পশ্চিমা চাপে হতাশ বিএনপি
জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর নেতিবাচক অবস্থান ভাবিয়ে তুলেছে বিএনপিকে। দলটির আশা ছিল, ৫ জানুয়ারির 'একতরফা' নির্বাচনের পর পশ্চিমা বিশ্ব দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবার নির্বাচন দিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। কিন্তু এখন উল্টো বিএনপি চাপে পড়েছে জামায়াত ও হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে।
পশ্চিমা বিশ্বের এই মনোভাব বিএনপির নীতিনির্ধারকদের বেশ হতাশ করেছে বলে দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে। একইভাবে হতাশ হয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দল জামায়াতও।
গত ১৬ জানুয়ারি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক প্রস্তাবে জামায়াত ও হেফাজতের সঙ্গে সুস্পষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এর আগে ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতেরা বিএনপিকে সহিংসতা এড়িয়ে চলতে বলেছেন।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে আড়াই বছর ধরে বিএনপির নেতারা বাংলাদেশে নিযুক্ত পশ্চিমা কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে আসছেন। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে বিএনপির নেতারা মাঠের রাজনীতির চেয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। কূটনীতিকমুখী এত তৎপরতা সত্ত্বেও বিএনপির ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোর এই মনোভাবে দলটির অনেকে হতভম্ব হয়েছেন। কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে কোনো সীমাবদ্ধতা ছিল কি না, তা নিয়েও মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন বিএনপির নেতারা।
সাধারণত কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ রাখেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ও রিয়াজ রহমান।
ওসমান ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, 'বিদেশিরা কে কী বলল, সেটা বড় কথা নয়। এটা তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ। বিএনপি বিদেশিদের কোনো কিছু বোঝাতে যায়নি। তারা নিজস্ব সূত্র থেকে তথ্য নিয়েছে। বিএনপিকে দেখতে হবে, এর মধ্যে সত্যতা আছে কি না।'
তবে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, পশ্চিমাদের চাপ সত্ত্বেও জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার ব্যাপারে বিএনপি এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। কারণ হিসেবে কোনো কোনো নেতা বলেছেন, পশ্চিমাদের বক্তব্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। যদিও তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য বলছে, তার পরও বিএনপির ব্যাপারে নেতিবাচক অবস্থান আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার ব্যাপারে উৎসাহ জোগাবে। তাই জামায়াতকে ছাড়ার ব্যাপারে পশ্চিমাদের চাপকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়া না-ছাড়া, এটা বিএনপির নিজস্ব ভাবনা। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট মূলত নির্বাচনী জোট। পশ্চিমা দেশগুলো যেটা বলেছে, তা তাদের নিজস্ব অবস্থান। তিনি দাবি করেন, আন্দোলনের কর্মসূচিতে সহিংস কিছু করার জন্য কখনোই নেতা-কর্মীদের দলীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে সরকার অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে ১৮-দলীয় জোটের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে। তাই অনেক সময় ক্ষোভ থেকে নেতা-কর্মীরা সহিংস হয়ে ওঠেন।
বিএনপির অপর একটি সূত্র জানায়, এখন ১৮-দলীয় জোট ভাঙলে সরকার বিএনপিকে আরও চেপে ধরবে বলে মনে করছেন দলীয় চেয়ারপারসন। সে ক্ষেত্রে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা আরও কমে যাবে। তবে চেয়ারপারসন গত সোমবারের ১৮ দলের বৈঠকে সহিংসতা এড়িয়ে চলার জন্য জামায়াতসহ সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির চারজন সদস্য, দলের চেয়ারপারসনের তিনজন উপদেষ্টা এবং দুজন দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা সবাই জামায়াত প্রশ্নে প্রায় একই কথা বলেছেন। আর, হেফাজতের বিষয়ে এসব নেতা দাবি করেন, হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই, বরং আওয়ামী লীগেরই সম্পর্ক ভালো।
হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার বিষয়টি বিএনপি অস্বীকার করলেও গত বছরের ৫ মে ঢাকা অবরোধের সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলীয় নেতা-কর্মী ও ঢাকাবাসীকে হেফাজতের পাশে দাঁড়ানো এবং রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তা ছাড়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের অন্তত তিনটি শরিক দল কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেছেন, বিদেশি বন্ধুরা মূলত নাশকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে বলছে। জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার কথাও বলেছে। ইতিমধ্যে সহিংসতা এড়াতে বিএনপি পদক্ষেপ নিয়েছে। আর সময় হলে জামায়াতের ব্যাপারে বিএনপি নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবে।
Comment:
- Ikram Sadiq২০১৪-০১-১৯ ০৩:০৮ via computer
BNP should go back to people not depending on Jamat and give up violence. Public did not like burning people, destroying property. I hope this common sense prevails in the mind of BNP leaders.
- bishu২০১৪-০১-১৯ ০৩:২৮ via computer
সন্ত্রাস সহিংসতা সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে কোন গনতান্ত্রিক আন্দোলন হয়না এটা বিএনপি কখনও বুঝেনি।আর সময়টা ৭৫, ২০০১ নয়, এখন ও সময় আছে, যদি তারা উগ্রবাদীদের সঙ্গ না ছাড়ে তবে BNP আর ঘুরে দাড়াতে পারবে না। এখন কোন বিচ্ছিন্ন পৃথিবীতে বাস করার সুযোগ নেই।
ছয় মাস সহিংস কর্মসূচি এড়িয়ে চলবে বিএনপি
'নৌকা' ডোবাতে কেন্দ্রে বিএনপি-জামায়াত
Awnsm Av‡›`vj‡bi c‡_ weGbwc: †gqv` Qq gvm!!!
- ছয় মাস সহিংস কর্মসূচি এড়িয়ে…
__._,_.___