আজিজুর রহমান ডল, ইসলামপুর থেকে ফিরে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া জীবনে একবার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সেই পরীক্ষায় তিনি অঙ্ক ও উর্দুতে পাস করেছিলেন। বাকি সব বিষয়ে তিনি ফেল করেন। দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা কামান বলে তিনি অঙ্কটা ভাল বোঝেন। ওনার হৃদয়ে পেয়ারে পাকিস্তান। তাই তিনি উর্দুটা ভাল বোঝেন বলে উর্দুতে পাস করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জামালপুরের ইসলামপুরে আড়াই হাজার কোটি টাকার ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন শেষে ইসলামপুর পৌর মাঠে এক জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ৪ মে বেগম খালেদা জিয়া আমাকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন আমি নাকি দেশ থেকে পালিয়ে যাব। আজ (বৃহস্পতিবার) অক্টোবর মাসের ১০ তারিখ। আল্লাহর রহমতে আমি এ দেশেই বহাল তবিয়তে আছি।
৫ মে জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের কর্মীদের কোরান শরীফ পোড়ানো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে বায়তুল মোকাররম মসজিদে কোরান শরীফ পুড়িয়েছে, আগুন দিয়েছিল। কোরান শরীফ পুড়িয়ে ও মসজিদে আগুন দিয়ে কীভাবে তারা ইসলামের সেবা করতে পারে। কাবা শরীফের ছবি নিয়েও তারা প্রতারণা করেছেন। এটাই কি ইসলামের সেবা?
তিনি বলেন, বিএনপির ক্ষমতায় আসা মানেই পুলিশ হত্যা, ড্রাইভার পুড়িয়ে হত্যা, মা বোনের ইজ্জত নেয়া, শিশু হত্যা করা, বোমাবাজি করা, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করা এমনকি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে ওই গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২২ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। হত্যা-খুন ছাড়া বিএনপি আর কিছুই বোঝে না।
শেখ হাসিনা বলেন, লুটপাট ছাড়া তারা আর কিছুই বোঝে না। উন্নয়নে বাধা দেয় তারা। এদের সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। জাতির জনকের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। অথচ খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় থাকাকালে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মসজিদের আজানের পরিবর্তে উলুধ্বনি শোনা যাবে। আমরা '৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলাম। অথচ মসজিদে আজান হয়েছে। উলুধ্বনি হয়নি। খালেদা জিয়া মিথ্যা কথা বলাটা পেশা হিসেবে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিএনপির জন্মই হচ্ছে হত্যা-খুনের রাজনীতির মধ্য দিয়ে। যে কারণে তারা ক্ষমতায় থাকতে উন্নয়ন করে না, টাকা-পয়সা লুটে খায়। অর্থ সম্পদ পাচার করে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে জনগণের জন্য কাজ করে। দেশের উন্নয়ন করে। বাংলাদেশে যে খাদ্যঘাটতি ছিল আজ তা নেই। মানুষের ঘরে ঘরে এখন খাবার আছে। হাহাকার নেই। মঙ্গা নেই। চালের উৎপাদন, শাকসবজির উৎপাদন আমরা বাড়িয়েছি। নদী ভাঙ্গা মানুষের জন্য আমরা ঘর তৈরি করে দিয়েছি। টাকা দিয়েছি। যাতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা দেয়া শুরু করেছি। দরিদ্র বাবা-মা যাতে তাদের ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি। বিনা মূল্যে আওয়ামী লীগ বই দিচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা প্রত্যেক জেলায় ইন্টারনেট চালু করেছি। ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যসেবা কেন্দ্র চালু করেছি। যেখানে সহজেই গ্রামের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়, বিদেশে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করা যায়। প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন করেছি। আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় প্রথম শ্রেণী থেকেই কম্পিটার শিক্ষা চালু করব। জামালপুরে মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীনতার সুফল বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। কৃষকরা মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলতে পারছেন। সারের দাম আমরা দফায় দফায় কমিয়েছি। বিনা জামানতে বর্গাচাষীরা ঋণ পাচ্ছে। বেকাররা বিনা জামানতে এক লাখ টাকা ঋণ নিতে পারছেন। বিএনপি মানেই টাকা-পয়সা লুটপাট। সন্ত্রাস, খুন ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না। খালেদার জিয়া ছেলেরা বিদেশে টাকা পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। দেশের টাকা তারা চুরি করে খায়। বিএনপির কাজই হচ্ছে লুটপুটে খাওয়া।
আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েই দেশের স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। নৌকা মার্কা ভোট দিয়েই দেশ থেকে আজ জঙ্গীবাদ দূর হয়েছে। দেশে শান্তি ফিরে এসেছে। সন্ত্রাস দূর হয়েছে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি। দরিদ্র মা, সন্তানসম্ভাবা মাদের আমরা টাকা দিয়ে সহযোগিতা করছি।
প্রধানমন্ত্রী ইসলামপুর সফরকালে জেলার সাত উপজেলায় ৮টি সেতুু, ৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাদ্রাসার নতুন ভবন, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রসহ ২১টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ২টি কংক্রিট গার্ডার সেতুসহ ২৭টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন, খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় সংসদের হুইপ মির্জা আজম এমপি, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, ফরিদুল হক খান দুলাল এমপি, ডা. মুরাদ হাসান এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজনু, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসতিয়াক হোসেন দিদার, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম সিদ্দিকীসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ।
টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরী সেতু উদ্বোধন ॥ ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল থেকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না। তারা দেশের উন্নয়নের জন্য বড় বাধা। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে এবং অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে তিনি নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন। আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে এদেশে তখন উন্নয়ন হয়। মানুষ শান্তিতে থাকে। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলেই সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, বোমাবাজি, দুর্নীতি, খুন ও নির্যাতন বৃদ্ধি পায়। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বন্ধ হয়ে যায়। তারা ক্ষমতায় থেকে বিদ্যুত উৎপাদন বাড়াতে পারেনি বরং কমিয়েছে। আর আওয়ামী লীগ জনগণের কথা ভেবে জনগণের জন্য রাজনীতি করে বলেই দেশবাসীর স্বার্থে বর্তমান সরকার বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উন্নয়ন করা হয়েছে। আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে তার ক্যাডার বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে জামায়াত-শিবির ও হেফাজতকে সঙ্গে নিয়ে শত শত কোরান শরীফ পুড়িয়েছে। তারা যত ষড়যন্ত্রই করুক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে পারবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় যাদের বেড়িয়েছে, তাদের রায় এ মাটিতে কার্যকর করা হবে। এ বিচার-প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য পূরণে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধুদের সহায়তা কামনা করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের চার দশকের বেশি সময় পরে বিচারের সম্মুখীন করা একটি কঠিন কাজ। তবে আমরা দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ এবং এ কাজ শেষ করার জন্য আমরা আরেকবার জনগণের সমর্থন চাই। বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিনে ধলেশ্বরী নদীর ওপর নবনির্মিত সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন। ধলেশ্বরী সেতুর মতো অনেক সেতু ও রাস্তাঘাট বর্তমান সরকার তৈরি করেছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌনে ৩টার দিকে হেলিকপ্টারে দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিনে নবনির্মিত ধলেশ্বরী ব্রিজের কাছে এসে নামেন। সেখানে তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রায় ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ধলেশ্বরী নদীর ওপর নবনির্মিত সেতুর উদ্বোধন করেন। পরে তিনি গাড়িযোগে সেতু পরিদর্শন করেন। পরে সমাবেশে এই সেতুর নাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামছুল হকের নামকরণ ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার ফলে সমাবেশে উপস্থিত সবাই করতালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। টাঙ্গাইলের সঙ্গে তিনটি জেলা ও উপজেলা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নাগরপুর, মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর ও সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার মানুষের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো প্রায় ৫শ' ১৫ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটি। আর এ সেতুর সুফল পাবে এ অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠী। একদিকে মানুষ যেমন দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে তেমনি যোগাযোগ, ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসার ঘটবে এ অঞ্চলের জনসাধারণের। এ ছাড়া সমাবেশ থেকে তিনি ঢাকা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার ঘোষণা দেন।
ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রিয়াজ তালুকদার।