http://www.dhakatimes24.com/2015/03/17/58259/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A7%AF%E0%A7%AB%E0%A6%A4%E0%A6%AE-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE
শুভ জন্মদিন প্রিয় বঙ্গবন্ধু।
৯৫তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাঙালি জাতির পিতাকে। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এই মহতী ব্যক্তির জন্ম হয়েছিল। আজ স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি হতো না, যদি বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃপ্তভাবে দেশের জন্য নিজেকে উৎসাহিত না করতেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক মহান ব্যক্তিত্ব যিনি ক্ষণজন্মা পুরুষ। বঙ্গবন্ধুর মহত্ত্ব, ঔদার্য বাঙালির কল্যাণ যাচনীয় সর্বদা অগ্রগামী ছিল। তিনি হৃদয়ে ধারণ করতেন বাঙালির উন্নয়ন, মানবাধিকার ও শোষণমুক্ত এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। বঙ্গবন্ধু কষ্টসহিষ্ণু ছিলেন। ব্যক্তিস্বার্থে তিনি কখনো নিজেকে এবং বাঙালির বিপক্ষে যাবে এমন কিছু করেননি। বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনা নিয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেছিলেন যে, 'জনগণের পেটে ভাত দেওয়াই ছিল তাঁর আদর্শ।' সহজ সরল উক্তি, কিন্তু ওই উক্তির ভেতরে রয়ে গেছে বাঙালি জাতির আত্মোন্নয়ন। কেননা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল পেতে হলে কেবল মোট দেশজ সম্পদের প্রবৃদ্ধি নয় বরং মানবিক ও সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হয়। আশার কথা, বাংলাদেশ যখন মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রের উন্নতি করতে যাচ্ছে তখন মানবিক ও সামাজিক কল্যাণেও বেশ সাড়া জাগানো উন্নয়ন করছে। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের তুলনায় বাংলাদেশ নারীর অধিকার ও প্রগতিতে অনেকখানি এগিয়ে আছে।
বঙ্গবন্ধু সারা জীবন আদর্শের রাজনীতি করেছেন। কখনো তিনি তাঁর আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র পিছিয়ে যাননি। আদর্শের রাজনীতি করতে গিয়ে পাকিস্তানিদের হাতে বিভিন্ন সময় কারাগারে বন্দি হতে হয়েছে তাঁকে। ভাষা আন্দোলনের সময় জেলে থাকতে হয়েছে। জেল থেকেই বঙ্গবন্ধু সব সময় ভাষা আন্দোলনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে এসেছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় দ্বিধাহীনচিত্তে বাঙালির স্বার্থ রক্ষা করার কথা চিন্তা করেছেন।
১৯৭১ সালের ১৭ মার্চও বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে সে সময়ের দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত রিপোর্টসমূহ থেকে জানা যায়। আর ১৭ মার্চের মাত্র দশদিন আগে অর্থাৎ ৭ মার্চ, ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতির সন্ধিক্ষণ 'ম্যাগনাকার্টা' হিসেবে ভাস্বরিত ৭ মার্চের অনুপম দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও প্রজ্ঞাবান বক্তৃতামালা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশে, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষকে যেমন আপন করে নিয়েছিলেন তেমনি তাদের সন্তান সন্ততিদের প্রতি ছিল তাঁর বুকভরা ভালোবাসা। তিনি জানতেন আজকের শিশু আগামী দিনের পথপ্রদর্শক। বঙ্গবন্ধু তাদের উন্নয়নের জন্য, ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সব সময় সচেষ্ট থাকতেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর জন্মদিন পালন করতেন সম্পূর্ণ অনাড়ম্বরপূর্ণভাবে। তিনি শত ব্যস্ততার মাঝেও শিশু-কিশোরদের সময় দিতে পছন্দ করতেন।
বঙ্গবন্ধু বাঙালির ভাগ্যোন্নয়নে সবসময় সচেষ্ট ছিলেন। তিনি কখনো পরোয়া করতেন না, তাঁর নিজের ও পরিবারের ক্ষতি হতে পারে। তাঁর কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, 'সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে শত্রুতা নয়।' এই মহতী নেতা শান্তির জন্য জুলিও কুরী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। বাঙালি ছিল তাঁর হৃদয়ের মণি। তাদের উন্নয়নের জন্য একের পর এক কর্মসূচি স্বাধীন বাংলাদেশে গ্রহণ করেছিলেন। চেষ্টা করছিলেন কেবল যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রটিকে পুনর্গঠন নয় বরং বিভিন্ন ফ্রন্টে দীর্ঘমেয়াদি তৎপরতার আওতায় উন্নয়ন করার। আজ স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর বাংলাদেশের যে অগযাত্রা তার মূল ভিত্তিভূমি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ বেয়ে অগ্রসরমান হচ্ছে। বিবিসি বাংলা সার্ভিস যখন সর্বকালের সেরা বাঙালি হিসেবে নির্বাচিত করছিলেন সঙ্গতকারণেই বঙ্গবন্ধু নির্বাচিত হলেন সেরা বাঙালি হিসেবে। এখানেই বঙ্গবন্ধুর জয়। আদর্শিক নির্লোভী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এই মহতীপ্রাণ ব্যক্তিত্ব তাঁর মৃত্যুর পরও জনপ্রিয়।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে তাঁর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের মানুষ স্মরণ করে তাঁকে শ্রদ্ধা ভরে। যে পাকিস্তানিরা তাঁকে হত্যা করতে পারেনি, সেখানে কিছু বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের দল তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করে। এই জঘন্য পাপকর্ম করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং বছরের পর বছর ধরে ইনডেমনিটি বিল দ্বারা যারা তাঁর ও তাঁর পরিবারের সদস্য সদস্যা ও শিশুপুত্র শেখ রাসেলকে হত্যা করেছিল, তাদের বিচার বন্ধ করে রেখেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতীয়তাবোধকে ধ্বংস করে দিয়ে পাকিস্তানপন্থি চিন্তা চেতনাকে আমদানি করা। আজ পাকিস্তান একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র অথচ বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। কারো কারোর কাছে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়া সহ্য হয় না। তাই তো সহিংসতা, নাশকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী ঘটনা ঘটাতে সচেষ্ট রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে ঘাতকরা থেমে থাকেনি। বরং ২০০৪ সালের একুশ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে সচেষ্ট হয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই চক্রান্ত সেদিন পরাস্ত হয়েছিল। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর নাতি সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের প্রয়াস নেওয়া হয়েছিল বলে খবর বেরিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু এদেশের প্রাণভ্রমরা ছিলেন। তাঁর ৯৫তম জন্মদিনে বাঙালি তাঁকে ন্যায়সঙ্গতভাবে স্মরণ করছে। যারা বাঙালি চিন্তা-চেতনা-মননে বিশ্বাস করে না, তাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর মাহাত্ম্য-ঔদার্য বিষবাষ্পস্বরূপ। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বাংলাদেশের প্রগতি-শান্তি-আত্মোন্নয়ন চায় না। বরং চায় যেকোনো উপায়ে আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে উঠতে। এটি একটি অসাম্প্রদায়িক শক্তিসম্পন্ন বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু নয়। আজ আমাদের বাঙালি জাতির কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আদর্শ-ন্যায় ও সততার। দুর্ভাগ্য যে, বাঙালি শান্তিপ্রিয়। যারা নরপিশাচ, আত্মম্ভরিতায় ভোগেন, তারা দেশকে ঈর্ষান্বিত হয়ে পেছনে ঠেলে দিতে চান। বাঙালি এদের মুখ ও মুখোশ সহসাই উন্মোচন করবেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী মুখোশ পরে 'যেদিকে পুতুল নাচাও'-এর মতো যখন মানুষ মরছে তখন সুবিধা মতো খোল নলচে পাল্টাচ্ছে। এদেরই পূর্বসূরিদের কেউ কেউ আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বলেছিলেন যে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে রক্ষা ও দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তান বাহিনী কাজ করছে। আজ ২০১৫ সালে একই চিত্র দেখতে পাচ্ছি। তবে আশার কথা, বাংলার জনগণ এই চালাক-চতুরদের চেনে। তাদের ঘৃণা করে। দেশের অগ্রগতি ঈর্ষান্বিত হয়ে যারা ক্ষতি করতে চায়, তারা দেশ ও জনগণকে প্রতারিত করছে। কোনো অর্বাচীনের সাধ্য নেই বিদেশে বসে বিদেশি অর্থে চরিত্র হননের প্রয়াস করে নিজের কুকর্ম ঢাকা দিতে চায়। এরা দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। এদের মিথ্যা বিভ্রান্তির মায়াজাল জনগণ ছিন্ন করছে। বঙ্গবন্ধু ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার অজেয়, অমর কীর্তি এখনো দেদীপ্যমান হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর সততা, ন্যায় নিষ্ঠা আমাদের পথ চলতে সহায়তা করে। আমরা সকল অন্যায় অবিচারকে রুখে সম্মুখে পানে এগিয়ে যাব। বঙ্গবন্ধুর আত্মার প্রতি আল্লাহ শান্তিবর্ষণ করুন। ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ের মণি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন তাঁর স্টেইটম্যান সুলভ আচরণের কারণে। মানুষের হৃদয়ে যাঁর জায়গা, অন্তরের অন্তঃস্থল মঙ্গল যাচনায় যিনি ছিলেন সদা ব্যস্ত তাঁর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা। অবশেষে বলি 'জয়তু বঙ্গবন্ধু'Ñতুমি যে তোমার কীর্তি দ্বারা মহীয়ান হয়ে রয়েছ।
__._,_.___