Banner Advertise

Friday, December 13, 2013

[chottala.com] জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শাসন আমলে (১৯৭২-১৯৭৫) একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী এবং তাদের এই দেশীয় সহযোগীদের যুদ্ধ অপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কার্যক্রমের ইতিহাস



 

 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন আমলে (১৯৭২-১৯৭৫)

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী এবং তাদের এই দেশীয় সহযোগীদের

যুদ্ধ অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কার্যক্রমের ইতিহাস

 

জাতীয় শোক দিবস২০১৩, অকল্যেন্ড, নিউজিল্যেন্ড

 

প্রকৌশলী সফিকুর রহমান অনু

আই,,বি, ফেলো, e-mail: srbanunz@gmail.com

অকলেন্ড, নিউজিলেন্ড

 

প্রাক কথন

২০০৯ সালে পুনরায় উনিশশো একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়  যুদ্ধ অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কার্যক্রমের   প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার  পর প্রশ্ন তোলা হচ্ছে - বঙ্গবন্ধু নাকি সব যুদ্ধাপরাধীর মাফ করে দিয়েছিলেন! তারা আরো বলেযে, ভারতের নিকট আটক থাকা এবং পরে ১৯৭৪ সালে ছেড়ে দেওয়া ১৯৫ জন পাকিস্তানীই   প্রকৃত  যুদ্ধ অপরাধী!  পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে ছেড়ে দিয়ে  ৪০ বছর পর  স্থানীয় যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধীঅপরাধীদের  বিচার করা সম্ভব নয়।

 

এই বিষয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে সৃস্ট বিভ্রান্তি গুলি দূর করে -  কেন এবং কিভাবে সেই ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী ছাড়া পেয়েছিল এবং তাদের দেশীয় সহযোগীদের ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধ অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধেরবিচারের  ধারাবাহিকতা   যৌক্তিকতা  উদ্ঘাটনই এই উপস্থাপনার উদ্দেশ্য   উপস্থাপনাটি তথ্যভিত্তক রাখার জন্য  বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক আর্ন্তজাতিক পত্র-পত্রিকায় ১৯৭১ থেকে  ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রকাশিত সংক্রান্ত খবরাখবর, তথ্য  এবং স্বাক্ষরিত বিভিন্ন চুক্তিপত্র, দেশীয় সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীদের এই বিষয়ের উপর  লিখিত প্রবন্ধ, মন্তব্য, উপ-সম্পাদকীয়, কলাম  থেকে তথ্য উপাত্য নিয়ে  প্রকৃত  ঘটনাপ্রবাহ  গুলি  তুলে ধরা হয়েছে।  উল্লিখিতঅধিকাংশ খবরই যদিও দেশি-বিদেশি  একাধিক পত্রিকাতে ছাপা হয়েছিল। তবু ঘটনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য এখানে বাংলাদেশের প্রধান মূল ধারার দৈনিকে প্রকাশিত খবর, তথ্য , দেশীয় বুদ্ধিজীবীদের প্রবন্ধ    নিউ ইয়র্কটাইমস-এর খবরই বেশি উদ্ধৃত করা হয়েছে।

 

 

যুদ্ধ বন্দীদের যুদ্ধ  অপরাধীদের স্থানান্তর তাদের বিচারের কার্যক্রম:

  • প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ২০শে ডিসেম্বর ১৯৭১ ভারতীয় কতৃপক্ষের সাথে যুদ্ধ বন্দীদের   যুদ্ধ  অপরাধীদের স্থানান্তর তাদের বিচারের কার্যক্রমের ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করেন

  • বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একেএম কামরুজ্জামান ২৪শে ডিসেম্বর ১৯৭১ ঘোষণা করেন যে বাংলাদেশ ইতমধ্যে ৩০ জন শীর্ষস্থানীয় পাকিস্তানী সরকারী কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে এবং গনহত্যায় সহযোগিতার জন্যঅচিরেই তাদের বিচার হবে।

  • ২৬শে ডিসেম্বরে ১৯৭১ এক সংবাদ সম্মেলনে একাত্তরের গনহত্যার শিকার সাতজন বাংলাদেশী কর্মকর্তার পরিবার ভারতের কাছে আবেদন জানান যেন ভারত দোষী পাকিস্তানীদের বিচারে বাংলাদেশকে সহায়তা করে।

  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কারামুক্তির পর ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারী দেশে ফিরেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেন।

  • ১৭ই - ১৯শে মার্চ ১৯৭২ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে  আটক পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের  বিচারের পদ্ধতি তদন্ত কার্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ভারতের সাহায্য কামনা করেন

  • বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় এবং পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য দুইস্তর বিশিষ্ট (স্থানীয় পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের) পৃথক বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। দুইস্তর বিশিষ্ট বিচার পরিকল্পনা পেশ করে সরকার যেখানে কিছুশীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর বিচারে দেশি-বিদেশি জুরি নিয়োগ; এবং অন্যদের জন্য শুধু দেশীয় জুরি নিয়োগের সীদ্ধান্ত হয়।

 

স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করন গ্রেফতার এবং বিচার প্রক্রিয়া :

স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ২৪শে জানুয়ারী ১৯৭২ সালে 'বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইবুন্যাল) অধ্যাদেশ ১৯৭২' জারি করা হয়।

২৮শে মার্চ ১৯৭২ সালে সারাদেশে দেশীয় সহযোগীদের যুদ্ধ অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ৭৩টি ট্রাইবুনাল করা হয়

১৯৭৩ সালের  নভেম্বর পর্যন্ত:

         ৩৭,৪৭১ জন কে গ্রেফতার করা হয়

         ,৮৪৮ জনের বিচার কার্য সম্পন্ন হয়

         প্রায় ,০০০ জনের বিরুদ্ধে চার্জ শীট দাখিল করা হয়

         ১৯ জনের মৃত্যদন্ড সহ ৭৫২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড সহ বিভিন্ন সাজা দেওয়া হয়

         ৩৩ জন পলাতক রাজাকার-দালালের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়

 

প্রথম যুদ্ধাপরাধীদের রায় :

         ১০ই জুন ১৯৭২, কুষ্টিয়ার রাজাকার রাজাকার চিকন আলীর ফাসী

 

VIP যুদ্ধাপরাধীদের সাজা এবং পাকিস্তান সরকারের উস্মা:

         সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডাক্তার মালেকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয় ২০ সে নভেম্বর, ১৯৭২ সালে।

বর্তমানে গোলাম আজমের ৯০ বছরের কারাদন্ডের রায়ের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দল ব্যাক্তি যেমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল, ঠিক তেমনি পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দালাল ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্দের সময়পূর্ব পাকিস্তানের দালাল গভর্নর ডাক্তার মালেকের যাবজীবন কারাদন্ড হওয়ার পর তদানিন্তন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এই শাস্তি রায়ের ব্যাপারে উস্মাও প্রকাশ করে

         বর্তমানে BNP নেতা মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন শাজাহানের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয় ১২ই জানুয়ারী , ১৯৭৩ সালে।

         বর্তমানে জামাত নেতা মুক্তিযুদ্দের সময় পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রী ইউসুফের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয় ১০ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৩ সালে।

 

বিভিন্ন প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা দলের এই বিচারের বিরোধিতা "দালাল আইন" বাতিলের দাবী

মাউলানা ভাসানী, অলি আহাদ, আতাউর রহমান খান সহ অনেক সিনিয়র প্রখ্যাত  রাজনৈতিক নেতা তাদের দল সমূহ যুদ্ধ অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কিছু দিন পরেই - এইবিচারের বিরোধিতা শুরু করে। তারা  এই বিচারের জন্য যে নতুন আইন (দালাল আইন) প্রবর্তন করা হয়েছিল - তাও বাতিলের জন্য আন্দোলন শুরু করে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে আলটিমেটামও পর্যন্ত দেয়! (১৯৭২ এর ৫ই ডিসেম্বরের দৈনিকবাংলা )

 

রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়াও আতাউর রহমান খান অন্যান্ন্য আইনজীবীগণ যুদ্ধ অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের দালালদের আইনী সহযোগিতা পর্যন্ত দেন!

 

১৯৭৩ সালের ৩০ শে  নভেম্বর বঙ্গবন্ধু সরকারের শর্তস্বাপেক্ষে  সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা:

১৯৭২-৭৩ সালে প্রায় ,০০,০০০ চোরাচালানীকে গ্রেফতার করে জেলে ঢুকানো হয়!

তাই প্রায় ৩৭,০০০ গ্রেফতারকৃত দালাল-রাজকারদের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান (জেলখানা), পুলিশ  বিচার করার জন্য বিচারক  অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট -  না থাকার দারুন এবং  অনেকের বিরুদ্ধে  কোন গুরুতর অভিযোগ (হত্যা,ধর্ষণ, আগুন দেওয়া, লুটপাট ইত্যাদি) না থাকা, দেশীয় আন্তর্জাতিক চাপে ১৯৭৩ সালের ৩০ শে  নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর সরকারের শর্তস্বাপেক্ষে, হত্যা, ধর্ষণ, আগুন দেওয়া, লুটপাট এর মত গুরতর অপরাধে জড়িতরা ছাড়া - বাকীদেরকেসাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করে!

এতে প্রায় ২৫,৭১৯ জন রাজকার-দালাল মুক্তি পায়!

তারপরেও প্রায় ১১,০০০ রাজাকার, আল বদর , দালাল জেলে ছিল, বিচার চলছিল!

 

সবচেয়ে বড় রায়:

  • ১৪ জনের ফাসির রায় হয় ১লা জুলাই ১৯৭৪ (দৈনিক পূর্বদেশ, ২রা  জুলাই ১৯৭৪)

 

সর্বশেষ রায়:

  • ১৯শে এপ্রিল, ১৯৭৫, দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড (দৈনিক সংবাদ, ২০শে  এপ্রিল ১৯৭৫)

 

উপরের এই দুটি রায় প্রমান করে যে, ১৯৭৩ সালের নভেম্বরে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও গুরতর অপরাধে জড়িতদের যুদ্ধ অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কার্যক্রম, ১৯৭৫ সালেও চলছিল!

বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭৩ সালের নভেম্বরে সাধারণ ক্ষমা  ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কার্যক্রম বন্ধ করেন নাই!

 

পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু

  • ১৭ই - ১৯শে মার্চ ১৯৭২ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে  আটক পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের  বিচারের পদ্ধতি তদন্ত কার্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ভারতের সাহায্য কামনা করেন

  • আর্ন্তজাতিক চাপ এড়াতে এসময় ভারত শুধু সেইসব পাকিস্তানী সৈন্যদের হস্তান্তর করতে রাজী হয় যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে 'প্রাইমা ফেসি কেস' (prima facie case) হাজিরকরতে পারবে।

  • এসময় স্থানীয় পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত করন তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ চলতে থাকে।

  • ২৯ শে মার্চ ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সহ, জুলফিকার আলী ভুট্টো, জেনারেল টিক্কা খান, লে. জেনারেল কে নিয়াজী এবং রাও ফরমান আলী-সহ ১১০০ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সরকারী পরিকল্পনা ঘোষনাকরা হয়।

  • ১৯৭২ সালের ১৪ই জুন ভারত সরকার নিয়াজীসহ প্রাথমিকভাবে ১৫০ জন যুদ্ধবন্দীকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের নিকট হস্তান্তরে সম্মত হয়। ইয়াহিয়া, ভুট্টো  টিক্কা খানের পরে নাম টেকনিকাল কারণে বাদ দেওয়া হয়!

  • ইতমধ্যে বাংলাদেশ আরো ৪৫ জন পাকিস্তানী সৈন্যের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ যোগাড় করায় অভিযুক্ত পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর সংখ্যা ১৯৫- উপনীত হয়।

  • ইন্দীরা গান্ধী জুলফিকার আলী ভুট্টর সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ১৯শে জুন ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পুনরায় যুদ্ধাপরাধীদের এই  বিচারের কথা স্মরন করিয়ে দেন। ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের ওয়েবসাইটে সিমলার সম্পূর্ণ চুক্তিপত্রটি সংরক্ষিত থাকলেও, এই সিমলা চুক্তিতেই যুদ্ধাপরাধীর বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে বলে অনেকেই ভুল করে থাকেন। মুলত কাশ্মীর সীমান্তসহ দ্বিপাক্ষিক কিছু বিষয়েই ২রা জুলাই ১৯৭২ সালে ভারত-পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে যুদ্ধাপরাধী বা বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন বিষয়ই উল্লেখ করা হয়নি।

  • ১৫ই জুলাই ১৯৭৩ বাংলাদেশ সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ৪৭() ধারা সংযুক্ত করা হয় যেখানে "গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্যকোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক, ফৌজদারীতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান" অর্ন্তভুক্ত করা হয়।

  • ২০ শে জুলাই ১৯৭৩ ঘোষণা করা হয় 'আর্ন্তজাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩' যার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধের জন্য স্থানীয় পাকিস্তানী উভয় ধরনের যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পথ সুগম হয়।

 

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনৈতিক ভাষণ, সংবিধানের ধারা ট্রাইব্যুনাল আইনে আর্ন্তজাতিক ন্যুরেমবার্গ ট্রাইবুনালের (সি) ধারা অনুসরন করে যুদ্ধের সময় সাধারন জনগনের উপর পরিচালিত হত্যা-নির্যাতন বিষয়ক যুদ্ধাপরাধবোঝাতে 'মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ' শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

 

পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ভুট্টোর চরম বিরোধিতা - চক্রান্ত -ষড়যন্ত্র এবং ব্লেক মেলিং এর চেষ্টা:

   অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অন্যান্য যুদ্ধবন্দীর প্রত্যাবাসন অচলাবস্থা

   পাকিস্তানে আটকা পড় বাঙালী নির্যাতন জিম্মি

 

যুদ্ধের সময় যে লক্ষ বাঙালী পাকিস্তানে আটকা পড়ে, পাকিস্তান সরকার তাদেরকে জিম্মি করে বাংলাদেশের বিচার বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করে। প্রায় ১৬ হাজার বাঙালী সরকারী কর্মকর্তা যারা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানে আটকা পড়ে এবংপরবর্তীতে চাকুরিচ্যুত হয়, তাদের পাকিস্তান ত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অনেক কর্মকর্তাকে ক্যাম্পে আটক রাখার কারনে, বাংলাদেশ সরকার তখন আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদও জানায়।

এসময় পাকিস্তান সরকার পলায়নপর বাঙালীদের ধরিয়ে দেবার জন্য মাথাপিছু এক হাজার রুপি পুরষ্কার ঘোষনা করে।

ভুট্টো যে শুধু হুমকিই দিচ্ছেন না, তা প্রমাণের জন্য পাকিস্তান ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীর 'বদলি জিম্মি' হিসেবে ২০৩ জন শীর্ষ বাঙালী কর্মকর্তাকে বিচারের জন্য গ্রেফতার করে।

 

নিরাপরাধ বাঙালির বিচার, ভুট্টোর প্রতিহিংসাপরায়ণতা বাঙালীদের বিচারের হুমকির প্রতিবাদ:

বাংলাদেশ যদি অভিযুক্ত পাকিস্তানীদের বিচার করে, তাহলে ভুট্টো পাকিস্তানে আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের একই রকম ট্রাইবুনালে বিচার করবেন বলে হুমকি দেয়। ১৯৭৩ সালের ২৭শে মে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে ভুট্টো বলেন--

"(বাঙালীদের) এখানে বিচার করার দাবী জনগন করবে। আমরা জানি বাঙালীরা যুদ্ধের সময় তথ্য পাচার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সুনিদির্ষ্ট অভিযোগ আনা হবে। কতজনের বিচার করা হবে, তা আমি বলতে পারছি না"

ভুট্টো দাবী করেন যে, বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানীর সৈন্যদের বিচার করে, তাহলে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ক্যু' মাধ্যমে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সরকারের পতন ঘটাবে এবং দুই দেশের পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রনের বাইরে নিয়ে যাবে। ভুট্টোদাবী করেন, এই চক্রান্তের জন্য ইতমধ্যেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

ভুট্টোর দাবী প্রত্যাখ্যান করে ১৯৭৩ সালের ৭ই জুন এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বলেন--

"মনবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ভোলা সম্ভব নয়, এই হত্যা, ধর্ষণ, লুটের কথা জানতে হবে। যুদ্ধ শেষের মাত্র তিন দিন আগে তারা আমার বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করেছে। তারা প্রায় লক্ষ নারীকে নির্যাতন করেছে-এমনকি ১৩ বছরের মেয়েকেও।আমি এই বিচার প্রতিশোধের জন্য করছি না, আমি এটা করছি মানবতার জন্য"

বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে বাঙালীদের বিচারের হুমকির প্রতিবাদে বলেন, "এটা অবিশ্বাস্য অমানবিক, এই মানুষগুলো ডাক্তার, বিজ্ঞানী, সরকারী সামরিক কর্মকর্তা যারা বাংলাদেশে ফেরত আসতে চায়, এরা কী অপরাধ করেছে? এটা ভুট্টোরকী ধরনের প্রতিহিংসাপরায়ণতা?"

 

ভারতের নিরাপত্ত্যা অর্থনৈতিক সমস্যা আর্ন্তজাতিক অভ্যন্তরীণ দাবীর মুখে বিচারে অনীহা:

প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানী বন্দীর ভরন-পোষণ এবং নিরাপত্তা বিধান - ভারতের জন্যও একটি সমস্যা হয়ে ওঠে। ইতমধ্যে ভারতের বন্দি শিবিরগুলিতে একাধিকবার বিদ্রহের ঘটনা ঘটে।

এদিকে পাকিস্তানী সৈন্যদের বিচারে চীনের কুটনৈতিক সামরিক চাপ অনাগ্রহ ভারতের জন্যও সমস্যার কারন হয়ে দাড়ায়। ফলে আর্ন্তজাতিক অভ্যন্তরীণ দাবীর মুখে ভারত দ্রুত পাকিস্তানী বন্দীদের ছেড়ে দেবার জন্য উৎসুক হয়েওঠে। এসময় ভারত তার বিচার-বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে বাংলাদেশকে জানিয়ে দেয় যে, 'এই বিচার প্রক্রিয়া উপমহাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে'

ইতমধ্যে চিহ্নিত ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর বাইরে যেন আর কোন পাকিস্তানী সৈন্যের বিচারে বাংলাদেশ আগ্রহী না হয়, ভারত সেজন্য চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখে। ১৯৭৩ সনের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় বিশেষ কুটনীতিক পি এন হাস্কর যখনঢাকা সফরে আসেন, তখন ভারতীয় প্রভাবশালী দৈনিক 'দি স্টেটসম্যান'-এর এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, "বাংলাদেশকে যে আরো সহনশীলতা রাজনৈতিক নমনীয়তা প্রদর্শন করতে হবে, এই কথাটা যেন হাস্কর সাহেব নম্র কিন্তু জোরালোভাবে বাংলাদেশকে জানিয়ে দেন"

 

পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টা:

বাংলাদেশের রাজনৈতিক কুটনৈতিক অবস্থান এবং প্রচেষ্টা সবসময়ই ছিল অভিযুক্ত পাকিস্থানী যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তিদানের বিপক্ষে, কিন্তু অন্যান্য পাকিস্থানী যুদ্ধবন্দীর প্রত্যাবাসনের বিপক্ষে নয়।

১৯৫ জন  অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের  বিচারের ব্যাপারে বাংলাদেশের এই দৃড় অবস্থানের কারণে  পাকিস্থান  সরকার তার রাজনৈতিক অস্তিত্বের কারণে (সামরিক কুর  মাধ্যমে ক্ষমতা চ্যুতি সহ গণ অভ্যুথান ) পাকিস্তান একাধিকবারবাংলাদেশকে এড়িয়ে (যেমন শিমলা বৈঠক) দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টা চালায়, যেন ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক ভাবেই বন্দী মুক্তি সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের বাধার কারনে তা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের যুক্তি ছিল যে, ঐসবপাকিস্তানী সৈন্য ভারত-বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্নসমর্পণ করেছে এবং বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া ভারত তাদের মুক্ত করতে পারে না।

 

জাতিসংঘে চীনের ভেটো:

১০ই আগস্ট ১৯৭২ এক সংবাদ সম্মেলনে ভুট্টো বলেন, "বাংলাদেশ ভেবেছে যে আমাদের বন্দীদের মুক্ত করার ব্যপারে তাদের ভেটো ক্ষমতা আছে, কিন্তু ভেটো আমাদের হাতেও একটি আছে"

পরবর্তীতে ভুট্টো নিশ্চত করেন যে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক ভাবেই চীনকে অনুরোধ করেছে যেন জাতিসংঘের সদস্যপদের জন্য বাংলাদেশের আবেদনে চীন ভেটো দেয়। সদ্যস্বাধীন একটি দেশের উন্নয়ন বৈদেশিক সহযোগিতা লাভেজাতিসংঘের সদস্যপদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

২৫শে আগস্ট পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক বাংলাদেশের সদস্যপদের বিপক্ষে চীন নিরাপত্তা পরিষদে তার প্রথম ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে। জাতিসংঘের মতন একটি আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে বঞ্চিত হতে হয় মুলত: একটি বর্বরগনহত্যার বিচার দাবী করার কারনে

কিন্তু এত কিছুর পরেও বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীতে অটল থাকে।

 

পাকিস্তানের বিকল্প প্রস্তাব:

এক কিছুর পরেও যখন বাংলাদেশ সরকার ১৯৫ জন পাকিস্তানীর বিচারের বিষয়ে অনড় থাকে, তখন ১৯৭৩-এর এপ্রিলে পাকিস্তান সরকার একটি বিকল্প প্রস্তাব দেয়। পাকিস্তান এ্যাফেয়ার্স পত্রিকার ১৯৭৩ সালের মে প্রকাশিত এই প্রস্তাবেবলা হয়-

"অভিযুক্ত অপরাধ যেহেতু পাকিস্তানের একটি অংশেই ঘটেছে, সেহেতু পাকিস্তান তার যে কোন যুদ্ধবন্দীর বিচার ঢাকায় অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করে। কিন্তু পাকিস্তান নিজে "জুডিশিয়াল ট্রাইব্যুনাল" গঠন করে এসকল ব্যক্তির বিচারে আগ্রহীযা আর্ন্তজাতিক আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে।"

 

এমতাবস্থায়, পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের যদি প্রত্যাবাসন করতেই হয়, তবে বাংলাদেশের কয়েকটি  প্রধান বিবেচ্য বিষয় যেন ওই চুক্তিতে  নিশ্চিত করা হয়, সেই ব্যাপারে  বাংলাদেশ কুটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে এবং প্রস্তুতি নিতেথাকে। এজন্য বাংলাদেশ ওই চুক্তিতে ভারত হতে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের হস্তান্তরের আগে অন্তত তিনটি বিষয় নিশ্চিত করা হয়--

. বাংলাদেশের নিকট যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তানের নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা (দু: প্রকাশ নয়);

. ভবিষ্যতে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ খোলা রাখা; এবং

. চীন, সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাকিস্তান যে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারনা অব্যাহত রেখেছে, তার অবসান।

 

১৯৭৩ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর, দুই দেশের আটক লোকদের প্রত্যাবাসন শুরু:

অবশেষে দীর্ঘ আলোচনার পর বাংলাদেশ-ভারতের 'যুগপৎ প্রত্যাবাসন' প্রস্তাব মেনে নিয়ে পাকিস্তান ২৮শে আগস্ট ১৯৭৩ দিল্লিতে ভারতের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশের সম্মতিতে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অবশেষেপাকিস্তান ভারতে প্রায় দুই বছর ধরে আটক 'প্রায়' সকল বাঙালী পাকিস্তানী বন্দীর মুক্তি তরান্বিত করে। ১৯৭৩ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর শুরু  এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার প্রথম সপ্তাহেই ১৪৬৮ জন বাঙতবে বাংলাদেশের দাবী আপত্তিরমুখে ১৯৫ জন অভিযুক্ত পাকিস্তানীকে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়। দিল্লি চুক্তিতে সীদ্ধান্ত নেয়া হয় যে বাংলাদেশ পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে ১৯৫ জন অভিযুক্ত পাকিস্তানীর বিষয়টির নিষ্পত্তি করবে। তবে পাকিস্তানও তার ১৯৫ জনপাকিস্তানীকে ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত দুইশতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে পণবন্দী হিসেবে এই প্রত্যাবাসনের বাইরে রেখে দেয়।

পাকিস্তানের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের অস্বীকৃতি স্বীকৃতি নাটকের সমাপ্তি

পাকিস্তানের সম্পদ দেনার বন্টনসহ বাংলাদেশ-পাকিস্তানের অমীমাংসীত বিষয়গুলি নিয়ে মুজিব-ভুট্টো  বৈঠকে দুই দেশই আগ্রহ প্রকাশ করে।

তেল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নিয়ে ২২-২৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৪ সনে লাহোরে ইসলামিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের ক্ষণ ধার্য হয়। মুসলিম জনগোষ্ঠীপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অংশগ্রহনে আরব দেশগুলির আগ্রহের প্রেক্ষিতে ভুট্টো বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবর রহমানকে আমন্ত্রণ জানাতে রাজী হন। কিন্তু স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান হিসেবে আমন্ত্রণ না করে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পূর্বাঞ্চলের মুসলিম জনগোষ্ঠীর নেতা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর সীদ্ধান্ত হয়। বঙ্গবন্ধুর সরকারতা দৃড় ভাবে  প্রত্যাখান করে

বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিব শর্ত দেন যে, পাকিস্তানের স্বীকৃতি ব্যতীত কোন আলোচনা হবে না।

অন্যদিকে ভুট্টো শর্তদেন যে, আলোচনার পর স্বীকৃতি দেয়া হবে।

বিষয়ে ভারত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে রাজি করানোর জন্য উদ্যোগী হলে বঙ্গবন্ধু বলেন, "চীনের ভেটো ব্যবহার করে পাকিস্তান বাংলাদেশকে ব্ল্যাকমেইল করেছে। ফলে স্বীকৃতির বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান আরো শক্ত হয়েছে। প্রথমেস্বীকৃতি, তারপর আলোচনা।"

১০ই জুলাই ১৯৭৩ সনে পাকিস্তানের সংসদ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য ভুট্টোকে শর্তসাপেক্ষ ক্ষমতা প্রদান করে।

এদিকে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদম মালিক, যিনি বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় ভুমিকা রাখছিলেন, এক স্বাক্ষাৎকারে বলেন যে, বাংলাদেশ ১৯৫ পাকিস্তানীর একটি 'সন্তোষজনক' সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে যা পাকিস্তানের স্বীকৃতিপ্রদানকে সহজ করবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিব স্বীকৃতির আগে এমন কোন আশ্বাস দেবার কথা প্রত্যাখ্যান করেন।

অবশেষে ইসলামিক সম্মেলনের একদিন আগে সম্মেলনের সাধারন সম্পাদক হাসান তোহামিসহ উচ্চপদস্থ একটি প্রতিনিধিদল ১৯৫ পাকিস্তানীর বিষয়ে শেখ মুজিবকে রাজী করানোর জন্য ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৪ সালের ২১শেফেব্রুয়ারী, সম্মেলনের আগের রাতে, প্রতিনিধিদলটি ঢাকার উদ্দেশ্য যাত্রা করেন যেখানে কুয়েত, লেবানন সোমালিয়ার তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আলজেরিয়া, সেনেগাল প্যালেস্টাইনের প্রতিনিধিবৃন্দ যোগদেন। এদিকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলিরমধ্যে প্রধান দাতা দেশ হিসেবে পরিচিত মিশর, সৌদি আরব এবং ইন্দোনেশিয়া অবিলম্বে সমস্যা সমাধানের জন্য উভয় দেশের উপর চাপ প্রয়োগ শুরু করে।  অবশেষে ২২শে ফেব্রুয়ারী সম্মেলনের শুরুতে লাহোরে অবস্থিত টেলিভিশনস্টুডিওতে দেয়া বক্তৃতায় ভুট্টো বলেন-

"আল্লাহর নামে এবং এদেশের জনগনের পক্ষথেকে আমি ঘোষণা করছি যে, আমরা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিচ্ছি।আমি বলছি না যে এটি আমি পছন্দ করছি, আমি বলছি না যে আমার হৃদয় আনন্দিত। এটি আমার জন্য একটি আনন্দেরদিন নয়, কিন্তু বাস্তবতাকে আমরা বদলাতে পারিনা" 

তবে ১৯৫ পাকিস্তানীর বিচার ত্যাগ করার বিষয়ে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত কোন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এমন কোন দাবী করা থেকে তিনি বিরত থাকেন। শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিশ্রুতি ছাড়াই পাকিস্তানের স্বীকৃতি আদায়ে সমর্থ হনবঙ্গবন্ধু!

অবশেষে ১০ই এপ্রিল ১৯৭৪ সনে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি শর্ত স্বাপেক্ষে ১৯৫ পাকিস্তানীর যুধ অপরাধীদের পাকিস্থানে প্রত্যাবর্তন:

আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান, ২৪শে মার্চ ১৯৭৪, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের দুই দিন আগে, পাকিস্তানে জিম্মি সর্বশেষ ২০৬ জন বাংলাদেশী নাগরিককে মুক্তি দেয়া হয়।

তবে, পাকিস্তানের কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনাসহ একাধিক কারনে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১৯৫ পাকিস্তানীর যুধ অপরাধীদের প্রত্যাবাসন কিছুদিন আটকে রাখে। সমস্যা সমাধানের সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ১৯৭৪ সনের এপ্রিলে দিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীপর্যায়ের একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠানের ঘোষনা দেয়া হয়।

৫ই এপ্রিল ১৯৭৪ সনে শুরু হওয়া ত্রিপক্ষীয়  বৈঠকে কামাল হোসেন, আজিজ আহমেদ সেরওয়ান সিং যথাক্রমে বাংলাদেশ, ভারত পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেখানে এপ্রিল বাংলাদেশ ঘোষনা করে যে,

  পাকিস্তান যদি তার একত্তরের কৃতকর্মের জন্য জনসম্মুখে ক্ষমাপ্রার্থনা করে'

  পাকিস্থানে  ১৯৫ পাকিস্তানী যুধ অপরাধীদের বিচার করবে এবং

  বিহারি প্রত্যাবাসনসহ পাকিস্তানের সম্পদ বন্টনে রাজি হয়,

 

তাহলেই শুধু ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর পাকিস্থানে প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাবাসন সুযোগ দেওয়া হবে।

পাকিস্তান এই ভাবে সম্মতি জানায় যে, 'সম্পদ বন্টনহলে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আর্ন্তজাতিক দেনাও গ্রহন করতে হবে। ভুট্টো অনানুষ্ঠানিক ভাবে একাধিকবার দু: প্রকাশ করেছেন, সেহেতু ক্ষমা চাইবার বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতেপারে। তারা পাকিস্তানের প্রচলিত আইনে পাকিস্থানে  ১৯৫ পাকিস্তানী যুধ অপরাধীদের বিচার করবে

অবশেষে ১০ই এপ্রিল ১৯৭৪ সনে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পন্ন হয় যার মাধ্যমে ১৯৫ পাকিস্তানী বন্দীর পাকিস্থানে প্রত্যাবর্তনের  বিষয়টি মিমাংসা হয়।

 

পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনা:

১১ই এপ্রিল দি নিউ ইয়র্ক টাইমস- সংক্রান্ত খবরের শিরনাম ছিল

"বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমাপ্রার্থনা" ("Pakistan Offers Apology to Bangladesh")

ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ১৩ ধারায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে উল্লেখ করা হয় যে-

"পাকিস্তানের ঐসব বন্দী যে মাত্রাতিরিক্ত বহুধা অপরাধ করেছে, তা জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবনা এবং আর্ন্তজাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গনহত্যা হিসেবে চিহ্নত; এবং এই ১৯৫জন পাকিস্তানী বন্দী যে ধরনের অপরাধ করেছে, সেধরনের অপরাধের অপরাধীদের দায়ী করে আইনের মুখোমুখী করার বিষয়ে সার্বজনীন ঐকমত্য রয়েছে"

পাকিস্তান তার পূর্বের কথা অনুযায়ী অভিযুক্ত আসামীদের নিজ দেশে বিচার করবে এই প্রত্যাশায় বাংলাদেশ 'ক্ষমাসুলভ দৃষ্টকোন' (clemency) থেকে ১৯৫ পাকিস্তানীর বিচার ঢাকাতেই করতে হবে, এমন দাবী থেকে সরে আসে। তবেবাংলাদেশ লিখিত ভাবে পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনাও আদায় করে নেয়। 

 

ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ১৪ নং ধারায়ও মন্ত্রীদের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়-

"স্বীকৃতিদানের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং অতীতের ত্রুটি ভুলে যাবার জন্য আহ্বান করেছেন(appealed to the people of Bangladesh to forgive and forget)"

 

উপসংহার :

ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর পর্যালোচনায় এটি নিশ্চিত ভাবে প্রমাণিত যে, পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি খুব সহজে হয়নি এবং এবিষয়ে বাংলাদেশের সবোর্চ্চ প্রচেষ্টা ছিল। স্বাধীনতা উত্তর বঙ্গবন্ধুর সরকার যখন নাজুক ওবিরূপ অর্থানৈত্ক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক পরিস্তিতির মধ্যেও বাংলাদেশে  ১৯৭১ এর গনহত্যায়, ধর্ষণ, অগ্নিকান্ড লুটপাটে  জড়িত স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছিল এবং পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আপ্রাণ চেষ্টা করছিল,তখন পাকিস্তানী সরকার অনৈতিক ভাবে --

   পাকিস্থানে আটক নিরীহ বাঙালিদের জিম্মিকরে,

   তাদের  দেশী বিদেশী  দালাল-এজেন্টদের মাধ্যমে বিভিন্ন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র  করে,

   চীনের ভেটোর মাধ্যমে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ থেকে বঞ্চিত রেখে

   সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বহুমুখী আর্ন্তজাতিক চাপের মধ্যে বাংলাদেশকে  রেখে

 

৯৫ জন চিহ্নিত পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীকে ভারতীয় বন্দীদশা থেকে তাদের দেশে বিচারের  কথা বলে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

কৌতুহলের বিষয় হলো যে, উনিশশো পচাঁত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জেনেরেল জিয়ার প্রভাবাধীন সামরিক সরকার ১৯৭৫ এর শেষ দিকে দালাল আইন বাতিল এবং ১৯৭৬-১৯৭৭ সালে এবং তার পরে অন্যান্য অনেক আইনি এবংসংবিধানিক পরিবর্তন অনলেও - তারা সংবিধানের ৪৭() ধারা অথবা 'আর্ন্তজাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩' বাতিল করেনিযা 'সহায়ক বাহিনীর সদস্য' অর্থাৎ স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পথ উন্মুক্ত রেখেছে!

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর বর্তমান সরকার কিছু সংশোধনী সহ এই আইনের মাধ্যমেই স্থানীয় মানবতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কর্জ চালিয়ে যাচ্ছে!

 

সত্য সত্যই এবং সত্য প্রকাশিত হবেই!

 

জয় বাংলা

জয় বঙ্গবন্ধু

 

প্রকৌশলী সফিকুর রহমান অনু

আই,,বি, ফেলো, অকলেন্ড, নিউজিলেন্ড

E-mail: srbanunz@gmail.com

 



--

দেশে বিদেশে বাঙ্গালীরা এবং বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ গুনুমুগ্ধ ভক্ত গন

সুখে থাকুন, ভালো থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন

 

জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু

 

শুভেচ্ছান্তে


Engr. Shafiqur  Rahman Anu
Auckland,
New Zealand
N.B.: If any one is offended by content of this e-mail, please ignore & delete this e-mail. I also request you to inform me by an e- mail - to delete your name from my contact list.


__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___