Banner Advertise

Friday, November 8, 2013

[chottala.com] Embassy of Bangladesh--Victory Day 2013




His Excellency the Ambassador of the
People's Republic of Bangladesh to the USA
Mr. Akramul Qader
cordially invites you to the celebration of Victory Day, 2013
When: Sunday 15 December 2013 at 5:00  p.m.
Where: Bangabandhu Auditorium, Embassy of Bangladesh, 3510 International Drive, NW, Washington DC, 20008
    
Program

5:00 PM--Discussion on the significance of Victory Day
5:30 PM--Cultural Program
7:00 PM--Dinner


 
 
Best Regards

Nirupam Dev Nath
First Secretary ( Political & Cultural)
Embassy of Bangladesh   
3510 International Drive, NW
Washington DC 20008, USA
Phone: ( 202) 244-3658
 
 
 








__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___

[chottala.com] হেফাজতের আড়ালে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ছিল জামায়াত-বিএনপির



শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৩, ২৫ কার্তিক ১৪২০

হেফাজতের আড়ালে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ছিল জামায়াত-বিএনপির
নির্মূল কমিটির গণকমিশনের শ্বেতপত্রের সারাংশ ও সুপারিশ
২০১৩-এর ৬ এপ্রিল ও ৫ মে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার শাপলা চত্বরে 'হেফাজতে ইসলাম' নামক কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের বিশাল সমাবেশ এবং তাদের ১৩ দফা দাবি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অস্তিত্বকে প্রচ- চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ৬ এপ্রিলের মহাসমাবেশে হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবি ঘোষণা করে সরকারকে এক মাসের কম সময়ের ভেতরে তা মেনে নেয়ার জন্য যেভাবে আল্টিমেটাম দিয়েছে অতীতে কোন রাজনৈতিক দলকে এ ধরনের কর্মসূচী ঘোষণা করতে দেখা যায়নি।
সরকার তাদের দাবি নির্ধারিত সময়ের ভেতর মেনে না নেয়ায় ৫ মে হেফাজতে ইসলাম পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা অবরোধের নামে রাজধানীর প্রধান মসজিদ বায়তুল মোকাররমকে ঘিরে প্রায় চার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যে তা-ব ও ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত করেছে মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে তার দ্বিতীয় নজির নেই। এই দিন তারা জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সহযোগিতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে উৎখাত করতে চেয়েছিল। ৫ মের মহাতা-বের পর হেফাজতের গ্রেফতারকৃত নেতাদের স্বীকারোক্তি এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে দেশবাসী প্রায় অজানা এক জঙ্গী মৌলবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক সরকার উৎখাতের এই ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার কথা জেনে স্তম্ভিত হয়ে গেছেন।
প্রচলিত আইন অনুযায়ী রাজধানী ঢাকা সহ বাংলাদেশের যে কোন স্থানে সমাবেশ করতে হলে পুলিশের অনুমতি প্রয়োজন। হেফাজতে ইসলামকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে কতিপয় শর্তে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল, যার ভেতর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ছিল সমাবেশস্থলে কোন উচ্ছৃঙ্খল কর্মকা- করা যাবে না, কোন ব্যক্তি, সম্প্রদায় বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ও মানহানিকর কোন বক্তব্য প্রদান করা যাবে না এবং সন্ধ্যা ছয়টার আগে সমাবেশ শেষ করে সভাস্থল ত্যাগ করতে হবে। হেফাজত এর কোনটাই মানেনি।
বেলা দুটোর দিকে হেফাজতের সমাবেশ আরম্ভ হওয়ার পরপরই মতিঝিল ও বায়তুল মোকাররমের চতুর্দিকে ভাংচুর, পুলিশের উপর হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনা কিছুক্ষণের মধ্যেই নারকীয় রূপ ধারণ করে। বায়তুল মোকাররমের চারপাশে ছোট ছোট ফুটপাথ ব্যবসায়ী ও হকারদের দোকানে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ঘটনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই হামলা ও অগ্নিসংযোগ থেকে যানবাহন, সরকারের বিভিন্ন দফতর, ব্যাংক, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, কর্তব্যরত সাংবাদিক ও পুলিশ, গণমাধ্যমের স্টিকারযুক্ত গাড়ি, এমনকি সড়কদ্বীপের বৃক্ষরাজি ও রেলিং কিছুই রেহাই পায়নি। সন্ধ্যায় মাগরেবের আজানের সময় বায়তুল মোকাররমের চারপাশে আগুনের লেলিহান শিখার আড়ালে ঢাকা পড়েছিল গোটা মসজিদ। শোনা যাচ্ছিল গরিব হকারদের আর্তনাদ, যারা বিক্রি করত পবিত্র কোরান ও হাদিসসহ বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ, জায়নামাজ, আতর, টুপি ও তসবিহ। টেলিভিশনে এসব দৃশ্য দেখে সেদিন ঢাকাবাসীসহ গোটা দেশবাসীর মনে হয়েছিল গৃহযুদ্ধকবলিত বৈরুত বা দামাস্কের কোন দৃশ্য দেখানো হচ্ছে।
এই ভয়ঙ্কর ধ্বংসযজ্ঞের জ্বলন্ত অগ্নিকু-ে ঘৃতাহুতি বর্ষণ করেছিল বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এক যুদ্ধংদেহী আহ্বান। এর এক দিন আগে তিনি ৪ মে'র জনসভায় ৪৮ ঘণ্টার ভেতর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার জন্য সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন, যা ৫ মে সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রত্যাখ্যান করেন। এর পরই খালেদা জিয়া তাঁর নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীসহ ঢাকাবাসীদের রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশ থেকে বার বার ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল সমাবেশের কার্যক্রম চলতে থাকবে এবং হেফাজতপ্রধান আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী কিছুক্ষণের ভেতরই আসবেন। তিনি চট্টগ্রাম থেকে এসে সকাল থেকে রাজধানীর লালবাগ মাদ্রাসায় অবস্থান গ্রহণ করলেও সমাবেশে আসেননি।
প্রধান নেতার অনুপস্থিতিতে হেফাজতের অন্যান্য নেতারা মহাজোট সরকার, 'গণজাগরণ মঞ্চ' ও 'একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি'র নেতৃবৃন্দসহ দেশেবরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের নাম উল্লেখ করে উত্তেজনাপূর্ণ ও উষ্কানিমূলক ভাষণ দেন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বহু কর্মী 'শহীদ' হয়েছে এরকম গুজব রটনার পর হেফাজত ও জামায়াতের কর্মীরা আরও মারমুখী হয়ে ওঠে।
সরকার উৎখাত না হওয়া পর্যন্ত শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাদের লাগাতার অবস্থানের ঘোষণা এবং শেষ রাতে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গভীর রাতে শক্তি প্রয়োগ করে হেফাজতের কর্মীদের শাপলা চত্বর থেকে সরিয়ে দেয়। রাতের অন্ধকারে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য তারা বিকট শব্দের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপসহ শটগান ও জলকামান ব্যবহার করে। আল্লামা শফীর মহাসমাবেশে এ ধরনের পরিস্থিতি যে ঘটতে পারে গ্রাম থেকে আসা মাদ্রাসার ছাত্রদের সে সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। আতঙ্কিত হয়ে তারা প্রাণ বাঁচানোর জন্য দিগি¦দিকজ্ঞানশূন্য হয়ে দ্রুত সভাস্থল ছেড়ে চলে যায়। 
৫ মে শাপলা চত্বর মুক্ত অভিযানে আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী রাইফেল, বন্দুক বা ঐ জাতীয় কোন অস্ত্র ব্যবহার করেনি। তবে শটগানের রবার বুলেটে এবং টিয়ার গ্যাসের শেল-এর আঘাতে জামায়াত-হেফাজতের কয়েক শ' কর্মীসহ বহু নিরীহ পথচারীও আহত হয়েছে। পরদিন এলাকায় ফিরে যাওয়ার সময় হেফাজত-জামায়াতের কর্মীরা পথে পথে তা-ব এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা অব্যাহত রাখে, যার ফলে নিহতের সংখ্যাও বেড়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহের ৫ মে'র শেষ রাতের অভিযান সংক্ষিপ্ততম সময়ের ভেতর সমাপ্ত হয় এবং হেফাজত-জামায়াত-বিএনপির সরকার উৎখাতের পরিকল্পনাও ভ-ুল হয়ে যায়। পুলিশ পরদিন হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে লালবাগ মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করে এবং হেফাজতপ্রধান অতিবৃদ্ধ আল্লামা শফীকে বিমানযোগে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেয়া হয়।
সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় হেফাজত-জামায়াত-বিএনপির নেতারা ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাঁরা দাবি করেন ৫ মে গভীর রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ ভাঙতে গিয়ে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজেবি হাজার হাজার আলেম ও হেফাজতকর্মীকে হত্যা করেছে এবং লাশ গুম করেছে।
ঢাকার জাতীয় দৈনিকসমূহে ৫ ও ৬ মের ঘটনায় নিহতদের সংবাদে সর্বাধিক ২৯ জনের কথা বলা হলেও হেফাজত ও জামায়াত কখন নিহতের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার, কখনও আড়াই হাজার বলে দাবি করেছে এবং হাইতির ভূমিকম্পে নিহতদের ছবিকে শাপলা চত্বরে নিহত দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রচার করেছে। এরপর 'অধিকার' নামক একটি এনজিও নিহতের সংখ্যা প্রথমে ২০০ জন, পরে নির্দিষ্টভাবে ৬১ জন দাবি করে এ নিয়ে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক প্রচার চালায়। সরকারী কর্তৃপক্ষ 'অধিকার'-এর কাছে নিহতদের ঠিকানাসহ নাম চাইলে তারা তা প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। 'অধিকার' দাবি করেছে নিহতদের তালিকা হেফাজতে ইসলাম তাদের দিয়েছে। অথচ হেফাজতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা এ ধরনের কোন তালিকা 'অধিকার'কে দেয়নি। 
হেফাজতে ইসলামের সাপ্তাহিক মুখপত্র 'লিখনী'র সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনÑ 'এটা তাদের (অধিকার) নিজস্ব অনুসন্ধান। তারা কিভাবে অনুসন্ধান করেছে, কাদের নিহত হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে সে ব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নেই। হেফাজত থেকে তাদের কোন তথ্য দেয়া হয়নি।' 
'লিখনী'র পক্ষ থেকে হেফাজতের মহাসচিবকে এ বিষয়ে আরও প্রশ্ন করা হয়Ñ 'দেশের অনেক প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া প্রচার করেছে ও প্রমাণ দিচ্ছে 'অধিকার'-এর রিপোর্টের অধিকাংশ ব্যক্তিই ভুয়া বা অজ্ঞাতপরিচয়। এর দ্বারা তো হেফাজতের ব্যাপারেও জনগণ মিথ্যা ধারণা পেতে পারে।' জবাবে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেনÑ 'এটা আমাদের তালিকা নয়। এ তালিকা আমরা দেইনি এবং এ তালিকার কোন তথ্যের সঙ্গে আমরা জড়িতও নই। সত্য জানাটা বাংলাদেশের তৌহিদী জনতার মৌলিক অধিকার। কিন্তু আমরা যদি এখন শহীদদের বা আহতদের তালিকা প্রকাশ করি তবে তাদের পরিবার আওয়ামী সরকারের পেটোয়াবাহিনী এবং দলীয় সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণত হবে। বাংলাদেশের এমন অনেক মাদ্রাসা আছে যেখানে অনেক ছাত্র-শিক্ষক আহত-নিহত হয়েছেন, কিন্তু তাদের পরিবার আজ জীবনের ভয়ে তাদের নাম প্রকাশ করার সাহস পাচ্ছেন না। আমাদের কাছে এমন তথ্যও আছে, নিহতদের পরিবারকে র‌্যাব-পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়ি গিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে এসেছে। আর হেফাজতের ঘটনায় কেবল আলেম-ওলামাই নন, অনেক সাধারণ মুসলমানও নিহত হয়েছে। কিন্তু সে তথ্য এখন প্রকাশ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।'১
১. লিখনী, ১ অক্টোবর ২০১৩

'অধিকার'-এর এই বিতর্কিত তালিকা দেশে ও বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে। সরকার 'অধিকার'-এর সচিব ও নির্বাহী প্রধান বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ্যাডভোকেট আদিলুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে।
নিহতের প্রকৃত সংখ্যা জানার জন্য গণকমিশনের তদন্তকর্মীরা হেফাজতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। হেফাজতের সদর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা ঘটনার আড়াই মাস পরও নিহতের তালিকা সম্পূর্ণ করতে পারেননি। এই তালিকা প্রস্তুত করার জন্য হেফাজতে ইসলাম ১০০১ সদস্যের একটি কমিটি করেছে। ৬ আগস্ট হেফাজতের পক্ষ থেকে গণকমিশনের তদন্তকর্মীদের ই-মেইলে ৫ মে শাপলা চত্বরে 'হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ'-এর নিহতদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। পাঁচ পৃষ্ঠার এই তালিকায় ৫ মে শাপলা চত্বরে 'শাহাদতবরণকারী' ৭৯ জনের নাম রয়েছে।
হেফাজতের এই তালিকায় যেহেতু সর্বোচ্চ সংখ্যক 'নিহত' ব্যক্তির নাম রয়েছে এটিকে ভিত্তি করে গণকমিশন এতে বর্ণিত নিহতদের ঠিকানা অনুযায়ী কক্সবাজার থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করে। হেফাজতের তালিকার প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে ১৪ জনের নাম দু'বার বা তিন বার লেখা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যালোচনায় আরও দেখা গিয়েছে, হেফাজতের আক্রমণে নিহত, হৃদরোগে মৃত ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা, ৬ মে ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জে ও চট্টগ্রামে নিহতদের নামও হেফাজতের তালিকায় রয়েছে। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর গণকমিশনের তদন্তকর্মীরা হেফাজতের তালিকার ৫৬ জনের ঠিকানায় গিয়ে অনুসন্ধান করেছেন। অনুসন্ধানে হেফাজতের নিহতের তালিকায় ৫ জনকে জীবিত পাওয়া গিয়েছে। যে সব ব্যক্তির নাম দুই বা তিনবার আছে ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানায়, তদন্তকর্মীরা জানতে পেরেছেন এক ব্যক্তিকে একাধিক ঠিকানায় উল্লেখ করে তালিকার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ৩ জনের ঠিকানায় গিয়ে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি, পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজ বলা হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে হেফাজতের তালিকায় বর্ণিত ৭৯ জনের ভেতর ৩৪ জনের মৃত্যু সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নিহতের নাম হেফাজতের তালিকায় নেই, অথচ পুলিশের তালিকায় আছে এরকম ৪ ব্যক্তির ঠিকানায়ও কমিশনের কর্মীরা গিয়েছে। এ ছাড়া একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সূত্রে এমন নিহতের সন্ধানও পাওয়া গেছে যার নাম হেফাজত, অধিকার বা পুলিশÑ কারও তালিকায় নেই।
সংবাদপত্র, হেফাজতে ইসলামের তালিকা, 'অধিকার'-এর তালিকা এবং পুলিশের সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত তালিকা পর্যালোচনা করে এবং মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে গণকমিশন ৫ ও ৬ মের সংঘর্ষে রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে মোট ৩৯ জন নিহতের সন্ধান পেয়েছে। এদের ভেতর ২০ জনের কবর শনাক্ত করা হয়েছে, বাকিদের কোথায় দাফন করা হয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরা জানেন না। গণকমিশনের তালিকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিহত ৬ জনের নাম যুক্ত করা হয়নি।
হেফাজত ও 'অধিকার'-এর তালিকা পর্যালোচনা করে এবং প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকদের জবানবন্দি থেকে গণকমিশন এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেÑ ৫ মে শেষ রাতে শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খালা-রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে হেফাজতের বা জামায়াতের কোন কর্মী নিহত হয়নি। সেই রাতে একজন পুলিশ হেফাজতের আক্রমণে আহত হয়ে পরে মৃত্যুবরণ করেছেন। গণকমিশন এ বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ৫ জন সাংবাদিকের জবানবন্দী গ্রহণ করেছে।
পুলিশের সদর দফতরের চূড়ান্ত তালিকায় আমরা দেখেছি ৫ ও ৬ তারিখের সংঘর্ষে হেফাজতের কর্মী-সমর্থক নিহত ১১, অন্যান্য ১১ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ জন সদস্য রয়েছেন। জানুয়ারি ২০১৩ থেকে অক্টোবর ২০১৩ পর্যন্ত সহিংসতা ও নাশকতারোধে পুলিশের মোট ১২ জন সদস্য নিহত, গুরুতর আহত ১৯১ জন এবং সাধারণ আহতের সংখ্যা ১৭৬৭ জন।
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ও সাপ্তাহিকে পরবর্তী কয়েকদিন যাবৎ ৫ মের ঘটনা সম্পর্কে যে সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তাতে হেফাজতকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসী জ্ঞাত হলেও এই ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন দিক রহস্যাবৃত রয়ে গেছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক অনালোচিত সংগঠন কিভাবে রাজধানী পর্যন্ত এসে এহেন নারকীয় তা-ব ঘটাতে পারে, তাদের শক্তির উৎস কি, কারা তাদের মদদদাতা এবং আরও নির্দিষ্টভাবে ৫ মে গভীর রাতে শাপলা চত্বরে কি ঘটেছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শেষ রাতের অভিযানে কতজন নিহত হয়েছেÑ এরকম বহু প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়ে গেছে। হেফাজতের উত্থান ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের বিষয়টি যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয় নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে যুক্ত সেহেতু দেশবাসীর অধিকার রয়েছে অমীমাংসিত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর জানার।
এই ঘটনার পর 'একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি'র পক্ষ থেকে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছিল এ বিষয়ে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন এবং শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য। সরকারের অনাগ্রহ লক্ষ্য করে নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে ১ জুন (২০১৩) একটি গণকমিশন গঠন করা হয়। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের দ্বারা গঠিত 'মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন'-এর সদস্যরা হচ্ছেনÑ বিচারপতি সৈয়দ আমীরুল ইসলাম (চেয়্যারম্যান), অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাংবাদিক কামাল লোহানী, লেখক হাসান আজিজুল হক, অধ্যাপক অজয় রায়, শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, এ্যাডভোকেট জেডআই খান পান্না, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, অধ্যাপক আবুল বারকাত, সাংবাদিক শামীম আখতার, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ ও লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির (সদস্য সচিব)।
মাঠপর্যায়ে তদন্ত এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য কমিশন একটি সচিবালয় গঠন করে।
(৭-এর পৃষ্ঠার পর)
সচিবালয়ের সদস্যদের ভেতর বিভিন্ন দৈনিক ও টেলিভিশনে কর্মরত সাংবাদিক এবং নির্মূল কমিটির কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সহ একসময়ে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম ও 'হরকত-উল- জিহাদ'-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন কিছু ব্যক্তিকেও নিযুক্ত করা হয়Ñ যাঁরা বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদপ্রাপ্ত। হেফাজতে ইসলাম যেহেতু মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন এবং তাদের অনেক দলিলপত্র আরবী ও উর্দুতে লেখা সে কারণে মাদ্রাসা পড়ার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাঁচজনকে কমিশনের তদন্ত এবং বিভিন্ন দলিলপত্র সংগ্রহে সহযোগিতার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। জামায়াত, হেফাজত ও অন্যান্য জঙ্গী মৌলবাদী সংগঠনের তথ্য সংগ্রহ করার সময় এদের অনেক ঝুঁকি নিতে হয়েছে। হেফাজতের কয়েকজন কর্মী, যাঁরা আমাদের তদন্তে সহযোগিতা করেছেন, তাঁরা তাঁদের নাম গোপন রাখার অনুরোধ করেছেন।
যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার বানচালের পাশাপাশি বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মনোলিথিক মুসলিম রাষ্ট্র বানাবার জন্য জামায়াতে ইসলামী গত বছরের সেপ্টেম্বর (২০১২) মাস থেকে পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রদায়ে উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। জামায়াত মনে করে সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক, ওদের দেশ থেকে বিতাড়ন করতে হবে এবং সন্ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে নির্বাচনের সময় ভোটদান থেকে বিরত রাখতে হবে। ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও পরে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর জামায়াত-বিএনপি সন্ত্রাসীদের নজিরবিহীন নির্যাতনের কারণে প্রায় তিন লক্ষ হিন্দুকে একরকম শূন্য হাতে রাতের অন্ধকারে পৈত্রিক ভিটা ত্যাগ করে প্রতিবেশী ভারতে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ ও ২০১১ সালে সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রাদয়ের উপর কিছু বিক্ষিপ্ত হামলা হয়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধপল্লীতে জামায়াতের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা অনুযায়ী যে ভয়াবহ হামলা হয়েছে তা নিরীহ বৌদ্ধ সম্প্রদায় শুধু নয়, সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালেও তাদের উপর এরকম হামলা হয়নি। বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল তখন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস অব্যাহত থাকার প্রধান কারণ ছিল সরকারীভাবে এসব ঘটনার অস্বীকৃতি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন মহাজোটের আমলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে সরকারি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা যুক্ত থাকলেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা যেহেতু রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে হয়নি সেজন্য সরকার অস্বীকারও করেনি। রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলার পরদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী উপদ্রুত এলাকায় গিয়েছেন এবং প্রশাসনের যেসব ব্যক্তির নিস্ক্রিয়তা বা সহযোগিতার কারণে হামলাকারীরা সাহসী হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে কমিশনের তদন্ত প্রতীয়মান হয়েছে যে সব সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ বা তাদের সমর্থকরা জড়িত তাদের ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রলীগের কর্মীদের গ্রেফতার এবং তাদের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করা হলেও রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মী যারা যুক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়, বিশেষভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে ২০১৩-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে, যেদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা, গণহত্যাকারী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার রায়ে তাকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। সেদিন রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আগে থেকে প্রস্তুত থাকা জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দুদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। এই হামলার সময় তারা অসহায় হিন্দুদের বলেছে, 'তোদের সাক্ষীর কারণে সাঈদী হুজুরের ফাঁসি হয়েছে। বাংলাদেশে কোন হিন্দু থাকতে পারবে না।' 
বাংলাদেশে মৌলবাদী তা-ব ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার লক্ষ্য অভিন্ন, কুশীলবও অভিন্ন। দুইয়েরই আক্রমণের লক্ষ্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধান, সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রদায়, মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবী, নারী, উন্নয়নকর্মী, প্রগতিবাদী রাজনীতি, বৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণা এবং সবার উপরে মানবতা। গণকমিশনের অনুসন্ধানে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভিন্নœ কারণ, লক্ষ্য এবং কুশীলবদের প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। এই বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মিথ্যাচার। জামায়াত ও হেফাজতের রাজনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে মিথ্যাচার। এক মিথ্যা শত মিথ্যার জন্ম দেয়। নাৎসি নেতা গোয়েবলস্-এর মতো এরা বিশ্বাস করে এক মিথ্যা শতবার বললে তা সত্যে রূপান্তরিত হয়। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদী মিথ্যাচারের সমর্থনে লিখেছেন, 'বাস্তব জীবনে এমন কিছু চাহিদা রয়েছে যেগুলোর খাতিরে মিথ্যা বলা শুধু জায়েজই নয়, ওয়াজেব।'২
২.আবুল আলা মওদুদী, মাসিক তরজুমানুল কোরআন, ৫০ তম খ-, দ্বিতীয় সংখ্যা, শাবান ১৩৭৭ হিজারি, পৃ: ১১৮

গণকমিশনের শ্বেতপত্রে জামায়াত-হেফাজতের এই মিথ্যাচারের প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপন করা হয়েছে।
শ্বেতপত্রের বস্তুনিষ্ঠার প্রয়োজনে হেফাজতে ইসলামের বক্তব্যসমূহ যতদূর সম্ভব তাদের মূল দলিল থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে ১৩ দফার বিশ্লেষণের জন্য তাদের কোন উর্ধতন নেতার সাক্ষাতকার চাওয়া হয়েছিল। কমিশনের সঙ্গে কারা যুক্ত আছেন জানতে পেরে হেফাজতের কোন নেতা সাক্ষাতকার প্রদানে সম্মত হননি। তবে ১৩ দফার ব্যাখ্যা সম্পর্কে হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক প্রকাশিত সংগঠনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওঃ নূর হোছাইন কাসেমী ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওঃ জুনায়েদ আল-হাবীবের লেখা "১৩ দফা দাবি : সরকারের অবস্থান ও পর্যালোচনা" শীর্ষক পুস্তিকাটি (প্রকাশকাল : এপ্রিল ২০১৩) নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হেফাজত নেতা কমিশনকে দিয়েছেন, যা কোন পরিবর্তন ও সম্পাদনা ছাড়া শ্বেতপত্রে সংকলিত হয়েছে। একই ভাবে হেফাজতপ্রধান মাওলানা শাহ আহমদ শফী এবং হেফাজতের অন্যান্য নেতার বক্তব্যও তাদের লেখা পুস্তক/পুস্তিকা এবং ওয়াজের সিডি/ভিসিডি থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম এবং এর সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক দলের বক্তব্যের ক্ষেত্রেও যতদূর সম্ভব সংগঠনগুলোর নিজস্ব প্রকাশনা ব্যবহার করা হয়েছে। শ্বেতপত্রের দ্বিতীয় খ-ে কমিশন কর্তৃক সংগৃহীত ও ব্যবহৃত এসব প্রকাশনার তালিকা প্রদান করা হয়েছে। শ্বেতপত্রের তথ্যের জন্য আমরা হেফাজত প্রভাবিত এক হাজারেরও বেশি মাদ্রাসায় তদন্ত করেছি, ছাত্র ও শিক্ষকদের বক্তব্য নথিবদ্ধ করেছি।
হেফাজতের নেতাদের বক্তব্য ও বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে জানার দ্বিতীয় উৎস হচ্ছে বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা। এ ক্ষেত্রে কোন দৈনিকের বিশেষ কোন সংবাদ সম্পর্কে হেফাজতের ভিন্নমত থাকলে তাও শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশনের তথ্যের তৃতীয় উৎস পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের এতদসংক্রান্ত রেকর্ড যার কিছু দৈনিক পত্রিকায়ও বেরিয়েছে। সকল তথ্য একাধিক সূত্র থেকে যাচাই করা হয়েছে। তথ্যের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠার ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কমিশনের অবস্থান ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর বাংলাদেশের মূল সংবিধান, বাঙালীর পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস, বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার এবং বিজ্ঞানমনস্কতা। গণকমিশন মনে করে এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
হেফাজতে ইসলামের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য শেখ হাসিনার মহাজোট সরকার হলেও গণকমিশনের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে সরকারের একটি অংশ হেফাজতের নেতাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা, এই দলের নেতাদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও নেজামে ইসলামসহ সমমনা মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং কর্মপন্থা সম্পর্কে সম্যকরূপে অবগত নন। সরকারের নীতি নির্ধারকদের অনেকে বিশ্বাস করেন হেফাজত মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং চরিত্রগতভাবে জামায়াতবিরোধী। কমিশনের অনুসন্ধানে এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের প্রতিবেদনেও হেফাজতের জামায়াত ও জঙ্গী সম্পৃক্ততার বহু তথ্য ও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। 
বর্তমান প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও একসময় জামায়াতবিরোধী ছিল। এখন বিএনপির পক্ষে জামায়াতের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বাইরে গিয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেমন সম্ভব নয়, একইভাবে হেফাজতও পরিচালিত হচ্ছে জামায়াতের দ্বারা। হেফাজত ও জামায়াতের আন্তর্জাতিক মুরুব্বি, অর্থের উৎস ও মদদদাতা অভিন্ন। বর্তমান শ্বেতপত্রে এসব বিষয়ে বহু তথ্য ও প্রমাণ রয়েছে। 
জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস, দর্শন, রাজনীতি, আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মপন্থা সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকলে হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকা-ের শানে নজুল বোঝা সম্ভব হবে না। এ কারণে জামায়াত হেফাজতেকে ব্রাকেটবন্দী করা হয়েছে। 
দুই
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৯-এর জানুয়ারিতে সরকার গঠন করেছে। মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন এবং ১৯৭১-এর গণহত্যাকারী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারি থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ আরম্ভ হলেও ১৯৭৩-এর আইন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে ২০১০-এর ২৫ মার্চ। প্রথম পর্যায়ে যাদের গ্রেফতার ও বিচার আরম্ভ হয়েছে তাদের দশ জনের ভেতর আটজন জামায়াতে ইসলামীর এবং দুইজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। 
আইসিটি গঠনের আগে থেকেই এই বিচার বিলম্বিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও বানচাল করবার জন্য জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগীরা দেশে ও বিদেশে বহুমাত্রিক তৎপরতা আরম্ভ করেছে। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জামায়াতের শীর্ষ নেতা মীর কাসেম আলী ২৫ মিলিয়ন ডলার প্রদান করে 'ক্যাসেডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস' নামক এক লবিং ফার্মকে এক বছরের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন সেখানে সরকারি মহলে জামায়াতের পক্ষে তদবিরের জন্য।৩
৩.বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা অনলাইন, ২৩ আগস্ট ২০১২

পশ্চিমে অর্থের বিনিময়ে ব্যক্তি ও সংগঠন ভাড়া করা যায় সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে দেন-দরবারের জন্য। যুক্তরাজ্যে এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশেও জামায়াত কয়েকজন জাঁদরেল আইনজীবী, আইনপ্রণেতা ও কিছু সংস্থাকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে একই উদ্দেশ্যে নিযুক্ত করেছে। 
প্রধানত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্যই দেশের ভেতরে জামায়াত ও বিএনপি নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে, যার প্রধান অভিব্যক্তি হচ্ছে ফ্যাসিবাদী কায়দায় হত্যা ও সন্ত্রাস। জামায়াতে ইসলামী আদর্শগতভাবে হিটলার ও মুসোলিনির নাৎসি ও ফ্যাসিবাদে বিশ্বাস করে, যার অন্যতম বৈশিষ্ট্যÑ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যে কোন ধরনের সন্ত্রাস, হত্যা, নৈরাজ্য, অন্তর্ঘাত ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-কে ধর্ম বা কোন মতবাদের নামে বৈধতা প্রদান। ১৯৭১-এ যাবতীয় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধকে জামায়াত বৈধতা প্রদান করেছিল ইসলাম ও পাকিস্তান রক্ষার দোহাই দিয়ে। 
ইসলামের দোহাই দিয়ে জিহাদের নামে বলপূর্বক রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের তত্ত্ব দক্ষিণ এশিয়ায় প্রচলন করেছিলেন মাওলানা আবুল আলা মওদুদী। এই তত্ত্ব বাস্তবায়নের জন্য তিনি ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জামায়াতে ইসলামী। সেই সময় জামায়াতের গঠনতন্ত্র পড়ে উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুসলিম জাতীয়তাবাদী নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদসহ অনেক আলেম ওলামারা মওদুদীকে এ ধরনের রাজনৈতিক দল গঠন থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তারা সফল হননি। পশ্চিমের গণতন্ত্রকে মওদুদী ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে খারিজ করে আদর্শ হিসেবে অনুকরণীয় মনে করতেন নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদকে। মওদুদী লিখেছেনÑ 'আজ আপনাদের সামনে জার্মানী ও ইটালীর দৃষ্টান্ত মওজুদ রয়েছে। হিটলার ও মুসেলিনী যে বিরাট শক্তি অর্জন করেছে, সমগ্র বিশ্বে তা স্বীকৃত। কিন্তু এই সফলতার কারণ জানা আছে কি? সেই দুটো বস্তু, অর্থাৎ বিশ্বাস ও নির্দেশের প্রতি আনুগত্য। নাৎসি ও ফ্যাসিস্ট দল কখনও এত শক্তি ও সফলতা অর্জন করতে পারত না, যদি না তারা নিজেদের নীতির প্রতি অটল বিশ্বাস রাখত এবং নিজেদের নেতৃবৃন্দের কঠোর অনুগত না হতো।'৪
৪.আবুল আলা মওদুদী, সিয়াশী কাশমকাশ, ৩য় খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা, উদ্ধৃতঃ মওলানা আবদুল আউয়াল, জামাতের আসল চেহারা, ঢাকা, ১৯৭০

নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের পক্ষে মওদুদী আরও লিখেছেন 'যেসব জামায়াত কোন শক্তিশালী আদর্শ ও সজীব সামগ্রিক (ইজতেমায়ী) দর্শন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে তারা সব সময়ই লঘিষ্ঠ হয়। এবং সংখ্যালঘিষ্ঠতা সত্ত্বেও বিরাট বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠকে শাসন করে থাকে। মুসোলিনীর পার্টির সদস্য হলো মাত্র চার লাখ। এবং রোমে মার্চ করার সময় ছিল মাত্র তিন লাখ। কিন্তু এই সংখ্যালঘিষ্ঠরা সাড়ে চার কোটি ইটালীয়র উপর ছেয়ে গেছে। এই অবস্থা জার্মানীর নাজী পার্টিরও। একটি মজবুত ও সুসংহত দল শুধু বিশ্বাস ও শৃঙ্খলার জোরে ক্ষমতায় আসতে পারে। তার সদস্যসংখ্যা দেশের অধিবাসীদের প্রতি হাজারে একজন হোক না কেন।'৫
৫. প্রাগুক্ত

জামায়াতে ইসলামীর অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যখনই এই দলটি কোণঠাসা হয়, তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়, তখনই তারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আশ্রয় গ্রহণ করে এবং অন্য সংগঠনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আত্মরক্ষার পথ খোঁজে। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তার দল মুসলিম লীগের কঠোর সমালোচক ছিলেন মওদুদী। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর রাজনীতিতে নিজের দুর্বল অবস্থান শক্ত করবার জন্য মওদুদী আক্রমণের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন নিরীহ আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়কে, যাঁরা কাদিয়ানী নামেও পরিচিত। ১৯৫৩ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের তৎকালীন রাজধানী করাচীতে জামায়াতে ইসলামী সমমনা আরও আটটি মৌলবাদী সংগঠন এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে 'মজলিস-ই-আমল' (সংগ্রাম কমিটি) গঠন করে, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন অবস্থান থেকে তাদের বিতাড়ন।'৬
৬. জবঢ়ড়ৎঃ ড়ভ ঃযব ঈড়ঁৎঃ ড়ভ ওহয়ঁরৎু ঃড় রহয়ঁরৎব রহঃড় ঃযব চঁহলধন উরংঃঁৎনধহপবং ড়ভ ১৯৫৩, খধযড়ৎব, ১৯৫৪, পৃ. ৭৮-৭৯ 

এই উদ্দেশ্যে মওদুদী 'কাদিয়ানী মাসালা'(কাদিয়ানী সমস্যা) নামে উত্তেজক ভাষায় একটি পুস্তিকা রচনা করেছিলেন। মওদুদী লিখেছেনÑ 'পাকিস্তানের সকল দীনী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হইতে এক বাক্যে দাবী করা হইয়াছে যে, এই 'কাদিয়ানী বিষফোঁড়াটি'কে অবিলম্বে কাটিয়া পাকিস্তানের মুসলমান সমাজদেহ ব্যাধিমুক্ত করা হউক এবং স্যার জাফরুল্লা খানকে মন্ত্রীপদ হইতে অপসারিত করা হউক।'৭
৭. সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী, কাদিয়ানী সমস্যা, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা, ১ম সংস্করণ, ১৯৯৩

মওদুদীর এই বিষফোঁড়া অপসারণের পরিণতি হচ্ছে পাকিস্তানের ইতিহাসে বহুল আলোচিত ও নিন্দিত কাদিয়ানী দাঙ্গা। এই দাঙ্গায় কয়েক হাজার নিরীহ মানুষ নিহত ও আহত হয়েছিলেন। দাঙ্গা থামানোর জন্য লাহোরে সামরিক আইন জারি করে সেনাবাহিনী নামাতে হয়েছিল। এই দাঙ্গার প্রধান হোতা মওদুদীকে তখন সামরিক আদালতে বিচার করে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছিল, যা পরে সৌদি বাদশাহর বিশেষ অনুরোধে রদ করা হয়।
'মজলিস-ই-আমল' গঠনের মূল উদ্যোক্তা জামায়াত হলেও এর নেতৃত্বে মওদুদী বা জামায়াতের শীর্ষ কোন নেতা ছিলেন না। কেন্দ্রীয় কমিটিতে জামায়াতের দুজন মধ্যম সারির নেতা ছিলেন। ১৯৫৩ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত জামায়াতের ষাট বছরের জঙ্গী কর্মকা- পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এই দলটি সব সময় অন্য সংগঠনের কাঁধে বন্দুক রেখে নিজেদের শিকার ঘায়েল করতে চেয়েছে। 
১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার ব��

শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৩, ২৫ কার্তিক ১৪২



__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___