Banner Advertise

Thursday, September 12, 2013

[chottala.com] দেশটাকে লণ্ডভণ্ড করে দেবেন না, এবার ক্ষ্যান্ত দিন



দেশটাকে লণ্ডভণ্ড করে দেবেন না, এবার ক্ষ্যান্ত দিন

সি রা জু র র হ মা ন
কয়েকদিন ছুটি ভোগ করতে জার্মানিতে গিয়েছিলাম। ছুটিতে ল্যাপটপ কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া এ বয়সে আর সম্ভব নয়। ইন্টারনেটে নিয়মিত বাংলাদেশের খবর পড়ার সুযোগ ছিল না। জার্মানির মিডিয়া থেকে আজকের বাংলাদেশ সম্বন্ধে কোনো ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়। স্টুটগার্টে এক জার্মান মহিলা চা খেতে ডেকেছিলেন। মহিলা এক জার্মান কোম্পানিতে চাকরি করেন। সে সুবাদে মাঝে মাঝে তাকে ভারতে যেতে হয়। সীমিত কিছু হিন্দি বলতে পারেন। বলেছিলেন, আমাদের তিনি ভারতের ব্রুকবন্ড চা খাওয়াবেন। আমাদের জন্যে সুস্বাদু একটা কেকও তৈরি করেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সঙ্কটের খবর শুনে বললেন, আশ্চর্য! জার্মান মিডিয়াতে তো এসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার লেশমাত্র পাই না। সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সম্বন্ধে একমাত্র রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির খবরই তিনি জানেন। তাও অসম্পূর্ণ। জার্মানিতে কয়েক হাজার বাংলাদেশী আছেন। তাদের নানা কর্মকাণ্ডের খবর প্রায়ই বাংলা পত্রিকায় পড়ি। তাদের তত্পরতা নিজেদের মধ্যে। নিজেদের নিয়ে এতই ব্যস্ত যে, মূল ধারার জার্মান মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের কথা তাদের মাথায় আসে না। বাংলাদেশের বর্তমানের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বরাবরই মিডিয়া সম্বন্ধে এবং মিডিয়াকে ব্যবহারের আর্ট সম্বন্ধে অজ্ঞ বলতেই হবে। একই দুর্বলতায় ভুগছেন বিএনপির প্রবাসী সমর্থকরাও। খুবই দুর্ভাগ্যের কথা।
লোকপরম্পরায় হলেও জার্মানিতে বসে বাংলাদেশের কিছু খবর পেয়েছি। খবরগুলো এ রকম : (এক) জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন সবার গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন পদ্ধতি সম্বন্ধে সমঝোতায় আসতে অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে দীর্ঘ ব্যর্থ আলাপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকে অনুকূল কোনো সাড়া মেলেনি। (দুই) অনুরূপ অনুরোধ নিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু ইসি তাদের কোনো প্রকারে আশ্বস্ত করতে পারেনি। (তিন) বাংলাদেশের প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এবং সারা বিশ্বে সম্মানিত অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিতেই নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছেন এবং (চার) প্রধানমন্ত্রী হাসিনা অসংখ্যবারের মতো আরও একবার জেদ ধরেছেন যে সংবিধান অনুযায়ী (অর্থাত্ তার অধীনে) ছাড়া নির্বাচন হবে না এবং বর্তমান সংসদ বজায় রেখেই নির্বাচন হবে।
বাংলাদেশের মূল সংবিধানের রচয়িতা এবং শেখ মুজিবুর রহমানের এক কালের আইন উপদেষ্টা ড. কামাল হোসেনও বলেছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী হচ্ছে সব নষ্টের মূল; বর্তমান সঙ্কটের জন্য পঞ্চদশ সংশোধনী হচ্ছে প্রকৃত দায়ী। পঞ্চদশ সংশোধনী কীভাবে পাস হয়েছে, বাংলাদেশের কারও অজানা নয়। দুই হাজার আট সালের ডিসেম্বরে ভারত-মার্কিন-আওয়ামী লীগ ত্রিমুখী ষড়যন্ত্রে যে মাস্টারপ্ল্যানের নির্বাচন হয় তাতে কার্যত একটা একদলীয় সংসদই সৃষ্টি করা হয়েছে। এমনই সুকৌশলে মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল যে, বিএনপি মোট প্রদত্ত ভোটের ৩০ শতাংশ (অর্থাত্ এক-তৃতীয়াংশের কিছু কম) ভোট পেয়েছে, কিন্তু তাদের আসন দেয়া হয়েছে সংসদে মোট আসনের দশ ভাগের এক ভাগের মতো। তার ওপর প্রধানমন্ত্রী পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিরোধী দলের নেতা এবং তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এমন অশ্লীল গালি-গালাজ শুরু করেন যে বিরোধী দল সংসদ বর্জন করতে বাধ্য হয়। অর্থাত্ বিরোধী দলবিহীন সংসদে শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশালী সংশোধনের মতো করে বিনা আলোচনায় পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা হয়।

সংবিধান নিয়ে ছেলেখেলা
আমার স্কুল জীবনের শেষের দু'বছর (১৯৪৬-৪৭) কলকাতায় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা লেগেই থাকত। আমি একটা বেসরকারি হিন্দু স্কুলে পড়তাম। স্বভাবতই হিন্দু বন্ধু অনেক ছিলেন। কতদিন আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা না দিয়ে থাকা যায়? আরও অনেকের মতো আমিও একটা ধুতি কিনেছিলাম। হিন্দু পাড়ায় যেতে কোচা দিয়েই ধুতি পরতাম, আর মুসলমান পাড়ায় কোচা খুলে পেঁচিয়ে লুঙ্গির মতো পরতাম সে ধুতি। সংবিধান রাষ্ট্রীয় দলিল, জাতির অস্তিত্বের সনদ। কিন্তু শেখ হাসিনা সংবিধানকে ব্যবহার করেন নিছক একখানা ধুতির মতো সাময়িক সুবিধার উপকরণ হিসেবে। ১৯৯৬ সালে তিনি মনে করেছিলেন সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি চালু হলে তাদের নির্বাচনী বিজয়ে সুবিধা হবে।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট বেঁধে আন্দোলন করেছিলেন, অনেকগুলো মানুষ খুন করেছিলেন, দেশ অচল করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৬ সালে তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিতেও তিনি জয়ী হতে পারবেন না। লগি-লাঠি-বৈঠার আন্দোলন করে দেশ অচল করে দেয়া হয়, প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে রাজপথেই অনেক মানুষ খুন করা হয়, শেষতক একটা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করে বর্ণচোরা সেনাশাসন ডেকে আনা হয়। মাস্টারপ্ল্যানের নির্বাচনে দ্বিতীয় দফা প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা বুঝে গেলেন যে, তার নিজের অধীনে ষোলো আনা দুর্নীতির নির্বাচনে ছাড়া তার আর আওয়ামী লীগের জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা হয় সে উপলব্ধি অনুযায়ী।
এ সংশোধনী পাস করার হাতিয়ার হিসেবে সরকার ব্যবহার করেছে তাদের ইচ্ছা পূরণের আদালতের একজন বিদায়ী প্রধান বিচারপতির একটি বিতর্কিত রায়কে, যে রায়েও বলা হয়েছিল যে রাজনীতির বাস্তবতা বিবেচনা করে পরবর্তী দুটি সাধারণ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিতে হওয়া বাঞ্ছনীয়। অর্থাত্ সরকার এই বিতর্কিত রায়েরও মাত্র অর্ধেক ব্যবহার করেছে, অন্য অর্ধেককে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এই সংশোধনীতে শেখ হাসিনা শুধু একটা কথাই লিখতে বাদ রেখেছেন; সেটা এই যে তাকে গদি ছেড়ে দিতে বলা যাবে না, আজীবন তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন। এই আধা-খ্যাচড়া সংশোধনী অন্ধভাবে আঁকড়ে থেকে শেখ হাসিনা প্রমাণ করছেন, মুখে গণতন্ত্রের ধুয়া তুললেও আসলে তিনি নিকৃষ্ট স্বৈরতন্ত্রী, পিতার মতো গণতন্ত্রকে হত্যা করে গদি আঁকড়ে থাকাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য।
ইউনূস মুখ খুললেই কেন আঁতে ঘা লাগে
তত্ত্বাবধায়ক অথবা ভিন্ন কোনো নামে একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের অধীনে নির্বাচন হওয়া উচিত। এটা বাংলাদেশের প্রায় সব বুদ্ধিমান মানুষেরই মনের কথা। মুখ ফুটেও বলেছেন অনেকে। ড. ইউনূস সে একই কথা বললে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অধিকাংশ মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নিরেট মস্তিষ্ক নেতারা সহুঙ্কারে তার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেন। জার্মানিতে বসে একটা উপমা আমার মনে হয়েছে। পাঁচ-ছয় বছর আগে পর্যন্তও ব্রিটেনে হাউন্ড (এক প্রজাতির হিংস্র শিকারি কুকুর) নিয়ে শেয়াল শিকার বৈধ ছিল। লাল কোট আর কালো হ্যাট পরা ডজন-খানেক ঘোড়সওয়ার শিকারি একপাল হাউন্ড নিয়ে পল্লী ইংল্যান্ডে শিকারে বেরুতেন। শেয়াল দেখা গেলে (কখনও কখনও খাঁচায় বন্দি শেয়াল ছেড়ে দিয়ে) তারা হাউন্ডগুলোকে তার দিকে লেলিয়ে দিতেন। চল্লিশ-পঞ্চাশটা কুকুর মুহূর্তের মধ্যেই শেয়ালটাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলত। ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারি আক্রমণও হয়েছে সে গোছের।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও তার অনুচরদের এই বিশেষ 'অনুগ্রহের' বিশেষ কারণ আছে। আগেরবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের নাম-না-জানা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডজন-খানেক অনারারি ডক্টরেট কিনেছিলেন। দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি দৃষ্টি আরও ঊর্ধ্বমুখী করলেন। তিনি স্থির করলেন যে তার একটা নোবেল পুরস্কার ক্রয় করা উচিত। রাষ্ট্রের ব্যয়ে রাষ্ট্রের কূটনীতিক ও আমলাদের তদবির করার জন্য দেশ-বিদেশে পাঠানো হলো। তারা সবাই ফিরে এলেন শূন্য হাতে।
অন্যদিকে নোবেল কমিটি শান্তি পুরস্কার দিল মুহাম্মদ ইউনূসকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রীরা থেকে শুরু করে সব মহাদেশের শক্তিধর ও মানী-গুণী ব্যক্তিরা তাকে অভিনন্দিত করলেন। সব বাংলাদেশীরও উচিত ছিল তার জন্য গৌরব বোধ করা। কিন্তু এ দেশের প্রধানমন্ত্রী করলেন ঠিক উল্টোটা। শিক্ষক ক্লাসের ভালো ছাত্রছাত্রীদের বেশি স্নেহ করলে ঈর্ষাতুর রদ্দি ছাত্রছাত্রীরা যেমন জ্বলে-পুড়ে মরে, শেখ হাসিনার হয়েছে সে অবস্থা। যে কোনো প্রকারে পারা যায় ইউনূস ও তার গুণগ্রাহীদের হয়রানি ও হেনস্থা করা এ সরকারের এবং এই প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা এতই স্বল্পবুদ্ধি যে যতবার তারা ইউনূসকে ছোট করতে চাইছেন ততবার তারাই যে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর প্রমাণিত হচ্ছেন সেটাও তারা বুঝে উঠতে পারেন না।

চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের কথায় শেখ হাসিনা কান দেবেন কেমন করে? বাংলাদেশের তথ্যাভিজ্ঞ ও সুশীল সমাজের সবাই বলছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ সংসদে ২০ থেকে ৫০টির বেশি আসন পাবে না। সংখ্যাটা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার প্রতি কার কতখানি সহানুভূতি তার ওপর। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি ও তার দল যে হেরে নাস্তানাবুদ হয়ে যাবেন, শেখ হাসিনা নিজেও সেটা বোঝেন। নিজের কবর নিজে তিনি খোঁড়েন কী করে?
নইলে কিছুকাল আগে বান কি মুনের সহকারী যখন সশরীরে ঢাকায় এসে তিন-চার দিন কাটিয়ে গেলেন, তখনই সরকার নির্বাচন পদ্ধতি সম্বন্ধে বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপে বসতে পারত। মুখে তারা বলেও ছিল যে, তারা সংলাপে বসবে, সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিএনপিকে চিঠি লিখবে। কিন্তু সহকারী মহাসচিবের বিমান নিউইয়র্কে নামার আগেই সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি গিলে খেল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ও অন্য মন্ত্রীদের সুর বদলে গেল। তারা বলতে শুরু করলেন, কিসের সংলাপ? কার সঙ্গে সংলাপ? অথচ বিএনপি বর্তমান সঙ্কটের শুরু থেকেই বলে এসেছে যে, অশান্তি ও হানাহানি এড়ানোর লক্ষ্যে তারা যে কোনো সময় সংলাপে বসতে রাজি আছে। বান কি মুন এবং তার আগে তার সহকারীকেও সে কথা বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে। এখন আবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সংলাপে বসার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা ও বেগম জিয়াকে চিঠি লিখেছেন। খালেদা জিয়া তো আগে থাকতেই রাজি হয়ে আছেন, কিন্তু শেখ হাসিনা রাজি হবেন কিনা সন্দেহ। 'চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী।'
বেচারা নির্বাচন কমিশন? সরকারের পরিকল্পনা (কিংবা ষড়যন্ত্র) কার্যকর করার জন্য তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। কমিশনারদের হাত-পা বাঁধা গণভবনের কাছে। সেখান থেকে যে নির্দেশ আসে তার বাইরে কিছু করার শক্তি তাদের নেই। বিদেশি রাষ্ট্রদূত আর দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের অনুরোধ রক্ষা করার কিংবা নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়ার সাধ্য তাদের কোথায়? তারা তো আর ব্রিটেনের কিংবা ইউরোপের কোনো দেশের মতো স্বাধীন ও সার্বভৌম নির্বাচন কমিশন নন!
ঢাকায় বিশ্বের সব গুরুত্বপূর্ণ দেশের রাষ্ট্রদূত আছেন। বাংলাদেশে কী হচ্ছে আর কী ঘটতে যাচ্ছে সেটা তারা সব সময়ই নিজ নিজ দেশের সরকারকে জানিয়ে রাখেন। ইউনূস প্রসঙ্গ, পোশাক শ্রমিকদের প্রতি অমানুষিক আচরণ, ইসলামপন্থীদের নিষ্পেষণ, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, পদ্মা সেতুর ব্যাপারে দুর্নীতি ইত্যাদি বহু ব্যাপারে প্রায় সব দেশের সঙ্গে হাসিনা সরকারের সম্পর্কে সর্বনিম্ন (ভারতীয় সাংবাদিকদের ভাষায় তলানি ছুঁয়ে গেছে)। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা যে আপাত দৃষ্টিতে সেটা গ্রাহ্য করছেন না তার কারণ মাত্র একটা বিদেশি খুঁটির ওপর তিনি ঈমান এনেছেন, সে শক্তির ওপর তার অপরিসীম ভরসা। বাংলাদেশকে আরেকটা সিকিম করার অভিপ্রায়ে ভারত ২০০৬-০৮ সালে মার্কিন প্রশাসন ও ছয় ঘোড়া উপহারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করেছে।

ভারতকে তিনি কী দিলেন আর কী পেলেন না
হাসিনা আশা করছেন ভারতকে সবকিছুই দিতে তার আরও কিছু বাকি আছে, সুতরাং ভারত কিছুতেই মাঝ পথে তাকে রিক্ত হাতে বিদায় করবে না। বাংলাদেশের সীমান্তে অনুপ্রবেশ অথবা ফেলানী হত্যার মতো অমানুষিকতা বিডিআর কখনোই সহ্য করেনি। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ৫০ দিনের মধ্যেই অত্যন্ত রহস্যজনকভাবে বিডিআরে বিদ্রোহ হলো, ৫৭ জন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হলেন, হত্যালীলার মাঝপথে বিদ্রোহীরা গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ করল, সেনাবাহিনী বিদ্রোহ দমন করতে আসছিল কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মাঝপথে তাদের থামিয়ে দিলেন, অকস্মাত্ মাথায় রুমাল বাঁধা কিছু অপরিচিত লোকের আবির্ভাব হলো পিলখানায় এবং হঠাত্ করেই আবার তারা হাওয়া হয়ে গেল। মুক্তিযুদ্ধের পুরোধা বিডিআর বাহিনীকে রাতারাতি ভেঙে দেয়া হলো, শত শত বিডিআর জওয়ানকে শাস্তি দেয়া হলো, কয়েদখানায় মারা গেল অনেকে, কিন্তু বিদ্রোহের কারণ ও দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য কোনো তদন্ত হলো না।
নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ বেদম মার খাবে, শেখ হাসিনা আর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না—এই ধ্রুব সত্য নিয়ে ভারতের মিডিয়া এরই মধ্যে মরাকান্না জুড়ে দিয়েছে। তারা যে দিল্লির সরকারের হৃিপণ্ডের তড়পানির প্রতিধ্বনি করছে, সেটা জানা কথা। সত্য বটে, শেখ হাসিনা দুই ধারায় এশিয়ান হাইওয়েকে ভারত থেকে আবার ভারতে নিয়ে শেষ করতে রাজি হয়েছেন। সত্য বটে রেল, সড়ক ও নদীপথে ভারতের মূল অংশ থেকে উত্তর-পূর্বের সাতটি অঙ্গরাজ্যে যাওয়ার করিডোর এবং বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর দুটিকে অবাধ ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এবং ভারত এসবই পাচ্ছে বিনা ব্যয়ে। কেননা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার মতে, ভারতের কাছ থেকে টাকা নেয়া অসভ্যতা হবে। কিন্তু ভারত এখনও আতঙ্কমুক্ত হতে পারছে না। ভারতীয়রা জানে, বিনিময়ে তারা বাংলাদেশকে কিছুই দিতে পারেনি এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন আগের যে কোনো সময়ের চাইতে অনেক বেশি ভারত-বিরোধী।
শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালেই বেরুবাড়ী ছিটমহলটি ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। বিনিময়ে ভারত নানা বাহানায় তিনবিঘা ছিটমহলটি বাংলাদেশকে দিতে অস্বীকার করে আসছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা এসেছিলেন, বাংলাদেশের সংবর্ধনা পেয়েছিলেন। কিন্তু সে চুক্তি আজ অবধি স্বাক্ষরিত হয়নি। এরই মধ্যে ৫৩টি অভিন্ন নদীতে ভারত কয়েকশ' বাঁধ তৈরি করেছে, টিপাইমুখে বাঁধ তৈরি করে সুরমা ও কুশিয়ারা অতএব মেঘনা নদীও শুকিয়ে মারার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। দিল্লির সরকার জানে, নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন। শেখ হাসিনা ২০১০ সালের জানুয়ারিতে দিল্লিতে গিয়ে যেসব গোপন চুক্তি করে এসেছিলেন, সেগুলো সংসদে পেশ করার জন্য দলের ও দেশের দাবি প্রতিরোধ করা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। শেখ হাসিনার উপহার করিডোর ভোগ করা সেক্ষেত্রে ভারতের ভাগ্যে নাও জুটতে পারে।
শেখ হাসিনা আশা করছেন, আন্দোলন করে সরকার হঠাতে বিএনপি ও ১৮ দল এতকাল ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের আগের কয়েক মাসও তারা বিদেশি দূতাবাসগুলোর এবং জাতিসংঘের চাপে বড় মাপের আন্দোলন করা থেকে বিরত থাকবে। তিনি তার অতি পরিচিত কৌশলে বিভিন্ন বাহানা সৃষ্টি করে যদি কালক্ষেপণ করতে পারেন তাহলে শেষ মুহূর্তে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী একটা লোকদেখানো সাজানো-পাতানো নির্বাচন করে ঘোষণা দেবেন যে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।

উন্মাদ গণপলায়ন
শেখ হাসিনার বিকল্প নীল নকশা হচ্ছে দেশে অরাজকতা দেখা দিয়েছে অজুহাত দেখিয়ে তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন এবং বর্তমান সংসদই বহাল আছে বলে ঘোষণা দেবেন। নিশ্চয়ই এ লক্ষ্যেই তিনি সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশের সব সংবিধান বিশেষজ্ঞ তাতে বিস্মিত-স্তম্ভিত হয়ে গেছেন। নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজও বলেছেন যে, আগে থেকে সংসদ ভেঙে না দিলে নির্বাচনে নানান জটিলতা দেখা দেবে।
জার্মানি থেকে ফিরে এসে খবর পেলাম—কুয়ালালামপুর, দুবাই ও লন্ডনে বাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনেছেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী। বিগত দু-তিন মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার আওয়ামী লীগার বিভিন্ন দেশের ভিসা নিয়েছেন। বিগত পৌনে পাঁচ বছরে দেশ থেকে যে বহু হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে সেগুলো এখন বিদেশে সম্পত্তি ক্রয়ে কাজে লাগছে। শেখ হাসিনার নীল নকশা যাই হোক, আওয়ামী লীগাররা বুঝে গেছেন গণজোয়ারের মুখে নির্বাচন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না, শেখ হাসিনার গদিও বেহাত হলো বলে। অতএব 'সময় থাকতে দাদা হও সাবধান'।
এরই মধ্যে মন্ত্রীদের কথাবার্তা একেবারে বেসামাল হয়ে গেছে। মনে হতে বাধ্য, তারা সব উন্মাদ হয়ে গেছে। হেফাজতে ইসলামকে হতমান করার লক্ষ্যে কোনো কোনো মন্ত্রী বলেছেন, ইসলামের হেফাজত করবেন আল্লাহ, হেফাজত নয়। ইসলাম সম্বন্ধে সামান্যতম জ্ঞান যাদের আছে তারাই জানেন, আল্লাহ নিজের হাতে কোনো কিছু করেন না, সবকিছুই করান তার বান্দাদের মাধ্যমে। এমনকি ইসলামের বাণীও তিনি মানুষের কাছে পাঠিয়েছেন রাসুলুল্লাহর (সা.) মারফত। আর বিরোধী দল বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেসব গালাগাল করছেন, কোনো যুক্তিতর্ক দিয়ে তার জবাব দেয়া সম্ভব নয়। জবাব দিতে হলে শেখ হাসিনার এক-একটি উক্তির পাল্টা মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ুর রহমান রেন্টুর 'আমার ফাঁসি চাই' বইখানির এক-একটি অধ্যায় উদ্ধৃত করতে হয়।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে তার পিতামাতা ও ভাইদের হত্যায় বাংলাদেশের মানুষ কাঁদেনি; প্রতিশোধ নিতেই তিনি রাজনীতিতে এসেছেন। তার সরকার ও ক্যাডাররা বহু হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। তাদের সন্তানরাও যে প্রতিশোধ নিতে চাইতে পারেন, সেকথা কি শেখ হাসিনারা কখনও ভেবে দেখেছেন? গণভবনে বসে তো অনেক কাঁদিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষকে। আর কেন, প্রধানমন্ত্রী? এবার ক্ষ্যান্ত দিন? দেশটাকে লণ্ডভণ্ড করে দেবেন না।
(লন্ডন, ১০-০৯-১৩)
serajurrahman34@gmail.com


__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___