Banner Advertise

Saturday, March 2, 2013

[chottala.com] বিএনপি কী নিজের অবলুপ্তি ঘোষণা করল?



রবিবার, ৩ মার্চ ২০১৩, ১৯ ফাল্গুন ১৪১৯
বিএনপি কী নিজের অবলুপ্তি ঘোষণা করল?
আবদুল মান্নান
বাবা-মা তার জন্মের পর নাম রেখেছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সিকদার। উঠতি বয়সে তার কাজকর্ম তাকে এলাকার মানুষের কাছে দেলু হিসেবেই পরিচিত করে তুলেছিল। অনেকে ডাকত দেইল্লা বলে। এলাকায় লালসালু বিছিয়ে তাবিজ কবজ বিক্রি করত। মুদির দোকান খুলে তেল নুন ডালও বিক্রি করেছিল কিছুদিন। তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দেলুর জন্য উন্নতির নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিল। মাদ্রাসা পড়–য়া ভাল উর্দু জানা দেলু স্বেচ্ছায় দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে গিয়ে তাদের জানিয়ে দিল সে তাদের ভৃত্য হতে রাজি। দেলু রাতারাতি হয়ে গেল দেইল্লা রাজাকার। নাম লেখায় স্থানীয় শান্তি কমিটিতে। দেইল্লা রাজাকারকে আর পায় কে? মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস ধরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর যোগসাজশে দেইল্লা রাজাকারের বাহিনী পিরোজপুর এলাকায় হয়ে উঠল এক বেপরোয়া ত্রাস। লুটতরাজ, ধর্ষণ, হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ এমন কোন অপকর্ম বাদ ছিল না যার সঙ্গে এলাকায় দেইল্লা রাজাকারের সম্পর্ক নেই। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পূর্ব মুহূর্তে দেইল্লা তার পরিবার নিয়ে রাতের অন্ধকারে গা ঢাকা দিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগ পর্যন্ত তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি যদিও কারো কারো মতে সে খুলনায় পালিয়ে ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অনেক রাজাকার-আলবদর পালিয়ে আজমীর শরিফে আস্তানা গেড়েছিল। কেউ কেউ দেশের মধ্যে থেকে অন্য পেশা গ্রহণ করেছিল। জানা যায়, এই সময় আলী আহসান মুজাহিদের মতো আলবদর ছাতা মেরামতকারী হিসেবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেরিয়ে আয় রোজগার করেছেন। গোলাম আযম পালিয়ে গিয়ে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন, পাকিস্তান পুনঃএকত্রিকরণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। 
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মুশতাকের হাত ঘুরে রাষ্ট্রক্ষমতা জেনারেল জিয়ার করতলগত হওয়ার পর ইতিহাসের চাকা পিছন দিকে ঘোরা শুরু করে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে মুক্তিযুদ্ধের সময় সকল পরিত্যক্ত রাজনৈতিক দলকে জিয়া রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। ১৯৭৮ সালে প্রথমে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ তারপর জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশ নামে জামায়াত আবার মাঠে নামে। সঙ্গে আসে তাদের একাত্তরের ঘাতক বাহিনী ইসলামী ছাত্র সংঘ। তাদের নতুন নাম হয় ইসলামী ছাত্র শিবির। দেইল্লা রাজাকার মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন নাম নিয়ে ওয়াজ মাহফিলের মাঠে আত্মপ্রকাশ করেন। যেহেতু তিনি এক সময় রাস্তার পাশে বসে তাবিজ কবজ বিক্রি করতেন এজন্য তিনি বেশ বাকপটু ছিলেন। তার এক ধরনের সম্মোহনী শক্তিও ছিল। যারা রাস্তার পাশে এই ধরনের তাবিজ কবজ আর ওষুধ হিসেবে ঝাড় জঙ্গলের লতা পাতা বিক্রি করেন তারা বেশ বাকপটু হন কারণ কথার মারপ্যাঁচে তারা সাধারণ মানুষকে সহজে বোকা বানাতে পারেন। একসময় দেলাওয়ার হোসাইন পরিচিতি লাভ করেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নামে। এতেও তিনি তৃপ্ত হতে পারলেন না। দ্রুত নামের আগে টাইটেল লাগালেন 'আল্লামা' যার অর্থ জ্ঞানী। এমন একটা টাইটেল লাগাতে হলে একজন ব্যক্তিকে তার বিষয় সম্পর্কে সত্যিকার অর্থে জ্ঞানী ব্যক্তি হতে হয়। যেমন দার্শনিক ও মহাকবি ড. ইকবালকে বলা হতো আল্লামা ইকবাল। ইকবাল একজন অসাধারণ প-িত এবং উদার ব্যক্তি ছিলেন। অথচ দেলাওয়ার হোসাইন ছিলেন মাদ্রাসা হতে তৃতীয় শ্রেণীতে আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) পাস। ১৯৭৯ সালে সাঈদী জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচন ছিল সাঈদীর জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। কারণ তিনি জামায়াতের মনোনয়ন নিয়ে পিরোজপুর হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক গাঁটছড়া বেঁধেছিল। এরপর দ্রুত জামায়াতের রাজনীতিতে সাঈদীর উন্নতি ঘটতে থাকে। একসময় তিনি দলটির নায়েবে আমির (ভাইস প্রেসিডেন্ট) হন। একজন রাজাকার আর মানবতার বিরুদ্ধে অসংখ্য অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দেইল্লা রাজাকার নিজের স্বার্থে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে হয়ে ওঠে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এটি জাতি হিসেবে আমাদের সকলের জন্য একটি লজ্জাকর বিষয়। 
দেইল্লা রাজাকার বা তার মতো অন্যান্য একাত্তরের ঘাতক আর মানবতাবিরোধী অপরাধীরা কখনো চিন্তা করেনি একদিন তাদেরকে তাদের পাপের জন্য বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাদের দিনকাল বেশ ভালই যাচ্ছিল। তাদের নেতা গোলাম আযম পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে জেনারেল জিয়ার বদান্যতায় দলের আমিরের আসনটিতে চেপে বসলেন। বাঁধ সাধলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। তিনি এই ন্যক্কারজনক ঘটনাটির প্রতিবাদে ১৯৯২ সালে একাত্তরের ঘাতক দালালবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেন। সেই আন্দোলনের আগুনের উত্থাপ সারাদেশে ছড়িয়ে গেল। এই আন্দোলনকে দমাতে বেগম জিয়া ১৯৯৪ সালে শহীদ জননীসহ দেশের ২৪জন বরেণ্য ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা ঠুকে দিলেন। যে গোলাম আযমকে তার স্বামী বাংলাদেশে বহাল তবিয়তে শুধু থাকতেই দেননি রাজনীতিও করতে দিয়েছেন সেই গোলাম আযমের বিরুদ্ধে এরা প্রতিবাদ আন্দোলন করে কোন সাহসে? সেই মামলা মাথায় নিয়ে শহীদ জননী কবরে গেলেন। ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে বেগম জিয়া একাত্তরের আর দুই ঘাতক তৎকালীন আল-বদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী আর আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়ে তাদের গাড়িতে আর সরকারী বাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিলেন। তারা দু'জনে তাদের শাসনামলের পাঁচ বছর কখনো শহীদ মিনার অথবা জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাননি। তাদের এই রমরমা অবস্থার বাঁধ সাধল ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচন । নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এই বলে অঙ্গীকার করে তারা নির্বাচিত হলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। নির্বাচনে তাদের ধস নামানো বিজয় হলে এই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়ে। অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে গঠিত হয় ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী আর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল। গোলাম আযম হতে শুরু করে একে একে গ্রেফতার করা হয় জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের। গ্রেফতার হন বিএনপির দুই নেতা সাকাচৌ আর আবদুল আলিম। দেশ হতে পালিয়ে যায় বাচ্চু রাজাকার। তার অনুপস্থিতিতে তাকে মৃত্যুদ-ে দণ্ডিত করেন ট্রাইব্যুনাল। বিচারে মিরপুরের কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়নি যা ছিল সকলের জন্য অপ্রত্যাশিত কারণ তার অপরাধ বাচ্চু রাজাকারের চাইতেও কয়েকগুণ বেশি ছিল যা ট্রাইব্যুনালও স্বীকার করেছে। ট্রাইব্যুনাল সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করলেন দেইল্লা রাজাকারের। প্রত্যাশিত রায় একটাই, ফাঁসি, যা ট্রাইব্যুনাল ঘোষণা করেছে। সার্বিক অবস্থায় মনে হয় এই রায়ের জন্য জামায়াত প্রস্তুত হয়েই ছিল। রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তারা সারাদেশে এক ভয়াবহ তান্ডব শুরু করে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর সশস্ত্র হামলা ও তাদের হত্যা, থানায় হামলা ও লুটপাট, সরকারী ও জনগণের সম্পদে অগ্নিসংযোগ, রেললাইন উপড়ানো, সংখ্যালঘুদের বাড়ি, মন্দির ও প্যাগোডায় অগ্নিসংযোগ এবং সবচাইতে ন্যক্কারজনক বিষয় হচ্ছে নোয়াখালী ও চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি স্থানে নারী ও শিশুদের তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এই তা-ব চালানো। এটি যেন ১৯৭১ সালের অপারেশন সার্চ লাইটের নতুন অবয়বে পুনরাবৃত্তি। বৃহস্পতিবারের এই তা-বে দেশে চল্লিশ জনের ওপর মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন পুলিশ সদস্যও ছিল। পরিতাপের বিষয় এই ধরনের তা-ব চালিয়ে দেশে এই চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জামায়াতের কোন দোষ খুঁজে পায়নি। দোষ সব সরকারের। জনগণের অর্থে পুলিশ পালা হয় জনগণের জানমাল রক্ষা করার জন্য। সেই পুলিশ যখন নিজেই আক্রান্ত হয় অথবা জামায়াতী তস্কররা পুরো দেশটাকে সন্ত্রাসী কায়দায় জিম্মি করে ফেলে তখন পুলিশ তো এ্যাকশনে যাবেই, তারা তো বসে বসে আর মিলাদ পড়বে না। বেগম জিয়াকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তার স্বামী জেনারেল জিয়ার শাসনামলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদিরা বিদ্রোহ করেছিল। সে সময় পুলিশ বাধ্য হয়েছিল কারাগার পুনরুদ্ধার করতে গুলি চালাতে। তাতে প্রায় একশ' কয়েদি প্রাণ হারায়। জেনারেল জিয়ার সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রায় বিশটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হয়। সেই অপরাধে জিয়া ১৯৭৮ সালে সেনাবাহিনীর দুই হাজারের বেশি সদস্যকে বিনা বিচারে কারা অন্তরালে হত্যা করে যা আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে বেশ ফলাও করে প্রচার করা হয়। বিশ্বখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী অন্দ্রে গুন্দার ফ্রাংক (Andre Gunder Frank) তার গ্রন্থ 'ক্রাইসিস ইন দি থার্ড ওয়ার্ল্ড' (Crisis: in the third world) এ লিখছেন : Ziaur Rahman has opened an ugly breach. Mass execution of the imprisoned ordered by the central authority of the state is something new…[These are] the first official mass execution that have been known in this century in South Asia…The Washington Post [10 February 1978] wrote…the State Department quoted the regime in Dacca as having executed 37 rebels…Our best estimate, drawn from sources available to the embassy as a whole, is that 217 military personnel were executed…President Ziaur Rahman had slain large numbers of suspected rebels without bringing them before courts-martial.' (বঙ্গানুবাদ : জিয়াউর রহমান একটি কুৎসিত ক্ষতের জন্ম দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ক্ষমতার নির্দেশে কারান্তরীণদের গণহত্যা একটি নতুন ঘটনা। এটি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম সরকারীভাবে সংগঠিত গণহত্যা। ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮ সালের ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের) পররাষ্ট্র দফতর সরকারের (বাংলাদেশ) বরাত দিয়ে বলেছে ৩৭জন বিদ্রোহীদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে।... আমাদের ধারণা মতে, যা দূতাবাস হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে, ২১৭ জন সামরিক বাহিনীর সদস্যের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছিল। ...রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কোর্ট মার্শাল ছাড়া সামরিক বাহিনীর বিরাট সংখ্যক সন্দেহভাজন সদস্যকে হত্যা করেছিলেন। পৃষ্ঠা ২০১-২০২) । আর বেগম জিয়া আর তার সুযোগ্য ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার নাকি গত কয়েকদিন দেশের অভ্যন্তরে জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসীদের তা-ব চালানোর জন্য যে ব্যবস্থা নিয়েছেন তা গণহত্যার শামিল। আরে ভাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই যাবত যদি সত্যিকার অর্থে কোন গণহত্যা হয়েই থাকে তা হয়েছে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যখন জামায়াত-বিএনপির সশস্ত্র ক্যাডাররা দক্ষিণবঙ্গের আওয়ামী লীগ সমর্থক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ২৫ হতে ২৬ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে অথবা দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা উঠলে বিএনপি কথায় কথায় স্বচ্ছতার কথা বলেন। একটি প্রশ্ন অনেক দিন ধরে সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। জিয়ার মৃত্যুর পর একাধিকবার বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও এই কথিত স্বচ্ছ ব্যবস্থার মাধ্যমে কেন তারা জিয়া হত্যাকা-ের বিচার করেনি। সেনা বিদ্রোহের জন্য গোপন বিচারের মাধ্যমে তেরোজন মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। জিয়ার হত্যাকা-ের বিচারের কী হলো? সাঈদীর বিরুদ্ধে বিশটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনাল আটটিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তারপরও কী স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে? নাকি স্বচ্ছতার জন্য এসব অপরাধীর বিচার প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে হোক তাই বিএনপি আর তার মিত্ররা চান?
যেদিন সাঈদীর বিচারের রায় ঘোষণা করা হলো সেদিন রাতে বেগম জিয়া চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন। রাতে তিনি তাঁর নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরদিন শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি গত কয়েকদিনের ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন। শুরুতে তিনি বলেছেন গত কয়েকদিন দেশে যা ঘটেছে তাতে তিনি স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ আর মর্মাহত। দেশের মানুষও তার মতো স্তম্ভিত, মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ, তবে ভিন্ন কারণে। সকলে মর্মাহত কারণ এই দু'দিনে জামায়াত-শিবিরের দেশব্যাপী তা-বের কারণে এতগুলো মানুষের প্রাণ গেল তার জন্য। স্তম্ভিত আর ক্ষুব্ধ এই কারণে যে দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এই সময়ে জামায়াত-শিবিরের পক্ষ নিয়ে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিতে পারে। তিনি জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা যে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে অথবা শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দিয়েছে সে সম্পর্কে কিছু বললেন না। পাঁচজন পুলিশ, একজন প্রকৌশলী, একজন রিক্সাওয়ালা, একজন ফল বিক্রেতাকে হত্যা করল এই সন্ত্রাসীরা সে সম্পর্কে তিনি নিশ্চুপ। রেললাইর উপড়ানো হলো, সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হলো, মন্দির প্যাগোডা ধ্বংস করা হলো তা বেগম জিয়াকে বিন্দুমাত্র নাড়া দেয়নি। নারী আর শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা পুলিশ বিজিবির ওপর হামলা করল তাতে বেগম জিয়ার বলার কিছু নেই। সরাসরি তিনি জামায়াত-শিবিরের পক্ষে। দলীয় কর্মসূচী হিসেবে জামায়াতের ডাকা রোববার হতে আটচল্লিশ ঘণ্টা অর্থহীন হরতালের সঙ্গে যোগ করে মঙ্গলবার হরতাল ঘোষণা করেছেন। জামায়াত শনিবার দেশব্যাপী প্রতিবাদ সভা আহ্বান করেছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেগম জিয়া শনিবার তার দলের কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সভা ডেকেছেন। এই সব দেখে শুনে অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী লিখেছেন আগে বিএনপি কর্মসূচী দিলে তাতে জামায়াত সমর্থন দিত। এখন তা উল্টো হয়ে গেল। তাহলে সত্যি সত্যি কী বিএনপি জামায়াতের মধ্যে বিলীন হওয়ার পথে? আমার একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু আছে। জিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে গিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথম যে ৬১জন অফিসার সামরিক বাহিনীতে কমিশন পেয়েছিল সে তাদের মধ্যে একজন। সে তার যুদ্ধদিনের স্মৃতি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই দারুণ গর্বিত। বেগম জিয়ার সাংবাদিক সম্মেলনের পর সে আমাকে ফোন করে জানতে চায় বিএনপি কী অবলুপ্তির পথে যাত্রা করল? তাকে বলি হয়ত বা। ইতিহাসের সঙ্গে থাকতে না পারলে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মুসলিম লীগ তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। 
জামায়াত-শিবির বর্তমানে যা করছে তার সমাপ্তি খুব সহসা হবে না। তাদের আরো কয়েকজন শীর্ষ নেতা বিচারের রায়ের অপেক্ষায়। প্রত্যেকটা রায় হওয়ার পরই তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বর্তমানের মতো যুদ্ধ ঘোষণা করবে। সঙ্গে দোসর হিসেবে বিএনপি থাকবে। তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করবে। জামায়াত এখন আর কোন রাজনৈতিক দল নয়। এটি এখন একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। একটি স্বাধীন দেশে কোন সন্ত্রাসী সংগঠন সক্রিয় থাকতে পারে না। এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার এখনই সময়। এর কোন বিকল্প নেই। সরকার সাপের লেজে পা দিয়েছে। সাপটাকে না মারলে আগামীতে এই সাপের কামড়েই সকলের প্রাণ যাবে। সুতরাং এখন সরকারের পিছিয়ে আসার কোন সুযোগ নেই। যারা এখনও মনে করেন বর্তমান সঙ্কট দূর করার জন্য সরকার আর বিরোধী দল আলোচনায় বসা উচিত তারা বোকার স্বর্গে বাস করেন। বিরোধী দল তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তারা বাংলাদেশকে একাত্তরপূর্ব পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিতে অঙ্গীকার করেছে। সুতরাং তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কী হবে? কিছু করতে হলে সরকারকে দেশের জনগণকেই সঙ্গে নিয়ে করতে হবে। এই মুহূর্তে জামায়াত-শিবির প্রসঙ্গে জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। সুতরাং সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে জয় অনিবার্য। নিজ দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের চাইতে বড় অন্যায় আর কিছু হতে পারে না। ২ মার্চ, ২০১৩

লেখক : শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক।






__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___