যুক্তি উপস্থাপনকালে রাষ্ট্রপক্ষ
শান্তি কমিটির প্রধান তিন নেতার একজন ছিলেন গোলাম আযম
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আরও দুটি অভিযোগের বিষয়ে গতকাল বুধবার যুক্তি উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, শান্তি কমিটির প্রধান তিন নেতার একজন ছিলেন গোলাম আযম। শান্তি কমিটি সারা দেশে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।
বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল চতুর্থ দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সুলতান মাহ্মুদ। শারীরিক কারণে গোলাম আযমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি।
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগ হলো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনার। এই অভিযোগের পক্ষে যুক্তি দিয়ে সুলতান মাহ্মুদ বলেন, একাত্তরের ৪ এপ্রিল গোলাম আযমসহ পাকিস্তানপন্থী অন্য নেতারা জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে পরিকল্পনা করে নাগরিক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন। পরিকল্পনা অনুসারে ৯ এপ্রিল গোলাম আযম ও অন্য নেতারা কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি গঠন করেন। খাজা খয়েরউদ্দিনকে এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির অধীনে বিভিন্ন শহর, ইউনিয়ন পরিষদ ও মহল্লায় শান্তি কমিটির শাখা করার পরিকল্পনা করতে আরেকটি বৈঠক হয়। ৪ মে এলিফ্যান্ট রোডে এ কে এম শফিকুল ইসলামের বাসভবনে ওই বৈঠক হয়। এতে গোলাম আযম, খাজা খয়েরউদ্দিন, আবদুল জব্বার খদ্দর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কাছে গোয়েন্দা সংস্থার পাঠানো একটি প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ আছে। শান্তি কমিটি পরে সারা দেশে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করে। সংগঠনটির প্রধান তিন নেতার একজন ছিলেন গোলাম আযম। এ জন্য এসব অপরাধের পরিকল্পনার দায় তাঁর ওপর বর্তায়।
এই মামলার তৃতীয় অভিযোগ হলো মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী বাহিনীগুলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে উসকানি দেওয়া। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলেন, ৭ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির গোলাম আযম দলীয় নেতাদের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে 'ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের' ধ্বংস করার জন্য 'দেশপ্রেমিক জনগণকে' আহ্বান জানান। এখানে 'দেশপ্রেমিক' বলতে জামায়াত, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, আলমুজাহিদ বাহিনীর সদস্যদের বোঝানো হয়েছে, যাঁরা কোনো না কোনোভাবে গোলাম আযমের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। 'ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী' বলতে তিনি হিন্দু, আওয়ামী লীগের সমর্থক ও দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষকে বুঝিয়েছেন। এই বিবৃতি পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী বাহিনীগুলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ করতে উসকানি দিয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলেন, একাত্তরের ১০ এপ্রিল রেডিও পাকিস্তানে উসকানিমূলক ভাষণে গোলাম আযম বলেন, 'সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীদের' পাঠিয়ে ভারত পূর্ব পাকিস্তানিদের দেশপ্রেমকে চ্যালেঞ্জ করেছে। 'পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের' কাছ থেকে 'অনুপ্রবেশকারীরা' কোনো সাহায্য পাবে না। এখানেও 'পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান' বলতে গোলাম আযম পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী বাহিনীগুলোকে বুঝিয়েছেন। ২৩ এপ্রিল আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গোলাম আযম মুক্তিযোদ্ধাদের 'রাষ্ট্রবিরোধী' উল্লেখ করেন। ১৭ মে এক সভায় তিনি 'রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ' দমনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ চান।
দুপুরে যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় এই মামলার কার্যক্রম ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
এদিকে গোলাম আযমের তিনটি আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। প্রথম দুটি হলো গোলাম আযমের জামিনের আবেদন এবং আসামিপক্ষের দুই বিদেশি সাক্ষীর বক্তব্য সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের আবেদন। তৃতীয়টি আদেশের অনুলিপি পাওয়ার আবেদন। আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম প্রথম দুটি আবেদনের শুনানিতে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারাকক্ষে গোলাম আযমের সুচিকিৎসা হচ্ছে না। এ ছাড়া তাঁর সার্বক্ষণিক পারিবারিক সেবা প্রয়োজন, যা কারাকক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আসামিপক্ষের বিদেশি দুই সাক্ষী উইলিয়াম শাবাজ ও জ্যাক ডেভারেলের সাক্ষ্য নেওয়া হোক, না হলে লিখিত আকারে দেওয়া তাঁদের বক্তব্য সাক্ষ্য হিসেবে নেওয়া হোক।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জেয়াদ-আল-মালুম আবেদন দুটির বিরোধিতা করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল আদেশের দিন ধার্য করেন।
গোলাম আযম ৪ এপ্রিল টিক্কা খানের সঙ্গে বৈঠক করেন'
মিজানুর রহমান খান, ওয়াশিংটন ডিসি থেকে | তারিখ: ১৪-১২-২০১২
রাজাকার-আলবদর বাহিনী গড়ার হোতা গোলাম আযম:
__._,_.___