ঢাকার প্রতিবাদ: বিএসএফ-এর নির্যাতন গ্রহণযোগ্য নয় |
শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১২ কূটনৈতিক রিপোর্টার: ভারত সরকারের তরফে বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও সীমান্তে গুলি এবং হত্যা-নির্যাতন বন্ধ না হওয়া এবং সমপ্রতি বিএসএফ প্রধানের উস্কানিমূলক বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ঢাকা। সরকারের মন্ত্রী, রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তরফে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ঢাকার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক এবং গতকাল লিখিতভাবে দিল্লিকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। নিরীহ বাংলাদেশীদের ওপর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলি এবং হত্যা-নির্যাতন কোন অজুহাতেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেছেন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের ঢাকা সফরে দেয়া প্রতিশ্রুতির পরও সীমান্তে হত্যা-নির্যাতন বন্ধ না হওয়ায় এমনিতেই ক্ষোভ আছে, তার ওপরে বিএসএফ প্রধানের বক্তব্য সীমান্তে অস্থিরতা বাড়বে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই বক্তব্যে প্রতিবাদ এবং তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। কূটনৈতিক চ্যানেলে দিল্লিকে ঢাকা এমন বার্তা পাঠিয়েছে বলে জানান তিনি। বিএসএফ প্রধানের বক্তব্যকে ভারত সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন বলে মনে করে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যায়ের আগামী বৈঠকে এর কড়া প্রতিবাদ জানানো হবে। বিজিবি’র ডিজি মেজর জেনারেল আনোয়ার হোসেন বলেছেন, সীমান্তে কোন হত্যাকাণ্ড হবে না, কেউ গুলি ছুড়বে না- দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের এমন সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও ভারতের তরফে তার কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়ত গুলি ছোড়া হচ্ছে। এটা চরম মানবাধিকারের লঙ্ঘন। গুলির কারণ প্রসঙ্গে বিএসএফ প্রধানের নয়া তত্ত্বের বিষয়ে বিজিবি’র প্রধান বলেন, কেউ অবৈধ অনুপ্রবেশ করলে তাকে আটকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে আমরা অনুরোধ করেছি। কিন্তু বিএসএফ তা মানছে না। দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলোও দীর্ঘ দিন ধরে সীমান্তে বিএসএফ’র হত্যা-নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন আ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যশনাল এ নিয়ে বহুবার এর নিন্দা জানিয়েছে। প্রতিনিয়ত উদ্বেগ জানাচ্ছে দেশের প্রতিষ্ঠিত মানবাধিার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র। বিএসএফ প্রধানের উস্কানিমূলক বক্তব্যের বিষয়ে এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছেন, দুই দেশ যখন গুলি চালানো বন্ধের চেষ্টায় লিপ্ত, তখন এ ধরনের মন্তব্য পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিএসএফকে ‘ট্রিগার হ্যাপি ফোর্স’ বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। বিএসএফ প্রধানের বক্তব্য ‘সঙ্গতিপূর্ণ’ নয়: সীমান্তে গুলি বন্ধ করা যাবে না- বিএসএফ প্রধানের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, এটা ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। ওই প্রতিবাদ পত্রে বলা হয়েছে, বিএসএফ প্রধানের এ ধরনের বক্তব্যে বাংলাদেশ হতাশ, ওই বক্তব্য ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ভারতীয় নেতৃত্ব বাংলাদেশকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা অনুসরণ করা হবে বলে ঢাকা আশা করে। দীপুমনির সাফ কথা, সীমান্তে হত্যা-নির্যাতন গ্রহণযোগ্য নয়: আমাদের চাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাংলাদেশীদের ওপর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের নির্যাতন, গুলি এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি। বৃহস্পতিবার চাঁদপুরে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ সরকার বারবার এ ধারনের ঘটনার প্রতিবাদ করে আসছে। সীমান্তে এসব ঘটনা যাতে না ঘটে- সে বিষয়ে ভারত সরকারও একমত। দুই দেশের সরকারই সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। জেলা সদরের সার্কিট হাউজে সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, টিপাইমুখ নিয়ে যে যৌথ সমীক্ষা হবে তাতে দু‘দেশের প্রতিনিধি থাকবে। বাংলাদেশের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই যৌথ নদী সমীক্ষা সম্পন্ন জানানো হয়েছে। সাতক্ষীরা সীমান্ত উত্তপ্ত, বিএসএফ’র গুলিতে দু’জন আহত: আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, জেলার কলারোয়া সীমান্তে গতকাল ভোরে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলদেশী আহত হয়েছে। কলারোয়া উপজেলার কাকডাঙ্গা এলাকার কেঁড়াগাছি সীমান্তের সোনাই নদীর ধারে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে জেলার ১৩৮ কিলোমিটর সীমান্ত জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএসএফ সদস্যরা সীমান্ত এলাকায় জনবল বৃদ্ধি করে ভারি অস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছে। ঘটনার পর বিবিজি-বিএসএফ এর মধ্যে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে সোয়া ১০টা জেলা সদরের কালিয়ানি সীমান্তে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গুলিতে আহতরা হলো হলেন, কলারোয়া উপজেলার কেঁড়াগাছি গ্রামের দাউদ গাজীর ছেলে ইয়াকুব আলী (২৫) ও যশোরের শার্শা উপজেলার কায়বা গ্রামের করিম গাজীর ছেলে আবদুল হামিদ (২৬)। সীমান্তের গ্রামবাসীরা জানায়, ভোরে সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলার কাঁকডাঙ্গা এলাকার কেঁড়াগাছি সীমান্তের সোনাই নদীর বাংলাদেশের পাড়ে কয়েক জন বাংলদেশী দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় ভারতের ১৫২ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের তারালি বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা বিনা উস্কানিতে তাদের লক্ষ্য কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে দুই বাংলদেশী আহত হয়। আহত দুজনকে উদ্ধার করে তার সঙ্গীরা। তারা আরও জানায়, বিএসএফ সদস্যরা, কোন কারণ ছাড়াই গুলিবর্ষণ করছে। খুব কাছ থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। আহতদের কোমরে গুলি লেগেছে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ ঘটনার পর থেকে কেউ সোনাই নদীতে ধারে যেতে পারছে না। বিজিবি’র সাতক্ষীরা ৩৮ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু বাসীর সাংবাকিদের জানান, কাঁকডাঙ্গার বিপরীতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তারালী ক্যাম্পের ক্যাম্পের সদস্যরা পরপর চার রাউন্ড গুলি ছোড়ে। গুলিতে সোনাই নদীর বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বসে থাকা দুই বাংলাদেশী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। বিজিবি’র পক্ষ থেকে ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানালে ব্যাটেলিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএসএফ এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হযৈছে। বৈঠকে ছয় দিন আগে ভারতের গাবুরদা সীমান্ত থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া তিন বাংলাদেশী গরুর রাখালকে ফেরৎ চাওয়া হয়েছে বলে জানান বৈঠকে অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা। ঠাকুরগাঁওয়ে একজনকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ: আমাদের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বেউরঝাড়ি সীমান্তে বিএসএফ সদস্যরা নুর আলম (২৭) নামে এক বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে গেছে। স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে রিপোর্টে জানানো হয়, বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় সীমান্তের ৩৮০ মেইন পিলারের ওপারে গেলে ভারতের বড়বিল্লাহ বিএসএফ ক্যাম্পের টহল জওয়ানরা তাকে আটক করে। নুর আলম বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চড়ইগতি গ্রামে ইলিয়াস খানের ছেলে। গতকাল বিকাল ৩টায় এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও-৩০ বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কি কারণে এ ঘটনা তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। এর আগে ১৬ই জানুয়ারি এই উপজেলার রত্নাই কাশিবাড়ী গ্রামের আইজ উদ্দিনের ছেলে মতিউর রহমার (২৫) রত্নাই সীমান্তের ওপারে গেলে বিএসএফ’র হাতে ধরা পড়ে। পরে তাকে ভারতের ইসলামপুর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। |
__._,_.___