Banner Advertise

Thursday, October 10, 2013

[chottala.com] খোলা চোখে: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দিদিগিরি’



খোলা চোখে

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'দিদিগিরি'

হাসান ফেরদৌস | আপডেট: ০০:০৩, অক্টোবর ১১, ২০১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ইন্দর কুমার গুজরাল একসময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। অল্প সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। সেই সময়ের মধ্যেই তিনি ভারতের প্রতিবেশীদের সঙ্গে 'দাদাগিরি'র বদলে সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকতেই গুজরাল বুঝেছিলেন, দাদা হওয়ার বদলে বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করলে ভারত যেমন অধিক সমীহ অর্জন করবে, তেমনি তার কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে। গুজরালের এই বৈদেশিক নীতির একটি জুতসই নামও জুটে গিয়েছিল—'গুজরাল ডকট্রিন'। ১৯৯৮ সালে, তখন তিনি আর ক্ষমতায় নেই, ঢাকায় এক আঞ্চলিক সেমিনারে এসে তিনি তাঁর ডকট্রিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সেগুলো হলো: ১. প্রতিদানের আশা না করেই সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ। ২. প্রতিবেশী কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো। ৩. সব আঞ্চলিক শক্তির রাষ্ট্রীয় ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান। ৪. দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান। ৫. এই অঞ্চলের কোনো দেশ প্রতিবেশী কোনো দেশের বিরুদ্ধে নিজ ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না—এই নীতিতে অবিচল আস্থা।
গুজরালই একমাত্র ভারতীয় রাজনীতিক, যিনি বুঝেছিলেন, ভারত যদি তার প্রতিবেশীদের কাছে দাদাগিরি না ফলিয়ে বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে যে ফল তারা হাতের গুলতি দেখিয়ে আদায় করতে চায়, কাঠখড় না পুড়িয়েও তা অর্জন সম্ভব। তাঁর দাদাগিরি নিয়ে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে এখন যাঁরা ক্ষমতাসীন, ভারতের প্রতি তাঁদের উষ্মা গোপন নয়। ভারত প্রকাশ্যে অথবা গোপনে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি সমর্থন জানায়, তাদের উষ্মার সেটি প্রধান কারণ। ভারতের অর্থনৈতিক আগ্রাসন নিয়েও তারা ভীত।
ভারতের দাদাগিরির ব্যাপারটা খোলাসা করার জন্য ভুটানের উদাহরণের দিকে নজর দেওয়া যাক।
ভুটান আগাগোড়াই ভারতের ওপর নির্ভরশীল, সেই নির্ভরশীলতা রীতিমতো কাগজে-কলমে চুক্তি করে জানিয়ে দেওয়া হয় সেই ১৯৪৯ সালে। সে সময় দুই দেশের মধ্যে যে বন্ধুত্ব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাতে স্পষ্ট করে বলা ছিল, ভারতের সঙ্গে সলা-পরামর্শ করে ভুটান তার বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করবে। এই চুক্তি নিয়ে এবং ভুটানের ব্যাপারে ভারতের দাদাসুলভ মনোভাবে সে দেশের ভেতরে অনেক আগে থেকেই নানা রকম উষ্মা ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে ভুটানের রাজা দেশের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণভার কিছুটা হ্রাস করার আগ পর্যন্ত এ নিয়ে কেউ কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেনি। ২০০৮ সালে দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয় ডিপিটি বা ড্রুক ফুয়েনসাম সগপা পার্টি। সেই দলের নেতা জিগমি থিনলি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে উদ্যোগী হন। তাঁর লক্ষ্য প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন। ২০১২ সালের জুন মাসে রিও ডি জেনিরোতে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগে জিগমি থিনলি চীনা প্রধানমন্ত্রী জিয়াবাওয়ের সঙ্গে সলাপরামর্শে মিলিত হন। দিল্লি থেকে আগাম সমর্থন না নিয়ে চীনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করায় অসন্তুষ্ট হয় ভারত। এ বছরের জুলাই মাসে ভুটানে জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে ভুটানকে প্রতিবছর কেরোসিন ও রান্নার গ্যাস সরবরাহে যে বার্ষিক অনুদান দেওয়া হতো, ভারত তা বন্ধ করে দেয়। এতে যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়, তার পরিণতিতে ডিপিটিকে বিদায় নিতে হয়, ক্ষমতায় আসে ভারতপন্থী বলে পরিচিত পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি।
বাংলাদেশ ঠিক ভুটান নয়। তবে নানা কারণে ভারতের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা রয়েছে। ভাটির দেশ হওয়ায় অভিন্ন নদীগুলোর সুষম পানিপ্রবাহের জন্য ভারতের ওপর নির্ভর করা ছাড়া আমাদের পথ নেই। বাণিজ্য ঘাটতি, সীমান্ত নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার মতো স্পর্শকাতর প্রশ্নেও দুই দেশের সম্পর্কে তিক্ততা দীর্ঘদিনের। সবাই অবশ্য মানেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুই দেশের সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি ঘটেছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ভারতে প্রশংসিতও হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরার কতিপয় লক্ষণ ধরা পড়েছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, টিপাইমুখ বাঁধ, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট নিয়ে বিতর্ক এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে বাংলাদেশিদের নিহত হওয়ার একটার পর একটা ঘটনা তিক্ততার সৃষ্টি করেছে। ব্যাপারটা এমনই তেতো হয়েছে যে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী সরাসরিই বলে বসেছেন, ভারত বাংলাদেশের প্রতি সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করছে না। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে। 'আমরা ভারতের কাছ থেকেও সৎ প্রতিবেশীর মতো আচরণ আশা করব।'
অভিযোগটা মূলত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের আলাপ-আলোচনার পর ভারত-বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল। কথা ছিল, গত বছর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় সেই চুক্তি সম্পাদিত হবে। সঙ্গে মমতা 'দিদি'ও আসবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসলেন তিনি। এই চুক্তিতে তাঁর রাজ্যের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। অতএব, তা তিনি মেনে নেবেন না।
সম্প্রতি এই দিদি আরেক কাণ্ড করেছেন। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত চিহ্নিতকরণের প্রশ্নে দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে দুই পক্ষের সম্মতিতে একটি খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করা হয়। এই চুক্তির লক্ষ্য দুই দেশের ভেতরে অমীমাংসিত ছিটমহলগুলোর ব্যাপারে একটি চূড়ান্ত ফয়সালা। ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের পরেও ছিটমহল প্রশ্নে এখন পর্যন্ত সেই চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। মমতা বলছেন, এই চুক্তি তিনি মানেন না। কারণ, এ ব্যাপারে তাঁর সরকারের সম্মতি নেওয়া হয়নি।
মনে রাখা দরকার, চুক্তিটি দুটি সার্বভৌম দেশের মধ্যে, বাংলাদেশ ও ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যের মধ্যে নয়। মমতা মানুন বা না মানুন, আমরা জানি, পশ্চিমবঙ্গের পূর্ণ অংশগ্রহণের ভিত্তিতেই সীমান্ত চিহ্নিতকরণের এই খসড়া চুক্তি সম্পন্ন হয়। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া নথি থেকে দেখা যাচ্ছে, দুই বছর আগে ২০১১ সালের আগস্টে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই খসড়া চুক্তিতে তাদের সম্মতির কথা জানায়। এই চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য সচিব নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তাঁর সম্মতিও আদায় করে দেন। ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের কাছে এক চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব সেই সম্মতির কথা জানান। অতএব, চুক্তি অনুমোদনের প্রশ্নে কোনো বিপত্তির আশঙ্কা নেই, সেই বিবেচনা থেকেই আগস্ট মাসে ভারত সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ আইন পরিষদে সেই চুক্তি একটি সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে অনুমোদনের প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু মমতার তৃণমূল কংগ্রেস ও অসম গণপরিষদের প্রতিবাদের মুখে প্রচণ্ড হট্টগোলের সূত্রপাত হলে সেই প্রস্তাবের বিবেচনা মুলতবি রাখা হয়।
এক বিবৃতিতে মমতার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ছিটমহলগুলোর অধিবাসীদের সম্মতি ছাড়া এই চুক্তিতে সম্মত হওয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, এমন কী কারণ ঘটল যে এখনই তড়িঘড়ি করে এই চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে? মমতা হয়তো ভুলে গেছেন, এই চুক্তি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে ৪০ বছর ধরে। খসড়া চুক্তিটি চূড়ান্ত হওয়ার পরে কয়েক বছর কেটে গেছে। ছিটমহলের অধিবাসীদের মতামত জানতে হলে এই সময়ের মধ্যে অনায়াসেই তা সম্ভব ছিল। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে বলে যে যুক্তি তিনি দেখাচ্ছেন, তা যে অতি খোঁড়া, ভারতীয় মহল থেকেই সে কথা বলা হচ্ছে। তাহলে ঠিক কী কারণে মমতা হঠাৎ এমন বেঁকে বসলেন? শুধু কি নিজের 'দিদিগিরি' ফলাতে?
বস্তুত, নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ মাথায় রেখেই মমতা একের পর এক এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যার মাধ্যমে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তাঁর বৈরিতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। নিজের 'স্বাধীনচেতা' ভাবমূর্তি গড়তেই এমন বৈরিতা প্রয়োজন। কেউ কেউ বলেছেন, মমতা শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে সন্তুষ্ট নন। তাঁর লক্ষ্য আরও দূরপ্রসারী। সম্ভবত দিল্লির মসনদ। তিনি হিসাব কষে দেখেছেন, প্রতিবেশীদের প্রতি, তা সে বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা নেপাল—যে-ই হোক, রোষ যত প্রবল দেখানো যাবে, ভারতের জঙ্গি জাতীয়তাবাদীদের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা ততই বাড়বে। প্রতিবেশীদের প্রতি গোস্সা হলো ভারতের অতি ডানপন্থী রাজনীতিকদের তুরুপের তাস। মমতা সেই তুরুপের তাসটি খেলতে চান।
দিল্লির মসনদের প্রতি মমতার যদি মোহ থেকে থাকে, তাতে আমাদের আপত্তির কিছু নেই। আমাদের শুধু আপত্তি প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে নিজের রাজনীতির স্কোর বোর্ড বানানোর চেষ্টায়। নিজের রাজনৈতিক খায়েশ অর্জনের জন্য প্রতিবেশীর ন্যায্য পানির হিস্যা দেবেন না অথবা ছিটমহলের অসহায় নাগরিকদের জিম্মি করে রাখবেন, সেটা মোটেই রাষ্ট্রনায়কোচিত হবে না। দিদিগিরি করে দেশের ভেতরে একদল মানুষের কাছ থেকে হয়তো হাততালি তিনি পাবেন, কিন্তু প্রতিবেশীদের মনে আস্থা জাগাতে পারবেন না। আই কে গুজরালের কাছ থেকে এই সাধারণ সত্যটি তিনি অনায়াসেই জেনে নিতে পারেন।

নিউইয়র্ক
হাসান ফেরদৌস: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

http://www.prothom-alo.com/opinion/article/54642/মমতা_বন্দ্যোপাধ্যায়ের_'দিদিগিরি'




__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___