'তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা' গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ড. কামাল
বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের মধ্যে যারা ফাটল ধরিয়েছে, তারা অভিশপ্ত
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদের মধ্যে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ দুই নেতার মধ্যে যারা ফাটল ধরিয়েছে, তারা অভিশপ্ত এবং স্বাধীনতার শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন। বইটির লেখক বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে শারমিন আহমদ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, 'বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদের সঠিক সিদ্ধান্তে আমরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় পেয়েছি। এই দুই নেতা অসম্ভবকে সম্ভব করেন। কিন্তু একাত্তরের পর তাঁদের মধ্যে কীভাবে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, তা এ বইতে সুন্দরভাবে লেখা হয়েছে।' তিনি বলেন, 'যারা ফাটল ধরিয়েছে তারা অভিশপ্ত। তার জন্য উনাদেরকে জীবন দিতে হলো। আর আমরা এতিম হয়ে আছি।'
সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, 'বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরুদ্ধে যারা ছিল, তারা একাত্তরে হেরেছে। কিন্তু পঁচাত্তরে জয়ী হয়েছে। তারা বঙ্গবন্ধুকে তাজউদ্দীন আহমদ থেকে বিভক্ত করতে পেরেছিল। তাদের সাফল্য আমাদের চরম বিপদে ফেলেছে।'
বইয়ে লেখা দুই নেতার দূরত্বের কিছু ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে আনিসুজ্জামান বলেন, 'এতে কিছু কথা আছে, যেগুলো বিতর্কের সৃষ্টি করবে। এর কারণ, লেখক একটা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সময়টাকে দেখেছে। সবার তা পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু সে নানা দলিলপত্র, রচনা, সাক্ষাৎকারের সাহায্যে সত্যের যত দূর কাছে পৌঁছা যায়, চেষ্টা করেছে।'
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, 'শুনেছি, বঙ্গবন্ধু দুজনকে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন। একজন খন্দকার মোশতাক, আরেকজন তাজউদ্দীন আহমদ। বিশেষ করে, তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী হয়ে যখন দেশকে স্বাধীন করে আনলেন, তখন ওই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও প্রবল হয়ে ওঠে।'
বইয়ের লেখক শারমিন আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধু আজীবন স্বাধীনতার প্রেরণা থাকবেন এবং আছেন। তাঁর স্থান কেউ নিতে পারবে না। কিন্তু সেই প্রেরণার সফল বাস্তবায়ন ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তাঁরা দুজনে ছিলেন সম্পূরক সত্তা। তিনি বলেন, 'আমি গভীর হতাশার সঙ্গে আজকের (শুক্রবার) পত্রিকা খুঁজে দেখেছি, যাঁরা মুজিবনগর দিবস পালন করেছেন, তাঁরা একটি বারও উচ্চারণ করেননি, এ মুজিবনগরের স্রষ্টা, সংগঠক ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ।'
তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা গ্রন্থ রচনার কারণ উল্লেখ করে শারমিন আহমদ বলেন, 'বাবা সম্পর্কে কিছু লেখার সুযোগ হয়তো আসত না, যদি তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির মানস থেকে একেবারে অদৃশ্য হয়ে না যেতেন। এটা কী করে সম্ভব যে স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রাণপুরুষের নাম একটি বারও শোনা যায় না?'
শারমিন আহমদ আরও বলেন, 'আমি বাংলাদেশে এসে দেখলাম, এক হাজার টাকার নোটে বঙ্গবন্ধু, ৫০০ টাকার নোটেও বঙ্গবন্ধু, ১০০ টাকা, ৫০ টাকা, ২০ টাকা, এমনকি এক টাকার নোটেও বঙ্গবন্ধুর ছবি। বঙ্গবন্ধু তো আরও বিশাল। তাঁকে এসবের মধ্যে বন্দী করে আমরা একটা স্বৈরাচারী ইনস্টিটিউশন ডেভেলপ করতে সহায়তা করছি, যা বঙ্গবন্ধু চাননি।'
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম, লেখক মঈদুল হাসান, তাজউদ্দীন আহমদের বন্ধু এম এ করিম, বঙ্গবন্ধুর একসময়কার ব্যক্তিগত সহকারী গোলাম মুরশেদ, বইটির প্রকাশক আরিফুর রহমান প্রমুখ। দর্শকসারিতে অন্যদের সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদের আরেক মেয়ে ও সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
__._,_.___