঞাতস্থান থেকে ভিডিওবার্তা প্রেরণ স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচী আরও তিন দিন বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। সোমবার সকালে অজ্ঞাত স্থান থেকে পাঠানো ভিডিও বার্তায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ অবরোধের মেয়াদ বাড়ানোর এ ঘোষণা দিয়েছেন। একদিন আগে রবিবারও অজ্ঞাত স্থান থেকে পাঠানো কয়েকটি টেলিভিশনে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এ বিএনপি নেতা। সভাসমাবেশ, লিখিত বিবৃতি এমনকি কোন সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত না করে রীতিমতো আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের আদালে গোপন স্থান থেকে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে বিএনপির কর্মকা- পরিচালনা নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। বিএনপি নেতারা চলে গেছেন আত্মগোপনে। অনেকে একে দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধীর দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের আদালে বিএনপির কর্মকা- বলে অভিহিত করলেও আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে এসেছে আল কায়েদার কৌশল। বিএনপি নেতারা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার খোরাক তৈরি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কী জামায়াত নেতাদের মতো বিএনপিও আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাচ্ছে? পূর্বঘোষিত ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচীর শেষ দিনে সোমবার সকালে অজ্ঞাত স্থান থেকে পাঠানো ভিডিও বার্তায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ কর্মসূচী আরও তিন দিন বাড়ানোর ঘোষণা দেন। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সারাদেশে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ চলবে। সরকার নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানায় ও একতরফা নির্বাচনের তফসিল বাতিল না করায় আমরা অবরোধ কর্মসূচী বর্ধিত করছি। শনিবার ভোর ৬টায় শুরু হওয়া এ কর্মসূচী মঙ্গলবার ভোর ৬টায় শেষ হওয়ার কথা ছিল। ৫৯ ঘণ্টা মেয়াদ বাড়ায় তা এখন ১৩১ ঘণ্টার কর্মসূচীতে পরিণত হলো। মুখপত্রের দায়িত্ব পাওয়া থেকেই অজ্ঞাতস্থানে থাকা এ বিএনপি নেতা বলেন, অবরোধ কর্মসূচী বর্ধিত করায় অনেকের কষ্ট হবে। তার পরও এই কষ্ট স্বীকার করে অবরোধ কর্মসূচী পালনের জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ রাখছি। অবরোধের প্রথম দিন শনিবার সকালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে আটকের পর সালাহউদ্দিন আহমেদই অজ্ঞাত স্থান থেকে দলের হয়ে ভিডিও বার্তা ও টেলিফোনে সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং কর্মসূচী দিয়ে যাচ্ছেন। দুই দফা অবরোধেই সারাদেশে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের প্রায় সকলেই সাধারণ মানুষ। বিপুলসংখ্যক যানবাহনে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি রেলপথজুড়ে চালানো হয় ব্যাপক নাশকতা। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন ভিডিও বার্তায় আরও বলেন, দেশের জনগণ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। অন্যথায় স্বৈরশাসকের মতো এই সরকারের পতন হবে। বিরোধীদলীয় নেতা 'গণহত্যা' চালাচ্ছেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গণহত্যার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতাকে অভিযুক্ত করেছেন। এটা ঠিক নয়। শাপলা চত্বরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই গণহত্যা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস রক্ষীবাহিনীর বর্বর গণহত্যার ইতিহাস। এর আগে রবিবার দুপুরেও অজ্ঞাত স্থান থেকে কয়েকটি টেলিভিশনে ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেনও বিএনপি নেতা। দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ গ্রেফতারের পর সালাহউদ্দিন আহমদকে দফতর ও দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তাঁকে আর প্রকাশ্যে পাওয়া যায়নি। তিনি কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন অজ্ঞাত স্থান থেকেই। কোথায় আছেন তাও জানাচ্ছেন না সাংবাদিকদের। এভাবে শুধু সালাহউদ্দিনই নয়, দলের অন্য সিনিয়র নেতারাও আত্মগোপনে চলে গেছেন। এর আগে প্রায় দুই বছর ধরে আত্মগোপনে থেকে জামায়াত নেতারা গণমাধ্যমে লিখিত বিবৃতি পাঠিয়ে কর্মসূচী দিয়ে যাচ্ছেন। দুই বছর ধরে জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম খান অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি পাঠিয়ে যাচ্ছেন। তবে ভিডিও বার্তায় আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন বিশেষত আল-কায়েদার মতো কর্মকা- পরিচালনা করায় হঠাৎ তোলপাড় শুরু হয়েছে বিএনপিকে নিয়ে। জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের নেতারা আত্মগোপন করেছেন। এমনকি টেলিভিশনে চেহারা দেখাতে উন্মুখ বিএনপির নেতাদেরও গণমাধ্যম কর্মীরা খুঁজে পান না এখন। বেশির ভাগ নেতার মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও প্রকাশ্যে আসছেন না। এত দিন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করে রুহুল কবির রিজভী প্রতিদিন গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য তুলে ধরতেন। সর্বশেষ শুক্রবার রাত ১০টা সংবাদ সম্মেলন করে তিনি নতুন করে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এখন আর প্রকাশ্যে নেই কর্মকা- কারও। গত বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগে বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় শনিবার ভোরে রিজভীকে গ্রেফতারের পর বিএনপির কার্যালয় হয়ে পড়ে অভিভাবক শূন্য। সালাহউদ্দিন আহমদকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেয়া হলেও তিনিও কেন্দ্রীয় কার্যালয়মুখী হননি। অজ্ঞাত স্থান থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আর ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে দলের বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরছেন, কর্মসূচী ঘোষণা করছেন। অবশ্য এর মাঝে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে শুক্রবার নয়াপল্টনে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচীতে দেখা গিয়েছিল। জানাজা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটি মোটরসাইকেলে হেলমেড পড়ে দ্রুত ওই এলাকা ছেড়ে যান। শনিবার মালিবাগে বাসে আগুন দেয়ার পরিকল্পনাকারী হিসেবেও বিএনপির নেতাদের আসামি করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ধরতে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করা হচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করতে প্রযুক্তিরও সহায়তা নেয়া হচ্ছে। এ জন্য পুলিশের আলাদা একটি দল কাজ করছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থানে অভিযানও চালানো হয়েছে। বিএনপির এসব নেতা দেশে আছেন, না বাইরে চলে গেছেন তা নিয়েও কর্মীরা কানাঘুষা করছেন। তবে সিনিয়র নেতাদের মাঠে অনুপস্থিতি, আত্মগোপনকে সুবিধাবাদী আচরণ হিসেবে মনে করছেন দলটির পরীক্ষিত ও মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এতে সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা বাড়ছে বলে মনে করেন তাঁরা। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য সোমবার বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। অনেকে বলছেন, বিএনপি এখন জামায়াতসহ উগ্রবাদী সংগঠনের কৌশল অবলম্বন করছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন বিশেষ করে আল-কায়েদার পক্ষ থেকে নানা সময় ভিডিও বার্তা বা এ ধরনের বার্তা প্রকাশ করলেও প্রকাশ্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের বার্তা প্রকাশ নতুন প্রবণতা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। |