Banner Advertise

Thursday, October 10, 2013

[chottala.com] মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননার পরিণতি



 
Picture

আবদুল্লাহিল হাদী মু. ইউসুফ

সম্পাদনা : ড. আবু বকর
 


নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননার পরিণতি

মানব জাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ্ যুগে যুগে অসংখ্য নবী এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তাঁরা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য যথা সাধ্য চেষ্টা করেছেন। নবীগণ ছিলেন মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ট মানুষ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, প্রত্যেক নবীই তাঁর স্বজাতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকমের বাধা বিপত্তি, অবমাননার শিকার হয়েছেন।

আল্লাহ তা'আলা বলেন,

﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوّٗا شَيَٰطِينَ ٱلۡإِنسِ وَٱلۡجِنِّ يُوحِي بَعۡضُهُمۡ إِلَىٰ بَعۡضٖ زُخۡرُفَ ٱلۡقَوۡلِ غُرُورٗاۚ وَلَوۡ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُۖ فَذَرۡهُمۡ وَمَا يَفۡتَرُونَ ١١٢ ﴾ [الانعام: ١١٢]

"আর এমনিভাবেই আমরা প্রত্যেক নবীর জন্যে বহু শয়তানকে শত্রুরূপে সৃষ্টি করেছি, তাদের কতক শয়তান মানুষের মধ্যে এবং কতক শয়তান জ্বিনদের মধ্য থেকে হয়ে থাকে, এরা একে অপরকে কতগুলো মনোমুগ্ধকর, ধোঁকাপূর্ণ ও প্রতারণাময় কথা দ্বারা প্ররোচিত করে থাকে, আর আপনার রবের ইচ্ছা হলে তারা এমন কাজ করতে পারত না, সুতরাং আপনি তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যা রচনাগুলোকে বর্জন করে চলুন। [সূরা আল-আন'আম-১১২]

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

﴿ وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوّٗا مِّنَ ٱلۡمُجۡرِمِينَۗ وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ هَادِيٗا وَنَصِيرٗا ٣١ ﴾ [الفرقان: ٣٠] 

"আর এভাবেই আমরা প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের থেকে শত্রু করে দিয়েছি। আর আপনার রবই তো হিদায়াতকারী ও সাহায্যকারী হিসেবে যথেষ্ট"। [সূরা আল-ফুরকান: ৩০]

আর এই ধারাবাহিকতা থেকে আমাদের প্রিয়নবী মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও মুক্ত ছিলেন না। তাঁর উপরও নবুওয়তী জীবনের শুরু থেকে বিভিন্ন রকমের কটুক্তি, অবমাননা এমনকি তাঁর পরিবারের উপরও অপবাদ দেয়া হয়েছে।

মূলত ইসলাম এবং নবীর প্রতি হিংসার কারণেই অমুসলিমরা একাজ করে থাকে।

আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেন,

﴿إِن فِي صُدُورِهِمۡ إِلَّا كِبۡرٞ مَّا هُم بِبَٰلِغِيهِۚ ﴾ [غافر: ٥٦] 

"তাদের অন্তরে আছে শুধু অহংকার, যা সফল হবার নয়। [সূরা গাফির-৫৬]

বাস্তবে হিংসা তাদেরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে, ইসলাম এবং নবীর কোনো ক্ষতিই তারা করতে পারে নি।

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

«ألا ترون كيف يصرف الله عني شتم قريش ولعنَهم، يشتمـــون مُذمَّماً، ويلعنون مُذمَّماً، وأنا محمد»

"তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, কীভাবে আল্লাহ আমাকে কোরাইশদের অবমাননাকর গালি, অভিসম্পাত থেকে পবিত্র রাখেন, তারা আমাকে মুযাম্মামকে (নিন্দিতকে) গালি দেয়, মুযাম্মামকে অভিসম্পাত করে[1], আর আমি মোহাম্মদ (প্রশংসিত)[2]

তারা নবীকে নিয়ে যতই কটুক্তি এবং অবমাননা করেছে আল্লাহ ততই তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন।

আল্লাহ্ বলেন,

﴿ وَرَفَعۡنَا لَكَ ذِكۡرَكَ ٤ ﴾ [الشرح: ٤]   

"আর আমরা আপনার খ্যাতিকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি। [সূরা আশ-শারহ্-৪)।

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযানে বিশ্বব্যাপী মসজিদে মসজিদে তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। মুয়ায্যিন বলছে,

«أشهدُ أن محمداً رسول الله»

(আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্) "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।"

একজন অমুসলিম মনিষি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রশংসায় বলেনঃ

محمد هو النبي الوحيد الذي وُلد تحت ضوء الشمس

অর্থঃ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একমাত্র নবী যার জীবনচরিত সূর্যের আলোর ন্যায় স্পষ্ট।

তাঁর অবমাননাকারীদের অবমাননা থেকে তাঁকে রক্ষার জন্য আল্লাই যথেষ্ট।

আল্লাহ্ বলেন,

﴿ إِنَّا كَفَيۡنَٰكَ ٱلۡمُسۡتَهۡزِءِينَ ٩٥ ﴾ [الحجر: ٩٥] 

"অবমাননাকারীদের জন্য আমরাই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।" [সূরা আল-হিজর-৯৫]।

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা ঘোষণা করেন,

﴿ أَلَيۡسَ ٱللَّهُ بِكَافٍ عَبۡدَهُۥۖ﴾ [الزمر: ٣٦] 

"আল্লাহ্ কি তাঁর বান্দার জন্য কী যথেষ্ট নন?" [সূরা আয-যুমার: ৩৬]

এই আয়াতের তাফসীরে সুদ্দী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যে কেউই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর আনিত বিধান নিয়ে বিদ্রূপ বা অবমাননা করেছে আল্লাহ্ তাকে ধ্বংস করেছেন এবং নির্মম শাস্তি দিয়েছেন।

 যুগে যুগে যারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে অবমাননা করেছে তাদের কেউ রক্ষা পায়নি, আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন, "নিশ্চয়ই যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কষ্ট দেয়, তাঁকে অবমাননা করে, আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিবেন, তিনি তাঁর দ্বীনকে বিজয় করবেন, আর মিথ্যুকদের মিথ্যা রটনাকে মিথ্যায় পরিণত করবেন, যদিও মুসলিমরা তাদেরকে শাস্তি দিতে না পারে।"[3]

পরিণতিঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে অবমাননা করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কখনও কখনও সেটা দুনিয়ার জীবনেও অবমাননাকারীর উপর নেমে আসে, আবার কখনও কখনও সেটা আখেরাতের জন্য বরাদ্দ থাকে।

আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمۡ عَذَابٗا مُّهِينٗا ٥٧ ﴾ [الاحزاب: ٥٧] 

"নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ্ তাদের প্রতি দুনিয়া ও আখেরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।" [সূরা আল-আহযাব: ৫৭]

আর রাসূলকে অবমাননা এবং তাঁকে বিদ্রূপ করার মাধ্যমে তাঁকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়া হয়।

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নাসারা ছিল সে ইসলাম গ্রহণ করল এবং সূরা আল-বাকারা ও আল ইমরান শিখল। সে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট কেরাণীর কাজ করত। সে পুনরায় নাসারা হয়ে গেল এবং বলতে লাগল মোহাম্মদ আমি যা লিখি তাই বলে এর বাহিরে সে আর কিছুই জানে না। এরপর সে মারা গেল, তখন তার সাথীরা তাকে দাফন করল, সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে, তখন নাসারারা বলতে লাগল মোহাম্মদের সাথীরা এই কাজ করেছে কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করেছিল। তখন তারা আরো গভীর করে কবর খনন করে তাকে আবার দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে। তখন তারা বলল এটা মোহাম্মদ এবং তার সাথীদের কাজ; কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করে এসেছিল। তখন তারা আবার আরো গভীর করে কবর খনন করল এবং তাকে দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ আবার বাইরে পড়ে আছে, তখন তারা বুঝল এটা কোনো মানুষের কাজ নয়, তখন তারা তারা লাশ বাইরেই পড়ে থাকতে দিল।[4] (বোখারী ও মুসলিম)

পরিশেষে প্রিয় পাঠক! হতে পারে আজকের এই শ্যাম বাসিল ইয়াহূদী তার আত্ম তৃপ্তির জন্য বা কোনো পক্ষের প্ররোচনায় একাজ করেছে, কিন্তু তাকে নির্মম পরিণতির শিকার অবশ্যই হতে হবে, এ যেন নিজের পায়ে নিজে কুঠার মারা। মুসলিম হিসেবে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ আমাদের অবশ্যই করতে হবে, কিন্তু তা যেন কোনোভাবেই আক্রমনাত্মক না হয়, প্রত্যেকে তার সাধ্য অনুযায়ী লিখনীর মাধ্যমে, বক্তব্যের মাধ্যমে, অন্যথায় মনে মনে এই কাজকে ঘৃণা করার মাধ্যমে।

কিন্তু কোনোভাবেই সীমালঙ্ঘন করে নয়। মুসলিমরা যেন নতুন করে অমুসলিমদের কোনো ষড়যন্ত্র বা ফাঁদে পা না দেয়, তাদেরকে আক্রমন করা বা ক্ষতি করার কোনো সুযোগ কাফেরদের জন্য তৈরী করা সমীচীন হবে না।

আল্লাহ তা'আলার কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, তিনি যেন তাঁর দ্বীন, নবী ও মুসলিমদেরকে হেফাযত করেন।


[1] অর্থাৎ তারা যখন রাসূলকে গালি বা অভিসম্পাত দিত, তখন রাসূলের নাম 'মুহাম্মাদ' ঘৃণাভরে উচ্চারণ করত না। কারণ, মুহাম্মাদ অর্থই প্রশংসিত। প্রশংসিতের নিন্দা করা বিপরীতমুখী কথা, তাই তারা মুহাম্মাদকে 'মুযাম্মাম' বা নিন্দিত শব্দ দ্বারা পরিবর্তন করে রাসূলের বদনামী করত। তখন রাসূল বললেন, দেখ, কিভাবে তারা আমার বদনামী করতে গিয়ে আমাকে বদনামী করতে পারল না, বরং তারা মুযাম্মামের বদনামী করল, মুহাম্মাদের নয়, আর আমি তো মুহাম্মাদ। [সম্পাদক]

[2] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৩৩।

[3] আস-সারেমুল মাসলূল, ২/৫৩৯।

[4] বুখারী, হাদীস নং ৩৬১৭; মুসলিম, হাদীস নং ২৭৮১।


__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___