Banner Advertise

Sunday, June 17, 2012

[chottala.com] Mir Kashem Ali, a 1971 Al-Bodor commander arrested ....



Mir Kashem Ali,  a 1971 Al-Bodor commander arrested ....



সোমবার, ১৮ জুন ২০১২, ৪ আষাঢ় ১৪১৯
ধরা পড়েছে মীর কাশেম আলী
০ শীর্ষ এ যুদ্ধাপরাধী গ্রেফতারের সময় বিমর্ষ হয়ে পড়ে
০ খবর শুনে তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে মিষ্টি বিতরণ
০ আজও তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে
স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী দিগন্ত মিডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওয়ারেন্ট জারির মাত্র সোয়া এক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারের পর তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায় আদালত। আজ তাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ হাজির করা হচ্ছে। এদিকে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলী গ্রেফতারের খবরে তাঁর গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে সাধারণ মানুষ আনন্দ মিছিল করেছে। তাঁরা মিষ্টি বিতরণ করেছে। 
রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়। উচ্চ আদালতের এমন নির্দেশের পর মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলী ঢাকাতেই আত্মগোপনে ছিলেন। তাঁর ওপর সর্বক্ষণিক নজরদারি ছিল। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্র্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। কিন্তু জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে চলে যান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে মীর কাশেম আলী নানা ফন্দিফিকির করতে থাকেন। ওয়ারেন্ট জারির পর গোয়েন্দারা মীর কাশেম আলীর সন্ধান শুরু করে।
যেভাবে অভিযান চালানো হয় ॥ গোয়েন্দারা জানতে পারে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে মীর কাশেম আলী রাজধানীর মতিঝিল থানাধীন ইনার সার্কুলার রোডের ১৬৭/২-ই নম্বর ইডেন কমপ্লেক্সে অবস্থিত দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকা অফিসে অবস্থান করছেন। এখানে দিগন্ত মিডিয়ার অফিস রয়েছে। 
প্রসঙ্গত, দৈনিক নয়া দিগন্ত ও দিগন্ত টেলিভিশন দিগন্ত মিডিয়ার। মীর কাশেম আলী দিগন্ত মিডিয়ার চেয়ারম্যান ও বোর্ড অব ডাইরেক্টর।
মীর কাশেম আলীর অবস্থান নিশ্চিত করতে সরকারের সব গোয়েন্দা বিভাগ মাঠে নামে। কাশেম আলীর অবস্থান জানার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলামের নির্দেশনায় একই জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ নুরুন্নবী, জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, এসএম রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে অন্তত ৫টি গোয়েন্দা টিম মাঠে নামে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অন্তত ৫০ জন চৌকস গোয়েন্দা অভিযানে যায়। ঠিক দুপুর ৩টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের টিমগুলো অভিযানে নামে।
এদিকে মীর কাশেম আলীর অবস্থান জানামাত্র ওই এলাকায় অবস্থান নেয় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একাধিক টিম, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ছাড়াও সরকারের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাার বহু টিম। অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি যে কোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ দৈনিক নয়া দিগন্ত অফিসের চারদিক ঘিরে রাখে। পুরো এলাকায় চলতে থাকে গোয়েন্দা নজরদারি।
ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে যায় মীর কাশেম আলী দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকা অফিসে নেই। তিনি পুরানা পল্টনের বেসরকারী দিগন্ত টেলিভিশনে অবস্থান করছেন। এমন খবরে গোয়েন্দারা সামান্য ঘাবড়ে যায়। এরপর আবার নিশ্চিত হয় মীর কাশেম আলী নয়া দিগন্ত অফিসেই রয়েছেন।
দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে পুরো এলাকা কর্ডন করে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। এরপর পুলিশ ও গোয়েন্দারা দৈনিক নয়া দিগন্ত অফিসে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় নয়া দিগন্তের মূল ফটক বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত মূল ফটক আবার খুলে দেয়া হয়। এ সময় পুলিশ ও গোয়েন্দারা ভবনটির তৃতীয় তলার দিগন্ত মিডিয়ার অফিসে যায়। 
দেখা যায়, মীর কাশেম আলী নিজের আসনে বসে কাজ করছেন। এ সময় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি ভেতরের একটি বিশ্রাম কক্ষে প্রবেশ করেন। টেবিলে তাঁর পরিচয়পত্র ছিল। তাতে লেখা মীর কাশেম আলী। চেয়ারম্যান এ্যান্ড বোর্ড অব ডাইরেক্টর দিগন্ত মিডিয়া লিমিটেড। 
বিশ্রাম কক্ষে তিনি বেশ কিছু সময় কাঁটান। এ সময় পুলিশ ও গোয়েন্দারা দরজার বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি ভেতরে ওষুধ সেবন করেন। আর প্রচুর পানি পান করেন। এরপর কাপড়চোপড় পরিবর্তন করেন। তাঁকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তিনি কোন কথাই বলছিলেন না। তিনি পুলিশ আর গোয়েন্দাদের দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে যান। তাঁর চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। তিনি বার বার দরজা বন্ধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তা করতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে নয়া দিগন্ত পত্রিকায় কর্মকর্তা সেখানে ভিড় জমাতে থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশ ও গোয়েন্দারা ভিড় সামাল দেন। তবে ঘটনাস্থলে যাঁরা ভিড় করেছিলেন তাঁরা মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতারের সময় কোন প্রকার বাঁধার সৃষ্টি করেননি। 
বেলা পৌঁনে ৪টার দিকে মীর কাশেম আলী কলারবিহীন সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট আর সাদা জুতো পরে বের হয়ে আসেন। এরপর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পর কাশেম আলীকে রীতিমতো ভিড়ের ভেতর দিয়ে বাইরে বের করে আনা হয়। এদিকে আগ থেকেই বাইরে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। কোন প্রকার বাধা সৃষ্টির আগেই গোয়েন্দারা মীর কাশেম আলীকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তোলে। এরপর দ্রুততার সঙ্গে সোজা হাইকোর্টের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যুনালে হাজির করে। বেলা সোয়া ৪টার দিকে মীর কাশেম আলীকে ট্রাইব্যুনালের হাজত খানায় তোলা হয়। বেলা সাড়ে ৪টার দিকে মীর কাশেম আলীর দেহ তল্লাশি করে বেল্ট, কলম ও জুতো পরিধানের একটি স্টিল বার জব্দ করা হয়।
এদিকে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলী গ্রেফতারের খবরে তাঁর গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে সাধারণ মানুষ মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ মিছিল করেছে। আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা মানিকগঞ্জ থেকে জানান, কাশেম আলীর গ্রেফতারের খবরে মানিকগঞ্জের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। তাঁরা আনন্দ মিছিল করেন। মিছিল শেষে পরস্পর কোলাকুলি করে পরস্পর পরস্পরকে মিষ্টি খাইয়ে আনন্দ করেন। 
ট্রাইব্যুনালে তোলা হয় যেভাবে ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাশেম আলীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের হাজতখানা থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়েছে। আজ তাঁকে ট্রাইব্যুনাল-১ এ হাজির করা হবে। প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত জনকণ্ঠকে বলেছেন, রবিবার যেহেতু ট্রাইব্যুনাল বসছে না, সেজন্য মীর কাসেম আলীকে আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। গ্রেফতারের পর পরই তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এ সময় প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। 
ট্রাইব্যুনালের আদেশ ॥ এদিকে দুপুর আড়াইটার দিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। প্রসিকিউশনের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এই আদেশ দিয়েছে। ট্রাইব্যুনালের এই আদেশ হাতে পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মীর কাসেমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এর আগে সকালে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কাছে এ আবেদন জমা দেয়া হয় বলে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম জানান।
প্রসিকিউটরের আবেদন ॥ দুপুর দুইটায় প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতারের জন্য আবেদন জানান। তিনি আবেদনে বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাদের সহযোগিতাকারী আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন মীর কাশেম। তাঁর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় একাত্তরে চট্টগ্রামে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটানো হয়।
তিনি আবেদনে বলেন, 'মীর কাসেম জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য। প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তিনি গ্রেফতার ও বিচার এড়াতে দেশত্যাগ করতে পারেন। পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ ব্যহত করতে বিভিন্ন দেশে অপপ্রচার চালাতে পরেন। 'এই অবস্থায় তদন্ত কাজ নির্বিঘœ করতে ন্যায় বিচার সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন।' প্রসিকিউটর বলেন, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের মীর কাশেমকে একাত্তরে চট্টগ্রামের মানুষ চিনত মিন্টু নামে। কলেজছাত্র থাকাকালে সেখানেই তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। পরে জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের দায়িত্বও নেন। মীর কাসেম আলীর নির্দেশেই চট্টগ্রামে রাজাকার বাহিনীর ক্যাম্পে বহু লোককে হত্যা ও নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শেষভাগে পাকিস্তানী বাহিনী এ দেশের যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে তার তালিকা তৈরিতে মীর কাশেমও ছিলেন।
আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ॥ রানা দাশগুপ্ত ট্রাইব্যুনালে বলেন, মীর কাশেম আলী, পিতা তৈয়ব আলী, সাং-চালা, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় 'আলবদর বাহিনীর কমান্ডার' ছিলেন। বর্তমান ১৮৭ দক্ষিণ মনিপুর, মিরপুর, ঢাকায় বাসবাস করছেন। স্বাধীনতার আগে চট্টগ্রামে লেখাপড়া করার সময় জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের দায়িত্ব পান মীর কাসেম আলী। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি তদন্ত সংস্থার।
প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালে বলেন, আমরা তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্মান্তরিত করা, দেশত্যাগে বাধ্য করা, বন্দী, আটক করা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্ট ৭৩(১১) ৫ ধারায় ২০১০-এর ৬ ও ৯ নম্বর বিধি অনুযায়ী মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারেরর আবেদন করছি।
প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত আবেদনে আরও বলেন, মীর কাশেম আলী চট্টগ্রামের আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ১৯৭৫ পরবতীতে তিনি ছাত্রশিবিরের সভাপতি নির্বাচিত হন। মানবতাবিরোধী মামলা চলাকালীন সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশে গেছেন। সেখানে গিয়ে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে বিঘিœত করার জন্য বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালিয়েছেন। এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। তা ছাড়া তিনি সাক্ষীদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে যাচ্ছেন। তদন্তের স্বার্থে তাঁকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন। পাশাপাশি তিনি যে কোন সময় পলিয়ে যেতে পারেন। 
বাচ্চু রাজাকারের মতো হবে না ॥ ট্রাইব্যুনাল মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেবার পর ব্রিফিং-এ রানা দশগুপ্ত বলেন, ট্রাইব্যুনাল তাঁকে গ্রেফতারের জন্য আদেশ দিয়েছে। গ্রেফতারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মীর কাশেম আলীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য পুলিশের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে ট্রাইবুনালে একমাত্র মহিলা প্রসিকিউটর নুরজাহান বেগম মুক্তা জনকণ্ঠকে বলেছেন, ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়েছে। আশা করছি মীর কামেশ আলী গ্রেফতার হবেন। বাচ্চু রাজাকারের মতো মীর কাশেম আলী পালিয়ে যাবেন কিনা? এর উক্তরে প্রসিকিউটর নুরজাহান বেগম মুক্তা বলেন, অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি তা হবে না। আমি আশা করব ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর পুলিশ বিভাগ দ্রুত তাদের কাজ শুরু করবে। এখন আর বাচ্চু রাজাকারের মতো অবস্থা হবে না।
ডালিম হোটেল টর্চার সেল ॥ প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত ট্রাইব্যুনালে বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে বাবার চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামে যান তিনি। চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র থাকার সময় জড়িয়ে পড়েন মওদুদীর মৌলবাদী রাজনীতিতে। জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের দায়িত্ব পান স্বাধীনতার আগে। স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতার সময় ছাত্রসংঘের নতুন প্রাদেশিক পরিষদ গঠন হয়। মীর কাসেম আলী হন তার সাধারণ সম্পাদক। সে সময় সংগঠনের সভাপতি ছিলেন যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ।
মীর কাসেমের নির্দেশে চট্টগ্রামের টেলিগ্রাফ অফিসের লাগোয়া ডালিম হোটেলে রাজাকার বাহিনীর বন্দী শিবির খোলা হয়। সেখানে লোকদের ধরে এনে টর্চার করা হতো। বহু লোককে সেখানে নিয়ে খুন করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর সেখান থেকে সাড়ে ৩শ' বন্দীকে জীবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকা প্রণয়নকারীদের অন্যতম ছিলেন মীর কাসেম আলী। স্বাধীনতার পর মীর কাসেম পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। মিন্টু নামে নিজের পরিচয় দিতেন তিনি, নিজেকে বলতেন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু চিহ্নিত হয়ে পড়ার পর আরেক ঘাতক মঈনুদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে চলে যান লন্ডন। সেখান থেকে সৌদি আরব। সেখানে স্বাধীনতাবিরোধীদের সংগঠিত করতে থাকেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে ফিরে আসেন মীর কাসেম।
জিয়াউর রহমানের সময় নতুন করে সংগঠিত হয় ইসলামী ছাত্রসংঘ, নাম বদলে হয় ইসলামী ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি হন মীর কাসেম আলী। এরপর রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের নামে রাবেতা আল ইসলামী গড়ে তোলেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর টাকায় আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্ট ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস। চট্টগ্রাম শহরের নন্দনকানন টিএ্যান্ডটি অফিসের পেছনের সড়ক যা এর আগে টেলিগ্রাফ রোড বলে পরিচিত ছিল সেখানে এক হিন্দু পরিবারের মালিকানাধীন 'মহামায়া ভবন'টিকে মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বাধীন আলবদর বাহিনী কেড়ে নিয়ে নাম দেয় ডালিম হোটেল। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ডালিম হোটেলই আলবদর, রাজাকারদের অন্যতম নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল চট্টগ্রামবাসীর কাছে।
প্রসিকিউটর গ্রেফতারের আবেদনে জানায়, একাত্তর সালের ২৬ মার্চ দখলদার পাকিস্তানী বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটের মাধ্যমে বাঙালীদের ওপর আক্রমণ করে, যা ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাস অব্যাহত থাকে। এই নয় মাসে হত্যা, গণহত্যা, ধর্মান্তরিত করা, বন্দী, আটক, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, যুদ্ধাপরাধসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে বুদ্ধিজীবী যোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে নির্যাতন কেন্দ্রে রাখা হয়। ৯ মাসে মীর কাশেম আলীর নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী মহামায়া ভবন বর্তমান ডালিম হোটেলে ধরে এনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের নির্যাতন করা হতো। ডালিম হোটেলে নির্যাতন করে তাদের হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হতো। মীর কাশেম আলী চট্টগ্রামের গুডস হিল ও ডালিম হোটেল নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তোলে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে, যাদের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। 
পাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ ॥ প্রসিকিউটর ভিক্টিমদের নামের আদ্য অক্ষর তুলে ধরে বলেন, মীর কাশেম আলী চট্টগ্রামের পাক সেনাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন। চট্টগ্রাম শহরে অনেক বধ্যভূমি জন্ম হয় একাত্তর সালে। মীর কাশেম আলীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে আলশামস বাহিনী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতবিরোধী অপরাধ করে। তদন্ত করে তদন্তকারী সংস্থা জানতে পারে, একাত্তরের ১৯ নবেম্বর চট্টগ্রামের চাকতাই এলাকায় তিন জনকে ধরে ডামিল হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয। সেখান থেকে তাদের পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তাদের নির্যাতন করা হয়। তিন জনের মধ্যে একজনকে ইলেকট্রিক শক দিলে তিনি পুরুষত্বহীন হয়ে পড়েন। সে কারণে আজও তিনি কোন সন্তান নিতে পারেননি। 
অন্যদিকে ২৩ নবেম্বর আলবদর বাহিনীর সহায়তায় এ এইচ চৌধুরীকে আন্দরকিল্লা থেকে ধরে হাত-পা বেঁধে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হবার পর তিনি মুক্ত হন। আবেদনে তিনি আরও বলেন, মীর কাশেম আলী চট্টগ্রামে ভুক্তভোগীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, অনেককে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা তার বিরুদ্ধে মানবতবিরোধী অপরাধের সাক্ষী না দেয়। চলমান বিচার ব্যাহত করার জন্য তিনি এখনও সচেষ্ট রয়েছেন। সে জন্য মীর কাশেম আলীর গ্রেফতারের আবেদন করছি। 
ট্রাইব্যুনাল আদেশে পর পুলিশ মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতার করে। এর পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। রাখা হয় হাজত খানায়। সন্ধ্যায় প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটররা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন। জামায়াতের আইনজীবী তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী ও ইমরান সিদ্দিকীসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত হন। রবিবার দুপুর ২টার পর চেয়ারম্যান নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে এ বিষয়ে শুনানি শেষে দুপুর আড়াইটার পর এ আদেশ দেয় আদালত। প্রসিকিউশনের শুনানিতে অংশ নেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত। এদিন সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কাছে কাসেম আলীকে গ্রেফতারের আবেদন জমা দেন প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটরবৃন্দ। পরে আবেদনটি ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারকের কাছে পাঠানো হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানির সময় প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর মোকলেসুর রহমান বাদল, প্রসিকিউটর কেএম সাইফুল ইসলাম, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন প্রমুখ। 
যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এ পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২০১০ সালের ২৯ জুন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেফতার করা হয়। ১৩ জুলাই গণহত্যা মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং আব্দুল কাদের মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১১ সালের ২৭ মার্চ জয়পুরহাটের বাড়ি থেকে বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি শর্ত সাপেক্ষে জামিনে রয়েছেন। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ ১৭ জুন মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে ৩ এপ্রিল একাত্তরে 'বাচ্চু রাজাকার' নামে পরিচিত ফরিদপুরের আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতারের পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছে। এর পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন।




 





Comments:
Aman Jannati ·  Top Commenter · COMILLA VICTORA COLLEGE
১৯৭৫ পরবর্তী সরকার মীর কাসেম আলী, সাইদীদের রাষ্ট্রীয় ভাবে পূর্নবাসন শুধু করে নাই, রুটি-রোজির বিশাল ব্যবস্থা করে দিয়েছিল বলে তারা আজ কত কিছুর মালিক। পাশাপাশি অগনিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার বা বীরত্বের সাথে ফিরে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের আজো জীবিকার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। যুদ্ধোপরাধিদের দ্রুত কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুন।এরা সাকাজীবন ভারত বিরুধী রাজনীতি করে সর্বশেষ অপরাধ করে ভারতে গিয়ে পালায়।=shofiq rahman২০১২.০৬.১৭ ১৫:৪১ মীর কাশেম আলীকে আরো আগেই গ্রেফতার করা উচিত ছিল । আমাকে আমার এক সাংবাদিক বন্ধু বলেছিল- ১৯৭১ শহীদ মুনীর চৌধুরী এবং শহীদুল্লাহ কায়সারকে যে গাড়ীতে করে তুলে নেয়া হয় সে গাড়ীতে এই বদ লোকটি বসা ছিল । লিলি মুনীর চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর শাসন আমলে আদালতে এই লোককে সনাক্ত করেন । এই লোকটি বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল ।আলহামদুলিল্লাহ! খুব ভালো ডিসিশন।.
  • Tomi Miah ·  Top Commenter · London, United Kingdom
    একে একে সবকটা কুখ্যাত রাজাকারকে আদালতের কাঠগড়ায় দেখতে চাই । বাচ্ছু রাজাকার পলাইছে । ৭১-এর আর কোন নরপশু যাতে আইনের চুখ ফাকি দিয়ে পালাতে না পারে সেদিকে কঠোরনজর রাখতে হবে ।.
  

Related:

ছাত্র সংঘ' নাম পাল্টিয়ে 'বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির' নামে যাত্রা শুরু করে:  

http://www.sonarbangladesh.com/blog/satisfy/37986

রাজাকার-আলবদর বাহিনী গড়ার হোতা গোলাম আযম:




 



__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___