http://www.dailyinqilab.com/2013/11/24/145142.php
হাজারো লেন্দুপ দর্জি সক্রিয় : আশ্রিত রাষ্ট্রের পথে দেশ?
http://amaderbudhbar.com/?p=2335
From: | Isha Khan (bdmailer@gmail.com) |
Sent: | 25 November 2013 05:03:39 |
To: |
সিকিমের কথা মনে পড়ে? ভারতের উত্তরাংশে তিব্বতের পাশে ছিল ওই দেশ। দেশটির স্বাধীন রাজাদের বলা হতো চোগওয়াল। ভারতে বৃটিশ শাসন শুরুর পূর্বে পার্শ্ববর্তী নেপাল আর ভুটানের সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে সিকিম। বৃটিশরা আসার পর তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েও নেপালের বিরুদ্ধে ছিল সিকিম। রাজা ছিলেন নামগয়াল।
১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের পর ভৌগোলিক কারণে সিকিমের গুরুত্ব বেড়ে যায়। ১৯৭০ সালে ভারতের নীলনকশায় লেন্দুপ দর্জির সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে। রাজপ্রাসাদের সামনে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে ইন্দিরাগান্ধী সরকার রাজার নিরাপত্তায় সৈন্য পাঠায়। রাজা গৃহবন্দী হন। বিএস দাশ নামের একজনকে ভারত সরকার সিকিমের প্রধান প্রশাসক নিয়োগ করে। এই সময় আমেরিকান এক পর্বতারোহী গোপনে সিকিম প্রবেশ করেন এবং দেশটির স্বাধীনতা হরণের খবর বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেন। ততক্ষণে সব শেষ। ভারতের তাঁবেদার লেন্দুপ দর্জির নেতৃত্বাধীন সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস (এসএনসি) ১৯৭৪ সালে পাতানো নির্বাচনে সংসদের ৩২ আসনের মধ্যে ৩১টি বিজয়ী হয়। নির্বাচনে জিতে ১৯৭৫ সালের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী লেনদুপ দর্জি রাজতন্ত্র বিলোপ করলে ভারতীয় সেনারা সিকিমে ঘাঁটি গেড়ে বসে। অতপর 'হ্যাঁ' 'না' ভোট। বন্দুকের মুখে ভোটারদের 'হ্যাঁ' ভোট দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭৫ সালের ৬ এপ্রিল ভারতীয় সৈন্যরা রাজাকে বন্দী করে প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা স্বাধীন রাষ্ট্র সিকিমকে গ্রাস করে ভারতের প্রদেশ করেন। লেন্দুপ দর্জি স্থান ইতিহাসে কোথায় হয়েছে সবার জানা।
৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযদ্ধে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ লেন্দুপ দর্জিতে ভরে গেছে। শত শত হাজার হাজার লেন্দুপ দর্জির বিচরণ সর্বত্র। টেলিভিশনের টকশো আর পত্রপত্রিকার লেখালেখিতে তারা দিল্লির গীত গাইছেন। ঢাকার স্বার্থের চেয়ে দিল্লির স্বার্থকে বড় করে দেখছেন। তথাকথিত জঙ্গি নামের জুজুর ভয় দেখিয়ে জনগণকে দিল্লির মোসাহেবদের দলকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। বিনিময়ে তারা কি পাচ্ছেন তা তারাই ভালো জানেন। তবে তাদের আচরণে বোঝা যায় কথায় কথায় দিল্লি সফর এবং কলকাতা তাদের যেন মাতৃভূমি করে ফেলেছেন। এই নব্য লেন্দুপ দর্জিদের ঠেকাতে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনীতিক ও সাধরণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে। ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। এখন ভূখ- দখলের প্রয়োজন পড়ে না। ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই হলো। একজন হাই কমিশনারের পদ কত বড়? ঢাকায় কর্মরত ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ ডাকলেই মন্ত্রীরা ছুটে যান তার বাসায় আর অফিসে। কূটনৈতিক শিষ্টচার ভঙ্গ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লেন্দুপ দার্জি মার্কা বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এটা কিসের আলামত?
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা দেশের নেতানেত্রীরা কি মেরুদ-হীন? বুদ্ধিজীবীরা কি বিবেক বন্ধক রেখেছেন ভারতীয় রুপির কাছে? মিডিয়াগুলো কি দিল্লির কাছে বন্দী? নাকি কিছু মিডিয়া ওদের টাকায় প্রতিষ্ঠার কারণে দেশের চেয়ে তাদের প্রতি দরদ বেশি দেখানো হচ্ছে? অনেক মিডিয়ায় ভারত থেকে কর্মকর্তা শিল্পী আমদানি করা হচ্ছে। এর নেপথ্যে কি দিল্লির দাসত্বের মানসিকতা দায়ী? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য স্বাধীন বাংলাদশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হয় দিল্লিতে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ঢাকা থেকে দিল্লি গিয়ে 'সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন' নিশ্চিত করতে দেনদরবার করেন। সার্বভৌম দেশের ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্য যেন দিল্লির মর্জির ওপর নির্ভরশীল। দিল্লি প্রকাশ্যে বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ করছে অথচ বুদ্ধিজীবী, বিদ্যাজীবী, সুশীল সমাজ, সাংস্কৃতিকসেবী এবং রাজনীতিকদের বড় একটি অংশ লেন্দুপ দর্জির মতো মিডিয়ায় দিল্লির গুণকীর্তনে সর্বদা ব্যস্ত। শেখ হাসিনা সরকারের 'দিল্লি তাঁবেদারি' নীতিতে দারুণ খুশি। প্রবাদে আছে 'আত্মীয় বদল করা যায়/ কিন্তু প্রতিবেশী বদল করা যায় না।' প্রশ্ন হলো ভারত আমাদের কেমন প্রতিবেশী? বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কেমন? ভারতের সঙ্গে কি আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক? নাকি তোষামোদের সম্পর্ক? ৪২ বছরে ভারত কি বাংলাদেশের কাছে বন্ধুত্বের কোনো নিদর্শন দেখিয়েছে? মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি কি বাস্তবায়ন হয়েছে? তারপরও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে দিল্লির দাদাগিরিতে এদেশের লেন্দুপ দর্জিদের এত আগ্রহ কেন?
গতকালও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক এক কমিটি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে শুনানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। দিল্লিতে বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এসব নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বিদেশিরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন হলে অসুবিধার কি আছে? তারা আমাদের ভালোর জন্য বলছেন না খারাপের জন্য বলছেন সেটা দেখতে হবে। কামাল হোসেনের এ বক্তব্য মেনে নিয়েও বলা যায় ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। বাংলাদেশের মতো স্বল্প উন্নত দেশের উচিত সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্মানজনক সম্পর্ক। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার কি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়েছেন না তাঁবেদারির সম্পর্ক?
টেলিভিশনের টকশোগুলোতে আলোচকদের অনেকেই কথায় কথায় পাকিস্তানের আইএসআইকে টেনে এনে বিএনপিসহ ইসলামী ধারার দলগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা খোঁজা চেষ্টা করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ওই মুখচেনা আলোচকরা আবার দিল্লির তোয়াজ করেন। ওইসব ব্যক্তির চোখে নিজ দেশে 'র'এর অবাধ বিচরণের চিত্র ধরা পড়ে না। ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার জন্য মরিয়া তারা। আসলে বাংলাদেশে সে ধরনের কোনো জঙ্গির প্রতি বিএনপি বা কোনো ইসলামী ধারার দল সমর্থন করে? চ্যানেল আই-এর তৃতীয় মাত্রায় বিজেপির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেছেন, হঠাৎ হঠাৎ আনছারুল্লাহ নামের জঙ্গি দল আবিষ্কার করা হয়। হঠাৎ হঠাৎ এভাবে জঙ্গি আবিষ্কারের নেপথ্যে কি? বাংলাদেশের মানুষ কখনো জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেয় না। অথচ বিশেষ বিশেষ সময় জঙ্গি আবিষ্কার করা হয় এবং দিল্লির তাঁবেদারখ্যাত মিডিয়াগুলো সে খবর ফলাও করে প্রচার করে। মার্কামারা ওই বুদ্ধিজীবী আর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ভারতে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে বাংলাদেশের সমূহ বিপদ হতে পারে তা নিয়ে শঙ্কা নেই। সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে বাংলাদেশি নিহত হলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যখন বলেন, সীমান্তে নিরপরাধ মানুষ মারা পড়েনি। অপরাধীরা মারা গেছে। তখন ওই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা নীরব হয়ে যান।
ডা. দীপু মনিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া এবং তার ঘন ঘন বিদেশ সফর নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে একজন কূটনীতিক বলেছিলেন 'ছাগল দিয়ে হালচাষ' করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রটোকল ভঙ্গ করে কলকাতা ছুটে গিয়ে দীপু মনি মমতার চেয়ারের পাশে কাচুমাচু হয়ে বসে তোয়াজ করার দৃশ্য মানুষ দেখেছে। সেই মমতা তিস্তা চুক্তি ঠেকিয়ে দিয়েছেন। বুদ্ধিজীবীদের এসব চিত্র চোখে পড়ে না। দিল্লির সাউথ ব্লকে শিব শঙ্কর মেনন বাংলাদেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতি চূড়ান্ত করায় ঢাকার লেন্দুপ দর্জি মার্কা বুদ্ধিজীবীরা বাহবা বাহবা দেন। ভারতের সঙ্গে আরো সম্পর্ক গভীর করার প্রস্তাব করেন।
মহাজোট সরকারের দিল্লিকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করায় গোটা বিশ্বের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। সোজা কথায় বলা যায় বাংলাদেশ এখন কার্যত 'একঘরে রাষ্ট্র'। দিল্লির আয়নায় বিশ্বকে দেখতে গিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ ভারতের পদতলে ঠেলে দিয়েছে। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা বিশ্ব। ঢাকা নিজ দেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মধ্যে ফেলে ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যস্ত হয়েছে। ৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭ রাজ্যের বিদ্রোহ দমনে (মূলত স্বাধীনতাকামী) সর্বাত্মক সহযোগিতা, ফ্রি ট্রানজিট, বাংলাদেশের জন্য ধ্বংসাত্মক টিপাইমুখ প্রকল্পের অনুমোদন, সুন্দরবনের জন্য সর্বনাশা রামপাল বিদ্যুৎকন্দ্রের উদ্বোধন, বন্দর সুবিধাসহ ভারতের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো একে একে পূরণ করেছে। ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতে ফেনী নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণের মতো আত্মঘাতী কাজও করেছে। বিনিময়ে সীমান্তে হত্যা অব্যাহত রেখেছে বিএসএফ। বর্তমান সরকারের মেয়াদে ফেলানীসহ প্রায় ৫শ নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। ফেলানী হত্যার পর প্রতিবাদের বদলে সীমান্ত হত্যার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।
ভারতের পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তি সই এবং সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নে বার বার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় ৫০ দফার যৌথ ঘোষণাপত্র সইয়ের মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে কার্যত দিল্লির কাছে বিকিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই ঘোষণাপত্রে ট্রানজিট সুবিধা, বন্দর ব্যবহার, আশুগঞ্জ নৌবন্দরকে পোর্ট অব কল হিসেবে ঘোষণা দেয়া, সন্ত্রাস দমনে (ভারতের বিদ্রোহ দমন) সহায়তা, টিপাইমুখ প্রকল্পে সম্মতি দেয়াসহ ভারতের দীর্ঘদিনের চাহিদাগুলো পূরণে অঙ্গীকার করা হয়। অন্যদিকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ, তিস্তা চুক্তি সই, সিটমহল বিনিময়, সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নসহ বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোর ব্যাপারে কেবল আশ্বাস দেয়া হয় ঘোষণাপত্রে। সীমান্তে সন্ত্রাস দমন এবং মাদক চোরাচালান রোধে ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী ৩টি চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তির মোড়কে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭ রাজ্যে বিদ্রোহ দমনে সম্পৃক্ত করে ঢাকাকে। ওই ৩টি চুক্তির ব্যাপারে সংসদে বা অন্য কোথাও কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। কেউ জানে না ওই চুক্তিতে কী আছে। চুক্তি সম্পর্কে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস বলেছিলেন, এই চুক্তির আওতায় দু'দেশের গোয়েন্দা সদস্যদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।
ওই চুক্তির পর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অবাধে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ পেয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ভারতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে এমন খবর নেই। ভারতের বিদ্রোহ দমনে যুক্ত হওয়ার ফলে বাংলাদেশ বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে। ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকায় কর্মরত ভারতীয় হাইকমিশনার রঞ্জিত মিত্র বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে ভারত সরকার বাংলাদেশকে ট্রানজিট ফি দিতে রাজি আছে। পরের দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ঘোষণা দিলেন, ভারতের কাছে ট্রানজিট ফি চাওয়া হবে অসম্মান। প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ঘোষণা দিলেন, ভারতকে ট্রানজিট দিতে কোনো চুক্তি সইয়ের প্রয়োজন নেই। চুক্তি ছাড়াই ভারতকে ট্রানজটি সুবিধা দেয়া হবে। নৌ-প্রটোকলের আওতায় পরীক্ষামূলক ট্রানজিটের নামে স্থায়ী ট্রানজিট দেয়া হয়েছে। সীমান্ত হত্যাকে কার্যত বৈধতা দিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, সীমান্ত হত্যা দু'দেশের সম্পর্কের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বার বার সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সীমান্তের পরই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক সীমান্তত্ম হিসেবে বিশ্বে আজ পরিচিত। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়া চীন, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানের সীমান্ত রয়েছে। তবে একমাত্র বাংলাদেশ সীমান্তেই ভারত নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অধিকারসহ বিভিন্ন জাতীয় ও অন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী গত ৫ বছরে প্রায় ৫০০ নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। নির্যাতনের শিকার হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। ভারতীয় বাহিনী গুলি করে বাংলাদেশিদের মারলেও বিজিবির গুলি ছোড়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। সরকারের নতজানু নীতির কারণে বিজিবি কার্যত অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
এখন আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় বসানোর মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। প্রশ্ন হলো এ অবস্থায় দেশপ্রেমী জাতীয়তাবাদী নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা নীরব কেন? সামনে অগ্নিপরীক্ষা। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার এই পরীক্ষায় এদেশের লেন্দুপ দর্জিরা কি বিজয়ী হবেন? নাকি দেশপ্রেমীরা বিজয়ী হবেন?
http://www.dailyinqilab.com/2013/11/24/145142.php
বাড়ছে ভারতীয় বিনিয়োগ: অভিন্ন মুদ্রা চালুতে ঢাকার প্রস্তাব
ইতোপূর্বে না হলেও গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব খাতেই
ভারতীয় বিনিয়োগের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে। ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকন্দ্র স্থাপনে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসির
সঙ্গে এরই মধ্যে চুক্তি হয়েছে। গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ
বিনিয়োগে আসছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেড
(ওভিএল) ও অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। আগামী আগস্টে
সাগরের দুটি ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধানের চুক্তি হতে যাচ্ছে। টেলিকম খাতে
বিনিয়োগ বাস্তবায়ন করেছে ভারতী এয়ারটেল। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ওয়ারিদের
শতভাগ শেয়ার কিনে নিয়েছে। প্রসাধন খাতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করেছে মেরিকো।
যানবাহন তৈরিতে নতুন বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে টাটা। বিনিয়োগ নিবন্ধন
করেছে টায়ার নির্মাতা সিয়াট। জানা যাচ্ছে, গার্মেন্ট খাতে বিপুল বিনিয়োগ
রয়েছে ভারতীয় কোম্পানির। দেশীয় গার্মেন্ট কেনার আগ্রহও রয়েছে ভারতীয়
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। গেল কয়েক বছরে গার্মেন্ট খাতে ভারতের বিনিয়োগ কত,
তা জানা যায় না। বিনিয়োগ বোর্ড থেকে স্থানীয় প্রশাসন কেউ এসব তথ্য সংগ্রহ
করে না।
বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের অনুমোদন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে
ভারতীয় গণমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে ওভিএলের প্রধান নির্বাহী দিনেশ
কে সারাফ বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর বেশি গুরুত্ব
দিচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে এখানে বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে সার উৎপাদনের
পরিকল্পনা রয়েছে ওভিএলের। দক্ষিণ এশিয়ায় বৈদেশিক বিনিয়োগপ্রবাহ নিয়ে
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩-১২ এক দশকে এ অঞ্চলে বিনিয়োগপ্রবাহ
বাড়িয়ে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে ভারত। এ সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায়
ভারতের মোট বিনিয়োগের ২৩ দশমিক ৮৮ শতাংশই এসেছে বাংলাদেশে। শুধু বাংলাদেশ
নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে ভারতকেই
দেখছে সংস্থাটি।
বৃহত্তর ভারতের অন্যতম বিনিয়োগ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত পেতে যাচ্ছে
বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী
সংগঠন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আদি গোদরেজ এমন
ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগের
যথেষ্ট উপযুক্ত স্থান। ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের সব খাতেই বিনিয়োগ
করতে চায়। আর এ জন্য সরকারের কাছে পণ্য পরিবহনে ট্রানজিট সুবিধা ও বিশেষ
অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ী শিল্পী
গোষ্ঠী। অন্যদিকে দেশের ব্যবসায়ী মহল ও সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের এমন
বিনিয়োগের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা। তারা বলছেন, স্বাধীনতার
পর থেকে বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম। বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে
নতুনভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে বাংলাদেশ। উল্লেখ অবৈধ
পথে বিনিয়োগের কোনো হিসাব পাওয়া যায় না।
বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্য মতে, বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আইন ও
নীতিমালা শিথিল থাকলেও স্বাধীনতার পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ
ভারতীয় মালিকানাধীন ৬২টি প্রতিষ্ঠান মাত্র ২১ কোটি ডলার বাংলাদেশে
বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানায় ১৬৮টি প্রতিষ্ঠানে
বিনিয়োগ হয়েছে ৩৮ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ভারতের ২৩০টি প্রকল্পে
মোট বিনিয়োগ মাত্র ৫৯ কোটি ডলার। বিনিয়োগ বোর্ডের সাম্প্রতিক
তথ্যানুযায়ী, একক ও যৌথ মালিকানায় ভারতীয় প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২৬টি
কৃষিভিত্তিক শিল্পে, খাদ্য শিল্পে ছয়টি, টেক্সটাইল শিল্পে ৩৫টি,
প্রিন্টিং, পাবলিশিং ও প্যাকেজিংয়ে সাতটি, ট্যানারি ও রবারে তিনটি,
রাসায়নিক খাতে ৫৪টি, গ্লাস ও সিরামিকসে চারটি, প্রকৌশল খাতে ৩৬টি এবং
সেবা খাতে ৫৯টি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ এসেছে।
সূত্র আরও জানায়, একক ও যৌথ মালিকানায় ভারতীয় উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে সব
মিলিয়ে যে ২৩০টি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ
হয়েছে সেবা খাতে। এর মধ্যে এ্যাপোলো হাসপাতাল ও টেলিকম খাতে এয়ারটেলের
বিনিয়োগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেবা খাতে এ দুটিই ভারতের সবচেয়ে বড়
বিনিয়োগ। কিন্তু শিল্প খাতে উল্লেখ করার মতো বড় ধরনের কোন বিনিয়োগ না
থাকায় এবার এ খাতে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশে তিন দিনের আনুষ্ঠানিক সফরে এসে ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী
সংগঠন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আদি গোদরেজ
বলেছিলেন, আমাদের অন্যতম লক্ষ্য হলো অবকাঠামোগত দিক থেকে বাংলাদেশের
ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগানো। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে
ভারতের অন্যান্য অংশের মধ্যে মালামাল পরিবহন উন্নত করা যায় কিনা,
বাংলাদেশ থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতসহ ভারতের অন্যান্য অংশে রফতানি উৎসাহিত
করা যায় কিনা এ বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি
বলেন, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাস, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নানা
ধরনের ভোগ্যপণ্য, কৃষি ইতাদি খাতকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। এসব
খাতেক প্রাথমিক অবস্থায় ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায় ব্যবসায়ীরা। সফরে
আসা একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশের টেকসই এসএমই
খাতের বিকাশে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তার প্রস্তাব করেন
তারা। ভারতীয় উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে গ্যাস উত্তোলন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি
প্রযুক্তি, আইসিটি, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের
উন্নয়নসহ সম্ভাবনাময় শিল্পখাতে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে তাদের। এদিকে
দুই মাস আগে আবাসন খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে ভারতের আরেক বড়
শিল্পীগোষ্ঠী সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার বাংলাদেশে আসে। স্যাটেলাইট সিটি
নির্মাণে ভারতীয় এ কোম্পানি আবাসন খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে সরকারের
সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করে। এরই মধ্যে ভারতের এ গ্রুপটির বাংলাদেশ সাহারা
মাতৃভূমি নামে কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে নানা কারণে তাদের ফ্লাট নির্মাণ
প্রকল্প স্থগিত রয়েছে।
বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ ক্রমে বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক
অস্থিরতায় এ হার কিছুটা কমে এসেছে। গেল কয়েক বছরে বাংলাদেশে বিনিয়োগে
এগিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ কয়েকটি দেশ। ২০১২ সালেই দেশের মোট
জিডিপিতে বিনিয়োগের অবদান ছিল ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম
আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে বিনিয়োগের এ হার হতে হবে ৩৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে
বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্টরাও বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারতকেই
বাংলাদেশের মূল ভরসা মনে করছেন। তবে এর সঙ্গে একমত হতে পারছে না বিনিয়োগ
বোর্ড। তাদের দাবি, এক্ষেত্রে মূল বাধা ছিল দেশটির বৈদেশিক বিনিয়োগের
নীতিমালা। বিনিয়োগ বোর্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ৪১ বছরে বাংলাদেশের মোট
বিদেশী বিনিয়োগে ভারতের অবদান মাত্র ৩ শতাংশ। অবস্থানগত দিক দিয়ে
এক্ষেত্রে ভারত রয়েছে ১২তম স্থানে। প্রথম অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য। পরের
অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডস।
বাংলাদেশ-ভারত সরাসরি চলবে পণ্য পরিবহন জাহাজ : বাংলাদেশকে পরিবহন সড়ক
হিসেবে ব্যবহার করতে যাচ্ছে ভারত। ইতোমধ্যে ভারতের ত্রিপুরায় খাদ্যশস্য
পরিবহনে বাংলাদেশ অনুমতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের ইন্দো-এশিয়ান নিউজ
সার্ভিস (আইএএনএস)। আইএএনএস- কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন
ত্রিপুরার খাদ্যমন্ত্রী ভানুলাল সাহা। পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দর দিয়ে
প্রবেশ করে আশুগঞ্জ হয়ে ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব মিজোরাম, মণিপুর ও ত্রিপুরা
রাজ্যে যাবে। প্রথমবারের এই চালানে চাল, গম ও চিনি নেয়া হতে পারে বলে
ধারণা করা হচ্ছে। ২০১১ সালের মে মাসে ত্রিপুরায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র
নির্মাণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাপাতি নেয়া হয় বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে।
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে পালটানায় ওই
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় ওই
যন্ত্রাংশের চালান বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ত্রিপুরা নেয়া হয়।
পণ্য পরিবহন সহজ করতে শিগগিরই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সরাসরি উপকূলীয়
জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও স্থলপথে পণ্য
আমদানি-রপ্তানিতে চাপ কমানোর অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পণ্যবাহী
জাহাজ ব্যবসায়ীরা জানান, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজে পণ্য পরিবহন করা
হলে সময় ও ব্যয় দুটিই কমবে। চুক্তির খসড়া অনুযায়ী, ভারতের তিনটি বন্দর
দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া হবে। এই বন্দরগুলো হলো পশ্চিবঙ্গের হলদিয়া, ওডিশার
পারাদ্বীপ ও অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তম। আর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা
বন্দরে মালামাল পরিবহন করা হবে। সরাসরি জাহাজ যোগাযোগ না থাকায় এখন
ভারতের কোনো বন্দর থেকে বাংলাদেশে পণ্য আনতে হলে তা প্রথম শ্রীলঙ্কার
কলম্বো, মালয়েশিয়ার পেনাং অথবা সিঙ্গাপুর যায়। সেখান থেকে আবার বাংলাদেশে
আসে। একই পথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য যায়। একটি চালান আসতে সময় লাগে ১৫
থেকে ২১ দিন। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হলে
পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া ও পারাদ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম কিংবা মংলা বন্দরে
পণ্যবাহী জাহাজ আসতে সময় লাগবে মাত্র ১৬ ঘণ্টা। আর বিশাখাপত্তম থেকে আসতে
সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন দিন। এতে করে পণ্য পরিবহন ভারতের ব্যয় অনেকাংশেই
হ্রাস পাবে। বর্তমানে ভারতের মূল ভূখন্ডের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি
পণ্য রপ্তানি এবং সেখান থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানির বড় অংশই
পশ্চিমবঙ্গ-সংলগ্ন স্থলবন্দরগুলো দিয়ে সম্পন্ন হয়। তাতে ভারতের পরিবহন
ব্যয় বেশি হয়। জানা গেছে, ভারতের চেন্নাই বা অন্য কোনো বন্দর থেকে জাহাজে
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বা মংলায় পণ্য আনতে হলে যেহেতু সিঙ্গাপুর বা
শ্রীলঙ্কা হয়ে আসতে হয়, সেহেতু প্রতি টন পণ্য আমদানিতে গড়ে প্রায় এক
হাজার ২০০ ডলার ব্যয় হয়। নতুন ব্যবস্থায় সরাসরি জাহাজ চালানো গেলে এ ব্যয়
অন্তত এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসবে। অর্থাৎ ব্যয় হবে প্রায় ৪০০ ডলার।
তবে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল-সংক্রান্ত চুক্তির খসড়ায়
আন্তর্জাতিক মানদন্ড- কিছুটা শিথিল করার কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক
মানদন্ডে উত্তীর্ণ জাহাজের পরিবর্তে কিছুটা ছোট আকারের জাহাজ চলাচলের
অনুমতি দেওয়া হবে। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান নৌ-প্রটোকলের
আওতায় যে মানদন্ডে জাহাজ চলাচল করে, সে ধরণের জাহাজে পণ্য পরিবহনের সুযোগ
দেওয়া হবে। ২০১১-১২ অর্থবছরে ভারত প্রায় ৪৭০ কোটি ডলারের পণ্য বাংলাদেশে
রফতানি করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি হয়েছে ৪৯ কোটি ৮০
লাখ ডলারের পণ্য।
ভারতীয় এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সড়কপথে প্রতি একক দূরত্ব অতিক্রম করতে যে
পরিমাণ জ্বালানি তেল খরচ হয়, তার মাত্র ১৫ শতাংশ দিয়েই জলপথ বা সমুদ্রপথে
একই দূরত্ব অতিক্রম করা যায়। আর রেলপথের অর্ধেক জ্বালানি খরচ হয় জলপথে।
আবার সড়কপথের মাত্র ২১ শতাংশ ও রেলপথের মাত্র ৪২ শতাংশ খরচ হয় জলপথে বা
সমুদ্রপথে। সার্ক দেশগুলির মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে এক অভিন্ন
মুদ্রা ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল
আবদুল মুহিত৷ অন্ততপক্ষে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এই মুদ্রা চালুর
প্রস্তাব করেন তিনি৷ কিন্তু বিনিময়ে কি অর্থ শুল্ক হিসেবে বাংলাদেশ পাবে
তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।।
http://amaderbudhbar.com/?p=2335
__._,_.___