ঢাকায় সেনাবাহিনীতে ক্যু বা অভ্যুত্থান নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে বোল চাল চলছে হরদম। ধরে নেয়া যায়,সম্ভাব্য গণ অভ্যুত্থান ঠেকাতে চালু করা হয়েছে এই বোল চাল। কাট্টা ব্ল্যাক মেল।আসলে কোনই ক্যু হয়নি। এক চাণক্য কৌশল বাস্তবায়নে রাজনীতির ভঙ্গুর দেহে ধাক্কা মেরে ছড়ানো হয়েছে এই আত্নঘাতি প্রচারনা।
তা হলে হয়েছেটা কি?
সরকার তার ভারতপন্থি ও পা চাটা ঘরানার সেনা অফিসারদের দিয়ে ডাহা মিথ্যা রটিয়েছে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন ও সংবাদ মাধ্যম ব্যাবহার করে।এ যেন পচনধারায় রুপান্তর হয়ে যাওয়া রাজনীতির ঔদত্য। উল্লেখ্য,লক্ষ্যভেদী এই প্রোপাগান্ডার সূচনা হয় সরকারী পৃষ্টপোষকতায়। ভাবা হয়েছে, এই চাতুর্যময় পদক্ষেপ সরকারের আয়ু বাড়িয়ে দেবে।
তবে এই প্রতারনায় দেশবাসী হয়েছেন বিভ্রান্ত এবং বাংলাদেশ হয়েছে অপমানিত ও হারিয়েছে গৌরব। এতে ক্ষতি হয়ে গেছে যথেষ্ট,অসীম ক্ষতি। যে ক্ষতির খেসারতে হয়তো বাংলাদেশ বাধ্য হতে পারে মানচিত্রে পরিবর্তনেও। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক আনুগত্যের পরিবর্তনের বিষয়ও উঠে আসবে বিকট ভাবে। বৃথা করে দেবে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরত্ব এবং আত্নত্যাগ। স্বার্থক করবে পাকিস্থান ভাঙ্গা এবং পূর্ব পাকিস্থান কে আলটিমেটলি ভারতের করদরাজ্য করা। সুতরাং এই ঘটনা রোধ করতে হবে শক্ত হাতে।
এজন্য প্রস্তাবনা হল;কোন অবস্থাতেই দলীয় রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গীতে এবিচার বা তদন্ত কোনটাই নয়, সামরিক বিবেচনাতেই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাগত অপরাধের বিচার কার্যকর করতে হবে। সে জন্যে চাই শান্তি কামী বিশ্বশক্তি সমূহের জোরালো সমর্থন ও আর তার আগে লাগবে ব্যাপক জনগনের মধ্যেকার স্বাধীনতা পন্থীদের লড়াকু একতা। কেননা সরকার যখন রাষ্ট্রযন্ত্রকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে চলেছে, তখন বিষয়টাকে আর নিছক রাজনৈতিক দলবাজির মধ্যে রাখার অর্থ শত্রুর কাছে নিজেদেরকে পরাজিত করার পথ খোলা করে দেয়া। যেরকম উদাহরন বাংলাদেশে হয়ে আসছে। উপমহাদেশেও আরও আছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশে রাষ্ট্রদ্রোহের এই বিচার সাধারণ প্রচলিত রাজনৈতিক ধারায় আশা করা যায়না। এব্যাপারে সময় ক্ষেপণও শত্রুদের প্রশ্রয় দেয়ার শামিল।
সম্প্রতি বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টার খবর ছড়িয়ে রাজনীতি কাঁপানোর উদ্যোগ হয়েছে। চেষ্টা হয়েছে সন্ত্রাশ ছড়ানোর। সেনাবাহিনীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে অভ্যুত্থানের চেষ্টার বা বিশৃঙ্খলার খবর জানান দিয়ে সারা দুনিয়ার বাঁকা নজর আনার চেষ্টা হয়েছে। নিশ্চয়ই সেটা বাংলাদেশের জন্য মর্যাদা হানিকর। এতে দাবী করা হয়,সেনাবাহিনীর জঙ্গি ইসলামিক পন্থীরা নাকি একই ধারণার রাজনৈতিক দলের যোগসাজশে সরকার পতনের উদ্দেশ্যে এই সেনা অভ্যুত্থান করতে উদ্যোগী হয়।
এদিকে অভ্যুত্থান সফল হবার আগে ভাগেই সেনাগোয়েন্দারা নাকি সেই উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিয়ে সেনাবাহিনী ও দেশরক্ষা করেন । ২৮ ডিসেম্বরের এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন, সেনা বাহিনীর পার্সোনাল পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজজাক। তার সঙ্গে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত জাজ এডভোকেট জেনারেল লেঃ কর্নেল মুহাম্মদ সাযযাদ সিদ্দিক এবং উপস্থিত থেকে ঘটনার নেতৃত্ব দেখিয়েছেন চীপ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেঃ জেনারেল মঈনুল ইসলাম। কি কারনে তাঁকে ওখানে থাকতে হল? কি তার রহস্য?
বিডিআর এর ডিরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল শাকিল সহ ৫৭ সেনা অফিসারদের একতরফা হত্যার অভিযান সম্পন্ন করার মধ্যদিয়ে শেষপর্যন্ত বিডিআর ধংশ করার ক্ষেত্রে সফল হন মিঃ মঈনুল। এভাবে তিনি দৃশ্যে উত্থান পান। তবে তিনি নায়ক নন,বিয়োগান্ত নাটকে একজন খল অভিনেতা এবং অল্প সময়ে কৃতিত্বের জন্য রেকর্ড পরিমাণ দ্রুততায় উচ্চতর র্যাঙ্ক গুলো পেয়েছেন ও পজিশনে উঠেছেন। এই নাটের গুরুর জেনারেল হতে আর এক ধাপ বাকি মাত্র। সীমান্ত পাহারায় বিডিআর বাতিল করে তার নেতৃত্বে চৌকিদার (বিযিবি) মোতায়েন করেছেন,যাতে লড়াই করা দূরে থাকুক, যখন তখন ভারতীয় চোরাকারবারি রাই বাংলাদেশী বাঘ গুলোকে ছাগলের মতো তুলে নিয়ে যেতে কোন অসুবিধা না হয়।
বিশ্ববিখ্যাত ইকনমিষ্ট ম্যাগাজিন ও নিউ ইয়র্ক টাইমস সহ বিশ্ব গনমাধ্যমে প্রমানিত যে,সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত লিখিত বক্তব্যের তথ্যে সেনাবাহিনীর ভিতরে জঙ্গি গ্রুপের অস্তিত্ব বা চরমপন্থী ইসলামী রাজনীতির তৎপরতার কোন চিহ্ন থাকার প্রমান ছিলোনা । যদিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের বা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পক্ষ হতে লিখে দেয়া এই বক্তব্যটি পড়ার জন্য অনেক লোক ছিল। তাদের কাউকে দিয়ে তা পড়াতে পারতেন। কিন্তু থাকলে ও সেনাঅফিসার দিয়ে তা পড়ানো হয়েছে। যার পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত। সরকার এই কাজটিও করলেন জেনে বুঝেই।
তবে সেনাবাহিনী হতে অবসর নেয়া এবং সেনাবাহিনীতে কর্মরত দায়িত্ববান অনেক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাঠামো কোনভাবে রাজনৈতিক মতামত ও এধরনের মতবিরোধ প্রশ্রয় দেয়না এবং জঙ্গি গ্রুপের অস্তিত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আগেও ছিলোনা এখনো নেই। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী রাষ্ট্রের পক্ষে লড়াই করে বিজয়ী হবার সুযোগ্য। এই বাহিনীর সেনাদের ব্যাক্তিগত ও গ্রুপগত যোগ্যতা প্রতিবেশী বন্ধু-শত্রুদের চেয়েও অনেক অনেক উন্নততর।
সে যাই হউক,অনেককে এই অভ্যুত্থানের দায়ে শাস্তি দেয়ার নাটকও গণ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং জামাতে ইসলামির নেতাদের নাম জড়ানো হয়েছে।জড়ানো হয়েছে নিষিদ্ধ কিছু সংগঠনের নাম। এতে ৭৫এ শেখ মুজিবের সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানকারীদের একজন সমর্থক মেজর খায়রুজ্জামানের নামও আনা হয়েছে। তাদের আত্নীয় সূত্রের লোকদের নাম আনা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক প্রসঙ্গও টানা হয়েছে।এসবই করা হয়েছে বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য। কেননা ওরা নিজেরাও জানেন তারা মিথ্যা বলছেনও প্রতারনা করছেন।
বাংলা রিপোর্ট ডট কম নামে এক ইন্টারনেট পত্রিকায় একজন সাংবাদিককে দিয়ে লিখানো হয়েছে আমার ফেইচ বুক আইডি সহ আমার নাম সহ এতে যুক্ত করা আরেক গল্প। আমি আবু জাফর মাহমুদ ও নাকি এধরনের অভ্যুত্থানের পেছনে একজন স্থায়ী ডোনার। নিউইয়র্কের আরেক বাংলাদেশীর নামও এতে যুক্ত করেছেন। কেবল তাই নয়। বিএনপির তারেক রহমান সাহেবের দিকেও আঙ্গুল ঘুরানো হয়েছে।অথচ তারেক সাহেবের সাথে আমার কোন পরিচয় নেই।
বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর আগে সৈয়দ আশরাফকে কেন সাধারন সম্পাদক পদে আমদানী করা হয়েছিল বা তিনি কার স্বার্থে এই চাকরি পেলেন,তা আর এতদিনে বুঝার বাকি নেই। কেন তিনি এই অভ্যুত্থান সংক্রান্ত প্রচারনায় যুক্ত আছেন, তাও পরিষ্কার।
জনাব সৈয়দ তার বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক অনুসারী, যিনি ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন,পাকিস্থান হতে বিচ্ছিন্ন করার পর বাংলাদেশ ভারতীয় অধীনস্থ থাকবে-এই অঙ্গীকারে। সেই ৭দফা চুক্তির অন্যতম ছিল বাংলাদেশে সেনাবাহিনী না রাখার এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধীনে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ন্যস্ত করার।
সৈয়দ আশরাফের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আনন্দ বিনোদনের পার্টনার ইশরাক আহমেদকে তথাকথিত সেনা
অভ্যুত্থানের নায়ক দেখানো হয়েছে। বিশ্বস্থতার কারনেই তার নাম ব্যাবহার হয়েছে এখানে। সেনা অভ্যুত্থান করিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা নেয়ার সামান্য যোগ্যতাও তার মধ্যে পাওয়া যায়নি। যিনি তার সঙ্গী অবসরে থাকা লেঃ কর্নেল এহছান ইউছুপ কে বলেছেন, তথাকথিত অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীর সংখ্যা কমিয়ে এক(১) ব্রিগেড করা হবে ও সেনাপ্রধান করবেন একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে ।
ইশরাকের মুখ দিয়ে একথাটি আলোচনায় আনা হল মাত্র। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি প্রচার মাধ্যমে দিয়ে প্রকৃত পরিকল্পনাকারীরা কি চাইছেন,তা বুঝে ওঠা কি কঠিন? হয়তো জাতির মানসিক পরীক্ষাটা ঝালাই করে নিলেন একবার। এর পরেই আসবে ধারাবাহিক ঘটনা,যাতে সেনাবাহিনীর গলা কাটার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যায়।
মুজিব্বাহিনীর সদস্য ইসরাক সম্পর্কে আমার দেশ পত্রিকা ৭ ফেব্রুয়ারী মোটামুটি তথ্য দিয়েছে। সংবাদের শিরোনাম "ব্যর্থ অভ্যূত্থানের নায়ক সৈয়দ আশরাফের ঘনিষ্ঠ বন্ধু"। তথ্য বের করার এই সফলতায় ধরে নেয়া যায়, বাংলাদেশ রক্ষার জন্য নিবেদিত তৎপরতাও বেশ জোরালো। পত্রিকার এই সংবাদে আওয়ামী লীগ ও সরকারের উদ্যোগেই যে এই ক্যু নাটকের ব্যাবস্থা হয়েছে,তাতে সামান্য সন্দেহ ও আর বাকি থাকলোনা। যদিও সরকারি বিবৃতি বক্তৃতায় ফোটে উঠেছে,এই অভ্যূত্থানের গল্প দিয়ে আন্দোলনকারী বিএন পি-জামাত ও ক্ষুদ্ধ-বিক্ষুদ্ধ জনগণকে সন্ত্রস্ত্র করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস মেশিনারি প্রয়োগের মাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে জেলখানায় আটকের হুমকি দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়াকে। তার কর্মচারী মন্ত্রীরাও একই ভাষায় কথা বলেছেন,তারেক জিয়াকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অপরাধী প্রমান করে ফাঁসিতে ঝুলাতে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাকে তারা রাজনৈতিক হাতিয়াররুপে ব্যবহার করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে,যা বলা হয়েছে ঘটতে চলেছে ঠিক তার উল্টো।
কার খোড়া কবরে কে মাটি চাপা পরে,কে জানে? সব ই রহস্যে ঢাকা। বলা যায়,সব জনগণ বিএনপি করেননা। বেগম জিয়াদের সাথে পরিচয়ও রাখেননা। কিন্ত এই ব্যাপারে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে গ্রেফতার চাইছেন প্রধানমন্ত্রীসহ সকলকে,যারা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ করছেন এবং সেনাবাহিনী ধ্বংসের পথ ধরেছেন। দালাল সেনা অফিসারদের কি কোর্ট মার্শাল হবেনা? তারা যদি ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রের পক্ষে ফিরে আসেন,তাতে তাদের সম্মান রক্ষা পেতেও পারে।
এই অপরাধের সাথে যুক্ত সেনাঅফিসার ও রাজনীতিবিদদের রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধের দায়ে ফাঁসি দাবী করা শুরু হয়ে গেছে।আগুনের ফুলকিও দেখা দিতে পারে।যাতে স্থায়ী আগুন ছড়াতে পারে আগ্নেয়গিরির তাপে।সুতরাং একটা যথার্থ শক্তিশালী সরকার প্রতিষ্ঠার তাগিদও দ্রুত বাতাসের গতিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
অপরদিকে কয়েকটি বিদেশী লবি খালেদা জিয়াকে ফাঁদে ফেলার পথ নিয়েছে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে। সেটা হল তাকে চিরতরে ঘায়েল করার পথ। নির্বাচন করার সুযোগ দিয়ে জনতার সম্ভাব্য আগ্নেয় গিরির উপর বরফ বর্ষণের এই চাণক্য কৌশল চারিদিকে বিশ্লেষকদের মধ্যে কৌতূহল চালু করেছে।