আলোর চেয়েও দ্রুতগতি! |
সজীব সরকার | |
শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ | |
আলোর চেয়েও দ্রুতগতি!আলামত মিলেছে, প্রমাণ হলে আইনস্টাইনের তত্ত্বের কী হবে? মহাবিশ্বের গঠন ও এর কার্যপ্রক্রিয়ার ব্যাখ্যায় ব্যবহৃত তত্ত্বগুলোর অন্যতম হলো আইনস্টাইনের 'স্পেশাল রিলেটিভিটি' বা 'বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব'। ১৯০৫ সালে দেওয়া এ তত্ত্বে বলা হয়েছে, মহাবিশ্বে আলোই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গতিসম্পন্ন। আর এ মহাজগতে আলোর চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই_এ সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে আধুনিক পদার্থবিদ্যার কাঠামো ও এর আরো অনেক তত্ত্ব। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বারবার জয় হয়েছে আইনস্টাইনের এ তত্ত্বের। কিন্তু এবার দৈবাৎ এক আবিষ্কার পণ্ড করতে চলেছে সেই তত্ত্বকে।গবেষকরা জানিয়েছেন এমন এক বস্তুর কথা, যা আলোর চেয়েও বেশি গতিসম্পন্ন (সুপারল্যুমিনাল)। তবে এ আবিষ্কারে শঙ্কিত খোদ বিজ্ঞানীরাই; তাঁরা বলছেন, এ আবিষ্কার সত্যি হলে পদার্থবিদ্যা শুধু নয়_জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহু শাস্ত্রেই বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও এর অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের যাবতীয় প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা আবার নতুন করে লিখতে হবে। তাই বিজ্ঞানীরা বারবার পরীক্ষায় একই ফল পেলেও এখনই সরাসরি এ দাবি করার সাহস করেননি। কোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে গবেষকরা বরং এ ফল প্রকাশ করে এ ব্যাপারে অন্য বিজ্ঞানীদের পরামর্শ চেয়েছেন। ইউরোপিয়ান অরগানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ বা সার্ন-এর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নিউট্রিনো নামে একটি উপপারমাণবিক কণা (সাব-অ্যাটমিক পার্টিকেল) রয়েছে, যা একাধিক রূপে পাওয়া যায়। এদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এরা খুব অল্প সময়ে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি রূপ থেকে অন্যটিতে বদলে যেতে পারে। সম্প্রতি ইন্টারনেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনেভার সার্ন গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা নিউট্রিনোর একটি রূপ 'মুওন নিউট্রিনো' বিচ্ছুরিত করেন। পরের ধাপটি হলো, সার্ন থেকে প্রায় ৭৩০ কিলোমিটার দূরে ইতালির গ্রান সাসোর গবেষণাগারে ডিটেক্টর যন্ত্র দিয়ে ওই বিচ্ছুরণগুলো ধরা হবে। এ পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল, ওই দূরত্ব পাড়ি দিতে গিয়ে যে সময় ব্যয় হবে ওই সময়ে পানি, বাতাস ও পাথুরে মাধ্যম হয়ে যাওয়ার সময় নিউট্রিনো কণা অন্য আর কী রূপে পরিবর্তিত হতে পারে, তা পর্যবেক্ষণ করা। আর এ পরীক্ষার সময় দেখা যায়, ওই দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার সময় নিউট্রিনো কণা আলোর গতিকে (সেকেন্ডে প্রায় তিন লাখ কিলোমিটার) পরাস্ত করেছে। ওই ৭৩০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে আলোর যে সময় লাগার কথা, এর চেয়ে ৬০ ন্যানোসেকেন্ড (১ ন্যানোসেকেন্ড=১ সেকেন্ডের ১ বিলিয়ন ভাগের ১ ভাগ) কম সময়ে নিউট্রিনো কণা ওই দূরত্ব পাড়ি দিয়েছে। সার্নের গবেষক ড. আন্তনিও ইরেদিতাতো জানিয়েছেন, এ পরীক্ষায় কণাটির গতি পরীক্ষা করা উদ্দেশ্য ছিল না। ঘটনাক্রমে আলোর চেয়ে বেশি গতির কোনো অস্তিত্বের সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা। তবে এ আবিষ্কারের মর্মার্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরেদিতাতো ও তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, তিন বছর ধরে তাঁরা ওই পরীক্ষা চালিয়েছেন। বারবার তাঁরা প্রত্যাশা করেছেন, পদ্ধতিগত ভুলের কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। এ ব্যাপারে সার্ন-এর মুখপাত্র জেমস জিলিস বলেন, 'আমাদের বেশির ভাগই মনে মনে জপছেন, এটি ভুল, এটি সত্যি হতে পারে না।' কিন্তু প্রতিবার একই ফল পাওয়া গেছে। ব্যাপারটি সত্যি হলে আধুনিক পদার্থবিদ্যার অনেক তত্ত্ব-তথ্যই ভ্রান্ত প্রমাণিত হবে। মহাবিশ্বের গঠন ও এর কার্যপ্রণালীর ব্যাখ্যাও প্রায় সম্পূর্ণ পাল্টে যেতে পারে। তাই এখনই কোনো সিদ্ধান্তে না গিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে তাঁরা এ গবেষণার বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত ইন্টারনেটে প্রকাশ করেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য হলো, অন্য গবেষক-বিজ্ঞানীরা নিজেরা পরীক্ষা চালিয়ে এ বিষয়ে তাঁদের পাওয়া ফল ও সিদ্ধান্ত নিয়ে সবার সঙ্গে মতবিনিময় করে অবশেষে এর সত্যতা সম্পর্কে একটি ধারণায় আসবেন। তবে এ গবেষণার ফল প্রকাশের পর এরইমধ্যে এর প্রভাব নিয়ে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। শিকাগোর গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফার্মিল্যাবের প্রধান তাত্তি্বক স্টিফেন পার্ক মন্তব্য করেছেন, তথ্যটি সঠিক হলে এটি অবশ্যই ঝামেলা তৈরি করবে_এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। সার্ন-এর অপর এক গবেষক জন এলিস জানিয়েছেন, এ আবিষ্কার এতই সংবেদনশীল যে এটি সত্য হয়ে থাকলে বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সামলানো উচিত। ফার্মিল্যাবের অপর বিজ্ঞানী রব প্লাঙ্কেট তাঁর মন্তব্যে বলেন, আইনস্টাইনের তত্ত্বের বিপক্ষে কোনো তথ্য উপস্থাপন করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা বারবার তাঁর তত্ত্বগুলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ফার্মিল্যাব খুব শিগগিরই ওই পরীক্ষাটি নিজেরা পরিচালনা করে দেখবে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ ব্রায়ান গ্রিন বলেছেন, 'এটি সত্যি হলে আমরা সত্যিই বেশ রোমাঞ্চিত হব, কেননা আমরা এমন কিছু ভালোবাসি যা আমাদের বিশ্বাসের ভিতকে নাড়িয়ে দেয়। এজন্যই তো আমরা বেঁচে থাকি।' একাধিক গবেষক ওই প্রতিবেদন পড়ে মন্তব্য করেছেন, আলোর গতিকে পরাস্ত করার বিষয়টি সত্যি হলে তা অবশ্যই চমকে যাওয়ার মতো ঘটনা। এর গুরুত্ব অকল্পনীয় আর সত্যিই এটি বিজ্ঞানকে বড় ধরনের ঝামেলায় ফেলে দেবে। আবিষ্কারকরা সেটি বুঝতে পেরেছেন এবং তাই তাঁরা কোনো দাবি করার আগে তাঁদের পরীক্ষার ফল বিজ্ঞানীসমাজের সমালোচনা-পর্যালোচনার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। গবেষকরা বলছেন, আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আধুনিক পদার্থবিদ্যার প্রায় সব প্রশ্নেরই উত্তর দেয়। কিন্তু আলোর চেয়ে বেশি গতির এ তথ্য সত্যি প্রমাণ হলে এ তত্ত্ব নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এর মানে অবশ্য এই নয়, 'আমাদের জীবনধারা কিংবা মহাবিশ্বের আচরণ বদলে যাবে। তবে এই পৃথিবী বা মহাবিশ্বকে আমরা কিভাবে দেখি, কিভাবে ভাবি_তার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।' সূত্র : এপি, রয়টার্স, বিবিসিনিউজ, ইয়াহুনিউজ, আল-জাজিরা, কসমোলজিসায়েন্স, ওয়াশিংটনপোস্ট, অনলাইন। |
স্বতঃসিদ্ধ- আলোর বেগের চেয়ে দ্রুতগতিতে ভ্রমণ সম্ভব নয়। তার মানে হলো, আলোর চেয়ে
দ্রুতগতি সম্পন্ন কোন কণা মহাবিশ্বে নেই। কিন্তু সেই স্বতঃসিদ্ধকে ভুল প্রমাণের দাবি
করছেন একদল বিজ্ঞানী। নিউট্রিনো নামে একটি কণা আলোর চেয়ে দ্রুতগতি ...
Faster than light measurement shocks physicistsWashington Post - 1 day ago Scientists at the CERN research institute near Geneva claim to have accelerated subatomic neutrino particles faster than the speed of light. (Sept. ... |
The trouble with neutrinosToronto Star - 46 minutes ago Result: on average, the neutrinos seemed to complete the journey 60 nanoseconds faster than they would have done at the speed of light. ... Professor Einstein, you can relax. E still equals mc2. Probably … - The GuardianSwiss Scientists Challenge Einstein's Law of Relativity - The Takeaway |
__._,_.___