Banner Advertise

Thursday, March 26, 2015

[chottala.com] পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হয়নি যে স্বাধীনতা



পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হয়নি যে স্বাধীনতা
মনির আহমেদ
পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হয়নি যে স্বাধীনতাআমরা স্বাধীন। এই কথা হৃদয়ে ধারণ করি, গর্ব অনুভব করি। কিন্তু তবুও একটা কষ্ট। মনে প্রশ্ন আসে- আমরা কি সত্যিই স্বাধীন। স্বাধীন বাংলাদেশ গান গেয়েও তো দেখি এই জনপদের অনেক মানুষ মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। বলতে হয়, আমরা স্বাধীন। কিন্তু পরাধীনতা এখনো বারবার আমাদের স্বাধীনতায় ছোবল মারে।

সেদিন খুলনা যাচ্ছিলাম। কাওরাকান্দি থেকে মাইক্রো সার্ভিসে উঠলাম। ছোট একটা গাড়ি। নয়টা সিট, কিন্তু আমরা বসলাম ১৮ জন। কিছুই করার নাই, যেতে হবে। সুতরাং তারা যেভাবে নেয়, সেভাবেই যেতে হচ্ছে। কোন প্রশ্ন করা মানে বিপাকে পড়া। করলেই সোজা জানিয়ে দেবে, 'আপনি যাবেন? গেলে যান না হয় অন্য গাড়িতে আসেন।' অসহায় মনে হয় নিজেকে!

এই শ্রেনীর মানুষদের কাছে যাত্রীরা জিম্মি। একটু খোঁজার, তলিয়ে দেখার প্রয়াস পেলাম। দেখা গেল ১৮ জন থেকে ৫৫০০টাকা তারা ভাড়া নেয়। কিন্তু ড্রাইভারের হাতে দেয়া হয় ৩২০০ টাকা। বাকি টাকা? বিষয়টি সবার কাছেই দিনের আলোর ন্যায় স্পষ্ট। এমপি সাহেবের ভাগ, পরিচালনা কমিটি, এলাকার বড় ভাই সবাইকে এখান থেকে একটা অংশ দিতে হবে। একই ভাবে গত ঈদের আগের দিন স্পিড বোটে করে যাচ্ছিলাম। সব সময় ভাড়া নেয় ১৫০, সেদিন নিল ২৫০ টাকা। বোটের চালককে জিজ্ঞেস করলাম, ১০০ টাকা যে বেশী সেটা কি তোমরা পাবে? তার উত্তর, 'না ভাই আমরা যা পেতাম তাই পাব। বাকিটা মন্ত্রী, এমপি, ঘাটের খরচ।'

বলছিলাম খুলনা যাওয়ার সময়ের কথা। মাইক্রোতে বেশী লোক বসায় এক জনের পায়ের সাথে অন্য জনের পা লাগছিল। সবাই স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিচ্ছিল। শুরু হল কথা। একজন সিরিয়ার কথা তুললেন। বললেন, 'সেখানে মানুষদের জীবন যাপন নিয়ে। বাশার আল আসাদ অনেক দিন থেকে সে দেশের প্রেসিডেন্ট। মানুষের স্বাধীনতা বলতে গেলে নাই-ই। জোর যার মুল্লুক তার। এভাবেই চলছে তাদের সব কিছু, প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যা বরাদ্দ তা দিয়েই চলতে হয়। এমনকি পানি পর্যন্ত সরকারের নিকট থেকে বরাদ্দ।'

আমি জানতে চাইলাম, ভাই তারা টিউবওয়েল বসায় না কেন? লোকটির উত্তর, 'মাটি খোঁড়াও নিষিদ্ধ! টিউবওয়েল বসানোর তো প্রশ্নই আসেনা।'

'পুরুষ মানুষের বয়স ১৮ এর বেশী হলে অধিকাংশকে হত্যা করা হয়, কারণ তারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে। মানুষকে সংঘবদ্ধ করতে পারে। এজন্য সেখানে পুরুষরা যারা বেঁচে থাকে তারা কোন কাজ করে না। বাইরে বের হলে গুলির মুখে পড়তে হতে পারে, তাই ক্ষেত-খামারের কাজ থেকে শুরু করে সব কাজ মহিলারাই করে। আইন-আদালত বলতে গেলে নাই। যাকে ভাল লাগছেনা গুলি করে হত্যা করছে। দেশ কয়েক  ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষ সরকার, এক পক্ষ সেনাবাহিনী, এক পক্ষ বিরোধী দল। যে যার মত করে চলছে। কাউকে ভাল না লাগলে গুলি করে হত্যা করছে। সেখানে সবার কাছে অস্ত্র থাকা বৈধ। সুতরাং কোন ঘটনা ঘটলে অস্ত্র নিয়েই সবাই বের হয়। কোন বিচার ব্যবস্থা সেভাবে নেই।'

যার কাছ থেকে শুনছিলাম তিনি মিশনে গিয়েছেন কয়েকবার। সিরিয়ায় তার বেশ কিছুদিন থাকার সুযোগ হয়েছে। সিরিয়ার এ অবস্থার কথা যখন ভাবি, তখন মনে হয় আমরা বেশ স্বাধীন আছি। এখনো আমাদের পুরুষরা বের হয়ে কাজ করতে যেতে পারে। হয়তো বিরোধী দল ঢাকা শহরে প্রকাশ্যে মিছিল মিটিং করতে পারছেনা। কিন্তু তাতে কি! আমরা তো বাজারে যাই, কাজ করি। হয়তো সংবাদপত্র সম্পাদক, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার চেয়ারম্যানদের ডেকে সরকারের পক্ষে থাকার জন্য হয়তো হুমকি দেয়া হচ্ছে, হয়তো সঠিক কথা না বলতে সুশীল সমাজকে নিষেধ করা হচ্ছে, হয়তো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলেও ক্ষমতা ছেড়ে পুনরায় নির্বাচন দিতে অস্বীকৃতি জানানো হচ্ছে, হয়তো পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবির কর্তা ব্যাক্তিদের পছন্দ মত নিয়োগ দিয়ে বিরোধী দল দমনে সরকার তাদের ওয়াদা করিয়ে নিচ্ছে, হয়তো রাষ্ট্রীয় বাহিনী কাউকে হত্যা, কাউকে গুম, কাউকে গ্রেপ্তার করে কারান্তরীণ করছে; কিন্তু তারপরও আমরা যে এখনো টিউবওয়েল বসিয়ে পানি তুলে খেতে পারছি! রাস্তায় ভয় নিয়ে হলেও চলতে পারছি। সেটাই বা কম কীসে?

বাংলা একাডেমি প্রকাশিত অভিধানে স্বাধীন শব্দের অর্থ দেয়া আছে- ১.বাধাহীন; আজাদ; মুক্ত; স্বচ্ছন্দ(স্বাধীন গতি) ২.নিজের বশে; অনন্যনির্ভর (স্বাধীন মতামত) ৩.সার্বভৌম; বিদেশী দ্বারা শসিত নয় এমন।

বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতির সাথে "স্বাধীন-স্বাধীনতা" শব্দের অর্থের কোন মিল আছে বলে আমার মনে হয় না। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে, কেন এই পরিস্থিতি? আমরা কেন পরনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিনা? ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের চেয়ে কেন অন্য রাষ্ট্রের নেতৃত্বকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে? কেনইবা অবৈধ নির্বাচনের বৈধতার সমর্থন পাওয়ার জন্য নিজের দেশের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে অন্যদের সুযোগ করে দিতে হবে? এসব বিষয় সন্দেহাতীতভাবে আলোচনার দাবি রাখে।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মুসলামানরা বড় একটা সময় পৃথিবী শাসন করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বশেষ মুসলিম শাসক ছিলেন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। সেই ১৭৫৭ সালের কথা। লর্ড ক্লাইভদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা পাওয়ার জন্য মুসলিম শাসকদের ভেতরে থাকা ব্রিটিশদের চর ঘসেটি বেগম, মীরজাফররা সেদিন ব্রিটিশদের ক্ষমতা দখলের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। পরাজিত হয়ে ইতিহাস থেকে প্রায় মুছে গিয়েছিল মুসলিম শাসন আমল। কিন্তু মুসলমানরা পরাজয় কখনো মেনে নিতে পারে না। আল্লাহর ওপর ভরসা করে তারা সব সময় এগিয়ে গিয়েছে। যদিও প্রায় দুইশত বছর আমাদেরকে ইংরেজদের কাছে পরাধীন থাকতে হয়েছে। কিন্তু অব্যাহত প্রতিরোধ ও বিরোধীতায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে এক সময় তারা নিজেদের বাঁচানোর জন্য হিন্দুদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু এর আগেই মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী  দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে বিষয়টি শেয়ার করেন। তখন মুসলমানদের প্রতিবাদের মুখে তারা শুধুমাত্র হিন্দুদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়নি। গড়ে ওঠে হিন্দু জনপদ নিয়ে হিন্দুস্থান ভারত। আর মুসলমান জনপদ নিয়ে মুসলমানদের কল্যাণ রাষ্ট্র পাকিস্তান । কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা যারা পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী ছিলাম, স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রে থেকেও অনেকটা পরাধীনের মতই ছিলাম।

দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ চলার পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বিকাল ৪.৩১ মিনিটে জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজীর নেতৃত্বে পাকিস্তানী বাহিনী লেফটেনেন্ট জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরার কাছে আত্মসমর্পন করে। গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু তখনই ভারতের কাছে যে আমাদের পরাধীন থাকতে হবে সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ক'দিন আগেও ভারত মওকা মওকা ভিডিও তৈরি করেছে। সেখানে তারা বুঝাতে চেয়েছে তারা বাংলাদেশকে আমাদের দান করেছে! যুদ্ধের পর ভারতীয় বাহিনী প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরের মূল্যবান সব সম্পদ নিয়ে যায়। আমাদের দেশকে পরিণত করে তলাবিহীন ঝুড়িতে। আমাদের দেশ পরিণত হয় তাদের বাজারে।

আমাদের দেশীয় প্রতিনিধির হাতে শাসন ক্ষমতা এলেও মূলত ইংরেজ শাসন আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতার নামে আমাদের গোলামী ও পরাধীনতার হাত বদল হয়েছে মাত্র! বর্তমানে আমরা স্বাধীন হয়েও আধিপত্যবাদী ভারতের ছোবলের শিকার হচ্ছি।

পাকিস্তানিদের হাত থেকে স্বাধীনতা অর্জন যেমন গৌরবের, তেমনি ভারতের আধিপত্যবাদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়াও অনেকটা লজ্জার। যা বর্তমান প্রজন্ম এখন কিছুটা বুঝতে শুরু করেছে।  

এই আধিপত্যবাদের হাত থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। আমাদের প্রয়োজন গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা। প্রয়োজন বিরোধী মতের যথাযথ মূল্যায়ন। প্রয়োজন সাহসী পদক্ষেপের, সৎ দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের। প্রয়োজন জনগণের অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের।


(প্রকাশিত মতামত একান্তই লেখকের নিজস্ব। শীর্ষ নিউজের সম্পাদকীয় নীতির অন্তর্ভুক্ত নয়।)
- See more at: http://www.sheershanewsbd.com/2015/03/26/74079#sthash.EbHreWA8.dpuf


__._,_.___

Posted by: Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com>


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___

[chottala.com] নেতাদের গুম করে আন্দোলন থামানো যাবে না



নেতাদের গুম করে আন্দোলন থামানো যাবে না

সিরাজুর রহমান

২৬ মার্চ ২০১৫,বৃহস্পতিবার, ১৭:০৪





মগবাজার এলাকার বিএনপি-দলীয় ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুম করে ফেলা হয় ২০১১ সালে। শাসক দলের পক্ষ থেকে নানা ধরনের কাহিনী রটানো হয়। তারা বলতে চেয়েছিল, চৌধুরী আলম কোথাও আত্মগোপন করে আছেন এবং তারা চোখ টিপে বহু অরুচিকর বিদ্রুপ করেছে। পরের বছর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিলেট বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী এক সন্ধ্যায় নিজের গাড়িতে ঢাকার বনানী দিয়ে যাচ্ছিলেন। র‌্যাবের পরিচয়ধারী একাধিক
মাইক্রোবাস তার গাড়ির পথ রোধ করে। র‌্যাবের ইউনিফর্ম পরিহিত কয়েকজন লোক ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভারকে গাড়ি থেকে টেনে বের করে এবং নিজেদের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। কয়েকজন স্থানীয় লোক এবং কাছের দোকানে ডাবের পানি পানরত জনৈক পুলিশ অফিসার তাৎক্ষণিকভাবে এমন বিবরণই দিয়েছিলেন।

ইলিয়াস আলীর স্ত্রী স্বামীর মুক্তির আশায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুয়ারে ধরনা দিয়েছেন। যদ্দুর মনে পড়ে, প্রধানমন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন। তারপর অনেক নাটক হয়েছে ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া নিয়ে। যে র‌্যাববাহিনী ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে বলে সবাই সন্দেহ করে, তারা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও মিডিয়া কর্মীদের গাজীপুরের এক বাড়িতে নিয়ে যায়। ইলিয়াস আলী সে বাড়িতে আছেন বলে তারা নাকি খবর পেয়েছিল। তার পরও আরো বহু স্থানে ইলিয়াস আলীর সন্ধান পাওয়া গেছে বলে গুজব রটে। বহু ক্ষেত্রেই গুজবগুলো ছড়িয়েছিল র‌্যাব কিংবা পুলিশ। স্বামীহারা একটি পরিবার নিয়ে এ ধরনের কুৎসিত ও নিষ্ঠুর রসিকতায় মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সবাই মর্মাহত হয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সবাই জানেন, এ দেশে মানবিক মূল্যবোধের কথা বলতে যাওয়ায় বিপদ আছে।
একই নিষ্ঠুর অমানুষিক খেলা শুরু হয়েছে বিএনপির অন্যতম যুগ্মমহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের গুম হওয়া নিয়ে। বাংলাদেশে সরকারের রাজনৈতিক বিরোধী সব নেতা ও কর্মী এখন আত্মগোপন করে থাকেন। বিদেশ থেকে টেলিফোন করে এখন আর বন্ধুদের পাওয়া যায় না। বিএনপিকে গুঁড়িয়ে চুরমার করে দেয়ার হুমকি আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা এবং কোনো কোনো মন্ত্রী অজস্রবার দিয়েছেন। সবচেয়ে বীভৎস হুমকি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
তিনি বলেছেন, এখন যারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, অবরোধ করছে, তাদের নির্মূল ও অস্তিত্ববিহীন করে ফেলা হবে। এইচ টি ইমাম গত সোমবার আবার তার রক্ত হিম করা হুঙ্কার ছেড়েছেন। সরকারের বিরুদ্ধে যারা গণতন্ত্রের আন্দোলন করছে তাদের তিনি দানব আখ্যা দিয়েছেন এবং তাদের হত্যা করার জন্য সবাইকে আহ্বান করেছেন। হত্যার উসকানি দেয়া হত্যা করার মতোই যে ফৌজদারি অপরাধ, সেটা মনে রাখলে এইচ টি ইমাম ভালো করবেন।

এইচ টি ইমামদের গণহত্যা
বিগত ছয় বছরে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক 'তৎপরতার' অর্থ প্রতিপক্ষকে গুম, খুন, ক্রসফায়ার আর বন্দুকযুদ্ধে হত্যা
বলেই বুঝেছে দেশের মানুষ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গুম-খুন হওয়া ব্যক্তিরা বিএনপি কিংবা অন্য কোনো সরকারবিরোধী দলের নেতাকর্মী ছিলেন। ১৬ কোটির দেশ বাংলাদেশের অন্তত ৮-১০ কোটি লোক বিএনপির সমর্থক। বর্তমান সরকারের বিরোধী হবেন অন্তত ১৫ কোটি। এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে হত্যার, অর্থাৎ বিশ্বের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যারই হুমকি দিয়ে চলেছেন রক্তপিপাসু এইচ টি ইমাম। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর সব সভ্য দেশে এইচ টি ইমামের হুমকিটি নথিভুক্ত হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। হিটলার-মুসোলিনিরও পতন হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ সরকারেরও পতন হবে। এইচ টি ইমাম এবং তার সমগোত্রীয়রা যেন সেটা ভুলে যাচ্ছেন।

শাসক দল এবং তাদের সশস্ত্র ক্যাডার, র‌্যাব ও পুলিশের (দেশের বর্তমান গৃহযুদ্ধের আগ্রাসী পক্ষ) এই যেখানে মনোভাব, সেখানে গণহত্যার পরিবর্তে যারা গণতন্ত্রপ্রেমী তাদের ২৪ ঘণ্টাই সতর্ক হয়ে চলতে হয়। বিএনপিকে নেতৃত্ববিহীন করে ফেলার লক্ষ্য আওয়ামী লীগ কখনোই গোপন করেনি। খালেদা জিয়া ও তার পরিবারকে নাস্তানাবুদ করার অজস্র কৌশল করা হয়েছে। সরকার আশা করেছিল, অন্য শীর্ষ নেতাদের জেলে দিলেই তাদের পথ পরিষ্কার হয়ে যাবে। কুকুর কাউকে কামড়ালে, কাকে কারো কানে ঠোকর দিলেও খালেদা জিয়া এবং বিএনপির দু-চার কুড়ি নেতার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। সরকারের দলীয়কৃত পুলিশ যাদের ধরতে পেরেছে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেককে আবার মাঝে মধ্যেই রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। স্বভাবতই বিএনপির অনেক নেতাকর্মী গা-ঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। অস্থায়ী মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে অসংখ্য ভুয়া মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করার পর পরবর্তী নেতা রিজভী আহমেদ আন্দোলন সম্বন্ধে নেত্রীর নির্দেশ দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছিলেন। তাকে গ্রেফতার করার পর পরবর্তী যুগ্মসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ গোপনে থেকে দলীয় নির্দেশ দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছিলেন। গত ১০ মার্চ উত্তরার একটি বাড়ি থেকে সাদা পোশাক পরা কয়েকজন লোক নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়।
পারিবারিক শোক নিয়ে অমানবিক রসিকতা
এরপর থেকে সালাহউদ্দিনের আর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ সরাসরি স্বামীর মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। বারবার চেষ্টা করেও প্রধানমন্ত্রীর দর্শন লাভে ব্যর্থ হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়ে আসেন। এ দিকে তিনি স্বামীকে আদালতে হাজির করানোর জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। আদালত সালাহউদ্দিনকে আদালতে হাজির করার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে পুলিশকে নির্দেশ দিলেও পুলিশ সে নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশের দিক থেকে আদালতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষী কোনো বাহিনী সালাহউদ্দিনকে গ্রেফতার করেনি। সে অজুহাত বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রথমত, সালাহউদ্দিনের গ্রেফতারের তিন দিন আগে তার দু'জন ড্রাইভার ও এক কর্মচারীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। অনেকেরই ধারণা, তাদের কারো কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সালাহউদ্দিনের অবস্থানের খবর পেয়েছিল। দ্বিতীয়ত, এই গ্রেফতারের সময় সালাহউদ্দিনের স্ত্রী এবং স্থানীয় লোকেরা সেখানে পুলিশের একটি গাড়ি দেখেছিল এবং গ্রেফতারকারীদের সবাই পুলিশ বলে মনে করেছিল। তার চেয়েও বড় কথা, বিগত ছয় বছরে এজাতীয় ঘটনা অনেক ঘটেছে। একটি ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন ছাত্র সাভারে বাসে ওঠার সময় নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের গ্রেফতার করে। বাসের অন্য যাত্রীরা
চ্যালেঞ্জ করলে তারা নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী বলে পরিচয় দেয় এবং বলে যে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছাত্র তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হবে। তারপর নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচয় বহনকারী মাইক্রোবাসে ছাত্রদের নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কিছুকাল পর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ তিনজন ছাত্রের লাশ পাওয়া যায়। পুলিশের গ্রেফতারবাণিজ্য এবং র‌্যাব-পুলিশের ভাড়াটে ঘাতকতার বহু কাহিনী এখন লোকের মুখে মুখে ঘোরে বলে শোনা যায়। নারায়ণগঞ্জে ৭+৪ হত্যায় র‌্যাবের ভূমিকার কথা সারা বিশ্বের মানুষ জানে। র‌্যাব-পুলিশ নিজেরাই তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে দিয়েছে।

সাধারণ মানুষ করবে কী?
সমস্যা হয়েছে সাধারণ মানুষের। ডিবি কিংবা র‌্যাব পরিচয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের, এমনকি সাধারণ মানুষকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে পুলিশ ও র‌্যাব কোনো দায়দায়িত্ব স্বীকার করছে না। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ করবে কী? স্থানীয় এলাকার সব মানুষ মিলে এই গ্রেফতারকামী লোকগুলোর ওপর হামলা করে তাদের উচিত শিক্ষা দেয়া ছাড়া আর কী করতে পারে? ঊনবিংশ শতকে মার্কিন গৃহযুদ্ধের পরের কিছুকাল প্রাক্তন সৈন্যরা দলবেঁধে দস্যুবৃত্তি করত। বহু এলাকার মানুষ তখন
আত্মরক্ষার জন্য নিয়ম করেছিল যে, এই দস্যুদের দর্শন মাত্রই ঘণ্টা বাজানো হবে এবং এলাকার সব মানুষ যার যা অস্ত্র আছে তাই নিয়ে দস্যুদের প্রতিহত করবে। বাংলাদেশে র‌্যাব-পুলিশ পরিচয়ে গুম করা অবিলম্বে বন্ধ না হলে জনসাধারণকে মার্কিন ইতিহাসের সে অধ্যায় থেকে শিক্ষা নিতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী হচ্ছে সরকার। তারা র‌্যাব-পুলিশকে দলীয়করণ করেছে। দলীয় নেতারা জাজ্জ্বল্যমান দুর্নীতি করছেন। র‌্যাব-পুলিশ চোখের ওপর সেটা দেখছে। তাদের কেন দুর্নীতি করার, গ্রেফতারবাণিজ্য করার লোভ হবে না? বিশেষ করে এখন যখন পুলিশ ও র‌্যাবের প্রধানরা আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের মতো রাজনৈতিক বক্তৃতা দিতে শুরু করেছেন। সমস্যাটি ক্রমেই আরো ব্যাপক সংক্রমিত হচ্ছে। পুলিশ-র‌্যাবের গ্রেফতারবাণিজ্যের দেখাদেখি সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছিনতাই ও গুম করে মুক্তিপণ আদায়ের ফ্যাশন চালু হয়ে গেছে। পণ না পেলে হতভাগ্য জিম্মি প্রায়ই খুন হচ্ছে। এসবের জন্যও সরকারই প্রত্যক্ষ দায়ী। তারা র‌্যাব-পুলিশকে রাজনৈতিক পেশিশক্তি হিসেবে ব্যববহার করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দিকে মনোযোগ দেয়ার সময় তাদের কোথায়? অন্যথায় পুলিশের জমজমাট উপস্থিতির মধ্যে কী করে অভিজিৎ খুন হলো, তার ও তার স্ত্রীর চিৎকারে কেন পুলিশ এলো না এবং এখনো কেন পুলিশ খুনিদের ধরতে পারছে না?সালাহউদ্দিনের গুম হওয়া নিয়েও ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার পরবর্তী অবস্থার মতো নিষ্ঠুর পরিহাস শুরু হয়েছে। স্বয়ং 

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়া আবর্জনার আধারে করে সালাহউদ্দিনকে পাচার করে দিয়েছেন। অন্য মন্ত্রীরাও পরিহাস করে চলেছেন। এক মন্ত্রী বলেছেন, সালাহউদ্দিনকে পাওয়া যাবে মাটির নিচে গভীরে। পুলিশ ঢাকঢোল পিটিয়ে গাইবান্ধার চরে তল্লাশি চালিয়েছে। অবশ্য সেখানে কিছু পাওয়া যাবে বলে তারাও নিশ্চয়ই আশা করেনি। জনসাধারণের মনোযোগ ভিন্নমুখী করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। গাজীপুরের এক বাড়িতে ইলিয়াস আলীর সন্ধানের মতো এই তল্লাশিও তামাশায় পরিণত হয়েছে। এর পরও চট্টগ্রাম এবং অন্যত্র সালাহউদ্দিনের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। কত অমানবিক মনোবৃত্তি হলে একটি পরিবারের চরম শোক নিয়ে এ ধরনের তামাশা করা যায়, ভাবলেও আশ্চর্য হতে হয়। পুলিশের সর্বশেষ পরিহাস হচ্ছে, সালাহউদ্দিন গুম হওয়ার দুই সপ্তাহ পরে শুধু কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে একটা তদন্ত কমিটি গঠন। এ কমিটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ সার্বজনীন হতে বাধ্য।
বাংলাদেশকে বর্তমানে একযোগে রত্নগর্ভা, অস্ত্রগর্ভা এবং লাশগর্ভা দেশ বলতেই হবে। বিমানবন্দরে প্রায়ই কাঁড়ি কাঁড়ি স্বর্ণের বার উদ্ধার হচ্ছে, কূটনীতিকদের কাছেও স্বর্ণের বার এবং নগদ হাজার হাজার ডলার পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এসব স্বর্ণ ও ডলারের পরিণতি সম্বন্ধে সাধারণ মানুষ আর কোনো খোঁজখবর জানতে পারে না। কিন্তু র‌্যাব-পুলিশ যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি করছে। কী আশ্চর্য! রাশি রাশি অস্ত্র বেরিয়ে আসছে প্রতিটি স্থান থেকে। এ ধরনের এত ঘটনা ঘটেছে যে, অনেকেই এসব ঘটনাকে শিয়ালের কুমিরছানা পোষার গল্পের মতো মনে করছে। গল্পটি কি জানেন সবাই? কুমির তার কিছু শাবককে পুষতে দিয়েছিল শিয়ালের কাছে। শিয়াল একে একে নাদুস-নুদুস শাবকগুলো খেয়ে ফেলল, শুধু একটি ছাড়া। কুমির মাঝে মধ্যে আসে তার বাচ্চাদের দেখতে। ধূর্ত শিয়াল একটি বাচ্চাকেই বারবার দেখিয়ে কুমিরকে বিদায় করে। একই স্তূপ অস্ত্র যে বারবার র‌্যাব খুঁড়ে বের করছে না তার প্রমাণ কী? আর লাশ? বাংলাদেশের মাঠে-জলায় যান। দু-চারটি লাশ অবশ্যই পাওয়া যাবে। স্পষ্টতই পিঠমোড়া হাত-পা বাঁধা লাশগুলোকে গ্রেফতারের পর গুলি করা হয়েছে। বাংলাদেশী পুলিশের ভাষায় এটা হচ্ছে 'বন্দুকযুদ্ধ'। ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায়। বাংলাদেশের বহু বিতর্কিত বর্তমান সরকার আশা করছে, বিএনপিকে গ্রেফতার আর গুম-খুন করে নেতৃত্বশূন্য করে ফেললেই তারা শত্রুমুক্ত হবে; তাদের গদি চিরস্থায়ী হবে। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি। ইতোমধ্যেই প্রমাণ হয়ে গেছে খালেদা জিয়ার নির্দেশ বাংলাদেশের মানুষ সঠিক বুঝে ফেলেছে। নেতা-নেতৃত্ব উপস্থিত না থাকলেও তারা ঠিকই আন্দোলন চালিয়ে যাবে। দেশে যত দিন পর্যন্ত নির্দলীয় এবং প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন না হবে তত দিন পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই।
লন্ডন, ২৪.০৩.১৫
serajurrahman34@gmail.com



__._,_.___

Posted by: Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com>


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___