রাজীব হত্যাকাণ্ড: খুনিদের সহচর শনাক্ত
বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
স্টাফ রিপোর্টার: ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন ওরফে শুভ হত্যাকারীদের একাধিক সন্দেহভাজন সহচরকে শনাক্ত করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে তাদের অবস্থান রাজীবের বাসার আশপাশেই ছিল। তারাই খুনিদের কাছে রাজীবের তথ্য সরবরাহ করে হত্যাকাণ্ডের আগেই পালিয়ে গেছে। গতকাল তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, রাজীব খুনের আগে ঘটনাস্থলের আশপাশে কয়টি মোবাইল ফোন চালু ছিল, কার কার সঙ্গে কথা হয়েছিল, খুনের পর তারা এখন কোথায়- এ তিন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তদন্তকারী পুলিশের তিনটি টিম নানা কৌশলে এগোচ্ছে। খুনি ও তাদের সহচরদের পরিচয় উদঘাটনের জন্য ফোন প্রযুক্তি, ম্যানুয়াল ও ইন্টারনেট ভিত্তিক তদন্ত শুরু করেছেন। তবে গতকাল পর্যন্ত খুনের মোটিভ কিংবা খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ। এদিকে রাজীব খুন হওয়ার পর থেকেই ব্লগার তানজিলা গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। এছাড়া নিহতের স্ত্রী আনিকা প্রোজিন, ব্লগার রাফিসহ অর্ধ শতাধিক ঘনিষ্ঠজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ডিবি পুলিশের পশ্চিম বিভাগের ডিসি মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন আনিকাকে। কয়েক ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে আনিকা জানিয়েছেন, ১৯৯৭ সালে প্রেম করে বিয়ে করেন রাজীবকে। বিয়ের পর থেকেই দু’জনের বনিবনা হচ্ছিল না। রাজীব কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকলেও স্ত্রীর কাছে কোন কিছু শেয়ার করতেন না। এমনকি ব্লগে কি লিখতেন তা-ও বলতেন না। সব সময়ই সন্দেহের চোখে দেখতেন। এরপর তিনিও উল্টো তাকে সন্দেহ করতে থাকেন। এর মধ্যে দেখা দেয় পারিবারিক বিরোধ। রাজীবের পরিবার দাবি করেন, তাদের দুই ছেলে রাজীব ও নোবেল ছাড়া কোন মেয়ে নেই। তাই ছেলের বউকে তাদের বাসায় রাখার পক্ষে যুক্তি দেন। অন্যদিকে আনিকার পিতা আবদুর রশীদের দাবি, তাদের ঘরে আনিকা ছাড়া কোন ছেলে সন্তান নেই। তাই মেয়ের জামাই হিসেবে রাজীবকে তাদের কাছে রাখার পক্ষে মত দেন। পারিবারিক ওই বিরোধের সুরাহা হতে না হতেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়। এরপর গত মে মাস থেকে তারা আলাদা বসবাস করতে থাকেন। সূত্রমতে, দেড় মাস আগে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় তানজিলার। অল্প দিনেই দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাইরে ঘোরাঘুরি ছাড়াও রাজীবের পল্লবীর বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল বগুড়ার মেয়ে তানজিলার। এ খবরে আনিকা আরও ভেঙে পড়েন। সূত্র আরও জানায়, রাজীব হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে প্রাথমিকভাবে অর্ধশতাধিক তরুণ-তরুণীর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে। এ তালিকা থেকে ব্লগার তানজিলা, রাফি ও তার স্ত্রী আনিকা ব্রোজিনকে বাদ দেয়া হয়নি। এর মধ্যে ব্লগার তানজিলাকে দ্বিতীয় দফায় ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। হত্যাকাণ্ডের আগে কোথায় কোথায় রাজীবকে নিয়ে অবস্থান করেছিলেন, তার সঙ্গে আরও কেউ ছিল কিনা কিংবা কখন বাসায় ফিরেছিলেন, কোথায় লাশ দেখেছিলেন- এসব বিষয়ে ফের যাচাই করেছেন তদন্তকারী গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সূত্রমতে, তিন পদ্ধতিতে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে তিন গোয়েন্দা টিম। এগুলো হচ্ছে- সেলফোন টাওয়ার, ইন্টারনেট ও গতানুগতিক পদ্ধতি। সেলফোন টাওয়ার পদ্ধতিতে হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে হত্যাকাণ্ডস্থলের আশপাশে ব্যবহৃত সকল মোবাইল ফোনের ডাটাবেইজ নিয়ে বিশ্লেষণে নেমেছেন একটি টিম। তাদের কাজ সন্দেহভাজন নম্বরগুলো শনাক্ত করে ব্যবহারকারীর পরিচয় উদঘাটন। এ পদ্ধতিতে প্রায় আড়াই হাজার মোবাইল নম্বর মনিটরিং করছেন তদন্তকারী টিম। এছাড়া ইন্টারনেট ভিত্তিক তদন্তের মধ্যে রাজীব ও সন্দেহভাজনদের ই-মেইল, ফেসবুক ও ব্লগসহ বেশ কিছু ওয়েব সাইট নজরদারি করছেন গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে কারা রাজীবকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করেছেন। পাশাপাশি পরিচয় শনাক্ত করে বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া আনিকার ফেসবুক বন্ধুদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাজীব খুন হওয়ার আগে একাধিক ব্যক্তি তার বাসার আশপাশে অবস্থান নিয়েছিলেন। কখন, কোথায় যাচ্ছেন, কখন বাসায় ফিরছেন- এর সবই খুনিদের কাছে সরবরাহ করেছে ওই অনুসারীরা। সন্দেহভাজন অনুসারী হিসেবে তাদের বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এখন গ্রেপ্তার করতে পারলেই খুনের রহস্য উদঘাটন করা যাবে।
সূত্রমতে, ২০০৭ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর আনিকা ব্রোজিন তার ফেসবুক আক্যাউন্ট খুলেছেন ‘বাসন্তী টুকটুকি’ নামে। প্রোফাইল পিকচারে সিঁদুর পরা ছবি যুক্ত করেছেন। সেখানে ১৩৭ জনের ফ্রেন্ড লিস্ট থাকলেও রাজীবের নাম নেই। ১৫ই ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে পল্লবী থানাধীন পলাশ নগরের ৫৬/৩ নম্বর নিজ বাড়ির সামনে থেকে স্থপতি ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন ওরফে শুভ’র লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সূত্রমতে, ২০০৭ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর আনিকা ব্রোজিন তার ফেসবুক আক্যাউন্ট খুলেছেন ‘বাসন্তী টুকটুকি’ নামে। প্রোফাইল পিকচারে সিঁদুর পরা ছবি যুক্ত করেছেন। সেখানে ১৩৭ জনের ফ্রেন্ড লিস্ট থাকলেও রাজীবের নাম নেই। ১৫ই ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে পল্লবী থানাধীন পলাশ নগরের ৫৬/৩ নম্বর নিজ বাড়ির সামনে থেকে স্থপতি ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন ওরফে শুভ’র লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
__._,_.___