এক পয়সাওয়ালা অত্যাচারী জমিদারের নজর পড়েছে পাশের দরিদ্র লোকটার বাড়ির ওপর। শুরু করলো নানাভাবে অত্যাচার, উদ্দেশ্য জমিটা দখল করা। দরিদ্র লোকটা গিয়ে হাতে পায়ে ধরে ধনী লোকটার। কি হবে এর ফলাফল? স্বাভাবিক সুত্র বলে- নরম পেয়ে অচিরেই দরিদ্র লোকটারে বাড়িছাড়া করা হবে।
২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা জনগনের কাছে আর নাই। জেনারেল মইনের সামরিক সরকারের কাছ থেকে সিস্টেম করে হাসিনা ক্ষমতা নেবার পর থেকে বাংলাদেশ চলে গেছে ইন্ডিয়ার রাডারের তলায়। এটা ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শংকর রায়চৌধুরীর বক্তব্য। ২০১২ সালে আরেক জেনারেল অশোক মেহতা দিল্লিতে বলেছিলেন, ২০১৪ সালে আ'লীগকে আরেকবার ক্ষমতায় আনতে হবে, তাহলেই ভারতের সব চাহিদা পুরণ করা সম্ভব হবে। যেমন কথা তেমন কাজ- ২০১৩ সালের শেষদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে বাংলাদেশ যখন উত্তাল, দিল্লি থেকে তখন ঢাকায় আসে তাদের বিদেশ সচিব সুজাতা সিং। এরপরের খবর এ দেশের মানুষ জানে। সুজাতা ঢাকায় রাজনৈতিক দৌড়ঝাপ করে বিএনপি ও সব বিরোধী দলকে বাইরে রেখে কেবল এরশাদের দল নিয়ে হাসিনাকে ইলেকশনের ব্যবস্থা করে যায়। একই উদ্দেশ্যে সুজাতা ওয়াশিংটনেও যায়। এরপরে বাংলাদেশের জনগনের ভোটাধিকার হরন করা হয় র্যাব পুলিশের গুলির মুখে ৫ জানুয়ারী। ঐ ব্যাপক জালিয়াতির নির্বাচন মেনে নেয়নি বাংলাদেশের জনগন। এমনকি নতুন একটি অংশগ্রহনমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলি থেকে চাপ আসতে থাকে। কিন্তু ৫ জানুয়ারীর পর থেকে অবৈধ সরকার দম্ভ শুরু করে ৫ বছর ক্ষমতায় থাকবে, তাদের সাথে সর্বশক্তি দিয়ে থাকে ভারত। এরপরে গত দুই বছর ধরে ভারতের হাতে যেতে থাকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে রোড ট্রানজিট; চিটাগাঙ ও মংলা পোর্ট ব্যবহার করবে তারা; জঙ্গি দমনের নামে বাংলাদেশে শুরু হয় ভারতীয় বাহিনীর গোপন কিলিং মিশন; নিজেদের সার্ভিস ডাউন করে বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ যায় ত্রিপুরায়; কানেটকটিভিটির নামে বাংলাদেশের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভারতীয় গাড়ি ঢুকবে এবং বের হবে অন্য যায়গা দিয়ে; বর্ডারে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী হত্যার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে; এদেশে ব্যবসা বানিজ্য দখল ও চোরাচালান তো আগে থেকে আছেই, সেই সাথে এবারে বাংলাদেশের আইটি খাত, গার্মেন্টস, শিল্প কারখানা ভারতীয় কব্জায় চলে যায়। ভারত কতৃক বাংলাদেশের পানি লুট করার কথা ভুলেই গেছে এদেশের মানুষ, তার বদলে মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে হিন্দি চ্যানেল স্টার জলসা, প্লাস ইত্যাদি, পাখি কিরণমালা ড্রেসের জন্য খুনখারাবি পর্যন্ত হচ্ছে। ভারতীয় শিল্পীরা প্রতি মাসে ঢাকায় আসে, জলসা করে সাথে নিয়ে যায় মোটা অংকের ডলার। এদেশের টিভির প্রায় সব বিজ্ঞাপন আসে ভারত থেকে। ১২-১৪ লাখ ভারতীয়রা এখন বৈধ অবৈধভাবে বাংলাদেশে কাজকর্ম দেশে পাঠাচ্ছে ডলার। ভারতের ফরেন কারেন্সির পঞ্চম সোর্স এখন বাংলাদেশ।
নতুন জাতীয় নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের প্রবল দাবী উঠে, আন্দোলন হয়, জাতীয় আন্তর্জাতিক চাপ প্রবল হলে ভারতের সহায়তায় দেশীয় বাহিনী দিয়ে খুন গুম আর মামলা হামলা দিয়ে নির্মমভাবে দমানো হয়। ধরপাকড়ে বিদেশী সমর্থনের জন্য একের পর এক জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করতে থাকে অবৈধ সরকার। আগে শুরু হয় দাড়ি টুপিঅলা মুসলমানদের মারধর, খুন ও লাশ গুম করা হয়, আর এবারে মুসলমানদের জুমআর খুতবাও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেছে রামবাদী অবৈধ হাসিনা সরকার। এসব কাজ সহজ করতে বাংলাদেশের প্রশাসন ও পুলিশের উচ্চ পদে হিন্দু অফিসারের ব্যাপকভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের পূর্বদিকে রয়েছে ভারতের ৭টি রাজ্য, সেখানে স্বাধীনতার দাবীতে আন্দোলন চলছে দীর্ঘদিন। তাই ওই আন্দোলন দমাতে বাংলাদশের ভুমি ব্যবহার করতে চায় ভারত। সে কারনে ভারত চায় তাদের অনুগত সরকার থাকুক বাংলাদেশে, আর তাদের পছন্দ আ'লীগ। এদেশে নির্বাচন হলে যে আ'লীগ কখনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না, সেটা ভারত জানে। তাই বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র আসুক বা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, এটা নিজেদের স্বার্থেই ভারত চায় না। বাংলাদেশে একটি নুতন জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সকল শর্ত বিদ্যমান থাকলেও এক্ষত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ভারত। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বড় শক্তিগুলো চায় ভারতের এই আপত্তি বা বাধা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিরসন করতে। তারা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে, দিল্লির সাথে বোঝাপড়া করে ভারতীয় বাধা দূর করতে। বিএনপি দু'বছর ধরে সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু কতটুকু সফল হয়েছে, সেটা নিয়ে এখনও সন্দেহ আছে। সর্বশেষে, ভারতীয় যুগশঙ্খ পত্রিকার খবর লিখেছে - ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আস্থা অর্জন করতে কোন এক আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের দ্বারস্থ হয়েছেন বিএনপি! যদিও আমি বিশ্বাস করি না, এসব খবর।
তবেও লেখার শুরুতে যে কথাটি শুরু করেছিলাম- অত্যাচারী জমিদারের কাছে সারেন্ডার করে কিছু পাওয়া যায় না, সেভাবেই দিল্লির অনুকম্পা চেয়ে বিএনপি বিশ্বস্ততা কখনই অর্জন করতে পারবে না, ওখান থেকে কিছু মিলবে না। বরং ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এদেশের ৮০ ভাগ মানুষ এটা মাথায় রেখে বিএনপি যদি নিজস্ব ধারার রাজনীতিতে ফেরত আসতে পারে, তবে জনগণের শক্তিতেই বিএনপি লক্ষে পৌছতে পারবে। আর তখন বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা কমাতে, উল্টা ভারতই নিজেদেরকে এডযাস্ট করে নিবে। তখন বিএনপির পিছে ঘুরবে ভারত। এটা হলো- শক্তের ভক্ত আর নরমের যম থিউরি। সেজন্য বিএনপিকে যা করতে হবে-
এক) বাংলাদেশে ভারতের অব্যাহত আগ্রাসনের প্রতিবাদে সারা বিশ্বে সকল ভারতীয় দূতাবাস একযোগে ঘেরাও করুক বির্হিবিশ্ব বিএনপির আয়োজনে প্রবাসীরা।
দুই) সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ করার দাবীতে, বাংলাদেশে লুকিয়ে থাকা ১৪ লাখ অবৈধ ভারতীয়কে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার দাবীতে, গঙ্গা নদীর পানি সহ সকল অভিন্ন নদীর পানির সমান হিস্যা দাবীতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও কিলারদেকে বাংলাদেশ থেকে বহিস্কারের দাবীতে, বাংলাদেশে ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বন্ধ করতে, বাংলাদেশে রাজনীতি ও রাষ্ট্রক্ষমতার উপর ভারতের কালো থাবা সরিয়ে নেয়ার দাবীতে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করতে হবে। এ জন্য মিছিল মিটিং ও স্মারক লিপি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে অরাজনৈতিক ব্যানারে।
তিন) এ ইস্যুতে দরকার হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনকে একতাবদ্ধ করতে হবে।
চার) পরিস্থিতি বুঝে ভারতীয় পতাকা পোড়ানো এবং ভারতীয় পণ্য বর্জনের হুমকি দিতে হবে। শ্লোগান হবে- বন্ধ কর তোর দাদাগিরি।
........ভারত ও হাসিনার সাথে সিঙ্গেল লাইনে খেললে হবে না। নানা ফ্রন্ট খুলতে হবে। এসব কর্মসূচি নিতে পারলে হিন্দুস্তান বাপ বাপ করে বিএনপির পিছনে পিছনে হাটবে। শুয়ারের জন্য গোলাপ নয়, চাই মুগুর।।
__._,_.___