ধর্ম অবমাননার জন্য রাজীব ও আসিফের বিরুদ্ধে আদালতের হুলিয়া ছিল গত বছরই
নিজস্ব প্রতিবেদক
শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা আসিফ মহিউদ্দীন ও থাবা বাবা ওরফে রাজীব আহমেদের ধর্মকে আক্রমণ করে কুৎসা রটিয়ে, কুরআন শরিফের আয়াত বিকৃত করে লেখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত বছরই উচ্চআদালত নির্দেশ দিয়েছিল।
আদালতের নির্দেশের পর সরকাররের পুলিশ বিভাগ সারা দেশে থানায় থানায় চিঠি দিয়েছিল। গত বছরের মে মাসে রিট পিটিশন হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছিল।
পুলিশ বিভাগের অনুরোধে ও আদালতের রায়ের প্রেক্ষাপটে সে সময় বাংলাদেশ টেলিযোগেেযাগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি পুলিশের অনুরোধে রাজিব পরিচালিত ধর্মকারী সাইটটি তুলে নিলেও ফের এটি চালু করা হয়।
শাহবাগ আন্দোলন চলাকালে সম্প্রতি রাজীব হিনত হওয়ার পর বিষয়টি ফের আলোচনায় আসে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে তোলাপাড় হতে থাকে। আন্দোলনের প্রথম দিককার ৪/৫ উদ্যোক্তার মধ্যে তিনজনই স্বঘোষিত নাস্তিক। কেবল নাস্তিকতা নয় তারা ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ সা:, তার ওপর নাজিল হওয়া কোরআনুল কারীম, তার স্ত্রীদের নিয়ে অশ্লীল আদি রসাত্মক ভাষায় এ সব নোংরা চটি ও কমিকস লিখেছে।
হাইকোর্টে গত বছরের মে মাসে দায়ের করা রিট পিটিশন নম্বর ৮৮৬ এর বরাতে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম ফাতেমী কমিশনারে পক্ষে একটি চিঠি পুলিশের আইন কর্মকর্তাকে লিখেন। ২৯ মে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে ‘ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগের এন্টি সাইবার ক্রাইম টিম এ ব্যাপারে বিশেষভাবে তৎপর রয়েছে। যে কোনো উপায়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণে ঢাকা মেট্রোাপলিটন পুলিশ বদ্ধপরিকর। ’
এ চিঠির রেসপন্স করে ঢাকার সে সময়কার পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান লিখেন, ‘রিটে ওয়েবসাইট ও দায়ী ব্যাক্তিদের সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। কোনো তথ্য পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পরে এ সব লোকের তথ্য শাহবাগ আন্দোলনের সময় বের হয়। তাও আবার রাজিব ওরফে থাবা বাবা নিহত হওয়ার পর। থাবা বাবার ফেসবুক পেজ থাবা বাবা থেকে তাদের এ নোংরামি উদ্ধার করা হয়।
থাবা বাবা পরিচালিত ধর্মকারী ডট কমে ২০১১ সালের প্রকাশিত ব্লগে বলা হয়েছে, ‘যুক্তিমনস্কদের নির্মল বিনোদনের ব্লগ। বিতর্ক বা বাকবিতণ্ডার স্থান নেই এখানে। এই ব্লগে ধর্মের যুক্তিযুক্ত সমালোচনা করা হবে, ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে, অপদস্থ করা হবে, ব্যঙ্গ করা হবে। যেমন করা হয়ে থাকে সাহিত্য, চলচ্চিত্র, খেলাধূলা বা অন্যান্য যাবতীয় বিষয়কে।’
৩ জানুয়ারী ২০১১, সোমবার কমিকস কামুক ০১ ‘ধুমধাড়াক্কা টাইপ জনপ্রিয় কমিক‘ কামুক’ এবার সম্পূর্ণ বাংলায়!’। শিরোনামে কমিকসটির লিঙ্ক শেয়ার করার জন্য ব্লগারদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। এখানে নবী মুহাম্মদ সা.কে অবমাননা করা হয়েছে। বলা হয়েছে ‘কমিক দুটোই বড়দের জন্য। ইমোটা খিয়াল কৈরা। ২০০৮ সালে এক ইন্দোনেশীয় ব্লগে এই কমিকস প্রথম প্রকাশিত হয়’ দাবি করে বলা হয়, এর বিষয় ‘ইসলামের কামুক নবী যেভাবে বিয়ে করলেন পুত্রবধূকে’,(নাউজুবিল্লাহ।)
১০ পৃষ্ঠার এ কমিকজুড়ে নবী মুহাম্মদ সা. কে কটাক্ষ তার চরিত্র হনন এবং কোরআনের আয়াতের বিকৃতি করা হয়েছে। বলা হয়েছে রাসূল সা: তার পালক পুত্র যায়েদের স্ত্রীকে কীভাবে বিয়ে করেছেন।
এখানে ককিস : কামুক ০২ এর ছবি দেখতে সমস্যা হওয়ায় আল আল্লাহ সুবিহানাহুওতায়ালাকে অবমাননা করে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্যাফাক ধর্মকারীর উপরে রুষ্ট হয়েছেন নবীজিকে পচানো হয়েছে বলে। ফলে কোনও এক রহস্যময় কারণে কয়েকজন পাঠক এক কমিকের ছবিগুলো দেখতে পাচ্ছিলেন না। আশা করছি, সমস্যা দূরীভূত করতে সমর্থ হয়েছি। এটি আপডেট পোস্ট।’
‘বে-হামদ ও বে-নাত’ নামের এক গুণ্ডা ব্লগারের ব্লগে নবী সা.কে আক্রমণ করেছে। এতে সে বুখারী শরীফের হাদীসকে বিকৃত করে লিখেছে, ‘সেদিন হাফসার পালা ছিলো নবীর সাথে শোবারে। নবী যখন তার ঘরে এলেন, হাফসা দাসী মারিয়া কুপটিয়াও (কিং অভ আলেক্সান্দ্রিয়ার উপহার) উপস্থিত ছিলেন সেখানে। মারিয়া ছিলেন অতীব আকর্ষণীয়া ইন্দ্রীয়সুখকর রমণী। তাঁর দিকে তাকালে যে কোনোও পুরুষ উত্তেজিত হয়ে পড়তো। আর নবী তো সাধারণ মানুষ ছিলেন না! তাঁকে দেয়া হয়েছিল তিরিশজন পুরুষের যৌনশক্তি। (বুখারি ভলিউম ১, বুক ৫, নম্বর ২৬৮)।’
২৯ নভেম্ব¦র ২০১১ মঙ্গলবার নাসির আবদুল্লাহ নামে এক ব্লগার লিখেছে, ‘মুহাম্মদের চালাকি-১’। যাতে সে লিখে, ‘ যয়নাব পালিত পুত্র যায়িদের বিবাহিতা স্ত্রী। যাকে মুহাম্মদ পরে বিয়ে করে (পরকীয়ার ব্যাপারটা এড়ায়া গেলাম)। ১৪ টা বিয়ে করলেও মুহম্মদ যয়নবের সাথে বিয়ে উপলক্ষ ছাড়া তার কোনো বিয়েতেই সামাজিক ভোজ- অনুষ্ঠানের আয়োজিন করেনি। কিন্তু যয়নাবের সাথে বিয়ে উপলক্ষে বেশ কিছূ ছাগল জবাই করে কয়েকদিন ব্যাপী বহুলোক সমাগমে বিবাহের সামাজিক অনুষ্ঠান পালন করা হয়। কারণ কী? কোনো কালেই পুরুষ মানুষ বয়ঃজ্যোষ্ঠ নারীদের বিয়ে করে গর্ববোধ করেনি, বিশেষ করে সেই নারীয় যদি হয় দুইবার বিধবা এবং ৪/৫ জন সন্তানের জননী। পুরুষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এটা পুরুষের জন্মগত প্রবৃত্তি। খাদিজাকে বিয়ে করেও মুহাম্মদের মনে একই প্রবৃত্তি কাজ করেছে, ধন দৌলত কিংবা আশ্রয় এতিম মুহম্মদের কাছে পুরুষত্বের চেয়ে বেশি বড় হয়ে দেখা দেওয়ায় সে খাদিজাকে বিয়ে করে আবার এই অসম বিয়ে নিয়ে সে লজ্জাগ্রস্থ থাকবার জন্য ব্যাপারটা গোপনে সেরে ফেলে। ’
আসিফ মহিউদ্দীন ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে ইসলামবিরোধী লেখা লিখছে। এর লিঙ্ক শেযার করে তা বন্ধের জন্য বলা হলেও তা বন্ধ হয়নি। গত বছরের ৯ জুলাই বিটিআরসিকে লেখা এক চিঠিতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। ৮৮৬ নম্বর রিট পিটিশনের পর এ চিঠি দেয়া হলে বিটিআরসির সে সময়কার চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ নিজ হাতে এটি বন্ধ করলেও ফের চালু করা হয়েছে এ সব।
গতকাল সামুতে গিয়ে দেখা গেছে আসিফ গত বছরের ২১ মার্চ লিখেছে ‘আল্লাহ-ভগবান-ঈশ্বরের ব্যর্থতায় এবারে ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষায় এগিয়ে এলো আদালত’ শিরোনামের একটি ব্লগ। যাতে সে লিখেছে,‘মানুষের ধর্মবিশ্বাস যেমন যুক্তিহীন, তেমনি ধর্মানুভূতিও মোটাদাগে যুক্তিহীন। কখন কোথায় কিভাবে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি আহত হবে, বলা মুশকিল। একজন বিশুদ্ধ ধার্মিকের ধর্মানুভূতি আহত হওয়া উচিত দেশের দুর্নীতি দেখে, অপরাধ প্রবনতা দেখে, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন দেখে, অর্থনীতির বেহাল অবস্থা-জনগনের দুর্দশা দেখে, নারীর অবমাননা দেখে, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যাবহার দেখে, একাত্তরের ঘাতকদের গাড়ীতে পতাকা দেখে।’
সে লিখেছে, ‘ অথচ এসবে ধার্মিকের বা আদালতের কোমল ধর্মীয় অনুভূতি একটুও আহত হয় না। হেনা নামের একটি মেয়েকে যখন বর্বর ইসলামী শরীয়া আইনে দোররা মেরে হত্যা করা হয়, সৌদী আরবে যখন ৮ জন বাঙলাদেশিকে জবাই করা হয়, আমাদের কারো ধর্মানুভূতি একটুও আহত হয় না। আমি কখনই দেখি নি পৃথিবীর কোন মোল্লাকে, ইমামকে, বায়তুল মোকাররমের খতিবকে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে গন আন্দোলনের ডাক দিতে। মোল্লারা যখন দাড়ি,টুপি লাগিয়ে বালক ধর্ষন করে, কাজের মেয়ে ধর্ষণ করে, অসংখ্য বিয়ে করে, কারোর ধর্মানুভূতি একটুও আহত হয় না। কারণ এই সমস্ত বিষয় ধর্মর আলোচনার বিষয় বস্তু নয়।’
আসিফ লিখেছে, ‘ধর্মানুভূতি আহত হয় যখন টিভিতে দেখানো হয় দাড়িওয়ালা মোল্লাটি রাজাকার ছিল, সুন্নতী পোষাক পরে তারা পাক বাহিনী সাথে মিলে আল্লাহো আকবর ধ্বনি দিয়ে বাঙালীদের উপরে গনহত্যা চালিয়েছে, নাড়ায়ে তকবীর বলে বাঙালী নারীদের শরীরের উপরে ঝাঁপিয়ে পরেছে। ধর্মানুভুতি আহত হয় যখন ধর্মের নষ্টামী চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়, বর্বর শরীয়া আইনের বর্বরতার কথা প্রকাশ করা হয়, ধর্মের পয়গম্বরদের/দেবদেবী-অবতারদের অজস্র লাম্পট্যের ইতিহাস, গনহত্যা এবং গনধর্ষণের ইতিহাস হাদিস কোরান বাইবেল গীতা রামায়ন থেকেই প্রমাণ করে দেয়া হয়।’
সে লিখেছে, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মূল উৎস ধর্মগ্রন্থ এবং পয়গম্বরদের জীবনী। কোন সুস্থ বিবেকবান মানুষ এই সকম ঘটনা নিরপেভাবে পাঠ করলেই তাদের মনে নানান প্রশ্ন জাগবে। এমনকি ধর্মগ্রন্থগুলোতে যে মানবতা বিরোধী বানী সমুহ রয়েছে, নারী অবমাননাকর বক্তব্য রয়েছে, কিভাবে অবিশ্বাসী নিধন করতে হবে তা বর্ণনা করা হয়েছে, সেসব বর্ণনা করলেও ধার্মিকগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে।’
তার মতে, ‘তাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মূল কারণটা অর্থাৎ সেই সকল ধর্মগ্রন্থ উচ্ছেদ করাটাই যৌক্তিক ছিল। নাহলে এই যুক্তিহীন অন্ধ ষাড়ের মত অনুভূতি বাড়তে বাড়তে আমাদের শিল্প সভ্যতা সংস্কৃতি সব কিছু গ্রাস করে নেবে। গরু হচ্ছে হিন্দুদের পুজনীয় প্রানী, তারা এটিকে মা ডাকে। এই প্রানী কোরবানীর সময় হত্যা করলে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। অপরদিকে গরু হচ্ছে মুসলিমদের খাদ্য, এই প্রানীটিকে কোরবানী না করতে দিলে মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে। একইভাবে মূর্তিপুজা ইসলামের দৃষ্টিতে শিরক এবং সর্বাধিক ঘৃণিত অপরাধ। অপরদিকে মূর্তিপুজাই হিন্দুদের পরম ধর্ম। এই দুই ধর্মের পরস্পর বিরোধী ধর্মীয় অনুভূতিকে কিভাবে লালন পালন করা হবে সে বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত কোন নির্দেশনা দেয় নি। এই দুই ধর্মের ধর্ম পালনের সময়ে একে অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে কি শাস্তির বিধান হবে, সে সম্পর্কে আদালত নিরব! একই ভাবে, ধর্মের প্রশংসা করা যেমন ধার্মিকদের পরম ধর্মীয় কাজ, ধর্মের সমালোচনা করাও একজন মুক্তমনা নাস্তিকের মুক্তচিন্তার চর্চা। এই পরস্পর বিরোধী অবস্থানে আদালত কেন যুক্তিহীনভাবে ধর্মের পক্ষ নেবে?’
সে লিখেছে, ‘আর যদি ধর্মের প নিতেই হয়, তবে গুগল, ইয়াহু, উইকিপিডিয়া, ফেসবুক সহ ইন্টারনেটের সকল মাধ্যম বন্ধ করে দিতে হবে, ধর্মগ্রন্থ বাদে সমস্ত বই পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কারণ গুগল সার্চ দিলেই মুহাম্মদের কার্টুন চলে আসে, গুগল সার্চ দিলেই যিশুর নগ্ন ছবি চলে আসে, ঈশ্বর আল্লা ভগবানদের নিয়ে হাস্যকর কার্টুন আর লেখা চলে আসে। সাধারণ সমাজ বিজ্ঞান বা জীববিজ্ঞানের বই পড়লেই ধর্ম অবমাননা চলে আসে। আদালত কার কার ধর্মীয় অনুভূতি রা করবে? যদিও সকলেই নিজের ধর্মকে একমাত্র সত্য ধর্ম বলে দাবী করে থাকে, তবুও কোন ধর্মের ঈশ্বর সঠিক, কোন ধর্ম সত্য নাকি সকল ধর্মই মিথ্যা, তা যেহেতু প্রমাণের কোন উপায় নেই, তাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়টা ঈশ্বরের হাতে ছেড়ে দেয়াটাই যুক্তিযুক্ত ছিল। তবে কি ঈশ্বর আর নিজের এবং নিজের মনোনীত ধর্মের সম্মান রক্ষা করতে পারছেন না? মুক্তমনা নাস্তিকদের ক্রমাগত সমালোচনায় ঈশ্বর কি বিব্রত? সে কি সেই সকল ধর্ম অবমাননাকারী ওয়েব সাইট এবং ফেসবুক পেইজ বন্ধ করতে অম? আর ঈশ্বরের অনুসারীরাই বা কেন ঈশ্বরের শরণাপন্ন না হয়েছে আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছে?একজন মুক্তমনার ধর্ম যদি হয় মানবতাবাদ, এবং সে যদি দাবী করে, কোরান হাদিস বাইবেল গীতা রামায়ন মহাভারত তোরাহ-এর মানবতাবিরোধী নারী অবমাননাকারী বিধর্মী নিধনের উষ্কানীমূলক আয়াতসমূহ তার মানবিক ধর্মানুভূতিকে আঘাত করছে, তার দায় আদালত কেন নেবে না?’
আদালতের নির্দেশের পর সরকাররের পুলিশ বিভাগ সারা দেশে থানায় থানায় চিঠি দিয়েছিল। গত বছরের মে মাসে রিট পিটিশন হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছিল।
পুলিশ বিভাগের অনুরোধে ও আদালতের রায়ের প্রেক্ষাপটে সে সময় বাংলাদেশ টেলিযোগেেযাগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি পুলিশের অনুরোধে রাজিব পরিচালিত ধর্মকারী সাইটটি তুলে নিলেও ফের এটি চালু করা হয়।
শাহবাগ আন্দোলন চলাকালে সম্প্রতি রাজীব হিনত হওয়ার পর বিষয়টি ফের আলোচনায় আসে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে তোলাপাড় হতে থাকে। আন্দোলনের প্রথম দিককার ৪/৫ উদ্যোক্তার মধ্যে তিনজনই স্বঘোষিত নাস্তিক। কেবল নাস্তিকতা নয় তারা ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ সা:, তার ওপর নাজিল হওয়া কোরআনুল কারীম, তার স্ত্রীদের নিয়ে অশ্লীল আদি রসাত্মক ভাষায় এ সব নোংরা চটি ও কমিকস লিখেছে।
হাইকোর্টে গত বছরের মে মাসে দায়ের করা রিট পিটিশন নম্বর ৮৮৬ এর বরাতে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম ফাতেমী কমিশনারে পক্ষে একটি চিঠি পুলিশের আইন কর্মকর্তাকে লিখেন। ২৯ মে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে ‘ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগের এন্টি সাইবার ক্রাইম টিম এ ব্যাপারে বিশেষভাবে তৎপর রয়েছে। যে কোনো উপায়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণে ঢাকা মেট্রোাপলিটন পুলিশ বদ্ধপরিকর। ’
এ চিঠির রেসপন্স করে ঢাকার সে সময়কার পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান লিখেন, ‘রিটে ওয়েবসাইট ও দায়ী ব্যাক্তিদের সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। কোনো তথ্য পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পরে এ সব লোকের তথ্য শাহবাগ আন্দোলনের সময় বের হয়। তাও আবার রাজিব ওরফে থাবা বাবা নিহত হওয়ার পর। থাবা বাবার ফেসবুক পেজ থাবা বাবা থেকে তাদের এ নোংরামি উদ্ধার করা হয়।
থাবা বাবা পরিচালিত ধর্মকারী ডট কমে ২০১১ সালের প্রকাশিত ব্লগে বলা হয়েছে, ‘যুক্তিমনস্কদের নির্মল বিনোদনের ব্লগ। বিতর্ক বা বাকবিতণ্ডার স্থান নেই এখানে। এই ব্লগে ধর্মের যুক্তিযুক্ত সমালোচনা করা হবে, ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে, অপদস্থ করা হবে, ব্যঙ্গ করা হবে। যেমন করা হয়ে থাকে সাহিত্য, চলচ্চিত্র, খেলাধূলা বা অন্যান্য যাবতীয় বিষয়কে।’
৩ জানুয়ারী ২০১১, সোমবার কমিকস কামুক ০১ ‘ধুমধাড়াক্কা টাইপ জনপ্রিয় কমিক‘ কামুক’ এবার সম্পূর্ণ বাংলায়!’। শিরোনামে কমিকসটির লিঙ্ক শেয়ার করার জন্য ব্লগারদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। এখানে নবী মুহাম্মদ সা.কে অবমাননা করা হয়েছে। বলা হয়েছে ‘কমিক দুটোই বড়দের জন্য। ইমোটা খিয়াল কৈরা। ২০০৮ সালে এক ইন্দোনেশীয় ব্লগে এই কমিকস প্রথম প্রকাশিত হয়’ দাবি করে বলা হয়, এর বিষয় ‘ইসলামের কামুক নবী যেভাবে বিয়ে করলেন পুত্রবধূকে’,(নাউজুবিল্লাহ।)
১০ পৃষ্ঠার এ কমিকজুড়ে নবী মুহাম্মদ সা. কে কটাক্ষ তার চরিত্র হনন এবং কোরআনের আয়াতের বিকৃতি করা হয়েছে। বলা হয়েছে রাসূল সা: তার পালক পুত্র যায়েদের স্ত্রীকে কীভাবে বিয়ে করেছেন।
এখানে ককিস : কামুক ০২ এর ছবি দেখতে সমস্যা হওয়ায় আল আল্লাহ সুবিহানাহুওতায়ালাকে অবমাননা করে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্যাফাক ধর্মকারীর উপরে রুষ্ট হয়েছেন নবীজিকে পচানো হয়েছে বলে। ফলে কোনও এক রহস্যময় কারণে কয়েকজন পাঠক এক কমিকের ছবিগুলো দেখতে পাচ্ছিলেন না। আশা করছি, সমস্যা দূরীভূত করতে সমর্থ হয়েছি। এটি আপডেট পোস্ট।’
‘বে-হামদ ও বে-নাত’ নামের এক গুণ্ডা ব্লগারের ব্লগে নবী সা.কে আক্রমণ করেছে। এতে সে বুখারী শরীফের হাদীসকে বিকৃত করে লিখেছে, ‘সেদিন হাফসার পালা ছিলো নবীর সাথে শোবারে। নবী যখন তার ঘরে এলেন, হাফসা দাসী মারিয়া কুপটিয়াও (কিং অভ আলেক্সান্দ্রিয়ার উপহার) উপস্থিত ছিলেন সেখানে। মারিয়া ছিলেন অতীব আকর্ষণীয়া ইন্দ্রীয়সুখকর রমণী। তাঁর দিকে তাকালে যে কোনোও পুরুষ উত্তেজিত হয়ে পড়তো। আর নবী তো সাধারণ মানুষ ছিলেন না! তাঁকে দেয়া হয়েছিল তিরিশজন পুরুষের যৌনশক্তি। (বুখারি ভলিউম ১, বুক ৫, নম্বর ২৬৮)।’
২৯ নভেম্ব¦র ২০১১ মঙ্গলবার নাসির আবদুল্লাহ নামে এক ব্লগার লিখেছে, ‘মুহাম্মদের চালাকি-১’। যাতে সে লিখে, ‘ যয়নাব পালিত পুত্র যায়িদের বিবাহিতা স্ত্রী। যাকে মুহাম্মদ পরে বিয়ে করে (পরকীয়ার ব্যাপারটা এড়ায়া গেলাম)। ১৪ টা বিয়ে করলেও মুহম্মদ যয়নবের সাথে বিয়ে উপলক্ষ ছাড়া তার কোনো বিয়েতেই সামাজিক ভোজ- অনুষ্ঠানের আয়োজিন করেনি। কিন্তু যয়নাবের সাথে বিয়ে উপলক্ষে বেশ কিছূ ছাগল জবাই করে কয়েকদিন ব্যাপী বহুলোক সমাগমে বিবাহের সামাজিক অনুষ্ঠান পালন করা হয়। কারণ কী? কোনো কালেই পুরুষ মানুষ বয়ঃজ্যোষ্ঠ নারীদের বিয়ে করে গর্ববোধ করেনি, বিশেষ করে সেই নারীয় যদি হয় দুইবার বিধবা এবং ৪/৫ জন সন্তানের জননী। পুরুষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এটা পুরুষের জন্মগত প্রবৃত্তি। খাদিজাকে বিয়ে করেও মুহাম্মদের মনে একই প্রবৃত্তি কাজ করেছে, ধন দৌলত কিংবা আশ্রয় এতিম মুহম্মদের কাছে পুরুষত্বের চেয়ে বেশি বড় হয়ে দেখা দেওয়ায় সে খাদিজাকে বিয়ে করে আবার এই অসম বিয়ে নিয়ে সে লজ্জাগ্রস্থ থাকবার জন্য ব্যাপারটা গোপনে সেরে ফেলে। ’
আসিফ মহিউদ্দীন ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে ইসলামবিরোধী লেখা লিখছে। এর লিঙ্ক শেযার করে তা বন্ধের জন্য বলা হলেও তা বন্ধ হয়নি। গত বছরের ৯ জুলাই বিটিআরসিকে লেখা এক চিঠিতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। ৮৮৬ নম্বর রিট পিটিশনের পর এ চিঠি দেয়া হলে বিটিআরসির সে সময়কার চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ নিজ হাতে এটি বন্ধ করলেও ফের চালু করা হয়েছে এ সব।
গতকাল সামুতে গিয়ে দেখা গেছে আসিফ গত বছরের ২১ মার্চ লিখেছে ‘আল্লাহ-ভগবান-ঈশ্বরের ব্যর্থতায় এবারে ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষায় এগিয়ে এলো আদালত’ শিরোনামের একটি ব্লগ। যাতে সে লিখেছে,‘মানুষের ধর্মবিশ্বাস যেমন যুক্তিহীন, তেমনি ধর্মানুভূতিও মোটাদাগে যুক্তিহীন। কখন কোথায় কিভাবে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি আহত হবে, বলা মুশকিল। একজন বিশুদ্ধ ধার্মিকের ধর্মানুভূতি আহত হওয়া উচিত দেশের দুর্নীতি দেখে, অপরাধ প্রবনতা দেখে, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন দেখে, অর্থনীতির বেহাল অবস্থা-জনগনের দুর্দশা দেখে, নারীর অবমাননা দেখে, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যাবহার দেখে, একাত্তরের ঘাতকদের গাড়ীতে পতাকা দেখে।’
সে লিখেছে, ‘ অথচ এসবে ধার্মিকের বা আদালতের কোমল ধর্মীয় অনুভূতি একটুও আহত হয় না। হেনা নামের একটি মেয়েকে যখন বর্বর ইসলামী শরীয়া আইনে দোররা মেরে হত্যা করা হয়, সৌদী আরবে যখন ৮ জন বাঙলাদেশিকে জবাই করা হয়, আমাদের কারো ধর্মানুভূতি একটুও আহত হয় না। আমি কখনই দেখি নি পৃথিবীর কোন মোল্লাকে, ইমামকে, বায়তুল মোকাররমের খতিবকে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে গন আন্দোলনের ডাক দিতে। মোল্লারা যখন দাড়ি,টুপি লাগিয়ে বালক ধর্ষন করে, কাজের মেয়ে ধর্ষণ করে, অসংখ্য বিয়ে করে, কারোর ধর্মানুভূতি একটুও আহত হয় না। কারণ এই সমস্ত বিষয় ধর্মর আলোচনার বিষয় বস্তু নয়।’
আসিফ লিখেছে, ‘ধর্মানুভূতি আহত হয় যখন টিভিতে দেখানো হয় দাড়িওয়ালা মোল্লাটি রাজাকার ছিল, সুন্নতী পোষাক পরে তারা পাক বাহিনী সাথে মিলে আল্লাহো আকবর ধ্বনি দিয়ে বাঙালীদের উপরে গনহত্যা চালিয়েছে, নাড়ায়ে তকবীর বলে বাঙালী নারীদের শরীরের উপরে ঝাঁপিয়ে পরেছে। ধর্মানুভুতি আহত হয় যখন ধর্মের নষ্টামী চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়, বর্বর শরীয়া আইনের বর্বরতার কথা প্রকাশ করা হয়, ধর্মের পয়গম্বরদের/দেবদেবী-অবতারদের অজস্র লাম্পট্যের ইতিহাস, গনহত্যা এবং গনধর্ষণের ইতিহাস হাদিস কোরান বাইবেল গীতা রামায়ন থেকেই প্রমাণ করে দেয়া হয়।’
সে লিখেছে, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মূল উৎস ধর্মগ্রন্থ এবং পয়গম্বরদের জীবনী। কোন সুস্থ বিবেকবান মানুষ এই সকম ঘটনা নিরপেভাবে পাঠ করলেই তাদের মনে নানান প্রশ্ন জাগবে। এমনকি ধর্মগ্রন্থগুলোতে যে মানবতা বিরোধী বানী সমুহ রয়েছে, নারী অবমাননাকর বক্তব্য রয়েছে, কিভাবে অবিশ্বাসী নিধন করতে হবে তা বর্ণনা করা হয়েছে, সেসব বর্ণনা করলেও ধার্মিকগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে।’
তার মতে, ‘তাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মূল কারণটা অর্থাৎ সেই সকল ধর্মগ্রন্থ উচ্ছেদ করাটাই যৌক্তিক ছিল। নাহলে এই যুক্তিহীন অন্ধ ষাড়ের মত অনুভূতি বাড়তে বাড়তে আমাদের শিল্প সভ্যতা সংস্কৃতি সব কিছু গ্রাস করে নেবে। গরু হচ্ছে হিন্দুদের পুজনীয় প্রানী, তারা এটিকে মা ডাকে। এই প্রানী কোরবানীর সময় হত্যা করলে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। অপরদিকে গরু হচ্ছে মুসলিমদের খাদ্য, এই প্রানীটিকে কোরবানী না করতে দিলে মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে। একইভাবে মূর্তিপুজা ইসলামের দৃষ্টিতে শিরক এবং সর্বাধিক ঘৃণিত অপরাধ। অপরদিকে মূর্তিপুজাই হিন্দুদের পরম ধর্ম। এই দুই ধর্মের পরস্পর বিরোধী ধর্মীয় অনুভূতিকে কিভাবে লালন পালন করা হবে সে বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত কোন নির্দেশনা দেয় নি। এই দুই ধর্মের ধর্ম পালনের সময়ে একে অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে কি শাস্তির বিধান হবে, সে সম্পর্কে আদালত নিরব! একই ভাবে, ধর্মের প্রশংসা করা যেমন ধার্মিকদের পরম ধর্মীয় কাজ, ধর্মের সমালোচনা করাও একজন মুক্তমনা নাস্তিকের মুক্তচিন্তার চর্চা। এই পরস্পর বিরোধী অবস্থানে আদালত কেন যুক্তিহীনভাবে ধর্মের পক্ষ নেবে?’
সে লিখেছে, ‘আর যদি ধর্মের প নিতেই হয়, তবে গুগল, ইয়াহু, উইকিপিডিয়া, ফেসবুক সহ ইন্টারনেটের সকল মাধ্যম বন্ধ করে দিতে হবে, ধর্মগ্রন্থ বাদে সমস্ত বই পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কারণ গুগল সার্চ দিলেই মুহাম্মদের কার্টুন চলে আসে, গুগল সার্চ দিলেই যিশুর নগ্ন ছবি চলে আসে, ঈশ্বর আল্লা ভগবানদের নিয়ে হাস্যকর কার্টুন আর লেখা চলে আসে। সাধারণ সমাজ বিজ্ঞান বা জীববিজ্ঞানের বই পড়লেই ধর্ম অবমাননা চলে আসে। আদালত কার কার ধর্মীয় অনুভূতি রা করবে? যদিও সকলেই নিজের ধর্মকে একমাত্র সত্য ধর্ম বলে দাবী করে থাকে, তবুও কোন ধর্মের ঈশ্বর সঠিক, কোন ধর্ম সত্য নাকি সকল ধর্মই মিথ্যা, তা যেহেতু প্রমাণের কোন উপায় নেই, তাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়টা ঈশ্বরের হাতে ছেড়ে দেয়াটাই যুক্তিযুক্ত ছিল। তবে কি ঈশ্বর আর নিজের এবং নিজের মনোনীত ধর্মের সম্মান রক্ষা করতে পারছেন না? মুক্তমনা নাস্তিকদের ক্রমাগত সমালোচনায় ঈশ্বর কি বিব্রত? সে কি সেই সকল ধর্ম অবমাননাকারী ওয়েব সাইট এবং ফেসবুক পেইজ বন্ধ করতে অম? আর ঈশ্বরের অনুসারীরাই বা কেন ঈশ্বরের শরণাপন্ন না হয়েছে আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছে?একজন মুক্তমনার ধর্ম যদি হয় মানবতাবাদ, এবং সে যদি দাবী করে, কোরান হাদিস বাইবেল গীতা রামায়ন মহাভারত তোরাহ-এর মানবতাবিরোধী নারী অবমাননাকারী বিধর্মী নিধনের উষ্কানীমূলক আয়াতসমূহ তার মানবিক ধর্মানুভূতিকে আঘাত করছে, তার দায় আদালত কেন নেবে না?’
__._,_.___