Banner Advertise

Thursday, February 20, 2014

[chottala.com] FW: নির্ভীক চিত্তের প্রতীক মাহমুদুর রহমান




 

Date: Thu, 20 Feb 2014 14:42:23 +0600
Subject: নির্ভীক চিত্তের প্রতীক মাহমুদুর রহমান
From: bdmailer@gmail.com
To:

নির্ভীক চিত্তের প্রতীক মাহমুদুর রহমান

মো হা ম্ম দ জ য় না ল আ বে দী ন





কারারুদ্ধ নির্যাতিত সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের অকুতোভয় সাহসিকতা দেখে প্রাচীন এথেন্স তথা আজকের গ্রিসের চারণ-দার্শনিক ও পণ্ডিত সক্রেটিসের কথা বার বার মনে পড়ছে। স্বদেশের পক্ষে তিন তিনটি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীরের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দার্শনিক সক্রেটিসকে ৭০ বছর বয়সে একটি মুক্ত গণতান্ত্রিক জনপদ এথেন্সে শুধু ভিন্নমত পোষণের কারণে মিথ্যা অভিযোগে কেন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো, তা আজো ভাবতে অবাক লাগে। কারণ তিনি সত্য কথনের অপরাধে (?) তত্কালীন এথেন্সের শাসকগোষ্ঠীর কোপানলে পড়েছিলেন। কারণ তিনি যুবসমাজ তথা এথেনীয়দের সামনে তত্কালীন সমাজ ও শাসকদের
​​
ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরতেন, যাকে শাসকরা তাদের স্বার্থের পরিপন্থী এবং শাসনের ধারাবাহিকতা রক্ষার পথে বিরাট বাধা হিসেবে বিবেচনা করে।

তাই তাকে সরিয়ে দেয়ার জন্য নানা ধরনের মিথ্যে অভিযোগ আনা হলো। বলা হলো, সক্রেটিস চাঁদ কিংবা সূর্যকে ঈশ্বর হিসেবে মানেন না; বরং এর বিপরীতে অন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন। অর্থাত্ সরকারি ধারার বাইরে তার অবস্থান। এর জবাবে তিনি বলেছিলেন : এথেন্সের জনগণ, আমি তোমাদের সম্মান করি, ভালোবাসি। আমি সৃষ্টিকর্তাকে বরং তোমাদের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। এরপরেও তার বিরুদ্ধে ধূর্ততা, ধর্মহীনতা, ঈশ্বরহীনতা, পাপাচার, অসততা প্রভৃতি অভিযোগ আনা হয়—যাদের একটিও সত্যি ছিল না। এসব অভিযোগের মুখে নির্ভীক এ দার্শনিক বললেন : যতক্ষণ আমি জীবিত ও সুস্থ থাকবো, দর্শন (বিশ্বাস) অনুশীলন (পালন) ও প্রচার হতে কোনোভাবেই পিছু হটবো না ।
সত্তর বছর বয়সী বৃদ্ধ সক্রেটিস হয়তো ক'দিন পরেই স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করতেন। জুরিবোর্ড তার তার বয়সের কথা বিবেচনা করে তাকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে পারতো। কিন্তু জুরিরা ভাবলেন : সক্রেটিসকে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ানো থেকে নিবৃত করার জন্য তাকে হত্যা করাই হবে শ্রেষ্ঠ পন্থা। তারা তাদের রায়ে তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

এথেন্সের পক্ষে তিন তিনটি যুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনকারী সক্রেটিসকে তার শিষ্যরা পালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি সে ভীরুতা-কাপুরুষতা পরিহার করে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নিজহাতে বিষপান করে মতলবি বিচারকদের মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করেন। এমন মৃত্যুই তাকে চির অমরত্বের মুকুট পরিয়েছে। আর সরকারের আজ্ঞাবহরা নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে অজ্ঞ ও নির্বোধ নিষ্ঠুর হিসেবে ইতিহাসে কলঙ্কের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

মাহমুদুর রহমান তার লেখালেখি ও পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিতে তেমন সাহসিকতার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। ৬২টি মামলা তার বিরুদ্ধে ঝোলানো হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা আদালতে বন্দি অবস্থায়ও তাকে যেতে হয়েছে, রিমান্ড নামক টর্চার সেলে তার দেহ-মন বার বার রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হয়েছে; কিন্তু তিনি তার আদর্শ থেকে একচুলও সরে আসেননি। আদালতে আনীত অভিযোগকে তিনি কখনোই স্বীকার করেননি কিংবা কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হননি অথবা ক্ষমাপ্রার্থনাও করেননি। কারণ বিবেক স্বচ্ছ, যা বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলা অন্যায় নয়। ক্ষমতাধরদের বিশ্বাস ছিল, কারাদণ্ডের পর মাহমুদুর রহমান চুপসে যাবেন, তাদের সমীহ করবেন। কিন্তু মাহমুদুর রহমান তাদের ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করলেন। তিনি আরো সোচ্চার, আরো তেজী ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। তিনি জানতেন, এজন্য তাকে মূল্য দিতে হবে, তা সত্ত্বেও তিনি পেছালেন না। দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হওয়ার পর অকুতোভয়ে আদালতে বিচারকের মুখের ওপর সত্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে যা বললেন তা এরকম : আমি কোনো আইনজীবীও নিয়োগ করব না। আপনার কাছে জামিনের আবেদনও করব না। আমি জানি আমাকে জামিন দেয়ার কোনো ক্ষমতা আপনার নেই। কারণ সরকারের নির্দেশ ছাড়া আপনি কিছুই করতে পারবেন না। তাই আপনার কাছে যে নির্দেশ এসেছে, তেমনটিই পালন করুন। এমন বাস্তব ও সাহসী বক্তব্য এর আগে বাংলাদেশের কোনো সাংবাদিক, এমনকি রাজনীতিকের কাছ থেকেও শোনা যায়নি।

এখন সক্রেটিসের যুগ নেই। সে জ্ঞান আর সত্যবাদিতা সাহসিকতার আকাল বাংলাদেশজুড়ে। এখন ক্ষমতা এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক স্বার্থশিকারিদের যুগ। কিন্তু এ অস্বস্তিকর পরিবেশে বার বার মাহমুদুর রহমান যে সাহসিকতা ও দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছেন, তা কেবল সক্রেটিসদের পক্ষেই সম্ভব। মাহমুদুর রহমানের জ্ঞানের গভীরতাকে আমি অতুলনীয় সক্রেটিসের পর্যায়ে নিতে চাই না; কিন্তু সাহসিকতায় এবং আপসহীনতায়, সর্বোপরি সত্যকথনে, সত্য উদ্ঘাটনে মাহমুদুর রহমান যেন সক্রেটিসেরই প্রতিধ্বনি ও অনুরণন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।

মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে পালিয়ে না গিয়ে, কোথাও আত্মগোপন না করে পত্রিকার কার্যালয়ে চার মাস অবরুদ্ধ ছিলেন। দুঃসাহসী এ সাংবাদিক এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, তিনি গ্রেফতার হওয়ার অপেক্ষায় অফিসে বসে আছেন। আর ১১ এপ্রিল (২০১৩) মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করার উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা আমার দেশ অফিসে প্রবেশ করার সময় মাহমুদুর রহমান সকালের নাস্তা শেষে চা পান করছিলেন। তিনি তাদের বসার জন্য অনুরোধ জানান। অনুরোধের জবাবে গোয়েন্দা সদস্যরা তাকে বলেন, 'আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।' মাহমুদুর রহমান তাদের ইঙ্গিত বুঝতে ব্যর্থ হননি। কোনো প্রশ্ন না করেই বললেন, 'আমি গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। আপনারা বসুন। আমি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিই'। তাকে নামাজ পড়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। তাকে গ্রেফতার করে গাড়িতে ওঠানোর পর উপস্থিত সাংবাদিক ও সহকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বললেন, 'আপনারা পত্রিকা চালিয়ে যান আমার জন্য চিন্তা করবেন না।' এই হলেন মাহমুদুর রহমান : নির্ভীক চিত্তের প্রতীক।

কিন্তু আটক করার পর ইদানীং বাংলাদেশে কী করা হয় তা মাহমুদুর রহমান জানতেন, যা দেশবাসী-আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও ইতোমধ্যেই জেনেছেন। কোনো সুস্থ ব্যক্তি ভাবতেই পারেন না ভিন্নমত পোষণ করার জন্য কারো বিরুদ্ধে এমন উদ্দেশ্যমূলক ও সাজানো মামলা দিয়ে কারো ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন করা যেতে পারে। মাহমুদুর রহমানকে সে নরকের জ্বালা সইতে হয়েছে। লোহার নখের আঘাতে মাহমুদুর রহমানের শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ইলেকট্রিক শক্ দেয়া হয়েছে। শরীর থেকে পোশাক সরিয়ে নিয়ে শরীর রক্তাক্ত করা হয়েছে।

গণতান্ত্রিক শাসনে কিংবা স্বাধীন দেশে নয়, আমি নিজেও পাকিস্তানি সামরিক শাসনামলে দু-দুবার জেলে ছিলাম। আমার মতো হাজার হাজার শিক্ষার্থী-রাজনৈতিক নেতাকর্মী কারারুদ্ধ হয়েছিলেন। আমার সঙ্গে চট্টগ্রাম কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম এম এ আজিজ একই কক্ষে ছিলেন। কিছুদিন পর তত্কালীন সরকারপন্থী ছাত্রসংগঠন 'এনএসএফ' কর্মীদের ওপর হামলা করার অভিযোগে ছাত্রলীগের বেশকিছু নেতাকর্মীকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। আমাদের অথবা সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে নানা অভিযোগে আটক ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীর কাউকেই রিমান্ড নামক টর্চার সেলে নেয়া হয়নি। এমনকি আগরতলা ষড়যন্ত্রের জন্য শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হলেও তাকে এবং একই মামলায় গ্রেফতার অন্যদের রিমান্ডে নিয়ে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে নির্যাতন করা হয়নি অথবা ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়নি। এ ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হতো কারাগারে কোনো কোনো ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত কিংবা চরমভাবে কারাগারের আইন ভঙ্গ করেছে এমন বেপরোয়া বন্দিদের। একটি দেশ ভেঙে দেয়ার জন্য মারাত্মক অভিযোগ সত্ত্বেও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী শেখ মুজিবকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে আটক রাখে। সেখানে তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে কিংবা তার ওপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে, এমন কোনো কাহিনী শেখ মুজিব কখনোই বলেননি। কোনো সংবাদমাধ্যমেও তেমন খবর আসেনি।

স্বাধীনতার প্রথম সাড়ে তিন বছরে ভিন্নমত পোষণের জন্য সাংবাদিক আল মাহমুদ, এনায়েতউল্লাহ খান, আবদুস সালাম, মাহবুবুল হক প্রমুখ ছাড়াও রাজনৈতিক কারণে জাতীয় পতাকার উত্তোলক আ স ম আবদুর রব, মেজর জলিলসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করা হলেও তাদের কাউকেই রিমান্ড নামক টর্চার সেলে নেয়া হয়নি, শরীরের সব পোশাক খুলে নির্যাতন করা হয়নি। এমনকি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনকারী ফজলুল কাদের চৌধুরী, কবি ফররুখ আহমদসহ আটকদের কখনো রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, এমন ঘটনা কখনোই শুনিনি। সশস্ত্র রাজনীতির অভিযোগে সিরাজ সিকদারকে আটক করে মেরে ফেলা হয়েছে; কিন্তু তাকেও রিমান্ডে নেয়া হয়নি।

অথচ মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। স্বাধীন দেশে নিজের মতপ্রকাশ করার কারণে মাহমুদুর রহমানকে ডজন ডজন মামলায় আটক করে জামিন অস্বীকার করে রিমান্ডে পাঠিয়ে দিনের পর দিন তার ওপর যে ধরনের অপমানজনক অকথ্য অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে তা কোনো স্বাধীন দেশে তো নয়ই, এমনকি কোনো পরাধীন দেশেও কল্পনা করা যায় না। মাহমুদুর রহমান কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা নন। তিনি কিংবা তার কোনো উত্তরাধিকারী কারো ছেলে-সন্তানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বীও নন। তিনি লেখনীর মাধ্যমে তার মত প্রকাশ করেন। সত্যকে তুলে ধরেন। অন্যায়-অপকর্ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য, দেশের স্বার্থ-স্বাধীনতা ও প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষায় আমাদের মতো 'ঘুমিয়ে পড়া'দের জাগ্রত করেন। একজন বিবেকবান দেশপ্রেমিক, সর্বোপরি মুসলমান হিসেবে তিনি এ কাজগুলোকে তার ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব বলেই মনে করেন। অন্যদিকে এগুলো তার শাসনতান্ত্রিক ও জন্মগত অধিকার, যা কোনো ব্যক্তির কিংবা রাজা-বাদশাহর দান-দক্ষিণা নয় কিংবা তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর এগুলো নির্ভর করে না। কারো বিরুদ্ধে অযথা মিথ্যাচার না করে দেশ ও জাতির কল্যাণে অন্যায়-অপকর্ম প্রতিরোধ করতে তার বিবেক তাকে যেদিকে চালিত করে, সেভাবে লেখার কিংবা বলার অধিকার তার রয়েছে। এ ক্ষমতা ও অধিকার যে কোনো ব্যক্তির জন্যই আল্লাহ প্রদত্ত। কারণ এভাবে লেখার, কথা বলার ক্ষমতা আল্লাহ সবাইকে দেন না, বিশেষ বিশেষ সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদেরই তা দিয়ে থাকেন। তাই আধুনিক বিশ্বের সব দেশেই এ ধরনের প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বদের সম্মান করা হয়, স্বীকৃতি দেয়া হয়।

এ ধরনের ব্যক্তিদের দায়িত্ব হলো আল্লাহর দেয়া ক্ষমতা ও প্রতিভাকে সঠিকভাবে জনকল্যাণে ব্যবহার করা, যা না করলে তাদের আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। মাহমুদুর রহমান সে দায়িত্ব নির্ভয়ে পালন করছেন এবং পালন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এটা তার অধিকারও। আধুনিক বিশ্বে এ অধিকারকে বিভিন্নভাবে নামকরণ করা হয়েছে : জন্মগত অধিকার, মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, শাসনতান্ত্রিক অধিকার, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের ও বিবেকের অধিকার প্রভৃতি। এসব অধিকারকে অস্বীকার করা মানে মানবতাবিরোধী অপরাধ করা, স্বৈরাচারী আচরণ করা। মাহমুদুর রহমান দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে ধরনের অপরাধ ও আচরণের শিকার, একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে যা কোনোভাবেই ঘটতে পারে না। এ গণতন্ত্রের জন্যই আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। পাকিস্তানিরা ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিলে ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয় না।

আমাদের দুর্ভাগ্য, যে গণতন্ত্রের জন্য 'জান কোরবান', শেখ হাসিনার শাসনামলেই বাংলাদেশে এমন রিমান্ড নামক বর্বরোচিত অত্যাচারের বিকট চেহারা চালু হয়েছে। কথায় কথায় রিমান্ড। একজন সুস্থ-সবল মানুষকে রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড থেকে বের করে আনার পর তিনি বিপর্যস্ত-বিকলাঙ্গ চলত্শক্তিহীন হয়ে যান, হাঁটাহাঁটি করতে অক্ষম-অযোগ্য হয়ে পড়েন, যাকে একাধিক পুলিশ ধরাধরি করে আদালতে হাজির করে। কাউকে কাউকে অজ্ঞান অবস্থায় ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে ধরাধরি করে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এ ধরনের অমানবিক আচরণ কোনো সুস্থ সরকার বা মানুষের কাজ হতে পারে না। এ হলো বর্তমান সরকারের গণতন্ত্র। আর এটা যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, অর্থাত্ এ ধারা রক্ষা করার জন্য আওয়ামী লীগ নেত্রী জনগণকে বার বার সাবধান করে দেন, তাদের সাহায্য-সমর্থন কামনা করেন। গণতন্ত্রের চেহারা এতো বিকট, নির্মম ও স্বৈরতান্ত্রিক হোক—কোনো সুস্থ ব্যক্তিই তা কামনা করেন না। গণতন্ত্রে সব মতের ও পথের মিলন ঘটে—তেমন স্বতঃসিদ্ধ বিশ্বাস থেকেই মানুষ কথা বলে, লেখে। সুস্থ ভিন্নমত কোনো অপরাধ নয়।

তাহলে মাহমুদুর রহমানের অপরাধ কোথায়? তথ্যাভিজ্ঞ মহল এমন প্রশ্নের বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন। তারা মনে করেন : মাহমুদুর রহমানের সত্যকথনে অকুতোভয় সাহসিকতা এবং আপসহীনতাই তার বড় অপরাধ। তিনি রক্তচক্ষুকে তোয়াজ করেন না, তোয়াক্কা করেন না, কোনো স্বার্থের কাছে আত্মসমর্পণ করেন না, নির্যাতনকে ভয় করেন না—যা শাসকগোষ্ঠীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের কাছে এগুলোও তার অপরাধ।
মাহমুদুর রহমানের আরেকটি অপরাধ হলো, সত্য লিখতে গিয়ে, সত্য বলতে গিয়ে এবং আমাদের মতো অনেককেই সত্যকথনে উজ্জীবিত করতে গিয়ে তিনি দেশি-বিদেশি বৈরীশক্তির চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ; ধর্মকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও পরিচিতি; দেশের স্বার্থ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতন্দ্রপ্রহরী হিসেবে হিমালয়ের মতো অনড় অবস্থানে রয়েছেন। জ্বালানি উপদেষ্টা থাকাকালীন তিনি হাজারো চাপ সত্ত্বেও ভারতীয় টাটা কোম্পানিকে গ্যাস দিতে অস্বীকৃতি জানান। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ এবং বাংলাদেশের বুক চিরে ভারতীয় যান চলাচলের বিপক্ষে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন। ভারতের বাংলাদেশবিরোধী সব চক্রান্ত ও অপকৌশল উন্মোচনে তার সম্পাদিত দৈনিক আমার দেশ অতন্দ্রপ্রহরীর ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু জনগণের মধ্যে স্বদেশপ্রেম ও জাত্যভিমানের যে জাগরণ 'আমার দেশ' সৃষ্টি করেছে, তা ধ্বংস করতে হতদরিদ্র ভুয়া পরাশক্তি সাজার স্বপ্নে বিভোর ভারত তার মিত্রদের মাধ্যমে মাহমুদুর রহমানের কণ্ঠরোধে যে সচেষ্ট হবেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি শেখ হাসিনা সরকারের নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রকাশ্য ও গুপ্তহত্যা, গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন, অগণতান্ত্রিক আচরণ, বিচার বিভাগসহ সবকিছুকে দলীয়করণ ও অঘোষিতভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন করার প্রক্রিয়া প্রভৃতিকে জনসম্মুখে তুলে ধরায় তিনি বর্তমান সরকারের রোষানলে পড়েছেন। অর্থাত্ মাহমুদুর রহমান দেশি-বিদেশি শত্রু ও শক্তির যৌথ শিকার।

তথ্যাভিজ্ঞমহলের ধারণা, মাহমুদুর রহমান জয়ের দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তিনি শেখ হাসিনার শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। দৈনিক আমার দেশ ৭ ডিসেম্বর (২০০৯) প্রকাশিত 'তৌফিক-ই-ইলাহী ও জয়ের বিরুদ্ধে পাঁচ মিলিয়ন ডলার ঘুষ নেয়ার অভিযোগ' শীর্ষক প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয় যে, কোনো টেন্ডার ছাড়াই ৩৭০ কোটি টাকার কাজ পছন্দের কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে।

এমন সত্য প্রকাশে আপসহীন অবস্থানই মাহমুদুর রহমানের জন্য কাল হয়েছে। যেখানে বাঘা বাঘা সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী ক্ষমতাসীনদের পদলেহন করে ডিগবাজি করে রাতারাতি ভোল পাল্টে উপরে ওঠার সড়ক তৈরি করে, সেখানে মাহমুদুর রহমান সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে রয়েছেন, স্রোতের বিপরীতে চলছেন। ন্যায় ও সত্যের বিপক্ষে এবং অন্যায়-অপকর্ম-দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যে কোনো বিবেকবান ও ন্যায়নিষ্ঠ মানুষের দায়িত্ব। 'তোমরা সত্যকে মিথ্যের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলো না এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করো না'— মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের এ উপদেশ-নির্দেশকে বিশ্বের অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ কিংবা মনীষী অবাস্তব কিংবা অনুকরণযোগ্য নয়—এমন মন্তব্য এ পর্যন্ত করেননি। বরং সব মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য, সমাজে সুবিচার, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এর চেয়ে উত্তম কোনো উপদেশ হতে পারে না। আমার মনে হয়, মাহমুদুর রহমানের বিবেক এ নির্দেশ-উপদেশকেই অনুসরণ করেছে, তাই তিনি সত্যকথনে সত্য লিখনে কোনো আপস করেননি। যে ব্যক্তি নিজের বিবেকে তাড়িত হয় না, অন্যায়-অপকর্ম দেখলে সোচ্চার হয় না, অন্তত মনে মনে হলেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না, তার মানবিক অনুভূতিগুলো লোপ পেয়েছে। সে হয়তো স্বার্থের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছে কিংবা ভয়-ভীতির কাছে মাথানত করেছে।

মাহমুদুর রহমান এ ধরনের কোনো রোগে আক্রান্ত নন। এখানেই মাহমুদুর রহমানের স্বাতন্ত্র্য। যেসব সুবিধাবাদী স্বার্থশিকারি সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে সাংবাদিক হিসেবেই স্বীকার করতে চান না, তারা জানেন তাদের ঘাটতি কোথায়। তারা মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে ঈর্ষায় ভোগেন। কারণ সাংবাদিকতায় নবাগত এ প্রতিভা সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাহমুদুর রহমান একটি পরিচিত ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। বিক্রি হয়ে যাওয়া সাংবাদিক পৌরহিতদের পক্ষে তার কাছে-কিনারে যাওয়া সম্ভব নয়। আমার কথায় বাজি ধরে তারা বাংলাদেশের যে কোনো শহরে গিয়ে তা পরখ করতে পারেন। মাহমুদুর রহমানের এ জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা তার সাহসিকতা, প্রতিবাদী অবস্থান এবং আপসহীনতার ফলশ্রুতি ও পুরস্কার।

মাহমুদুর রহমান আমাদের দেশের অনেক সাংবাদিককে সত্যকথনের পথ দেখিয়েছেন। স্বার্থের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে সততা ও স্বদেশপ্রেমের কণ্টকময় পথে হেঁটে হাজারো অত্যাচার সয়ে তিনি যে সর্বোচ্চ ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, নৈতিকতা ও স্বদেশপ্রেমের অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন, তা ইতোমধ্যেই আমাদের মতো সত্ অথচ ভীতু-কাপুরুষদের জন্য সাহস সঞ্চয়ে প্রেরণার উত্স হয়ে থাকবে। আজ না হোক, মাহমুদুর রহমান শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এক বিজয়ী বীর হয়ে বেঁচে থাকবেন। কারণ সক্রেটিসরা মরেও মরেন না। এরা মৃত্যুকে পরাভূত করে মৃত্যুঞ্জয়ী হন। বাংলাদেশের সমকালীন ইতিহাসে মাহমুদুর রহমান তাই অনন্য। আমলা থেকে সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ায় যারা নাক সিটকায়, যারা মনে করেন সাংবাদিক না হলে সম্পাদক হওয়া যায় না, তারা মাহমুদুর রহমানের মতো সম্পাদক হয়ে দেখান। তার লেখার মান কি সত্যিই পঠনযোগ্য নয়, তার যুক্তি কি সত্যিই অগ্রহণযোগ্য? তার লেখাপড়ার মান কি সম্পাদক হওয়ার মতো উচ্চমার্গের নয়? এমন হাজারো প্রশ্ন করলে প্রতিটির ইতিবাচক ও গ্রহণযোগ্য উত্তর পাওয়া যায়। তাকে আটকে রেখে সরকার কেবল তার দুর্বল অবস্থানের কথাই জানান দিচ্ছে। সরকারের ইমেজ ও গণতন্ত্রের প্রতি জবাবদিহিতার স্বার্থেই মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দেয়া উচিত। কারাগারে বন্দি থেকে মাহমুদুর রহমানের হারানোর কিছুই নেই। কার্ল মার্কসের ভাষাকে অনুসরণ করেই বলতে চাই : মাহমুদুর রহমানের হারানোর কিছুই নেই—জয় করার আছে সারা বিশ্বের মানুষের হৃদয়।
লেখক : বাংলাদেশী-আমেরিকান সাংবাদিক ও গবেষক
noa@agni.com



__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___