শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৩, ৪ ফাল্গুন ১৪১৯
জাফর মুন্সীর রক্ত ডাক দিয়ে গেল
স্বদেশ রায়
কার সঙ্গে আজ উপমা দেব? রাজপুতদের দেশপ্রেমের সঙ্গে। সেই হারা বংশী বীর কুম্ভর সঙ্গে যে রানার এক দল সৈন্যর বিরুদ্ধে একা লড়ে শহীদ হয়েছিল শুধু হারা বংশীদের নকল বুদিগড় রক্ষার জন্য? না, তার থেকেও অনেক বড় উপমা আছে এই বাংলাদেশে। ১৯৭১ সালে অনেক বাঙালীকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানী সেনা ও গোলাম আযমের অনুচর রাজাকার, আলবদররা তাকে একটা শর্ত দিয়েছিল, পাকিস্তান জিন্দাবাদ বল, নইলে গুলি করব। ওইসব বাঙালী চিৎকার করে বলেছিল, জয় বাংলা। তারপরে তাদের দেহ পাকিস্তানী সৈন্য ও রাজাকারদের গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গিয়েছিল। তাদের তাজা রক্ত এখন এই বাংলাদেশের মাটিতে, নদীর পানিতে মিশে আছে। মিশে আছে সবুজ ঘাসে। হয়ত এখনও বাতাসে কান পাতলে শোনা যায় সেই জয় বাংলা ধ্বনিটি।
১৯৭১, সে ছিল আমাদের ইতিহাসে আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। সেই সময়কে ভালবেসে আবার যে ২০১৩ ফিরে আসবে কেউ ভাবতে পারিনি। তাই আজ কোন উপমা খুঁজে পাচ্ছি না। কার সঙ্গে উপমা দেব জাফর মুন্সীর। যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবির একটি পোস্টার রক্ষার জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিলেন তিনি। শাহবাগের তরুণরা কী চেতনা জাগিয়েছে এ দেশে। দেশের মানুষকে তারা কেমন করে এমনি বদলে দিল। একজন দরিদ্র লিফটম্যান, যার পেছনে তাঁর স্ত্রী আছেন, সন্তানরা আছে। না, কারও কথা ভাবেনি সে, রবীন্দ্রনাথের নকল বুদিগড় কবিতার নায়ক হারা বংশী বীর কুম্ভর থেকেও বীরত্ব দেখিয়ে জীবন দিলেন জাফর মুন্সী। কুম্ভর হাতে তবু তীর-ধনুক ছিল। কিন্তু জাফর মুন্সী খালি হাতে শুধু একটি পোস্টার রক্ষার জন্য তাঁর প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করে গেলেন, আজ বাংলাদেশে স্বাধীনতার সপক্ষ মানুষের কাছে যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবির একটি পোস্টার একটি জীবনের থেকেও মূল্যবান। আজ এই দাবির কাছে জীবন তুচ্ছ হয়ে গেছে।
জাফর মুন্সীর এই জীবনদানকে ব্যাখ্যা করার মতো কোন ভাষা আমার জানা নেই। সঠিক উপস্থাপন করতে পারব না দেশপ্রেম কোন্ চূড়ায় পৌঁছলে দেশের মানুষের প্রাণের দাবির একটি পোস্টার রক্ষার কাছে নিজের জীবন তুচ্ছ হয়ে যায়। তবে এইটুকু বলতে পারি, জীবনদান যখন অস্ত্র, সশস্ত্রের বিরুদ্ধে যখন অজস্র মৃত্যুতে সশস্ত্র হওয়ার আহ্বান প্রাণে প্রাণে তখন সে দেশপ্রেমের জোয়ার রুখে দেয়ার ক্ষমতা কারও নেই।
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে তরুণরা আন্দোলন শুরু করেছিল। জাফর মুন্সী তরুণ নয়। চল্লিশোর্ধ যুবক। তাঁর পিছুটান থাকার কথা ছিল। না, দেশপ্রেমের কাছে কোন পিছুটান তাঁকে টানতে পারেনি। বরং শাহবাগের তরুণদের তিনি পথ দেখিয়ে গেলেন। প্রজন্ম চত্বর আন্দোলনের প্রথম শহীদ জাফর মুন্সী। জানি না প্রজন্ম চত্বরের তরুণরা, সারাদেশের তরুণরা জাফর মুন্সীর রক্ত ছুঁয়ে কী শপথ নেবে? তবে জাফর মুন্সীর রক্ত কিন্তু এক পদ্মা বা মেঘনা লাল করে দেয়ার মতো শক্তি তাদের দিয়ে গেছে এবং ডাক দিয়ে গেছে এই বাংলার প্রতিটি প্রান্তরে, জাগো বাঙালী জাগো, জেগে উঠে রাজাকারমুক্ত করার এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে এই প্রথম শহীদের রক্ত ছুঁয়ে শপথ নাও। বাংলার মাটিতে আর কোন রাজাকার থাকবে না। শুধু যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি নয় তাদের রক্ষার দাবিতে আজ যারা রাজপথে নামছে, এখন ছলেবলে, অর্থের জোরে কৌশলে মিডিয়াসহ নানা পথে যারা ওই রাজাকারদের পক্ষে কথা বলছে, তাদের একজনও এই বাংলায় থাকলে জাফর মুন্সীর রক্তঋণ শোধ হবে না।
জাফর মুন্সীর রক্ত কিন্তু রক্তের বদলে রক্তের ডাক দিয়ে গেছে এই বাংলায়। জাফর মুন্সীর রক্ত এই বাংলাকে রাজাকারের রক্তশূন্য বাংলা গড়ার ডাক দিয়ে গেছে। প্রজন্ম চত্বরকে এখন জাফর মুন্সীর রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। সেই ঋণ শোধ আর কয়েক রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির ভেতর সীমাবদ্ধ নেই। বাংলাদেশের কোন প্রান্তরে একজন নব্য রাজাকার থাকতে তাদের আর এই যুদ্ধ থামানোর কোন পথ নেই। সেই যুদ্ধের ডাক দিয়ে গেছে জাফর মুন্সী।
তবে এ মুহূর্তে প্রজন্ম চত্বরের তরুণদের কাছে আহ্বান জানাব, তারা যেন সরকারের কাছে, দেশের বিত্তবানদের কাছে আবেদন জানায়, অবিলম্বে জাফর মুন্সীর রেখে যাওয়া দরিদ্র স্ত্রী-সন্তান যাতে বেঁচে থাকতে পারে, তাঁর সন্তানরা যাতে লেখাপড়া করতে পারে তার যাবতীয় ব্যবস্থা এখনই করতে হবে। কারণ আমরা দেখেছি আমাদের ১৯৭১-এর শহীদের সন্তানদের গ্রামেগঞ্জে মানবেতর জীবনযাপন করতে। আমরা ২০১৩-তে এসে আর সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। জাফর মুন্সীর পরিবার জাফর মুন্সীকে হারিয়ে অভিভাবকশূন্য হয়েছে। এখন গোটা জাতি যেন ওই পরিবারের অভিভাবক হয়।
জাফর মুন্সী তোমাকে অভিবাদন। তোমার কফিনে লেখা হোক জয় বাংলা। আর প্রজন্ম চত্বরের স্লোগান হোক, জাফর মুন্সীর পথ ধর, রাজাকার নির্মূল কর। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ডাক দিয়েছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল করার। জাফর মুন্সী ২২ বছর পরে এসে রক্ত দিয়ে সেই ডাক আবার দিয়ে গেলেন।
১৯৭১, সে ছিল আমাদের ইতিহাসে আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। সেই সময়কে ভালবেসে আবার যে ২০১৩ ফিরে আসবে কেউ ভাবতে পারিনি। তাই আজ কোন উপমা খুঁজে পাচ্ছি না। কার সঙ্গে উপমা দেব জাফর মুন্সীর। যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবির একটি পোস্টার রক্ষার জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিলেন তিনি। শাহবাগের তরুণরা কী চেতনা জাগিয়েছে এ দেশে। দেশের মানুষকে তারা কেমন করে এমনি বদলে দিল। একজন দরিদ্র লিফটম্যান, যার পেছনে তাঁর স্ত্রী আছেন, সন্তানরা আছে। না, কারও কথা ভাবেনি সে, রবীন্দ্রনাথের নকল বুদিগড় কবিতার নায়ক হারা বংশী বীর কুম্ভর থেকেও বীরত্ব দেখিয়ে জীবন দিলেন জাফর মুন্সী। কুম্ভর হাতে তবু তীর-ধনুক ছিল। কিন্তু জাফর মুন্সী খালি হাতে শুধু একটি পোস্টার রক্ষার জন্য তাঁর প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করে গেলেন, আজ বাংলাদেশে স্বাধীনতার সপক্ষ মানুষের কাছে যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবির একটি পোস্টার একটি জীবনের থেকেও মূল্যবান। আজ এই দাবির কাছে জীবন তুচ্ছ হয়ে গেছে।
জাফর মুন্সীর এই জীবনদানকে ব্যাখ্যা করার মতো কোন ভাষা আমার জানা নেই। সঠিক উপস্থাপন করতে পারব না দেশপ্রেম কোন্ চূড়ায় পৌঁছলে দেশের মানুষের প্রাণের দাবির একটি পোস্টার রক্ষার কাছে নিজের জীবন তুচ্ছ হয়ে যায়। তবে এইটুকু বলতে পারি, জীবনদান যখন অস্ত্র, সশস্ত্রের বিরুদ্ধে যখন অজস্র মৃত্যুতে সশস্ত্র হওয়ার আহ্বান প্রাণে প্রাণে তখন সে দেশপ্রেমের জোয়ার রুখে দেয়ার ক্ষমতা কারও নেই।
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে তরুণরা আন্দোলন শুরু করেছিল। জাফর মুন্সী তরুণ নয়। চল্লিশোর্ধ যুবক। তাঁর পিছুটান থাকার কথা ছিল। না, দেশপ্রেমের কাছে কোন পিছুটান তাঁকে টানতে পারেনি। বরং শাহবাগের তরুণদের তিনি পথ দেখিয়ে গেলেন। প্রজন্ম চত্বর আন্দোলনের প্রথম শহীদ জাফর মুন্সী। জানি না প্রজন্ম চত্বরের তরুণরা, সারাদেশের তরুণরা জাফর মুন্সীর রক্ত ছুঁয়ে কী শপথ নেবে? তবে জাফর মুন্সীর রক্ত কিন্তু এক পদ্মা বা মেঘনা লাল করে দেয়ার মতো শক্তি তাদের দিয়ে গেছে এবং ডাক দিয়ে গেছে এই বাংলার প্রতিটি প্রান্তরে, জাগো বাঙালী জাগো, জেগে উঠে রাজাকারমুক্ত করার এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে এই প্রথম শহীদের রক্ত ছুঁয়ে শপথ নাও। বাংলার মাটিতে আর কোন রাজাকার থাকবে না। শুধু যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি নয় তাদের রক্ষার দাবিতে আজ যারা রাজপথে নামছে, এখন ছলেবলে, অর্থের জোরে কৌশলে মিডিয়াসহ নানা পথে যারা ওই রাজাকারদের পক্ষে কথা বলছে, তাদের একজনও এই বাংলায় থাকলে জাফর মুন্সীর রক্তঋণ শোধ হবে না।
জাফর মুন্সীর রক্ত কিন্তু রক্তের বদলে রক্তের ডাক দিয়ে গেছে এই বাংলায়। জাফর মুন্সীর রক্ত এই বাংলাকে রাজাকারের রক্তশূন্য বাংলা গড়ার ডাক দিয়ে গেছে। প্রজন্ম চত্বরকে এখন জাফর মুন্সীর রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। সেই ঋণ শোধ আর কয়েক রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির ভেতর সীমাবদ্ধ নেই। বাংলাদেশের কোন প্রান্তরে একজন নব্য রাজাকার থাকতে তাদের আর এই যুদ্ধ থামানোর কোন পথ নেই। সেই যুদ্ধের ডাক দিয়ে গেছে জাফর মুন্সী।
তবে এ মুহূর্তে প্রজন্ম চত্বরের তরুণদের কাছে আহ্বান জানাব, তারা যেন সরকারের কাছে, দেশের বিত্তবানদের কাছে আবেদন জানায়, অবিলম্বে জাফর মুন্সীর রেখে যাওয়া দরিদ্র স্ত্রী-সন্তান যাতে বেঁচে থাকতে পারে, তাঁর সন্তানরা যাতে লেখাপড়া করতে পারে তার যাবতীয় ব্যবস্থা এখনই করতে হবে। কারণ আমরা দেখেছি আমাদের ১৯৭১-এর শহীদের সন্তানদের গ্রামেগঞ্জে মানবেতর জীবনযাপন করতে। আমরা ২০১৩-তে এসে আর সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। জাফর মুন্সীর পরিবার জাফর মুন্সীকে হারিয়ে অভিভাবকশূন্য হয়েছে। এখন গোটা জাতি যেন ওই পরিবারের অভিভাবক হয়।
জাফর মুন্সী তোমাকে অভিবাদন। তোমার কফিনে লেখা হোক জয় বাংলা। আর প্রজন্ম চত্বরের স্লোগান হোক, জাফর মুন্সীর পথ ধর, রাজাকার নির্মূল কর। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ডাক দিয়েছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল করার। জাফর মুন্সী ২২ বছর পরে এসে রক্ত দিয়ে সেই ডাক আবার দিয়ে গেলেন।
শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৩, ৪ ফাল্গুন ১৪১৯
__._,_.___