শরিফুল হাসান ও শাহাবুল শাহীন, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে |
পিটিয়ে হত্যা করার সময় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে চারজন পুলিশ সদস্য নিরস্ত্র ছিলেন।
মাদ্রাসার কয়েক শ কিশোরকে সামনে রেখে পেছন থেকে হামলার নেতৃত্ব দেয় জামায়াত-শিবির।
বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপপরিদর্শক আবু হানিফ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, 'রেলস্টেশনে হামলার পর
তিন-চার হাজার লোক তদন্ত কেন্দ্রে হামলা শুরু করলে আমরা তাদের থামতে বলি। তারা পাথর ছুড়ে মারতে থাকে। আমরা বলি,
সামনে এগুলো আমরা গুলি করব। এ সময় তারা উল্টো গুলি ছোড়ে। পরিস্থিতি দেখে আমরা শটগান ও রিভলবারের ৩২টি ফাঁকা
গুলি ছুড়তে ছুড়তে নিরাপদে সরে যাই। তখন তারা নিরস্ত্র পুলিশ সদস্যদের পেটাতে শুরু করে। যে চারজন পুলিশ মারা গেছেন,
তাঁরা সবাই নিরস্ত্র ছিলেন।'
পুলিশ জানায়, বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হামলার পর সেদিন সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ থানায় হামলা চালায় জামায়াত-শিবির।
এ সময় পুলিশ গুলি চালালে তিনজন নিহত হয়। তবে তাদের পরিচয় গতকালও মেলেনি। চার পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায়
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বামনডাঙ্গা শহীদ মিনারে শোকসভা হয়েছে। সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের
উপ-কমান্ডার এম এ আউয়াল। সভার আগে এলাকাবাসী একটি শোক মিছিল করে। তারা পুলিশ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক
শাস্তি দাবি করে।
পরদিন শুক্রবার সকালে জামায়াত-শিবির শান্তিরামে পিটিয়ে মারে যুবলীগের নেতা নূরন্নবীকে। গতকালও ওই
বাড়িতে ছিল শোকের ছায়া। নূরন্নবীর বাবা মালে উদ্দিন বলেন, 'আমার ছেলেকে কী কারণে মারল? আমি এর বিচার চাই।'
এ ছাড়া গত দুই দিনে জামায়াত-শিবির হামলা করেছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে। পুড়িয়ে দেওয়া
হয়েছে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা
সদরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় এখনো ১৪৪ ধারা জারি আছে। সুন্দরগঞ্জে হামলার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি
করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা পুলিশও পৃথকভাবে ঘটনার তদন্ত করছে। গতকাল শনিবার শেষ বিকেলে বামনডাঙ্গার মানুষ
যখন বৃহস্পতিবারের তাণ্ডবের কথা বলছিলেন, তখনো তাঁদের চোখেমুখে ছিল আতঙ্ক। এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার বেলা
তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা এক ঘণ্টা ওই তাণ্ডব চলে। রেলস্টেশন মাস্টারের কার্যালয় ও আশপাশের দোকানপাটে
হামলা চালিয়ে ফেরার পথে বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের চার পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ,
জামায়াত-শিবির মাদ্রাসাছাত্রদের নিয়ে এই নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে। ৫৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী রনজু মিয়া কাঁদতে
কাঁদতে বলেন, 'এ কোন দেশ? ২২ বছর ধরে শাড়িকাপড় আর মনোহর সামগ্রীর ব্যবসা করছি। কোনো দিন এমন ভয়াবহতা
দেখেননি। প্রকাশ্য দিবালোকে কয়েক শ লোক এসে আমার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। চলে লুট। ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে
যেসব মালামাল কিনেছি, সব শেষ। চার ছেলেমেয়ে নিয়ে এখন চরম দুশ্চিন্তায় আছি।' বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের পাশেই
চা-বিস্কুটের দোকান চালাতেন ৪৪ বছরের মোহামঞ্চদ আলিম। ১৪ বছর ধরে তিনি এখানে দোকান করছিলেন। পুুড়িয়ে
দেওয়া হয়েছে তাঁর দোকানও। স্টেশনের পাশেই পানের দোকান দিয়ে জীবন-জীবিকা চালাতেন বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম। আহাজারি
করে জানালেন, তাঁর একমাত্র সম্বল দোকানটিও ভাঙচুর করা হয়েছে। এই বাজারের হরেন, আয়নাল, শামীম, আলমগীর, গনি—সবার
কষ্টই এখন এক। বৃহস্পতিবারের সবার দোকান শেষ করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। স্টেশনের আশপাশে থাকা ৩০-৩৫টি দোকানের
সবাই কম-বেশি হামলার শিকার হয়েছে। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের টিকিটঘর। স্টেশনমাস্টার
আতাউর রহমান জানালেন, নগদ দেড় লাখ টাকাসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট
বিভাগের বামনডাঙ্গা উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়েও হামলা হয়েছে। প্রকৌশলী অফিসের চৌকিদার সাইফুল ইসলাম জানালেন,
অফিসের সবকিছুই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুর রহমান বলেন, 'রেলস্টেশনে পরিকল্পিতভাবে
হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা সামনে রেখেছিল বিভিন্ন মাদ্রাসার কয়েক শ কিশোরকে। রেলস্টেশনে হামলার পর আসরের আজানের
সময় দুর্বৃত্তরা "নারায়ে তাকবির" বলে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হামলা চালায়। পুলিশ ফাঁকা গুলি চালালেও কাজ হয়নি। গুলি শেষ হয়ে
গেলে পুলিশ পিছু হটে। এ সময় চারজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
বাবলু ও নাজিম নামে দুই পুলিশের লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় তদন্ত কেন্দ্রের পেছনে পড়ে ছিল। আর হযরত ও তোজামেঞ্চল আহত
অবস্থায় ছটফট করছিলেন। পরে তাঁরাও মারা যান।'
হাবিবুর রহমান বলেন, '১৯৭১ সালে আমি ১২ বছরের কিশোর ছিলাম। স্বাধীনতার সময়ও এমন তাণ্ডব দেখিনি।' সুন্দরগঞ্জ উপজেলা
আওয়ামী লীগ সভাপতি মনজুরুল ইসলাম বলেন, 'জাতি জামায়াত-শিবিরের এই তাণ্ডব দেখে স্তম্ভিত।' ওই হামলার বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ
উপজেলা জামায়াতের আমির ইউনুস আলীর বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও
সবগুলো ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। জেলা জামায়াতের আমির আবদুর রহিম কারাগারে। সেক্রেটারি আবদুল করিমের মুঠোফোনও বন্ধ।
সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে: হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা জানিয়েছেন, বামনডাঙ্গা ও সুন্দরগঞ্জে সুনির্দিষ্ট করে সংখ্যালঘুর বাড়ি ও দোকানে
হামলা হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি রণজিৎ বকসি বলেন, বেলকা ইউনিয়নে দুটি এবং শান্তিরামে তিনটি
মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক সংখ্যালঘুর বাড়ি ও দোকানে হামলা হয়েছে। সুন্দরগঞ্জের শান্তিরাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি
সুরজিত কুমার বলেন, 'বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শান্তিরাম মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়। এরপর আমার বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের পর আগুন
ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। স্বাধীনতার এত বছর পরও যদি এভাবে আমাদের বাঁচতে হয়, সেই কষ্ট কোথায় রাখব।'
১৪৪ ধারা অব্যাহত: পুলিশ হত্যা, থানা ও ফাঁড়ি ভাঙচুর, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি-দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ,
লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা মামলায় শুক্রবার রাতে তিনজনকে এবং গতকাল একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন আনোয়ারুল
ইসলাম, আবদুর রউফ, লেবু মণ্ডল ও জিয়াউর রহমান। গতকালও সুন্দরগঞ্জ পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি ছিল। মোতায়েন হয়েছে বিজিবি
ও অতিরিক্ত পুলিশ। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, সুন্দরগঞ্জ থানায় দুটি মামলা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে ২০ হাজার ব্যক্তিকে
আসামি করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব বলেন, হামলার শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে।
সিলেটে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, রাজশাহীতে ট্রেনে আগুন
হামলা-সংঘর্ষে আরও ছয়জন নিহত
প্রথম আলো ডেস্ক | তারিখ: ০৩-০৩-২০১৩
-
জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা গতকাল সকালে সাতকানিয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ তৈরি করেন। ছবিটি বেলা ১১টায় হাসমতের দোকান এলাকা থেকে তোলা
প্রথম আলো
গতকাল মৌচাক এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ চলাকালে গাড়িতে আগুন
ছবি: প্রথম আলো
http://prothom-alo.com/detail/date/2013-03-03/news/333437 রবিবার, ৩ মার্চ ২০১৩, ১৯ ফাল্গুন ১৪১৯
এবার বিএনপির মিছিল থেকে ॥ বোমা নিক্ষেপ
০ গাড়ি ভাংচুর আগুন
০ শান্তিনগর রণক্ষেত্র
০ পুলিশী হামলায় ফখরুলসহ অর্ধশত আহত : দাবি রিজভীর
দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব
সাঈদীর ফাঁসি, সহিংসতায় নিহত ৩৭
প্রথম আলো ডেস্ক | তারিখ: ০১-০৩-২০১৩
- See more at: http://prothom-alo.com/detail/date/2013-03-01/news/333012#sthash.3qQsKC89.dpuf
নাটোরে আ'লীগ কর্মী জবাই, অস্ত্র ছিনতাই পুলিশের জেলা প্রতিনিধি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
|
|
নাটোর: সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর খায়রুল বাশার নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে গলা কেটে হত্যা করেছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় শিবিরের হামলায় ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়াও পুলিশের গাড়িতে আগুন, দু'টি শটগান ছিনতাই, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা ও গুদরা গ্রামের আ'লীগ কর্মী মোহাম্মদ মজনুর বাড়িসহ অন্তত ১০ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতির বিকেলে নাটোরের লালপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত খায়রুল গুদরা গ্রামের বাসিন্দা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর নাটোরের লালপুরের গুদরায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে। এ সময় মিছিলকারীরা গুদরা গ্রামের আ'লীগ কর্মী খায়রুলকে গলা কেটে হত্যা করে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মিছিলে বাধা দিলে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় শিবির কর্মীরা। এ সময় পুলিশের ২টি শটগান ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এক পর্যায়ে ওয়ালিয়া পুলিশ ফাঁড়িতেও হামলা চালায় তারা। এ সময় ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রউফসহ ৭ পুলিশ সদস্য আহত হন। লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে জানান, অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৩ সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী, নিউজরুম এডিটর/জেডএম http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=8412c11b6bec3eb687b327da192bb9ae&nttl=28022013177855 মিরপুরে জামায়াত-শিবিরের হামলার চেষ্টা: http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=adc76b62987ed123ce5d90f5e3193075&nttl=28022013177953 |