Banner Advertise

Saturday, September 14, 2013

[chottala.com] "‘র‌্যাব’ গঠিত হওয়ার পর রক্ষীবাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা নতুন করে বুঝতে পারি।": রক্ষীবাহিনী: সত্যকথন ও দায় স্বীকার



ইতিহাস

রক্ষীবাহিনী: সত্যকথন ও দায় স্বীকার

মহিউদ্দিন আহমদ | আপডেট: ০০:০৪, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৩ প্রিন্ট সংস্করণ
১২
      

রক্ষীবাহিনী: সত্যকথন ও দায় স্বীকারআনোয়ার উল আলম শহীদ রক্ষীবাহিনী নিয়ে বই লিখবেন, কয়েক বছর ধরেই এ খবর পাচ্ছিলাম। গত জুনে তাঁর রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা বইটি প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশক অভিজাত প্রকাশনা সংস্থা প্রথমা। বইটির ব্যাপারে আমার আগ্রহ জানতেন বলে লেখক একটি কপি আমাকে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি সপরিবারে আমেরিকা-ইউরোপ চলে যান। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন; বইটিতে অন্তর্ভুক্ত কিছু তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে তাঁর সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেছি। তাঁর বিদেশে অবস্থানকালে এই বইটির ওপর লেখক-গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের একটি রিভিউ এই প্রথম আলোতে গত ৬ আগস্ট 'রক্ষীবাহিনীর উত্থান ও পতনের কাহিনি' শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।
আনোয়ার উল আলম শহীদকে আমি ৩৫ বছর ধরেই ঘনিষ্ঠভাবে জানি। ১৯৭৯ সালের শেষ দিকে আমি যখন জাকার্তায় আমাদের দূতাবাসে কাউন্সেলর ও মিশনের উপপ্রধান হিসেবে যোগ দিই, শহীদ তখন ওখানে ফার্স্ট সেক্রেটারি। এর আগে রক্ষীবাহিনীর ডেপুটি ডিরেক্টরের পদ থেকে তাঁকে সামরিক বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে আত্তীকরণ করা হয়। ওখান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি এবং সেখান থেকে জাকার্তায়।
দুই
আনোয়ার উল আলম শহীদ জাকার্তা থেকে বদলি হয়ে যান কুয়ালালামপুরে, আমি জেদ্দায়। কুয়ালালামপুর থেকে তিনি যান ব্রুনাই দারুস সালাম, সেখান থেকে হংকং। শেষ জীবনে তিনি অতিরিক্ত সচিব, সচিব মর্যাদায় বাহরাইন ও স্পেনে আমাদের রাষ্ট্রদূত। ব্রুনাই থাকাকালে ড. সফিক সিদ্দিকী যখন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন শেখ রেহানার ডাকে প্রথম ছুটে যান তাঁর স্ত্রী ডা. সাঈদা খান। এ ঘটনা আমি বছর পনেরো আগে প্রথম পড়ি ড. সফিক সিদ্দিকীর আত্মজীবনীমূলক বইয়ে। টাঙ্গাইলে শহীদ নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেছেন ছোটখাটো একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর; আর তাঁর স্ত্রী স্থাপন করেছেন তাঁদের গ্রাম ইছাপুরে একটি ক্লিনিক। আনোয়ার উল আলম শহীদ তাঁর এই বইয়ে যে কথাগুলো লিখেছেন, তার বেশির ভাগই ৩৫ বছর ধরে আমি তাঁর কাছ থেকে শুনে আসছি। এসব কথা শোনার পর তাঁর ওপর আমার চাপ ও তাগিদ আরও দৃঢ় হয়েছে যে এই কথাগুলো দেশের মানুষেরও জানানো জরুরি। বঙ্গবন্ধু ও রক্ষীবাহিনীকে নিয়ে অনেক বছর অপপ্রচার চলেছে, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর। বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষীরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর নেতৃত্ব এবং অতুলনীয় অবদানের কারণে তখন তাঁকে সহ্য করতে পারেনি। এখনো পারে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁর নাম উচ্চারণ করাটা যখন নিষিদ্ধ ছিল, তখন তাঁকে আক্রমণ করার জন্য এই রক্ষীবাহিনীর সৃষ্টিকেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে, রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, বাড়াবাড়িকে উদাহরণ হিসেবে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে একপক্ষীয় প্রচারণায়।

 তিন 

'র‌্যাব' গঠিত হওয়ার পর রক্ষীবাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা নতুন করে বুঝতে পারি। ১৯৭২-৭৫ সময়কাল তো আরও বেশি ভয়ংকর ছিল। 'র‌্যাব'-এর 'ক্রসফায়ার', 'এনকাউন্টারে' এখন বেশি মানুষ মারা পড়ছে? নাকি তখন রক্ষীবাহিনীর হাতে চরমপন্থী, উগ্রপন্থীরা বেশি? বাংলাদেশবিরোধীরাও তো সাংঘাতিকভাবে সক্রিয় তখন। চীনপন্থীদের একাংশ তখন মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুকুরের লড়াই বলে উপহাস করত। ১৯৭৪ সালের ২৭ জুন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর বাংলাদেশ সফরকালে ঢাকায় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে যে সংবর্ধনা দেওয়া হয়, তা কারা দিয়েছিল? এরা তো আমাদের 'একাত্তর'কেই প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করল। ৩০ লাখ শহীদকে অস্বীকার করল। তারপর আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, জাসদের কিছু উগ্রপন্থী এই ঢাকা শহরের কেন্দ্রে মিন্টো রোডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর বাড়ি ঘেরাও করেছিল ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ। ঔদ্ধত্য কারে কয়? আর ওই বছরের ৭ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত ছাত্র হত্যার অভিযোগে এখন 'জাগপা'প্রধান শফিউল আলম প্রধানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, বাঙালি—এসবের বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছিল। তবে এটাও রূঢ় সত্য যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ—সব 'লীগ' নামধারীদের দখল প্রতিযোগিতা চলছিল, পাকিস্তানিদের বাড়িঘর, জমিজমা, ফ্যাক্টরি—কোনো নিয়মকানুনের বালাই ছাড়া। বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনে ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে দিল্লি থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম এলাম। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে লন্ডন থেকে বদলি হয়ে দিল্লি এসেছি। ঢাকা থেকে ফেনী, চারটি বড় বড় ফেরি, সকাল আটটায় রওনা হয়ে বিকেল চারটায় ফেনীতে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালাম। (সেদিন ২৫ আগস্টও আট ঘণ্টা লেগেছে, যাত্রাবাড়ীর ট্রাফিক জ্যামের কারণে।) 

বাড়িতে যে কদিন থাকলাম, অনেকের মুখে এক কথা—রক্ষীবাহিনীর সবাই ভারতীয়, আসামের বা দক্ষিণ ভারতের, তা না হলে গায়ের রং এমন কালো কেন? আর এই যে মুহুরী নদীর পানিতে বন্যা হয়েছে, সবই বন্ধুরাষ্ট্রের পানি। বাংলাদেশকে 'স্যাবোটাজ' করে ভারতনির্ভরতার জন্য ভারত সব পানি ছেড়ে দিয়েছে! এসব লোককে তখন কে বলবে, '৭১ সালের ভারতের সাহায্য না-হয় না-ই বলা হলো, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ অ্যাকাউন্ট তো ভারতের দেওয়া ডলার-পাউন্ড দিয়েই শুরু হলো; পেঁয়াজ, মসলাপাতি, সস্তা লুঙ্গি-শাড়ি, এমন সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাশের ভারত ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক দামে আর কোথাও পাওয়া যায় না।
চার
রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত কতগুলো অভিযোগ রক্ষীবাহিনীর তৎকালীন তিন ডেপুটি ডিরেক্টরের কনিষ্ঠতম আনোয়ার উল আলম শহীদ স্বীকার করেছেন। বঙ্গবন্ধু এই রক্ষীবাহিনী প্রতিষ্ঠা করে এত নিন্দিত হলেন অথচ বঙ্গবন্ধুকে রক্ষায় বা তাঁকে হত্যার পর দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধে বা প্রতিবাদে রক্ষীবাহিনী কিছুই করতে পারল না, সেই ব্যর্থতার অকপট স্বীকৃতি আছে বইয়ে। শহীদ বলছেন, সেদিন তোফায়েল আহমেদ ছাড়া আর কেউ এতটুকু সাহস দেখাতে পারেননি। তিনি শেরেবাংলা নগরে রক্ষীবাহিনীর 'হেড অফিসে' এসেছিলেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে নির্দেশ চেয়েও পাননি। কতগুলো জায়গায় তাঁরা ছোটাছুটি করেছেন, কিছুই করতে পারেননি। শহীদ পরিবার আয়েশা ফয়েজ এবং তাঁর সন্তান হুমায়ূন আহমেদ, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীবদের যখন মোহাম্মদপুরে তাঁদের বরাদ্দ করা বাড়ি থেকে রক্ষীবাহিনী উচ্ছেদ করল, তখন রক্ষীবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নূরুজ্জামান দ্রুত শহীদজায়া আয়েশা ফয়েজের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন।
আনোয়ার উল আলম শহীদ ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকীর বাহিনীতে নেতৃত্বেও ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের, মওলানা ভাসানী এবং অন্য সব দলের নেতাদেরও কাছ থেকে দেখেছেন। প্রত্যাশিতভাবেই তাঁদের কথাও আছে বইয়ে। বঙ্গবন্ধু বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণের প্রস্তাব দেবেন, সে জন্য তাঁকে আনতে শহীদকেই পাঠালেন তিনি। ডেপুটি চিফ অব আর্মি জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তখনকার পশ্চিম জার্মানিতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠানোর প্রস্তাব, বঙ্গবন্ধুকে ধরে-কয়ে কীভাবে বাতিল করা হলো, তার বর্ণনাও আছে এই বইয়ে। এসব বর্ণনা যেমন আছে তেমনি আছে মওলানা ভাসানী, খালেদ মোশাররফ এবং এমন আরও কিছু মানুষ সম্পর্কে অবিশ্বাস্য কিছু কথাও।
আনোয়ার উল আলম শহীদের এটি দ্বিতীয় বই। তাঁর প্রথম বই একাত্তর আমার শ্রেষ্ঠ সময়, প্রকাশকাল ২০০৯, প্রকাশক সাহিত্য প্রকাশ। এই বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ এখন বাজারে। রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা বইটিরও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় মুদ্রণ বাজারে।
রক্ষীবাহিনীর ওপর তাঁর এই বই সম্পর্কে অভিযোগ, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের ওপর তাঁর বইটি ছোট হয়ে গেছে, মাত্র ২৪৮ পৃষ্ঠা। তার মধ্যে ১০টি পরিশিষ্ট প্রায় ৭০ পৃষ্ঠা। তবে পরিশিষ্টগুলোর সবই গুরুত্বপূর্ণ। নয়টি অধ্যায়ের প্রতিটির শেষে তথ্যনির্দেশ। তথ্যনির্দেশের বেশির ভাগই ব্যাখ্যামূলক।
রক্ষীবাহিনী সম্পর্কে বলা যায়, এটি একটি সূচনামূলক বই। আমার প্রত্যাশা, রক্ষীবাহিনী সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য বের করে আনার জন্য গবেষণামূলক এবং বস্তুনিষ্ঠ লেখালেখি চলতে থাকবে।
মহিউদ্দিন আহমদ: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব, কলাম লেখক।
mohiudddinahmed1944@yahoo.com

http://www.prothom-alo.com/opinion/article/47332/%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%80_%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%A8_%E0%A6%93_%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0




__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___