Banner Advertise

Sunday, February 23, 2014

[chottala.com] নির্বাচনের পর হিন্দুদের ওপর হামলার জন্য জামায়াত-বিএনপি দায়ী - হাইকোর্টের দেয়া আদেশের তথ্য



সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ১২ ফাল্গুন ১৪২০
নির্বাচনের পর হিন্দুদের ওপর হামলার জন্য জামায়াত-বিএনপি দায়ী
হাইকোর্টের দেয়া আদেশের তথ্য
আরাফাত মুন্না ॥ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু পরিবারের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা দায়ী। ওই সময় বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা প্রতিহিংসা বশত হিন্দুদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালায় এবং অগ্নিসংযোগ ঘটায়। নির্বাচনের পরে এ ধরনের ১৬০টিরও বেশি ঘটনা ঘটিয়েছে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা। এর মধ্যে ৭০টি ঘটনায় ৪০ লাখ টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নানান বাধা সত্ত্বেও ভোট দেয়ায় তাদের ওপর এ হিংস্রতা নেমে আসে। 
গত ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেয়া আদেশের প্রেক্ষিতে পুলিশের দাখিল করা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ জেলার বিভিন্ন থানায় এ ঘটনায় তিনটি সাধারণ ডায়েরিসহ ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৯৩ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়।
এর আগে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার পর কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে আদেশ দেন। এ আদেশের পাশাপাশি নির্যাতিতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করেছেন আদালত। এছাড়া, এই নির্যাতন বন্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরবর্তী আদেশের জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। ওইদিন সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় পুলিশের এসব প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করবেন।
দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শ্রীপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বাগেরহাট, যশোর, নড়াইল, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী এবং ঠাকুরগাঁও জেলার জেলা প্রসাশক ও পুলিশ সুপারকে এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয় আদালতের আদেশে।
এ আদেশের পরই পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জ থেকে ওইসব এলাকার নির্বাচনের পরে হিন্দু পরিবারের ওপর হামলার ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। 
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু পরিবারের ওপর হামলার ঘটনায় ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে, দিনাজপুর জেলার তিনটি, বরিশালে একটি, পিরোজপুরে একটি, ঝালকাঠিতে একটি, রংপুর জেলায় পাঁচটি, গাইবান্ধা জেলায় একটি, নীলফামারী জেলায় দুইটি, ঠাকুরগাঁও জেলায় দুইটি মামলা উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও চাঁদপুরে একটি, বাগেরহাটে একটি, রাজশাহীতে দুইটি, নওগাঁয় একটি, নাটোরে একটি, জয়পুরহাটে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশ ঘটনাই বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা ঘটিয়েছে বলে পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
চাঁদপুর জেলার মামলার বিষয়ে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২ জানুয়ারি রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে হাজীগঞ্জ থানার হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের ধড্ডা সাকিনের নিরাঞ্জন চন্দ্রের তালাবদ্ধ দোচালা টিনের ঘরে দুষ্কৃতিকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয়রা প্রাণপণ চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে অনতে সমক্ষম হয়। খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ তাৎক্ষণিত ঘটনা স্থলে পৌঁছে। এ ঘটনায় দেড় লাখ টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনার পেছনে দায়ীদের বিষয়ে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ক্যাডার বাহিনী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর ও মন্দির ভাংচুর করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় এই এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের হীন উদ্দেশ্যে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীরা এ ধরনের নেক্কারজনক কাজ করতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় পর ওই এলাকায় পুলিশী টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
রাজশাহী জেলার দুটি মামলার বিষয়ে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৪ জানুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে বাঘা জেলার আটপাড়া এলাকার অরুন কুমারের বসতঘরের পাশে থাকা একটি টিনের খরিরঘর ও পাটেরগুদামে আগুন দেয়। এতে ওই টিনের ঘর ও গুদামে রক্ষিত ১৭৫ মন পাট পুড়ে যায়। এতে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় বাঘা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আরেকটি মামলার ঘটনাটি ঘটে ৫ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটার দিকে। বাঘা থানার আটপারা এলাকার পরিতোষ সরকার ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করে এবং তার পকেটে থাকা পাঁচ হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করা হয়েছে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল মীর শহীদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে।
গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় লাভ করার পর সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতন চালাচ্ছে জামায়াতÑশিবির ক্যাডাররা। নানা বাধা সত্ত্বেও ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ায় তাদের ওপর নেমে আসে এই হিংস্রতা। এর আগেও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ যুদ্ধাপরাধীদের মামলার রায় ঘোষণার পরও শিবির ক্যাডাররা হামালা চালায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর।
উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোট দিতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের শতাধিক ক্যাডার যশোরের অভয়নগর উপজেলার মালোপাড়ায় শতাধিক ঘরবাড়িতে হামলা ও লুটপাট করে। পরে কয়েকটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় প্রায় ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী নামে একজন ঘটনার সত্যতা স্বীকারও করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি সকালে ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে চাঁপাতলা বাজারে মালোপাড়ার দুই যুবকের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের বাগ্বিত-া হয়। এর পর বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের জামায়াতকর্মী মাহফুজ, মাবুদ ও সাইফুল প্রেমবাগ ইউনিয়নের বাহিরঘাট, চাঁপাতলা, মাগুরা ও প্রেমবাগ গ্রাম থেকে বিএনপি ও জামায়াত কর্মীদের সংঘটিত করে বাজার এলাকায়। সকালের ঘটনার মীমাংসা করার জন্য তাদের চাঁপাতলা মালোপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। মোহাম্মদ আলী আদালতকে আরও জানান, মালোপাড়ায় যাওয়ার পর তারা সেখানকার কাউকে না পেয়ে ঘরবাড়িতে ভাংচুর চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।
এছাড়াও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, মাগুরা, জামালপুর, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, ময়নসিংহ, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নির্যাতন, বাড়িঘর ও মন্দিরে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত শনিবারও নাটোর, টাঙ্গাইল, বগুড়া, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চাঁদপুর ও নেত্রকোনায় সংখ্যালঘুদের বসতঘর, মন্দির ও খড়েরপালায় অগ্নিসংযোগ ঘটায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। ওইদিন নাটোরের বড়াইগ্রামে উপজেলার বাগডোম ম-লপাড়ায় নিজের শোবার ঘরে শিবির ক্যাডারদের ছুরি কাঘাতে নিহত হন হিন্দু কৃষক হরিপদ ম-ল এবং তার স্ত্রী বিশিকা রানী ম-ল ও তাদের এক আত্মীয় আহত হন। এর পর থেকে বিভিন্ন সংগঠন সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও নির্যতন প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে।
ইতোপূর্বে হাইকোর্ট সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গত ১৫ জানুয়ারিও হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই সম্প্রতি দেশের সাত জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার পর কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নির্যাতিতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করেছেন আদালত। পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে চলা এই নির্যাতন বন্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- আদালত তাও জানতে চেয়ে আদেশ দিয়েছেন। রবিবার হাইকোর্ট তার আদেশের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দিয়ে নাগরিকের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ওইদিন আদেশের পর সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ের মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। ওই সময়ের নিপীড়নের বিচার হলে হয় তো এ ঘটনা ঘটত না। এক প্রশ্নের জবাবে সরকারের এই আইন কর্মকর্তা বলেন, আদালত রুল জারি করেছে। রুল শুনানির সময় ২০০১ সালের নির্যাতনের কেন বিচার হয়নি, সেগুলোও উঠে আসবে।
প্রকাশ : সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ১২ ফাল্গুন ১৪২০


__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___