রবিবার, ৩ মার্চ ২০১৩, ১৯ ফাল্গুন ১৪১৯
এবার বিএনপির মিছিল থেকে ॥ বোমা নিক্ষেপ
০ গাড়ি ভাংচুর আগুন
০ শান্তিনগর রণক্ষেত্র
০ পুলিশী হামলায় ফখরুলসহ অর্ধশত আহত : দাবি রিজভীর
০ শান্তিনগর রণক্ষেত্র
০ পুলিশী হামলায় ফখরুলসহ অর্ধশত আহত : দাবি রিজভীর
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি'র মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ও বোমা নিক্ষেপ, গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার বিকেলে রাজধানীর মালিবাগ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় ১০ মিছিলকারীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে বিএনপি অভিযোগ করেছে, শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিনা উস্কানিতে গুলিবর্ষণ করেছে পুলিশ। মঙ্গলবারের হরতাল বানচাল করার জন্যই পুলিশ মিছিলে হামলা চালিয়েছে এবং এতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করে তারা।
সারাদেশে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঢাকা মহানগর বিএনপি। মিছিলটি বিজয়নগর নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল ও শান্তিনগর হয়ে মালিবাগ অতিক্রম করছিল। বিকেল সাড়ে ৪টায় মালিবাগ মোড়ে মিছিলের একাংশের সামনে গঠাৎ কে বা কারা একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। সঙ্গে সঙ্গে মিছিলকারীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার এক পর্যায়ে আশপাশ থেকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বিএনপি'র নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বোমা, ইটপাটকেল ও জুতা নিক্ষেপ এবং গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ তা-ব শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। মিছিলকারীরাও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত লোকজন দিগি¦দিক ছোটাছুটি শুরু করে। সংঘর্ষ চলাকালে মালিবাগ ও আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ধাওয়া খেয়ে এক পর্যায়ে মিছিলকারীরা আশপাশের এলাকার গলিতে অবস্থান নিয়ে সেখান থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পিছু হটলেও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বীরদর্পে গলিপথ থেকে বেরিয়ে এসে অতর্কিতে মালিবাগ,ে মৌচাক, শান্তিবাগ, শান্তিনগর ও রাজারবাগ এলাকায় চ্যানেল আইয়ের একটি গাড়িসহ ব্যাপকভাবে যানবাহন ভাংচুর করে। এর মধ্যে ২টি প্রাইভেট কার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় তারা। একই সময়ে বিএনপি-জামায়াতের কিছু নেতাকর্মী নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি-জামায়াত বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মেহেদি হাসান সাংবাদিকদের জানান, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিএনপির মিছিল থেকে তা-ব চালানো হয়। এ সময় তারা নির্বিচারে গাড়ি ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মানুষের জানমাল রক্ষার্থে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছোড়ে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বিকেল ৫টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। সন্ধ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল আহত হয়েছেন বলে প্রচার চালিয়ে বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাকা গুলিবর্ষণ করে।
মালিবাগে দায়িত্বরত পল্টন থানার উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীরে হাসেন সাংবাদিকদের জানান, মিছিলকারীরা হাতবোমা বিস্ফোরণের পাশাপাশি মালিবাগ মোড়ে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুর করতে থাকে। এ সময় বাধা দিলে তারা হোসাফ টাওয়ারের সামনে একটি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেয়। শান্তিবাগ মোড় থেকে মালিবাগ মোড় হয়ে মৌচাক মার্কেট পর্যন্ত এই ভাংচুর চালানো হয় বলে দাবি করেন তিনি।
মৌচাক এলাকায় বিএনপি'র হামলার শিকার একটি গাড়ির চালক শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিএনপি'র মিছিল থেকে হাতবোমা ফাটিয়ে ভাংচুর শুরু হয়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মিছিলে অংশ নেন বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় তারা মিছিল ছেড়ে চলে যান। সংঘর্ষের পর বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ প্রহরা জোরদার করা হয়।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচী ঘোষণা করে এ কর্মসূচী সফল করতে জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। খালেদা জিয়ার এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী কালো পতাকা ও বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিক্ষোভ মিছিলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে পুলিশ পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। মঙ্গলবারের হরতাল বানচাল করার জন্যই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, শনিবার বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। মগবাজার গিয়ে মিছিলটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। পুলিশ প্রশাসন মিছিলের আগে আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল কোন হামলা করবে না। কিন্তু মিছিলটি মগবাজার পৌঁছার আগেই শান্তিনগরে হামলা চালানো হয়। তিনি বলেন, সরকারের যেকোন অনৈতিক কর্মকা-ের প্রতিবাদ করা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু বিদেশী প্রভুদের আশির্বাদ নিয়ে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগ পৈশাচিক হামলা চালাচ্ছে। কঠোর কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারের চূড়ান্ত পতন ঘটানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
রিজভী বলেন, পুলিশের গুলিবর্ষণ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সহদফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, নির্বাহী কমিটির সদস্য খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহসভাপতি ফরহাদ হোসেন আজাদ, সহ-যুবদল নেতা মাহবুবুল হাসান পিংকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ অর্ধশতাধিক নেতা আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও ফরহাদ হোসেন আজাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান তিনি।
রিজভী বলেন, সারাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদে নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপি প্রতিবাদ মিছিল শুরু করে বিকেল চারটায়। বিশাল মিছিলটি মালিবাগের কাছে গেলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলিবর্ষণ করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। রিজভী অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ-র্যাবসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর নির্বিচারে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। আমি নিজেও ওই হামলার মৃত্যুকূপ থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে এসেছি।
রিজভী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাঁজোয়া যানে চড়ে পুলিশ গুলি করতে করতে আমার দিকে ছুটে আসছিল। গণমাধ্যমের কর্মীদের কারণে আমি বেঁচে গেছি। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এভাবে হামলা ও গুলি করে জনগণের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, পুলিশের এই হামলার প্রতিবাদের ভাষা আমার জানা নেই। এই হামলাকে পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বর হামলার সঙ্গে তুলনা করা যায়।
রিজভী অভিযোগ করেন, আমরা সকাল থেকে পূর্বাভাস পাচ্ছিলাম পুলিশ এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। তারপরও আমরা বার বার পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আজকের মিছিল সম্পন্ন করার বিষয়ে আলোচনা করেছি। তারা আমাদের কথাও দিয়েছিল কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। কিন্তু যেভাবে পুলিশ এই হামলা চালিয়েছে,তাতে এটা প্রমাণিত হয়েছে, ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত। তিনি দাবি করেন, এই হামলায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
আহতরা কোথায় আছেন জানতে চাইলে রিজভী বলেন, আমরা এখনও পুরো খবর পাইনি। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে একটি অজানা ফোনে কথা হয়েছে। তিনি আহতাবস্থায় আছেন। পুরো তথ্য জানার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান তিনি।
পুলিশ বলেছে, হামলা বিএনপি কর্মীরা চালিয়েছে এ রকম প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, এটি পুলিশী মিথ্যাচার। পরিকল্পিতভাবে এই হামলা আড়াল করতে তারা এই ধরনের মিথ্যা কথা বলছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সহদফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি,ে কন্দ্রীয় নেতা আব্দুল হামিদ ডাবলু, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
সারাদেশে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঢাকা মহানগর বিএনপি। মিছিলটি বিজয়নগর নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল ও শান্তিনগর হয়ে মালিবাগ অতিক্রম করছিল। বিকেল সাড়ে ৪টায় মালিবাগ মোড়ে মিছিলের একাংশের সামনে গঠাৎ কে বা কারা একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। সঙ্গে সঙ্গে মিছিলকারীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার এক পর্যায়ে আশপাশ থেকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বিএনপি'র নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বোমা, ইটপাটকেল ও জুতা নিক্ষেপ এবং গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ তা-ব শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। মিছিলকারীরাও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত লোকজন দিগি¦দিক ছোটাছুটি শুরু করে। সংঘর্ষ চলাকালে মালিবাগ ও আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ধাওয়া খেয়ে এক পর্যায়ে মিছিলকারীরা আশপাশের এলাকার গলিতে অবস্থান নিয়ে সেখান থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পিছু হটলেও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বীরদর্পে গলিপথ থেকে বেরিয়ে এসে অতর্কিতে মালিবাগ,ে মৌচাক, শান্তিবাগ, শান্তিনগর ও রাজারবাগ এলাকায় চ্যানেল আইয়ের একটি গাড়িসহ ব্যাপকভাবে যানবাহন ভাংচুর করে। এর মধ্যে ২টি প্রাইভেট কার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় তারা। একই সময়ে বিএনপি-জামায়াতের কিছু নেতাকর্মী নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি-জামায়াত বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মেহেদি হাসান সাংবাদিকদের জানান, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিএনপির মিছিল থেকে তা-ব চালানো হয়। এ সময় তারা নির্বিচারে গাড়ি ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মানুষের জানমাল রক্ষার্থে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছোড়ে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বিকেল ৫টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। সন্ধ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল আহত হয়েছেন বলে প্রচার চালিয়ে বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাকা গুলিবর্ষণ করে।
মালিবাগে দায়িত্বরত পল্টন থানার উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীরে হাসেন সাংবাদিকদের জানান, মিছিলকারীরা হাতবোমা বিস্ফোরণের পাশাপাশি মালিবাগ মোড়ে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুর করতে থাকে। এ সময় বাধা দিলে তারা হোসাফ টাওয়ারের সামনে একটি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেয়। শান্তিবাগ মোড় থেকে মালিবাগ মোড় হয়ে মৌচাক মার্কেট পর্যন্ত এই ভাংচুর চালানো হয় বলে দাবি করেন তিনি।
মৌচাক এলাকায় বিএনপি'র হামলার শিকার একটি গাড়ির চালক শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিএনপি'র মিছিল থেকে হাতবোমা ফাটিয়ে ভাংচুর শুরু হয়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মিছিলে অংশ নেন বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় তারা মিছিল ছেড়ে চলে যান। সংঘর্ষের পর বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ প্রহরা জোরদার করা হয়।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচী ঘোষণা করে এ কর্মসূচী সফল করতে জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। খালেদা জিয়ার এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী কালো পতাকা ও বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিক্ষোভ মিছিলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে পুলিশ পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। মঙ্গলবারের হরতাল বানচাল করার জন্যই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, শনিবার বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। মগবাজার গিয়ে মিছিলটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। পুলিশ প্রশাসন মিছিলের আগে আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল কোন হামলা করবে না। কিন্তু মিছিলটি মগবাজার পৌঁছার আগেই শান্তিনগরে হামলা চালানো হয়। তিনি বলেন, সরকারের যেকোন অনৈতিক কর্মকা-ের প্রতিবাদ করা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু বিদেশী প্রভুদের আশির্বাদ নিয়ে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগ পৈশাচিক হামলা চালাচ্ছে। কঠোর কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারের চূড়ান্ত পতন ঘটানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
রিজভী বলেন, পুলিশের গুলিবর্ষণ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সহদফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, নির্বাহী কমিটির সদস্য খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহসভাপতি ফরহাদ হোসেন আজাদ, সহ-যুবদল নেতা মাহবুবুল হাসান পিংকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ অর্ধশতাধিক নেতা আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও ফরহাদ হোসেন আজাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান তিনি।
রিজভী বলেন, সারাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদে নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপি প্রতিবাদ মিছিল শুরু করে বিকেল চারটায়। বিশাল মিছিলটি মালিবাগের কাছে গেলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলিবর্ষণ করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। রিজভী অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ-র্যাবসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর নির্বিচারে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। আমি নিজেও ওই হামলার মৃত্যুকূপ থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে এসেছি।
রিজভী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাঁজোয়া যানে চড়ে পুলিশ গুলি করতে করতে আমার দিকে ছুটে আসছিল। গণমাধ্যমের কর্মীদের কারণে আমি বেঁচে গেছি। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এভাবে হামলা ও গুলি করে জনগণের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, পুলিশের এই হামলার প্রতিবাদের ভাষা আমার জানা নেই। এই হামলাকে পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বর হামলার সঙ্গে তুলনা করা যায়।
রিজভী অভিযোগ করেন, আমরা সকাল থেকে পূর্বাভাস পাচ্ছিলাম পুলিশ এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। তারপরও আমরা বার বার পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আজকের মিছিল সম্পন্ন করার বিষয়ে আলোচনা করেছি। তারা আমাদের কথাও দিয়েছিল কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। কিন্তু যেভাবে পুলিশ এই হামলা চালিয়েছে,তাতে এটা প্রমাণিত হয়েছে, ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত। তিনি দাবি করেন, এই হামলায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
আহতরা কোথায় আছেন জানতে চাইলে রিজভী বলেন, আমরা এখনও পুরো খবর পাইনি। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে একটি অজানা ফোনে কথা হয়েছে। তিনি আহতাবস্থায় আছেন। পুরো তথ্য জানার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান তিনি।
পুলিশ বলেছে, হামলা বিএনপি কর্মীরা চালিয়েছে এ রকম প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, এটি পুলিশী মিথ্যাচার। পরিকল্পিতভাবে এই হামলা আড়াল করতে তারা এই ধরনের মিথ্যা কথা বলছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সহদফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি,ে কন্দ্রীয় নেতা আব্দুল হামিদ ডাবলু, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
__._,_.___