সাক্ষাৎকার আমরা একদিন ক্ষমতায় যাবআমির আবদুল মজিদ'বনি ইসরাইলের মধ্যে ৭২টি জামায়াত হয়েছিল। উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে হবে ৭৩টি জামায়াত। এই ৭৩ জামায়াতের মধ্যে একটি বাদে সবাই জাহান্নামে ঢুকবে। জান্নাতি দলটিই হলো এই কালেমা জামায়াত। আমরা এখানে সাহাবিয়ানা জীবনযাপন করছি।' কালেমা জামায়াত নামে রহস্যঘেরা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল মজিদ গত ৬ সেপ্টেম্বর কালের কণ্ঠকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমনই দাবি করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক কাম প্রতিবেদক হাসানুল কাদির
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদে গত ৬ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পর নিজের আস্তানায় নির্মিত যে বিশাল মসজিদে বসে তিনি কোনো গণমাধ্যমে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎকার দেন, সেই মসজিদে কোনো ফ্যান নেই। অনেক দূরে দূরে কয়েকটি বিদ্যুতের বাল্ব দেখা গেছে। কেন ফ্যান নেই জানতে চাইলে আবদুল মজিদ বলেন, 'আমরা ফ্যান, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশন- এসব ব্যবহার করি না। খুব জরুরি বিবেচনায় বিদ্যুৎ নামমাত্র ব্যবহার করি।'
বাস্তবেও দেখা গেছে, কালেমা জামায়াতের আস্তানায় গড়ে ওঠা কোনো দালানেই দু-একটি বাতি ছাড়া আর কোনো বৈদ্যুতিক সামগ্রী নেই। তবে কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনুসারীদের অবস্থা যাই হোক, আমির মজিদ ঠিকই টেবিলফ্যান ব্যবহার করেন। ক্ষমতায় গেলে এসব বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবহার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে কালেমা জামায়াত- এই প্রশ্নের জবাবে আবদুল মজিদ বলেন, 'আমরা এসব ব্যবহার না করে চলতে পারছি, আপনারা পারবেন না কেন? আপনারা অনেক কিছু খান; শরীরে চর্বি বেশি, তাই এসব জিনিসের প্রয়োজন হয়। আমরা ক্ষমতায় গিয়ে এমন ব্যবস্থা চালু করব, তখন এসব ব্যবহারের প্রয়োজনই হবে না।'
কালেমা জামায়াত প্রচলিত ধারার নির্বাচনে কখনো অংশ নেবে না। এমপি-মন্ত্রীও হতে চায় না। তবে অবশ্যই তারা সরকার গঠন করবে এবং দেশ পরিচালনা করবে। এটি কোনো স্বপ্ন নয়, শিগগির তা বাস্তব হবে- সাক্ষাৎকারে আমির মজিদ এমন আশা ব্যক্ত করে বলেন 'আমরা একদিন ক্ষমতায় যাব।' এটি কিভাবে সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন ঘটবে, সবই দেখবেন।
কালেমা জামায়াতের অনুসারীর সংখ্যা জানতে চাইলে আবদুল মজিদ বলেন, '৬০০-৭০০ পুরুষ ও ৬০০-৭০০ নারী আছে। তাদের পরিবারে ছেলেমেয়েরা তো আছেই। তারা প্রত্যেকেই কালেমা জামায়াতের জন্য ত্যাগী বলে প্রমাণিত। এর বাইরে আরো অনেকে আসে, কিছু দিন থাকে, আবার চলে যায়। অনিয়মিত কর্মীর সংখ্যা আরো বেশি। সুনির্দিষ্টভাবে জানানো সম্ভব নয়। কারণ, আমাদের লিখিত কোনো সিস্টেম নেই। সাংগঠনিক কোনো পদ-পদবি নেই।'
কালেমা জামায়াত নাম দিলেন কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে সংগঠনটির আমির বলেন, "সাহাবায়ে কেরামের পর দুনিয়ায় আর কালেমার দাওয়াত ছিল না। আমি তাবলিগ জামায়াতে ছিলাম। দেখেছি, সেখানেও কালেমার দাওয়াত নেই। তা ছাড়া তাবলিগ হলো একজন ব্যক্তির অজিফা, এর কথা কোরআন-হাদিসে কোথাও নেই। আমরা কালেমায় বিশ্বাস করি, এর দাওয়াত দুনিয়ার মানুষকে পৌঁছাচ্ছি। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ৮৭ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের সাবালক অনুসারীর কাছে কালেমা জামায়াতের সদস্য পাঠিয়ে সরাসরি মৌখিকভাবে দাওয়াত পৌঁছিয়েছি। 'নামধারী মুসলমানদের' কাছেও কালেমার দাওয়াত দিচ্ছি।" নামধারী মুসলমান কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আপনারা মুখে মুখে মুসলমান। কালেমা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু' পড়লেও সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে তা মানতেন, আপনারা মানছেন না। সাহাবিদের মতো কালেমা না মানলে কেউ মুসলমান হতে পারে না। কারণ, কোরআন ও হাদিস সাহাবিরাই শুধু বুঝেছেন, অন্য কেউ নয়।" প্রায় হাজারখানেক ভক্ত, তাঁদের ভাষায় 'সাহাবি' বেষ্টিত আমির আবদুল মজিদ বলেন, 'আমি এখনো হজে যাইনি। তবে সৌদি আরবে আমাদের কার্যক্রম আছে। প্রতিনিধিও আছে। সোয়া এক লাখ সঙ্গী নিয়ে হজে যাব। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে।'
কালেমা জামায়াতের অনুসারীদের সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষার জন্য কোনো স্কুল, কিন্ডারগার্টেন বা মাদ্রাসায় পাঠানো হয় না। আস্তানাতেই পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবদুল মজিদ বলেন, 'আমাদের কোনো সার্টিফিকেট সিস্টেমের পড়াশোনা নেই। প্রচলিত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার মতো কোনো শ্রেণীবিন্যাসও নেই। বাইরে থেকে কোনো শিক্ষক-শিক্ষিকাও আনা হয় না। আমরা আমাদের বাচ্চাদের কোরআন, হাদিস, দোয়া-দরুদ শিক্ষা দেই। কলেজ পর্যন্ত মানের বাংলা শিক্ষা দেই। গণিতও কিছুটা শেখানো হয় এ কারণে যে, তা না হলে তাদের জীবন চলতে যেমন সমস্যা হবে, তেমনি আল্লাহর বড়ত্ব সম্পর্কেও তাদের ধারণা লাভ হবে না। যেমন বলা হয়, পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ গুণ বড় বেহেশত দেওয়া হবে। এখন লক্ষই যদি না বোঝে, তাহলে এ ধরনের হাদিস কিভাবে বুঝবে?' ইংরেজি শিক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শুধু এ, বি, সি, ডি শিক্ষা দেই। এই শিক্ষার প্রতি আমরা কোনো উৎসাহ দেই না।'
কালেমা জামায়াতের অনুসারী প্রায় প্রত্যেকেই দেখতে হাড্ডিসার। এর কারণ জানতে চাইলে আমির মজিদ বলেন, 'আল্লাহ যে পরিমাণ খাদ্য বান্দার ভাগ্যে লিখে রেখেছেন, তা না খাওয়ানো পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না। আল্লাহ জোর করে হলেও খাওয়ানোর পরই মৃত্যু দেবেন। কালেমা জামায়াতের লোকেরা নামমাত্র বেঁচে থাকার জন্য সামান্য খাওয়া-দাওয়া করে থাকে। ফলে তাদের ভাগ্যে যেসব খাদ্য লেখা আছে, সেগুলো শেষ বয়সে মিলবে। আপনারা অনেক খাওয়া-দাওয়া করেন, বিভিন্ন রোগশোকে আক্রান্ত হন, শেষ বয়সে ডাক্তার নিষেধ করে দেন, এটা-ওটা প্রায় কিছুই খাওয়া যাবে না। আপনারা শেষ বয়সে যখন না খেয়ে মরবেন, তখন কালেমা জামায়াতের লোকেরা আরামে খাবার খাবে। কোনো অসুখ-বিসুখ হবে না। সুন্দর জিন্দেগি নিয়ে মরবে।' তিনি আরো বলেন, 'আমাদের জীবন খুবই ত্যাগ ও কষ্টের। সবার পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হয় না। তাই অনেকে এলেও আবার চলে যায়।'
আমির মজিদ মুখে এ কথা বললেও কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনি নিজে ঠিকই পর্যাপ্ত খাবার খান। শরীরও তাঁর বেশ হৃষ্টপুষ্ট।
কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নেই- আলাপকালে নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করলে আবদুল মজিদকে প্রশ্ন করা হয়, 'সব জানা কিভাবে সম্ভব? এমন দাবি তো একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়?' জবাবে তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিভিন্ন দেশ থেকে আমার কাছে লোকজন আসে। তারাই আমার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করলে সেখান থেকে সব জেনে যাই। কোনো বই বা পত্রিকা পড়তে হয় না। রেডিও, টিভিও দেখতে হয় না। এগুলো দেখিও না। সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে প্রশ্ন করা হয়, কালের কণ্ঠ পত্রিকাটি কখনো দেখেছেন? কিছুক্ষণ আগেই পত্রিকা না পড়ার দাবিদার মজিদ এ পর্যায়ে বলেন, তিনি কালের কণ্ঠ নিয়মিত রাখেন, প্রতিদিন পড়েন!
নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করেন কি না জানতে চাইলে আবদুল মজিদ বলেন, 'ইমাম মাহদি সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নাম নয়। ইমাম মানে নেতা, আর মাহদি মানে হেদায়েতপ্রাপ্ত ব্যক্তি। স্পষ্ট ভাষায় নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি না করলেও আকারে ইঙ্গিতে তিনি এমনটাই বোঝানোর চেষ্টা করেন। 'হিযবুত তওহিদ' নামের আরেকটি উগ্র সংগঠনের প্রধান বায়েজিদ খান পন্নী নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করেন- এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করতেই মজিদ বলেন, পন্নী খ্রিস্টান। খ্রিস্টানদের এজেন্ডা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে।
চরফ্যাশন কলেজে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আবদুল মজিদ তাবলিগ জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি কলেজটি প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগী ব্যক্তিদের অন্যতম। ধার্মিক চরিত্রের কারণে ক্লাসে মেয়ে থাকলে তিনি পড়াতেন না এবং মেয়েরাও তাঁকে এড়িয়ে চলত। অথচ তিনি ২০০৯ সালে ১৩ বছর বয়সী এক মেয়েকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। আকলিমা নামের ওই মেয়েকে বিয়ে করেই তার নতুন নাম দেন মরিয়ম। আগের স্ত্রীও আছে দাবি করে তিনি বলেন, তাঁর মোট পাঁচ ছেলে ও ছয় মেয়ের প্রত্যেকেই কালেমা জামায়াতের অনুসারী। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের দাবি, তিনি আরেকটি অর্থাৎ তৃতীয় বিয়েও করেছেন। একাধিক বিয়ে প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে জবাব দেন, সামর্থ্য থাকলে চারটি পর্যন্ত বিয়ে করা সুন্নত।
কালেমা জামায়াতের কার্যক্রম কখন শুরু করেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এই কাজ শুরু করি ১৯৭৩ সালে। তখন আমি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসির ছাত্র।' তাবলিগ জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'এরা আমাকে অনেক জ্বালাতন করে। এদের মিথ্যা মামলার কারণে আমাকে প্রায় দুই বছর জেলও খাটতে হয়েছে।'
এই সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগে আবদুল মজিদের অনুসারীরা এই প্রতিবেদককে নিরুৎসাহী করে বলেন, আমির সাহেব রাজি হবেন না; শুধু দোয়া নেওয়া ও মোসাফাহ করার অনুমতি মিলবে। তবে জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পর আমির মজিদ সাক্ষাৎকার দেন। ছবি তোলার অনুমতি চাইলে প্রথমে রাজি হননি। বলেন, 'তিন ধরনের ব্যক্তিকে বিনা হিসাবে আল্লাহ জাহান্নামে পাঠাবেন। যারা ছবি তোলে, তারা এর অন্তর্ভুক্ত।' প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে কালের কণ্ঠে ছাপার জন্য মাত্র একটি ছবি তোলার অনুরোধ করা হলে অনুসারীরা সম্মিলিত কণ্ঠে বলে ওঠেন, ছবি তোলা যাবে না। পীড়াপীড়ি করলে কঠিন বদদোয়া লাগবে বলেও তাঁরা হুঁশিয়ার করে দেন। তবে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আরেক কক্ষে গিয়ে আমির আবদুল মজিদ সেখানে উপস্থিত ভক্তদের সামনেই কালের কণ্ঠ প্রতিবেদকের সঙ্গে বেশ কিছু ছবি তোলেন। এগুলো পত্রিকায় প্রকাশেরও অনুমতি দেন তিনি।
http://www.kalerkantho.com/print_edition/index.php?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1361&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&news_id=377779#.UjHQvdJwom
http://www.amadershomoybd.com/content/2013/09/12/middle0912.htm
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদে গত ৬ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পর নিজের আস্তানায় নির্মিত যে বিশাল মসজিদে বসে তিনি কোনো গণমাধ্যমে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎকার দেন, সেই মসজিদে কোনো ফ্যান নেই। অনেক দূরে দূরে কয়েকটি বিদ্যুতের বাল্ব দেখা গেছে। কেন ফ্যান নেই জানতে চাইলে আবদুল মজিদ বলেন, 'আমরা ফ্যান, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশন- এসব ব্যবহার করি না। খুব জরুরি বিবেচনায় বিদ্যুৎ নামমাত্র ব্যবহার করি।'
বাস্তবেও দেখা গেছে, কালেমা জামায়াতের আস্তানায় গড়ে ওঠা কোনো দালানেই দু-একটি বাতি ছাড়া আর কোনো বৈদ্যুতিক সামগ্রী নেই। তবে কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনুসারীদের অবস্থা যাই হোক, আমির মজিদ ঠিকই টেবিলফ্যান ব্যবহার করেন। ক্ষমতায় গেলে এসব বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবহার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে কালেমা জামায়াত- এই প্রশ্নের জবাবে আবদুল মজিদ বলেন, 'আমরা এসব ব্যবহার না করে চলতে পারছি, আপনারা পারবেন না কেন? আপনারা অনেক কিছু খান; শরীরে চর্বি বেশি, তাই এসব জিনিসের প্রয়োজন হয়। আমরা ক্ষমতায় গিয়ে এমন ব্যবস্থা চালু করব, তখন এসব ব্যবহারের প্রয়োজনই হবে না।'
কালেমা জামায়াত প্রচলিত ধারার নির্বাচনে কখনো অংশ নেবে না। এমপি-মন্ত্রীও হতে চায় না। তবে অবশ্যই তারা সরকার গঠন করবে এবং দেশ পরিচালনা করবে। এটি কোনো স্বপ্ন নয়, শিগগির তা বাস্তব হবে- সাক্ষাৎকারে আমির মজিদ এমন আশা ব্যক্ত করে বলেন 'আমরা একদিন ক্ষমতায় যাব।' এটি কিভাবে সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন ঘটবে, সবই দেখবেন।
কালেমা জামায়াতের অনুসারীর সংখ্যা জানতে চাইলে আবদুল মজিদ বলেন, '৬০০-৭০০ পুরুষ ও ৬০০-৭০০ নারী আছে। তাদের পরিবারে ছেলেমেয়েরা তো আছেই। তারা প্রত্যেকেই কালেমা জামায়াতের জন্য ত্যাগী বলে প্রমাণিত। এর বাইরে আরো অনেকে আসে, কিছু দিন থাকে, আবার চলে যায়। অনিয়মিত কর্মীর সংখ্যা আরো বেশি। সুনির্দিষ্টভাবে জানানো সম্ভব নয়। কারণ, আমাদের লিখিত কোনো সিস্টেম নেই। সাংগঠনিক কোনো পদ-পদবি নেই।'
কালেমা জামায়াত নাম দিলেন কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে সংগঠনটির আমির বলেন, "সাহাবায়ে কেরামের পর দুনিয়ায় আর কালেমার দাওয়াত ছিল না। আমি তাবলিগ জামায়াতে ছিলাম। দেখেছি, সেখানেও কালেমার দাওয়াত নেই। তা ছাড়া তাবলিগ হলো একজন ব্যক্তির অজিফা, এর কথা কোরআন-হাদিসে কোথাও নেই। আমরা কালেমায় বিশ্বাস করি, এর দাওয়াত দুনিয়ার মানুষকে পৌঁছাচ্ছি। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ৮৭ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের সাবালক অনুসারীর কাছে কালেমা জামায়াতের সদস্য পাঠিয়ে সরাসরি মৌখিকভাবে দাওয়াত পৌঁছিয়েছি। 'নামধারী মুসলমানদের' কাছেও কালেমার দাওয়াত দিচ্ছি।" নামধারী মুসলমান কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আপনারা মুখে মুখে মুসলমান। কালেমা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু' পড়লেও সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে তা মানতেন, আপনারা মানছেন না। সাহাবিদের মতো কালেমা না মানলে কেউ মুসলমান হতে পারে না। কারণ, কোরআন ও হাদিস সাহাবিরাই শুধু বুঝেছেন, অন্য কেউ নয়।" প্রায় হাজারখানেক ভক্ত, তাঁদের ভাষায় 'সাহাবি' বেষ্টিত আমির আবদুল মজিদ বলেন, 'আমি এখনো হজে যাইনি। তবে সৌদি আরবে আমাদের কার্যক্রম আছে। প্রতিনিধিও আছে। সোয়া এক লাখ সঙ্গী নিয়ে হজে যাব। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে।'
কালেমা জামায়াতের অনুসারীদের সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষার জন্য কোনো স্কুল, কিন্ডারগার্টেন বা মাদ্রাসায় পাঠানো হয় না। আস্তানাতেই পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবদুল মজিদ বলেন, 'আমাদের কোনো সার্টিফিকেট সিস্টেমের পড়াশোনা নেই। প্রচলিত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার মতো কোনো শ্রেণীবিন্যাসও নেই। বাইরে থেকে কোনো শিক্ষক-শিক্ষিকাও আনা হয় না। আমরা আমাদের বাচ্চাদের কোরআন, হাদিস, দোয়া-দরুদ শিক্ষা দেই। কলেজ পর্যন্ত মানের বাংলা শিক্ষা দেই। গণিতও কিছুটা শেখানো হয় এ কারণে যে, তা না হলে তাদের জীবন চলতে যেমন সমস্যা হবে, তেমনি আল্লাহর বড়ত্ব সম্পর্কেও তাদের ধারণা লাভ হবে না। যেমন বলা হয়, পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ গুণ বড় বেহেশত দেওয়া হবে। এখন লক্ষই যদি না বোঝে, তাহলে এ ধরনের হাদিস কিভাবে বুঝবে?' ইংরেজি শিক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শুধু এ, বি, সি, ডি শিক্ষা দেই। এই শিক্ষার প্রতি আমরা কোনো উৎসাহ দেই না।'
কালেমা জামায়াতের অনুসারী প্রায় প্রত্যেকেই দেখতে হাড্ডিসার। এর কারণ জানতে চাইলে আমির মজিদ বলেন, 'আল্লাহ যে পরিমাণ খাদ্য বান্দার ভাগ্যে লিখে রেখেছেন, তা না খাওয়ানো পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না। আল্লাহ জোর করে হলেও খাওয়ানোর পরই মৃত্যু দেবেন। কালেমা জামায়াতের লোকেরা নামমাত্র বেঁচে থাকার জন্য সামান্য খাওয়া-দাওয়া করে থাকে। ফলে তাদের ভাগ্যে যেসব খাদ্য লেখা আছে, সেগুলো শেষ বয়সে মিলবে। আপনারা অনেক খাওয়া-দাওয়া করেন, বিভিন্ন রোগশোকে আক্রান্ত হন, শেষ বয়সে ডাক্তার নিষেধ করে দেন, এটা-ওটা প্রায় কিছুই খাওয়া যাবে না। আপনারা শেষ বয়সে যখন না খেয়ে মরবেন, তখন কালেমা জামায়াতের লোকেরা আরামে খাবার খাবে। কোনো অসুখ-বিসুখ হবে না। সুন্দর জিন্দেগি নিয়ে মরবে।' তিনি আরো বলেন, 'আমাদের জীবন খুবই ত্যাগ ও কষ্টের। সবার পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হয় না। তাই অনেকে এলেও আবার চলে যায়।'
আমির মজিদ মুখে এ কথা বললেও কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনি নিজে ঠিকই পর্যাপ্ত খাবার খান। শরীরও তাঁর বেশ হৃষ্টপুষ্ট।
কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নেই- আলাপকালে নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করলে আবদুল মজিদকে প্রশ্ন করা হয়, 'সব জানা কিভাবে সম্ভব? এমন দাবি তো একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়?' জবাবে তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিভিন্ন দেশ থেকে আমার কাছে লোকজন আসে। তারাই আমার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করলে সেখান থেকে সব জেনে যাই। কোনো বই বা পত্রিকা পড়তে হয় না। রেডিও, টিভিও দেখতে হয় না। এগুলো দেখিও না। সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে প্রশ্ন করা হয়, কালের কণ্ঠ পত্রিকাটি কখনো দেখেছেন? কিছুক্ষণ আগেই পত্রিকা না পড়ার দাবিদার মজিদ এ পর্যায়ে বলেন, তিনি কালের কণ্ঠ নিয়মিত রাখেন, প্রতিদিন পড়েন!
নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করেন কি না জানতে চাইলে আবদুল মজিদ বলেন, 'ইমাম মাহদি সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নাম নয়। ইমাম মানে নেতা, আর মাহদি মানে হেদায়েতপ্রাপ্ত ব্যক্তি। স্পষ্ট ভাষায় নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি না করলেও আকারে ইঙ্গিতে তিনি এমনটাই বোঝানোর চেষ্টা করেন। 'হিযবুত তওহিদ' নামের আরেকটি উগ্র সংগঠনের প্রধান বায়েজিদ খান পন্নী নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করেন- এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করতেই মজিদ বলেন, পন্নী খ্রিস্টান। খ্রিস্টানদের এজেন্ডা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে।
চরফ্যাশন কলেজে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আবদুল মজিদ তাবলিগ জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি কলেজটি প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগী ব্যক্তিদের অন্যতম। ধার্মিক চরিত্রের কারণে ক্লাসে মেয়ে থাকলে তিনি পড়াতেন না এবং মেয়েরাও তাঁকে এড়িয়ে চলত। অথচ তিনি ২০০৯ সালে ১৩ বছর বয়সী এক মেয়েকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। আকলিমা নামের ওই মেয়েকে বিয়ে করেই তার নতুন নাম দেন মরিয়ম। আগের স্ত্রীও আছে দাবি করে তিনি বলেন, তাঁর মোট পাঁচ ছেলে ও ছয় মেয়ের প্রত্যেকেই কালেমা জামায়াতের অনুসারী। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের দাবি, তিনি আরেকটি অর্থাৎ তৃতীয় বিয়েও করেছেন। একাধিক বিয়ে প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে জবাব দেন, সামর্থ্য থাকলে চারটি পর্যন্ত বিয়ে করা সুন্নত।
কালেমা জামায়াতের কার্যক্রম কখন শুরু করেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এই কাজ শুরু করি ১৯৭৩ সালে। তখন আমি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসির ছাত্র।' তাবলিগ জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'এরা আমাকে অনেক জ্বালাতন করে। এদের মিথ্যা মামলার কারণে আমাকে প্রায় দুই বছর জেলও খাটতে হয়েছে।'
এই সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগে আবদুল মজিদের অনুসারীরা এই প্রতিবেদককে নিরুৎসাহী করে বলেন, আমির সাহেব রাজি হবেন না; শুধু দোয়া নেওয়া ও মোসাফাহ করার অনুমতি মিলবে। তবে জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পর আমির মজিদ সাক্ষাৎকার দেন। ছবি তোলার অনুমতি চাইলে প্রথমে রাজি হননি। বলেন, 'তিন ধরনের ব্যক্তিকে বিনা হিসাবে আল্লাহ জাহান্নামে পাঠাবেন। যারা ছবি তোলে, তারা এর অন্তর্ভুক্ত।' প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে কালের কণ্ঠে ছাপার জন্য মাত্র একটি ছবি তোলার অনুরোধ করা হলে অনুসারীরা সম্মিলিত কণ্ঠে বলে ওঠেন, ছবি তোলা যাবে না। পীড়াপীড়ি করলে কঠিন বদদোয়া লাগবে বলেও তাঁরা হুঁশিয়ার করে দেন। তবে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আরেক কক্ষে গিয়ে আমির আবদুল মজিদ সেখানে উপস্থিত ভক্তদের সামনেই কালের কণ্ঠ প্রতিবেদকের সঙ্গে বেশ কিছু ছবি তোলেন। এগুলো পত্রিকায় প্রকাশেরও অনুমতি দেন তিনি।
http://www.kalerkantho.com/print_edition/index.php?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1361&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&news_id=377779#.UjHQvdJwom
http://www.amadershomoybd.com/content/2013/09/12/middle0912.htm
__._,_.___