Mujib is the founding father of beating teachers in Bangladesh. He was rusticated for life when he put his hand on the Registrar's collar and forced the teacher inside locked toilet. Jiye Sonar tukru chhelera.
শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক
11 September 2015, Friday
আগে আমাদের সমাজজীবনে শিক্ষকদের যে মর্যাদা ছিল, বর্তমানে তা আর নেই। এই না থাকার জন্য ছাত্ররা দায়ী নয়। শিক্ষকেরাই দায়ী। আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন সে স্কুলের কোনো শিক্ষক আমাকে বলেননি, তুমি যদি আমার কাছে না পড়, তবে পরীক্ষায় পাস করতে পারবে না। অনেক শিক্ষক সে সময় স্কুলে পড়ানোর পর অবসর সময়ে গৃহশিক্ষকতা করতেন। নিতেন তার জন্য বেতন। কিন্তু তারা তাদের এই গৃহশিক্ষকতা করার কারণে স্কুলে ছাত্র পড়ানোয় কোনো গাফিলতি করেননি। কিন্তু বর্তমানে সেই একই স্কুলের শিক্ষকেরা ছাত্রদের বলছেন, তোমরা যদি আমার কাছে কোচিং না কর, তবে পরীক্ষায় পাস করতে পারবে না। স্কুলে এরা বেতন নিচ্ছেন; কিন্তু স্কুলে এরা কার্যত পড়াচ্ছেন না। কোচিং করে হতে চাচ্ছেন বিত্তবান। শিক্ষকদের এই বাণিজ্যিক মনোভাব তাদের সামাজিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করেছে। শিক্ষকেরা যদি এই বাণিজ্যিক মনোভাব দূর করতে না পারেন, তবে ফিরে আসবে না তাদের আগের সেই সামাজিক মর্যাদা। কোচিং এখন স্কুল ছেড়ে কলেজে পৌঁছেছে। কলেজের শিক্ষকেরা আর আগের মতো ছাত্র পড়াচ্ছেন না। ছাত্রদের আসতে হচ্ছে তাদের বাড়িতে বাড়তি বেতন দিয়ে কোচিং ক্লাস করার জন্য।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সম্প্রতি বলেছেন (বাংলাদেশ প্রতিদিন : ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫), যারা শিক্ষক লাঞ্ছিত করে, তারা প্রকৃত ছাত্র নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যেসব শিক্ষক ছাত্রদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, তারা কি প্রকৃত শিক্ষক? যেসব শিক্ষক ছাত্রদের এখনো নিয়মিত ক্লাস নেন এবং তাদের খেটে পড়ানোর চেষ্টা করেন, সেসব শিক্ষক এখনো ছাত্রদের কাছে পেতে পারছেন বিশেষ শ্রদ্ধা। তাদের গায়ে ছাত্ররা ভাবছে না হাত তোলার কথা। শিক্ষকেরা যদি প্রকৃত শিক্ষক হন এবং রাজনীতি থেকে থাকেন দূরে, তবে তারা ছাত্রদের হাতে এখনো যে লাঞ্ছিত হবেন, তেমন পরিস্থিতি দেশে সৃষ্টি হয়নি। এমনটাই আমার ধারণা। ছাত্ররা সব দেশেই কমবেশি রাজনীতি করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ে ছাত্ররা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে ভিয়েতনামে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য। তারা মিছিল করেছে, আন্দোলন করেছে খুবই নিয়মতান্ত্রিকভাবে। সৃষ্টি করেনি কোনো মারদাঙ্গার পরিবেশ। এরা মেনে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিধিবিধানকে। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের অভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় রাজনীতি হচ্ছে না নিয়মতান্ত্রিক ধারায়। হতে চাচ্ছে মারদাঙ্গার রাজনীতি। এই রাজনীতি বন্ধ করতে হলে দেশে থাকতে হবে গণতন্ত্র। আর এক কথায় দেশে থাকতে হবে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা। গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হলো পরমতসহিষ্ণুতা। মতান্ধতা ঘৃণার জন্ম দেয়। মতান্ধতা করে তুলতে চায় গণতন্ত্রকে অচল। আওয়ামী লীগ বলছে- আগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একে অপরের পরিপন্থী নয়। তা যদি হতো, তবে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো কখনোই করতে পারত না অর্থনৈতিকভাবে উন্নত। গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ধরতে হয় পরস্পরের সাথে দ্বিমুখী সম্বন্ধে (Mutuality) যুক্ত। অর্থাৎ গণতন্ত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণ। আবার অর্থনৈতিক উন্নয়ন গণতন্ত্রকে দেয় দৃঢ়তা। শেখ মুজিব ১৯৭৫ সালে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ল. ই. ব্রেজনেভের পরামর্শে ১৯৭৫ সালে কেন বাকশাল গঠন করেছিলেন, আমরা তা জানি না। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন আর এখন টিকে নেই। খোদ রাশিয়ার মানুষ এখন তাদের দেশে দেখতে চাচ্ছে উদার গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। আমরা জানি না, কেন আওয়ামী লীগের একাংশ বলছে- আগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, এরপরে গণতন্ত্র। কিন্তু গণতন্ত্র এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারলে মারদাঙ্গার রাজনীতি চলতেই থাকবে সর্বত্র। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বাইরে অবস্থিত নয়। আর তাই তাতে অবশ্যম্ভাবীভাবে গিয়ে পড়বে দেশের সাধারণ রাজনীতির প্রভাব। শিক্ষক ও ছাত্র উভয়ই জড়াবেন তাতে। একদল ছাত্র হয়তো হাত তুলে বসবে তাদের প্রতিপক্ষ শিক্ষকদের ওপর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বলছেন, যারা প্রকৃত ছাত্র, তারা শিক্ষকদের ওপর হাত তুলতে পারে না। কিন্তু এটা হলো একটা আদর্শ অবস্থার কথা। যেটা আমাদের দেশে বর্তমান অবস্থায় বিরাজ করছে না। শিক্ষকেরা যদি প্রকৃত শিক্ষক হন, ছাত্র নিয়ে যদি না চান রাজনীতি করতে, তাহলে কিছুটা খাটবে এ কথা। অন্যথায় নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর হয়তো জানেন না, ১৯৭১ সালের ২ জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩ জন শিক্ষক এক যুক্ত বিবৃতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আচরণকে প্রশংসা করেছিলেন। ডিসেম্বরে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর এসব শিক্ষক হয়েছিলেন আওয়ামী লীগপন্থী ছাত্রদের হামলার শিকার। এসব শিক্ষকের অনেকেই হন কারারুদ্ধ। তারা হারান তাদের চাকরি। শেখ মুজিব অবশ্য এদের কারারুদ্ধ করে না রেখে মুক্তি দেন। শুধু তাই নয়, এদের চাকরিও দেন ফিরিয়ে। শেখ মুজিব চাননি দেশকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তিতে ভাগ করে রাজনীতি করতে। অন্তত এ সময় পর্যন্ত তিনি অনুসরণ করতে চাননি এই নীতি। তিনি এরপরেও চেয়েছেন পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন। তাই তিনি ১৯৭৪ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে আসতে বলেন বাংলাদেশ সফরে। ভুট্টো ২৭ জুন ঢাকায় আসেন ও অবস্থান করেন ২৮ জুন পর্যন্ত। তিনি পাকিস্তানে ফেরার আগে শেখ মুজিবকে পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। শেখ মুজিব তা গ্রহণ করেন। কিন্তু বর্তমানে আবার তোলা হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষের শক্তির কথা। এ কথা বলে একদল শিক্ষক চাচ্ছেন রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি অর্জন করতে, যা শিক্ষাঙ্গনকে করে তুলতে চাচ্ছে সঙ্ঘাতময়। সঙ্ঘাত কমাতে হলে এই স্বাধীনতার পক্ষের আর বিপক্ষের ধারণাকে অবশ্যই স্থগিত করতে হবে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে কী ঘটেছে সেটা আমাদের কাছে এখনো স্পষ্ট নয়। যেসব শিক্ষককে ছাত্রলীগের ছেলেরা লাঞ্ছিত করেছে বলে শোনা যাচ্ছে, তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে পরিচিত ছিলেন। পরিচিত ছিলেন প্রগতিশীল বলে। এদের গায়ে ছাত্রলীগের ছেলেদের হাত উঠানোর কথা নয়। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, এদের ওপর ছাত্রলীগের ছেলেরা করেছে হামলা। প্রচার করা হচ্ছে, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে নাকি ঢুকে পড়েছে জঙ্গি মুসলিম মৌলবাদী ছাত্ররা। তাই ঘটতে পেরেছে এ ধরনের কাণ্ড। কিন্তু বর্তমানে দেশের সরকার পরিচালিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ দিয়ে। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন। আওয়ামী লীগ স্বীকার করছে না ছাত্রলীগে মুসলিম মৌলবাদী ছাত্রদের অনুপ্রবিষ্ট হওয়ার কথা। অবশ্য ছাত্রলীগের শাহজালাল কমিটিকে স্থগিত করা হয়েছে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মধ্যে অনেক ইসলামবিরোধী ব্লগার এবং গণজাগরণ মঞ্চের অনুসারী ছাত্র থাকতে দেখা যাচ্ছে। ছাত্রলীগ হয়তো চাচ্ছে না, এদের হাতে চলে যাক শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ। তাই এরা শিক্ষকদের ওপর হামলা করে। আমরা ভেতরের কথা জানি না। তাই চাচ্ছি না এ বিষয়ে বিশদ বিবরণ। অনেক কিছুই আমরা শুনতে পাচ্ছি, আমরা শুনছি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণে নাকি আছে ইউরেনিয়াম ধাতুর খনি। যার কিছুটা পড়েছে সিলেটেরও মধ্যে। হতে পারে সিলেট এ কারণে ভারতের কাছে পাচ্ছে বেশ কিছুটা গুরুত্ব। আর ভারতের গোয়েন্দা চক্র তাই সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে করতে চাচ্ছে বিশেষ ধরনের রাজনীতি। সিলেটে বজায় রাখতে চাচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা।
আমি সিলেটে গিয়েছি জীবনে মাত্র একবার। তা-ও সেটা বহু বছর আগের ঘটনা। সিলেট তখন মাত্র কয়েক বছর হলো। গণভোট করে পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। সিলেটে গিয়ে ওই শহর ও তার মানুষকে আমার কাছে ভালো লেগেছিল। সিলেটবাসীকে মনে হয়েছিল খুব নম্র ও ভদ্র। কিন্তু এখন লোক পরস্পরায় শুনতে পাই, সেই সিলেট আর নেই।
কেননা, সিলেটের আদি ভদ্র অধিবাসীরা সবাই চলে গিয়েছেন বিদেশে। সিলেটে এখন এসে ভিড় করেছেন বাইরে থেকে আসা ভাগ্যখোঁজা লোক। যাদের মধ্যে কেউ কেউ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে রাজনীতি করে সিলেটে স্থাপন করতে চাচ্ছেন তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি। তবে আমি ঠিক জানি না। এক সময় শিক্ষকতা করতাম। তাই খুশি হই, যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া হচ্ছে আর শিক্ষক-ছাত্র সুসম্পর্ক বজায় আছে জেনে।
বিজ্ঞানের কাজ প্রাকৃতিক নিয়মের অনুশীলন। যার সাথে রাজনীতির কোনো যোগাযোগ নেই। প্রযুক্তি বলতে বোঝায় কোনো কিছু করার কৌশলকে। এর সাথেও নেই রাজনীতির কোনো যোগাযোগ। কিন্তু তথাপি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে উঠতে পেরেছে একটা ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির আখড়া। এ রকম পরিবেশে না হতে পারে বিজ্ঞান চর্চা, না হতে পারে উন্নত প্রযুক্তি বা কৃতকৌশলের উদ্ভাবন। বিশ্ববিদ্যালয়টি যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে স্থাপিত হয়েছিল, তা হয়তো সাফল্য পেতে পারবে না নোংরা রাজনীতির কারণে।
লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সম্প্রতি বলেছেন (বাংলাদেশ প্রতিদিন : ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫), যারা শিক্ষক লাঞ্ছিত করে, তারা প্রকৃত ছাত্র নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যেসব শিক্ষক ছাত্রদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, তারা কি প্রকৃত শিক্ষক? যেসব শিক্ষক ছাত্রদের এখনো নিয়মিত ক্লাস নেন এবং তাদের খেটে পড়ানোর চেষ্টা করেন, সেসব শিক্ষক এখনো ছাত্রদের কাছে পেতে পারছেন বিশেষ শ্রদ্ধা। তাদের গায়ে ছাত্ররা ভাবছে না হাত তোলার কথা। শিক্ষকেরা যদি প্রকৃত শিক্ষক হন এবং রাজনীতি থেকে থাকেন দূরে, তবে তারা ছাত্রদের হাতে এখনো যে লাঞ্ছিত হবেন, তেমন পরিস্থিতি দেশে সৃষ্টি হয়নি। এমনটাই আমার ধারণা। ছাত্ররা সব দেশেই কমবেশি রাজনীতি করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ে ছাত্ররা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে ভিয়েতনামে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য। তারা মিছিল করেছে, আন্দোলন করেছে খুবই নিয়মতান্ত্রিকভাবে। সৃষ্টি করেনি কোনো মারদাঙ্গার পরিবেশ। এরা মেনে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিধিবিধানকে। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের অভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় রাজনীতি হচ্ছে না নিয়মতান্ত্রিক ধারায়। হতে চাচ্ছে মারদাঙ্গার রাজনীতি। এই রাজনীতি বন্ধ করতে হলে দেশে থাকতে হবে গণতন্ত্র। আর এক কথায় দেশে থাকতে হবে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা। গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হলো পরমতসহিষ্ণুতা। মতান্ধতা ঘৃণার জন্ম দেয়। মতান্ধতা করে তুলতে চায় গণতন্ত্রকে অচল। আওয়ামী লীগ বলছে- আগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একে অপরের পরিপন্থী নয়। তা যদি হতো, তবে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো কখনোই করতে পারত না অর্থনৈতিকভাবে উন্নত। গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ধরতে হয় পরস্পরের সাথে দ্বিমুখী সম্বন্ধে (Mutuality) যুক্ত। অর্থাৎ গণতন্ত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণ। আবার অর্থনৈতিক উন্নয়ন গণতন্ত্রকে দেয় দৃঢ়তা। শেখ মুজিব ১৯৭৫ সালে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ল. ই. ব্রেজনেভের পরামর্শে ১৯৭৫ সালে কেন বাকশাল গঠন করেছিলেন, আমরা তা জানি না। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন আর এখন টিকে নেই। খোদ রাশিয়ার মানুষ এখন তাদের দেশে দেখতে চাচ্ছে উদার গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। আমরা জানি না, কেন আওয়ামী লীগের একাংশ বলছে- আগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, এরপরে গণতন্ত্র। কিন্তু গণতন্ত্র এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারলে মারদাঙ্গার রাজনীতি চলতেই থাকবে সর্বত্র। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বাইরে অবস্থিত নয়। আর তাই তাতে অবশ্যম্ভাবীভাবে গিয়ে পড়বে দেশের সাধারণ রাজনীতির প্রভাব। শিক্ষক ও ছাত্র উভয়ই জড়াবেন তাতে। একদল ছাত্র হয়তো হাত তুলে বসবে তাদের প্রতিপক্ষ শিক্ষকদের ওপর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বলছেন, যারা প্রকৃত ছাত্র, তারা শিক্ষকদের ওপর হাত তুলতে পারে না। কিন্তু এটা হলো একটা আদর্শ অবস্থার কথা। যেটা আমাদের দেশে বর্তমান অবস্থায় বিরাজ করছে না। শিক্ষকেরা যদি প্রকৃত শিক্ষক হন, ছাত্র নিয়ে যদি না চান রাজনীতি করতে, তাহলে কিছুটা খাটবে এ কথা। অন্যথায় নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর হয়তো জানেন না, ১৯৭১ সালের ২ জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩ জন শিক্ষক এক যুক্ত বিবৃতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আচরণকে প্রশংসা করেছিলেন। ডিসেম্বরে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর এসব শিক্ষক হয়েছিলেন আওয়ামী লীগপন্থী ছাত্রদের হামলার শিকার। এসব শিক্ষকের অনেকেই হন কারারুদ্ধ। তারা হারান তাদের চাকরি। শেখ মুজিব অবশ্য এদের কারারুদ্ধ করে না রেখে মুক্তি দেন। শুধু তাই নয়, এদের চাকরিও দেন ফিরিয়ে। শেখ মুজিব চাননি দেশকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তিতে ভাগ করে রাজনীতি করতে। অন্তত এ সময় পর্যন্ত তিনি অনুসরণ করতে চাননি এই নীতি। তিনি এরপরেও চেয়েছেন পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন। তাই তিনি ১৯৭৪ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে আসতে বলেন বাংলাদেশ সফরে। ভুট্টো ২৭ জুন ঢাকায় আসেন ও অবস্থান করেন ২৮ জুন পর্যন্ত। তিনি পাকিস্তানে ফেরার আগে শেখ মুজিবকে পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। শেখ মুজিব তা গ্রহণ করেন। কিন্তু বর্তমানে আবার তোলা হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষের শক্তির কথা। এ কথা বলে একদল শিক্ষক চাচ্ছেন রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি অর্জন করতে, যা শিক্ষাঙ্গনকে করে তুলতে চাচ্ছে সঙ্ঘাতময়। সঙ্ঘাত কমাতে হলে এই স্বাধীনতার পক্ষের আর বিপক্ষের ধারণাকে অবশ্যই স্থগিত করতে হবে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে কী ঘটেছে সেটা আমাদের কাছে এখনো স্পষ্ট নয়। যেসব শিক্ষককে ছাত্রলীগের ছেলেরা লাঞ্ছিত করেছে বলে শোনা যাচ্ছে, তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে পরিচিত ছিলেন। পরিচিত ছিলেন প্রগতিশীল বলে। এদের গায়ে ছাত্রলীগের ছেলেদের হাত উঠানোর কথা নয়। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, এদের ওপর ছাত্রলীগের ছেলেরা করেছে হামলা। প্রচার করা হচ্ছে, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে নাকি ঢুকে পড়েছে জঙ্গি মুসলিম মৌলবাদী ছাত্ররা। তাই ঘটতে পেরেছে এ ধরনের কাণ্ড। কিন্তু বর্তমানে দেশের সরকার পরিচালিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ দিয়ে। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন। আওয়ামী লীগ স্বীকার করছে না ছাত্রলীগে মুসলিম মৌলবাদী ছাত্রদের অনুপ্রবিষ্ট হওয়ার কথা। অবশ্য ছাত্রলীগের শাহজালাল কমিটিকে স্থগিত করা হয়েছে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মধ্যে অনেক ইসলামবিরোধী ব্লগার এবং গণজাগরণ মঞ্চের অনুসারী ছাত্র থাকতে দেখা যাচ্ছে। ছাত্রলীগ হয়তো চাচ্ছে না, এদের হাতে চলে যাক শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ। তাই এরা শিক্ষকদের ওপর হামলা করে। আমরা ভেতরের কথা জানি না। তাই চাচ্ছি না এ বিষয়ে বিশদ বিবরণ। অনেক কিছুই আমরা শুনতে পাচ্ছি, আমরা শুনছি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণে নাকি আছে ইউরেনিয়াম ধাতুর খনি। যার কিছুটা পড়েছে সিলেটেরও মধ্যে। হতে পারে সিলেট এ কারণে ভারতের কাছে পাচ্ছে বেশ কিছুটা গুরুত্ব। আর ভারতের গোয়েন্দা চক্র তাই সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে করতে চাচ্ছে বিশেষ ধরনের রাজনীতি। সিলেটে বজায় রাখতে চাচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা।
আমি সিলেটে গিয়েছি জীবনে মাত্র একবার। তা-ও সেটা বহু বছর আগের ঘটনা। সিলেট তখন মাত্র কয়েক বছর হলো। গণভোট করে পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। সিলেটে গিয়ে ওই শহর ও তার মানুষকে আমার কাছে ভালো লেগেছিল। সিলেটবাসীকে মনে হয়েছিল খুব নম্র ও ভদ্র। কিন্তু এখন লোক পরস্পরায় শুনতে পাই, সেই সিলেট আর নেই।
কেননা, সিলেটের আদি ভদ্র অধিবাসীরা সবাই চলে গিয়েছেন বিদেশে। সিলেটে এখন এসে ভিড় করেছেন বাইরে থেকে আসা ভাগ্যখোঁজা লোক। যাদের মধ্যে কেউ কেউ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে রাজনীতি করে সিলেটে স্থাপন করতে চাচ্ছেন তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি। তবে আমি ঠিক জানি না। এক সময় শিক্ষকতা করতাম। তাই খুশি হই, যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া হচ্ছে আর শিক্ষক-ছাত্র সুসম্পর্ক বজায় আছে জেনে।
বিজ্ঞানের কাজ প্রাকৃতিক নিয়মের অনুশীলন। যার সাথে রাজনীতির কোনো যোগাযোগ নেই। প্রযুক্তি বলতে বোঝায় কোনো কিছু করার কৌশলকে। এর সাথেও নেই রাজনীতির কোনো যোগাযোগ। কিন্তু তথাপি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে উঠতে পেরেছে একটা ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির আখড়া। এ রকম পরিবেশে না হতে পারে বিজ্ঞান চর্চা, না হতে পারে উন্নত প্রযুক্তি বা কৃতকৌশলের উদ্ভাবন। বিশ্ববিদ্যালয়টি যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে স্থাপিত হয়েছিল, তা হয়তো সাফল্য পেতে পারবে না নোংরা রাজনীতির কারণে।
লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট
উৎসঃ নয়া দিগন্ত
__._,_.___