<*>[Attachment(s) from Sanjoy Barua baruasanjoy@ymail.com [chottala] included below]
Dear Community Members,
BCCDI-Bangla School's cordially invites you and your family to join the joyous event celebration BOISHAKHI MELA welcoming Bangla new year 1422 on Saturday, April 18,2014 at Northern Virginia Community College, 6901 Sudley Road, Manassas,VA 20109-2305 from 1 pm to 9:00 pm. Please enjoy our wonderful cultural event performance by Washington star Artists, the best of the best BCCDI- Bangla school's young star artists and very large number of international Guest Artists from India .This will be the show of the year which you do not want to miss.please join us:
<*>Attachment(s) from Sanjoy Barua baruasanjoy@ymail.com [chottala]:
<*> 2 of 2 Photo(s) https://groups.yahoo.com/neo/groups/chottala/attachments/26505030
<*> image2.jpeg
<*> image1.jpeg
------------------------------------
------------------------------------
[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.
* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]
------------------------------------
Yahoo Groups Links
<*> To visit your group on the web, go to:
http://groups.yahoo.com/group/chottala/
<*> Your email settings:
Individual Email | Traditional
<*> To change settings online go to:
http://groups.yahoo.com/group/chottala/join
(Yahoo! ID required)
<*> To change settings via email:
chottala-digest@yahoogroups.com
chottala-fullfeatured@yahoogroups.com
<*> To unsubscribe from this group, send an email to:
chottala-unsubscribe@yahoogroups.com
<*> Your use of Yahoo Groups is subject to:
https://info.yahoo.com/legal/us/yahoo/utos/terms/
Sunday, April 12, 2015
[chottala.com] কামারুজ্জামানের ফাঁসি
মাসুদ মজুমদার digantaeditorial@gmail.com |
কামারুজ্জামানের ফাঁসি
12 April 2015, Sunday
একসময় লাল পতাকা, লাল ব্যানার, লাল কোর্তা-টুপি ভালো লাগত। বিপ্লবের স্মারক মনে করে সম্মানও করতাম, সেটা ছিল তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের সময়টিতে মাওবাদে দীক্ষা নেয়ার ফসল। মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময় বঙ্গবন্ধুকে লাল সালাম দেয়ার জন্য লাল বাহিনীর লাল পোশাক পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হয়েছিলাম। ডেমরা শিল্পাঞ্চল থেকে ট্রাক ভর্তি হয়ে আমরা প্রায় পাঁচ ট্রাক শ্রমিক-ছাত্র অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলাম। ছাত্র হয়ে শ্রমিক সেজেছিলাম বন্ধুদের চাপে। তা ছাড়া আমার বড় ভাই ছিলেন লতিফ বাওয়ানি জুট মিলের লেবার অফিসার। শ্রমিক নেতারা তার নেকনজরে থাকার জন্য চার পাশে ঘুর ঘুর করত। শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হওয়ার সুবাদে আমাকে ঢাকা ছাড়তে হলো। যেদিন ঢাকা ছাড়ি সেদিন ছিল একুশের প্রথম প্রহর। ওই রাতে বঙ্গবন্ধুর সোনার ছেলেরা শহীদ মিনারে কিছু মহিলা ও ছাত্রীর ওপর বিনা কারণে চড়াও হয়েছিল। সেই ঘটনা ছিল লজ্জার, যুগপৎ বিস্ময়ের। সেই ঘটনার দায় কাউকে নিতে হয়নি, কারো বিচারও হয়নি। পাকিস্তানি বর্বর সৈন্যরা শহীদ মিনার ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল। সোনার ছেলেরা আমাদের শহীদ মিনারে কালিমা লেপন করেছিল। যে একুশ মাথা নত না করার কথা শেখায়- সেখানে লজ্জায় আমাদের মাথা হেট হয়ে গিয়েছিল।
লাল পতাকা-ব্যানার দিয়ে লেখাটা শুরু করেছিলাম- বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষার কথা বুঝাতে। বিপ্লব ধ্বংস নয় সৃষ্টির প্রসব বেদনা, ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল। এসব বিপ্লবী কথাবার্তা শুনতে ও বলতে রোমাঞ্চকর মনে হতো। দস্যু বাহরাম, বনহুর, কিরিটি রায় ও রবিনহুডের মতো হওয়ার বাসনা জাগত। তারা শ্রেণিবিভক্ত সমাজের সৃষ্ট পুঁজিবাদীদের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করে গরিবদের মাঝে বিলাত। এই কথিত মহৎ কর্মটির প্রতি তাবৎ বামপন্থীর সায় ছিল। খুন, হত্যা আর ফাঁসির কথা শুনলে বিচলিত হতাম না। আজ হই। নিজের জানার পরিসর হয়তো বেড়েছে, তার ওপর শফিক রেহমানের দেশে দেশে ফাঁসির ওপর লেখাটা পড়ে ছাপতে গিয়ে নিজেও প্রভাবিত হয়েছি। নিশ্চিত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ফোরামগুলো শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড রদের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সঠিক। এ যুগে শাসকেরা যে পন্থী হন, তারা শতভাগ নীতিনিষ্ঠ নন, হোক রাজা-বাদশাহ। এখন ইসলামের নামে মৃত্যুদণ্ডকেও মেনে নিতে চাই না। কারণ, ইসলাম বিচার প্রক্রিয়ায় সততা ও সাক্ষী সাবুদের ব্যাপারে সতর্কতার যে পরাকাষ্ঠা দেখাতে বলেছে- এ যুগে সেটা অনুপস্থিত। তাই বিচার হয় না, যা হয় তা জুলুম বা অবিচার।
একজন বিখ্যাত জার্মান পণ্ডিত বলেছেন, বিপ্লবী সেজে রোমাঞ্চকর অনুভূতি লালন করা তারুণ্যের স্বভাব, চল্লিশের পর বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পাল্টে যাওয়াও মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির অংশ। আমার বেলায় বয়সের ফ্রেমে এটা তত্ত্বীয়ভাবে ফলেনি, কিন্তু চিন্তার রূপান্তর ঘটেছে- এটা অনস্বীকার্য। আজকাল লাল কিছুর প্রতি মোহ জাগে না। বিপ্লব বিপ্লব ভাবও জাগে না। বরং হত্যা, খুন, গুম, অপহরণ ও ফাঁসিকে বড়ই নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং বর্বোরোচিত কাজ মনে হয়। শাস্তি হিসেবে ফাঁসি বা মৃত্যুদণ্ড মন এখন মানতে নারাজ। এটা হয়েছে কয়েকটি কারণে- প্রথমত, মানুষ সৃষ্টির সেরা, জন্ম-মৃত্যুর মালিক সৃষ্টিকর্তা। শাস্তিটা নানাভাবে হতে পারে। কিন্তু গর্দান কেটে, রশিতে ঝুলিয়ে কিংবা বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মানুষকে মারতে হবে কেন। তাছাড়া প্রচলিত কোর্ট-কাচারি, আইন, বিচার প্রক্রিয়া, সাক্ষী-সাবুদ কোনোটাই নিশ্চয়তামূলক হয় না। মানুষের জানার, আকল ও বিবেকের একটা সীমাবদ্ধতা থাকে। সেটা ডিঙ্গানো যায় না বলেই বিচার নিয়ে নানা নীতিকথা মানুষই বানিয়েছে। মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। শাস্তিটা ভোগ করার সময় পেল কই। যার মৃত্যুদণ্ড হয় সেই মুহূর্তে তার জীবনলীলা সাঙ্গ হয়ে যায়। তার আগে রায় থেকে দণ্ড কার্যকর পর্যন্ত তার মানসিক যন্ত্রণা হয়তো অন্যদের বোধগম্যের বাইরে। যতটুকু অনুমান করি মৃত্যুভীতি মানুষকে অস্বাভাবিক করে দেয়। অধিক শোকে পাথরও বানায়। নিজেকে নিয়তি বা সৃষ্টিকর্তার হাতে সোপর্দ করে দিয়ে আরো সাহসী হয়ে সান্ত্বনা নেয়ার মতো মানুষও ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এর বেশি আর কী! এজন্যই ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও অনেক আদর্শিক চৈতন্যবিদৌত মানুষ সাহসী হয়ে ওঠেন। বলতে পারেন প্রাণ ও ক্ষমার মালিক আল্লাহ। নাস্তিকও আস্তিক হয়ে যায়। অনেকেই আদর্শের দীক্ষা অনুযায়ী আরো সাহসী হয়ে অনুসারীদের জন্য প্রেরণা হয়ে ওঠেন। শিকাগোর হে মার্কেটের ঘটনায় মে দিবস পেলাম ১০টি মেহনতি মানুষের প্রাণ ও অগাস্টাস স্পাইসের মৃত্যুদণ্ডের বিনিময়ে। অগাস্টাস ফাঁসির মঞ্চেও নতজানু হননি। নাথুরাম গডসে গান্ধীকে হত্যা করেও মাথা তুলে নিজের ইচ্ছার সততা প্রকাশ করেছেন। তিতুমীর, প্রফুল্ল চাকি, ক্ষুদিরাম তাদের উদাহরণ তো আমাদেরই ইতিহাস।
মুনির-খুকুর ঘটনার পর মুনিরের ফাঁসি আমার ভাবান্তর ঘটায়। রিমাকে তার স্বজেনরা আগেই হারায়। রিমাকে হত্যার জন্য মুনিরের পরকীয়াই দায়ী। মুনিরের ফাঁসি রিমাকে ফিরিয়ে দেয়নি। তাহলে দৃষ্টান্ত কোনো ফল বহন করল না, একজন অপরাধী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেল, অন্যরা সতর্ক হলো- এতটুকুতে আমার সান্ত্বনা হয় না।
যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ইস্যুটির একটি সমাপ্তি ঘটুক- এটা ছিল সব সাধু মনের চাওয়া। কিন্তু স্বচ্ছতা ছাড় দিয়ে সেটা হোক তা কখনো চাইনি। আইন-ট্রাইব্যুনাল, বিচার প্রক্রিয়া না হলো আন্তর্জাতিক মানের, না হলো দেশজ। আইনের ছাত্র হওয়ার সুবাদে ভালো করে জানি প্রচলিত আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ইনসাফ পালাতে পারে। রায় নির্ধারণ করে বিচার চালালে সেটা কী হয় সবার জানা। তাতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিচার হয়, প্রতিহিংসা ও ঘৃণার জয় হয়, মানবিক দাবির পরাজয় ঘটে। বিজয়ীর অন্যায় আবদার রক্ষা পায়- হাজার অপরাধী মাফ পাওয়ার বিনিময়ে একজন নিরপরাধী পার পাওয়ার সুযোগ থাকে না। সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে তিন দশক পর একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মানুষ নিরপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডের পর এই ভুল সংশোধনের সুযোগ হতো কিভাবে। অ্যান্থনি রে হিল্টন ৫৮ বছর জীবনের অর্ধেকটা কাটিয়েছে ফাঁসির সেলে। ২৮ বছর পর প্রমাণিত হলো তিনি নিরপরাধ, কথিত অভিযোগ সত্য নয়। তিনি মুক্তি পেয়ে অঝোরে কাঁদলেন- বললেন, স্রষ্টার কাছে বিচারকদের জবাব দিতে হবে। আবদুল কাদের মোল্লা বা কামারুজ্জামানের ফরিয়াদ কে শুনবে?
আমাদের আদালত কসাই ও বিহারি কাদের মোল্লার বিচার করে তড়িঘড়ি ফাঁসি দিয়ে দিলো। যেদিন প্রমাণ হবে দুই মোল্লা এক নন, তখন আদালতের জবাব হবে কী! দেল্লা রাজাকারের সাথে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মিল নেই- এ দাবি বলিষ্ঠ। আদালত বেনিফিট সব ডাউটের সুযোগ নিয়ে বা অন্য কারণ দেখিয়ে তাকে যাবজ্জীবন দিয়েছে। প্রমাণ সাপেক্ষে ভবিষ্যতে তার রায় সংশোধনের সুযোগ রইল।
শাহবাগ মঞ্চের মাধ্যমে দৃশ্য-অদৃশ্য চাপ আদালত বিবেচনায় না নিলে বিচার চলমান প্রক্রিয়ায় আইন সংশোধনের খারাপ নজির সৃষ্টি হতো না। যে সুযোগ আসামি বা অভিযুক্ত পায় সেটা আদালত এবং অভিযোগকারীদের হাতে তুলে দেয়া হতো না। আন্তর্জাতিক মহলের সব বক্তব্য বিবেচনায় নিয়েও একটি স্বচ্ছ বিচারের ধারায় ইস্যুটির নিষ্পত্তি হতে পারত। জামায়াত-শিবির আদালতের প্রসিকিউশনে সাহায্য করে আবার হরতালের পথে যাওয়ার সুযোগ পেত না। এত বিতর্ক বিচারকে তাড়া করত না। বিসা বালী হত্যা নিয়ে সুখরঞ্জন বালীর অপহরণ নানা প্রশ্নের উদ্রেগ করত না। একটি বিচার চলছে কিন্তু দেশে বিদেশে কাউকে সন্তুষ্ট করছে না। তার পরও সরকারের অনড় অবস্থানই কি কামারুজ্জামানকে নজিরবিহীন দৃঢ়তা দেখিয়ে শহীদ হওয়ার বাসনা জাগিয়ে দেয়নি, নয়তো কামারুজ্জামান এতটা নৈতিক বল-ভরসা পান কিভাবে।
সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে বিচারকে আন্তর্জাতিক মানে তুলে ধরলে বর্বর পাকিস্তানি গণহত্যাকারীদের জামাই আদরে ছেড়ে দিয়েও তাদের রাজনৈতিক সহযোগীদের একটি গ্রহণযোগ্য বিচার হতে পারত। সেটাই হতো দৃষ্টান্ত। বিচারের নামে এই খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দগদগে ক্ষত সৃষ্টির প্রয়োজন হতো না। এখন এই মন্দ নজিরটি এই জনপদের আকাশে বাতাসে যুগ যুগ ধরে প্রতিহিংসার রাজনীতিকে অনুপ্রাণিত করবে।
নরখাদক ও ঘাতক ইয়াহিয়া বাহিনীর সব গরল ক'জন বাংলাদেশী হজম করে নিয়ে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুসোচনায় দগ্ধ করে যাবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও আমরা ছোট হয়ে গেলাম। অথচ সরকার নিজের মর্জি ও জেদকে সাহস ও দৃঢ়তা হিসেবে দেখাতে মরিয়া। কামারুজ্জামানের ফাঁসি নিয়ে সরকার নানাভাবে হেয়ালি প্রদর্শন করল। টানটান উত্তেজনা ও হিমশীতল এক নিষ্ঠুরতার আবহ সৃষ্টি করে হয়তো অভিযুক্ত এবং তার স্বজন ও প্রিয়জনদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করল। জনমনে সরকারের রাজনৈতিক মর্জির উৎকট প্রকাশ ঘটল। এর অর্জনটা কি খুব একটা সুখকর হলো? না, হয়নি। কারণ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে প্রতিটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুরভিসন্ধি ও প্রতিহিংসার কালো ছায়া জনগণ প্রত্যক্ষ করল। এর মাধ্যমে জাতি কোনো সুখবর পেল না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শনৈ শনৈ বার্তাও জনগণ গ্রহণ করল না। ঘুরেফিরে সাধারণের প্রশ্ন একটাই- জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে বোঝাপড়ায় একই পক্ষপুটে আপসের রাজনীতি করলে এতসব ডুগডুগি বাজত কি? শাহবাগে মজমা বসিয়ে নজিরবিহীন এক অপরাজনীতি নাটক মঞ্চস্থ করার সুযোগ কি কেউ কোনো দিন নিতে পারত?
শাহবাগ মঞ্চ তৈরির পর কম করে দশবার দেখতে গিয়েছি। মনে হয়নি এর ভেতর প্রাণ আছে, জাতির বৃহত্তম অংশের সায় আছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলার লাশ নিয়ে ইংরেজ ও মীরজাফরের বশংবদরা মুর্শিদাবাদে উল্লাস করেছে। সেই লাশ হাতির পিঠে তুলে কিছু মানুষ উল্লাস করেছে বলে ইতিহাস পাল্টে যায়নি। জন নোভাকের বর্ণনায় তার সংখ্যা অর্ধশত। লাখো মানুষ নীরবে কাঁদল। একইভাবে কাইভ যখন মুর্শিদাবাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে বর্জায় করে ভাগীরথী দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন নদীর দু'পাশে যত মানুষ তামাশা দেখেছে তারা একটি করে ঢিল ছুড়লে সেদিনই ইংরেজ আধিপত্যের পরিসমাপ্তি ঘটত। তাই কোনো মঞ্চ কাদের সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, সময়মতো ইতিহাস সেটা চিনিয়ে দেয়।
লাল পতাকা-ব্যানার দিয়ে লেখাটা শুরু করেছিলাম- বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষার কথা বুঝাতে। বিপ্লব ধ্বংস নয় সৃষ্টির প্রসব বেদনা, ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল। এসব বিপ্লবী কথাবার্তা শুনতে ও বলতে রোমাঞ্চকর মনে হতো। দস্যু বাহরাম, বনহুর, কিরিটি রায় ও রবিনহুডের মতো হওয়ার বাসনা জাগত। তারা শ্রেণিবিভক্ত সমাজের সৃষ্ট পুঁজিবাদীদের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করে গরিবদের মাঝে বিলাত। এই কথিত মহৎ কর্মটির প্রতি তাবৎ বামপন্থীর সায় ছিল। খুন, হত্যা আর ফাঁসির কথা শুনলে বিচলিত হতাম না। আজ হই। নিজের জানার পরিসর হয়তো বেড়েছে, তার ওপর শফিক রেহমানের দেশে দেশে ফাঁসির ওপর লেখাটা পড়ে ছাপতে গিয়ে নিজেও প্রভাবিত হয়েছি। নিশ্চিত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ফোরামগুলো শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড রদের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সঠিক। এ যুগে শাসকেরা যে পন্থী হন, তারা শতভাগ নীতিনিষ্ঠ নন, হোক রাজা-বাদশাহ। এখন ইসলামের নামে মৃত্যুদণ্ডকেও মেনে নিতে চাই না। কারণ, ইসলাম বিচার প্রক্রিয়ায় সততা ও সাক্ষী সাবুদের ব্যাপারে সতর্কতার যে পরাকাষ্ঠা দেখাতে বলেছে- এ যুগে সেটা অনুপস্থিত। তাই বিচার হয় না, যা হয় তা জুলুম বা অবিচার।
একজন বিখ্যাত জার্মান পণ্ডিত বলেছেন, বিপ্লবী সেজে রোমাঞ্চকর অনুভূতি লালন করা তারুণ্যের স্বভাব, চল্লিশের পর বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পাল্টে যাওয়াও মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির অংশ। আমার বেলায় বয়সের ফ্রেমে এটা তত্ত্বীয়ভাবে ফলেনি, কিন্তু চিন্তার রূপান্তর ঘটেছে- এটা অনস্বীকার্য। আজকাল লাল কিছুর প্রতি মোহ জাগে না। বিপ্লব বিপ্লব ভাবও জাগে না। বরং হত্যা, খুন, গুম, অপহরণ ও ফাঁসিকে বড়ই নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং বর্বোরোচিত কাজ মনে হয়। শাস্তি হিসেবে ফাঁসি বা মৃত্যুদণ্ড মন এখন মানতে নারাজ। এটা হয়েছে কয়েকটি কারণে- প্রথমত, মানুষ সৃষ্টির সেরা, জন্ম-মৃত্যুর মালিক সৃষ্টিকর্তা। শাস্তিটা নানাভাবে হতে পারে। কিন্তু গর্দান কেটে, রশিতে ঝুলিয়ে কিংবা বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মানুষকে মারতে হবে কেন। তাছাড়া প্রচলিত কোর্ট-কাচারি, আইন, বিচার প্রক্রিয়া, সাক্ষী-সাবুদ কোনোটাই নিশ্চয়তামূলক হয় না। মানুষের জানার, আকল ও বিবেকের একটা সীমাবদ্ধতা থাকে। সেটা ডিঙ্গানো যায় না বলেই বিচার নিয়ে নানা নীতিকথা মানুষই বানিয়েছে। মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। শাস্তিটা ভোগ করার সময় পেল কই। যার মৃত্যুদণ্ড হয় সেই মুহূর্তে তার জীবনলীলা সাঙ্গ হয়ে যায়। তার আগে রায় থেকে দণ্ড কার্যকর পর্যন্ত তার মানসিক যন্ত্রণা হয়তো অন্যদের বোধগম্যের বাইরে। যতটুকু অনুমান করি মৃত্যুভীতি মানুষকে অস্বাভাবিক করে দেয়। অধিক শোকে পাথরও বানায়। নিজেকে নিয়তি বা সৃষ্টিকর্তার হাতে সোপর্দ করে দিয়ে আরো সাহসী হয়ে সান্ত্বনা নেয়ার মতো মানুষও ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এর বেশি আর কী! এজন্যই ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও অনেক আদর্শিক চৈতন্যবিদৌত মানুষ সাহসী হয়ে ওঠেন। বলতে পারেন প্রাণ ও ক্ষমার মালিক আল্লাহ। নাস্তিকও আস্তিক হয়ে যায়। অনেকেই আদর্শের দীক্ষা অনুযায়ী আরো সাহসী হয়ে অনুসারীদের জন্য প্রেরণা হয়ে ওঠেন। শিকাগোর হে মার্কেটের ঘটনায় মে দিবস পেলাম ১০টি মেহনতি মানুষের প্রাণ ও অগাস্টাস স্পাইসের মৃত্যুদণ্ডের বিনিময়ে। অগাস্টাস ফাঁসির মঞ্চেও নতজানু হননি। নাথুরাম গডসে গান্ধীকে হত্যা করেও মাথা তুলে নিজের ইচ্ছার সততা প্রকাশ করেছেন। তিতুমীর, প্রফুল্ল চাকি, ক্ষুদিরাম তাদের উদাহরণ তো আমাদেরই ইতিহাস।
মুনির-খুকুর ঘটনার পর মুনিরের ফাঁসি আমার ভাবান্তর ঘটায়। রিমাকে তার স্বজেনরা আগেই হারায়। রিমাকে হত্যার জন্য মুনিরের পরকীয়াই দায়ী। মুনিরের ফাঁসি রিমাকে ফিরিয়ে দেয়নি। তাহলে দৃষ্টান্ত কোনো ফল বহন করল না, একজন অপরাধী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেল, অন্যরা সতর্ক হলো- এতটুকুতে আমার সান্ত্বনা হয় না।
যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ইস্যুটির একটি সমাপ্তি ঘটুক- এটা ছিল সব সাধু মনের চাওয়া। কিন্তু স্বচ্ছতা ছাড় দিয়ে সেটা হোক তা কখনো চাইনি। আইন-ট্রাইব্যুনাল, বিচার প্রক্রিয়া না হলো আন্তর্জাতিক মানের, না হলো দেশজ। আইনের ছাত্র হওয়ার সুবাদে ভালো করে জানি প্রচলিত আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ইনসাফ পালাতে পারে। রায় নির্ধারণ করে বিচার চালালে সেটা কী হয় সবার জানা। তাতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিচার হয়, প্রতিহিংসা ও ঘৃণার জয় হয়, মানবিক দাবির পরাজয় ঘটে। বিজয়ীর অন্যায় আবদার রক্ষা পায়- হাজার অপরাধী মাফ পাওয়ার বিনিময়ে একজন নিরপরাধী পার পাওয়ার সুযোগ থাকে না। সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে তিন দশক পর একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মানুষ নিরপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডের পর এই ভুল সংশোধনের সুযোগ হতো কিভাবে। অ্যান্থনি রে হিল্টন ৫৮ বছর জীবনের অর্ধেকটা কাটিয়েছে ফাঁসির সেলে। ২৮ বছর পর প্রমাণিত হলো তিনি নিরপরাধ, কথিত অভিযোগ সত্য নয়। তিনি মুক্তি পেয়ে অঝোরে কাঁদলেন- বললেন, স্রষ্টার কাছে বিচারকদের জবাব দিতে হবে। আবদুল কাদের মোল্লা বা কামারুজ্জামানের ফরিয়াদ কে শুনবে?
আমাদের আদালত কসাই ও বিহারি কাদের মোল্লার বিচার করে তড়িঘড়ি ফাঁসি দিয়ে দিলো। যেদিন প্রমাণ হবে দুই মোল্লা এক নন, তখন আদালতের জবাব হবে কী! দেল্লা রাজাকারের সাথে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মিল নেই- এ দাবি বলিষ্ঠ। আদালত বেনিফিট সব ডাউটের সুযোগ নিয়ে বা অন্য কারণ দেখিয়ে তাকে যাবজ্জীবন দিয়েছে। প্রমাণ সাপেক্ষে ভবিষ্যতে তার রায় সংশোধনের সুযোগ রইল।
শাহবাগ মঞ্চের মাধ্যমে দৃশ্য-অদৃশ্য চাপ আদালত বিবেচনায় না নিলে বিচার চলমান প্রক্রিয়ায় আইন সংশোধনের খারাপ নজির সৃষ্টি হতো না। যে সুযোগ আসামি বা অভিযুক্ত পায় সেটা আদালত এবং অভিযোগকারীদের হাতে তুলে দেয়া হতো না। আন্তর্জাতিক মহলের সব বক্তব্য বিবেচনায় নিয়েও একটি স্বচ্ছ বিচারের ধারায় ইস্যুটির নিষ্পত্তি হতে পারত। জামায়াত-শিবির আদালতের প্রসিকিউশনে সাহায্য করে আবার হরতালের পথে যাওয়ার সুযোগ পেত না। এত বিতর্ক বিচারকে তাড়া করত না। বিসা বালী হত্যা নিয়ে সুখরঞ্জন বালীর অপহরণ নানা প্রশ্নের উদ্রেগ করত না। একটি বিচার চলছে কিন্তু দেশে বিদেশে কাউকে সন্তুষ্ট করছে না। তার পরও সরকারের অনড় অবস্থানই কি কামারুজ্জামানকে নজিরবিহীন দৃঢ়তা দেখিয়ে শহীদ হওয়ার বাসনা জাগিয়ে দেয়নি, নয়তো কামারুজ্জামান এতটা নৈতিক বল-ভরসা পান কিভাবে।
সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে বিচারকে আন্তর্জাতিক মানে তুলে ধরলে বর্বর পাকিস্তানি গণহত্যাকারীদের জামাই আদরে ছেড়ে দিয়েও তাদের রাজনৈতিক সহযোগীদের একটি গ্রহণযোগ্য বিচার হতে পারত। সেটাই হতো দৃষ্টান্ত। বিচারের নামে এই খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দগদগে ক্ষত সৃষ্টির প্রয়োজন হতো না। এখন এই মন্দ নজিরটি এই জনপদের আকাশে বাতাসে যুগ যুগ ধরে প্রতিহিংসার রাজনীতিকে অনুপ্রাণিত করবে।
নরখাদক ও ঘাতক ইয়াহিয়া বাহিনীর সব গরল ক'জন বাংলাদেশী হজম করে নিয়ে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুসোচনায় দগ্ধ করে যাবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও আমরা ছোট হয়ে গেলাম। অথচ সরকার নিজের মর্জি ও জেদকে সাহস ও দৃঢ়তা হিসেবে দেখাতে মরিয়া। কামারুজ্জামানের ফাঁসি নিয়ে সরকার নানাভাবে হেয়ালি প্রদর্শন করল। টানটান উত্তেজনা ও হিমশীতল এক নিষ্ঠুরতার আবহ সৃষ্টি করে হয়তো অভিযুক্ত এবং তার স্বজন ও প্রিয়জনদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করল। জনমনে সরকারের রাজনৈতিক মর্জির উৎকট প্রকাশ ঘটল। এর অর্জনটা কি খুব একটা সুখকর হলো? না, হয়নি। কারণ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে প্রতিটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুরভিসন্ধি ও প্রতিহিংসার কালো ছায়া জনগণ প্রত্যক্ষ করল। এর মাধ্যমে জাতি কোনো সুখবর পেল না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শনৈ শনৈ বার্তাও জনগণ গ্রহণ করল না। ঘুরেফিরে সাধারণের প্রশ্ন একটাই- জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে বোঝাপড়ায় একই পক্ষপুটে আপসের রাজনীতি করলে এতসব ডুগডুগি বাজত কি? শাহবাগে মজমা বসিয়ে নজিরবিহীন এক অপরাজনীতি নাটক মঞ্চস্থ করার সুযোগ কি কেউ কোনো দিন নিতে পারত?
শাহবাগ মঞ্চ তৈরির পর কম করে দশবার দেখতে গিয়েছি। মনে হয়নি এর ভেতর প্রাণ আছে, জাতির বৃহত্তম অংশের সায় আছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলার লাশ নিয়ে ইংরেজ ও মীরজাফরের বশংবদরা মুর্শিদাবাদে উল্লাস করেছে। সেই লাশ হাতির পিঠে তুলে কিছু মানুষ উল্লাস করেছে বলে ইতিহাস পাল্টে যায়নি। জন নোভাকের বর্ণনায় তার সংখ্যা অর্ধশত। লাখো মানুষ নীরবে কাঁদল। একইভাবে কাইভ যখন মুর্শিদাবাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে বর্জায় করে ভাগীরথী দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন নদীর দু'পাশে যত মানুষ তামাশা দেখেছে তারা একটি করে ঢিল ছুড়লে সেদিনই ইংরেজ আধিপত্যের পরিসমাপ্তি ঘটত। তাই কোনো মঞ্চ কাদের সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, সময়মতো ইতিহাস সেটা চিনিয়ে দেয়।
উৎসঃ নয়া দিগন্ত
__._,_.___
Posted by: Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com>
[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.
* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]
__,_._,___