Dear All,
Jamati's London based lawyer was expelled from Bangladesh for legitimate reasons . Please read the article below for details :
Respectfully,
Dr. Manik
ইদানীং জামায়াতে ইসলামীর কর্মী, সমর্থক সর্বোপরি তাদের দেশীয় আইনজীবী একটি প্রোপাগান্ডা অনেকটা খেয়ে আর না খেয়েই চালাচ্ছেন। সেটি হলো, গত ৫ আগস্ট হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকেই জামায়াতী আইনজীবী টবি ক্যাডম্যানকে বেঅইনীভাবে লন্ডনে পত্রপাঠ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা এই 'বেআইনী' শব্দটির সঙ্গে আবার কিছু শব্দ ও উপমা যোগ করে ব্যাপারটির গাম্ভীর্য আরও দুই-তিন ডিগ্রী সরেস করে ফেলতেও কারিশমা দেখিছে। তারা বলছে, এতে করে নাকি আইনের শাসন পণ্ড হয়ে গেছে, দেশে বিচার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, যুদ্ধাপরাধ বিচারে 'বিশেষ' দক্ষ টবি ক্যাডম্যানকে না ঢুকতে দেবার কারণে নাকি অল্পের জন্য সাঈদী, সাকা, নিজামী গং কারাগার থেকে মুক্তি পেলো না। টবি ক্যাডম্যান ঢাকায় ঢুকতে পারলে নাকি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবু্যনালের প্রসিকিউশনের আইনজীবীদের আর দেখতে হতো না, ইত্যাদি..... ইত্যাদি......
কিন্তু আসলে কি ঘটেছে এটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা জানতে পারলাম, তাতে আসলেই বিস্মিত হয়েছি। বিস্ময়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্যই আসলে খুব কষ্ট হলো। একটা দরিদ্র দেশের ওপর সবাই চেপে বসতে চায়। যেন ক্ষমতা আর সাদা চামড়ার ছড়ি ঘোরালেই কেল্লাফতে। জামায়াত ও তাদের দোসররা অন্তত এই-ই মনে করে। কি ঘটেছিলে আসলে? টবি ক্যাডম্যান প্রথমত নিজেকে জামায়াতের আইনজীবী পরিচয় দিলেও কাগজেকলমে তিনি জামায়াতের তথা সাঈদী, নিজামী, সাকা কিংবা কারও আইনজীবী নন। স্টিভেন কে কিউসি এবং টবি ক্যাডম্যানসহ আইনী খরচ চালাবার জন্য লন্ডন থেকে প্রায় ৫ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহ করেছে লন্ডনের জামায়াত নেতারা। সেই অর্থেই টবি ক্যাডম্যান এবং স্টিভেন কে কিউসি মূলত জামায়াতের আন্তর্জাতিক লবিস্ট হিসেবে কাজ করে। তাদের মূল কাজ হলো বিভিন্ন টিভি, পত্রিকা, টক শো, জার্নালে তারা বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের হয়ে কাজ করবে এবং বাংলাদেশের সরকার ও আইনের বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য রাখবে। স্টিভেন কে কিউসি বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি এবং সংশোধনীগুলো সম্পর্কে বিভ্রানত্মিমূলক মিথ্যা তথ্য মিডিয়াতে প্রচার করছে। এসব মিথ্যাচারের আইনী উত্তর দিতে গেলে আরও একটা বিশেস্নষণী নিবন্ধ রচনা করতে হবে। প্রয়োজন হলে যথাসময়ে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করব। জানি না, লবিস্ট আইনজীবী তার লবিং থেকে অবশেষে সড়ে দাঁড়াবেন কিনা, তবে তার মিথ্যাচার-অপব্যাখ্যার জন্য তাকে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে বিচারাধীন করা যায়।
গত জুলাই মাসের মধ্যভাগে টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের ভিসার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন বরাবর একটি্ আবেদনপত্র দাখিল করেন। এই আবেদনপত্র দাখিলের আগে টবি ক্যাডম্যান দুইবার বাংলাদেশ ঘুরে যান জামায়াতীদের উদ্যোগে দু'টি সেমিনারে অংশগ্রহণ করার জন্য। টবি ক্যাডম্যানের এসব কর্মকাণ্ড জানবার পরও এবং আওয়ামী লীগের মতো এমন একটা ফ্যাসিস্ট (জামায়াতীদের মতে) দল ক্ষমতায় থাকবার পরও এই টবি ক্যাডম্যানকে তৃতীয়বারের মতো ভিসা দেয় বাংলাদেশ সরকার। এই ভিজিট ভিসায় টবি ক্যাডম্যান লিখিতভাবে জানান যে, তিনি বাংলাদেশে ঘুরতে যাবেন এবং সেই কারণে তিনি ভিজিট ভিসার জন্য তার আবেদন পেশ করেন। বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডন টবিকে ৩ মাসের মাল্টিপল ভিসা প্রদান করে। টবি ক্যাডম্যান ৫ আগস্ট এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে পেঁৗছেন। টবিকে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তার বাংলাদেশে আসার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। এটি একটি প্রথাগত প্রশ্ন। সব দেশের ইমগ্রেশনই এই কমন প্রশ্নটি করেন। এই প্রশ্নের উত্তরে টবি ক্যাডম্যান খুব দাম্ভিকভাবে জানান যে, তিনি বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ আইনে অভিযুক্ত সাঈদী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী। তাদের আইনী ব্যাপারে তদারকি ও বাংলাদেশের কোর্টে আইনী লড়াই করতেই তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা টবিকে জানান যে, তিনি ভিজিট ভিসায় বাংলাদেশে এসেছেন, কিন্তু আপনি পেশাগত কারণে বাংলাদেশে এসেছেন এটি আপনার ভিসা আবেদনে বলেননি। এ কারণে আপনাকে আবার লন্ডন থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে আসতে হবে। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা টবিকে এও বলেন যে, তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করেছেন, এই ক্ষেত্রে তার এখতিয়ার রয়েছে টবিকে আইনের হাতে সোপর্দ করার। এই কথা শুনে টবি ক্যাডম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং সে সময় ইমিগ্রেশন পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং টবিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটা কক্ষে নেয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে টবি সাঈদী ও সাকার আইনজীবী বলে নিজেকে পরিচয় দিলে আবারও ওয়ার্ক পারমিট ভিসার কথা বলে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশের কর্মকর্তারা এবং তারা ইমার্জেন্সি বেসিসে যোগাযোগ করেন বার কাউন্সিলের সঙ্গে। বার কাউন্সিল ইমিগ্রেশন পুলিশকে জানায় যে, টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের সদস্য নন এবং তিনি সাঈদী ও সাকার আইনজীবী, এমন কোন তথ্য তাদের কাছে নেই। সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম ও বদরম্নদ্দোজা বাদল বলে তথ্য দেয় বার কাউন্সিল। এসব তথ্য দেয়া-নেয়ার এক পর্যায়ে খবরটি জানাজানি হয় বাংলাদেশের ব্রিটিশ হাইকমিশনে এবং তারা বিমানবন্দরে ছুটে যান। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশে আসার জন্য টবি ক্যাডম্যানের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে সিদ্ধানত্ম নিলে ব্রিটিশ হাইকমিশনের মধ্যস্থতায় ওই যাত্রা টবি ক্যাডম্যানকে শুধু ডিপোর্ট করে দেয় ইমিগ্রেশন।
পাঠক, আমি জানি না আপনারা জানেন কি-না, ইংল্যান্ডে বসবাসরত শত শত বাঙালী রয়েছেন যাঁরা সেই দেশের পাস করা এবং স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার এ্যাট ল করেছেন এবং তারা অনারেবল বিভিন্ন ইনস-এর সদস্য। অথচ এঁরা কেউই ব্রিটেনে মেইন স্ট্রিমে মামলা লড়তে পারবেন না। কারণ 'পিপোলেজ' নামে একটি বাধা তৈরি করে এসব বাঙালী ও অন্যান্য দেশী ব্যারিস্টারকে আটকে দেয়া হয়েছে। একজন বাংলাদেশের আইনজীবী যদি আজকে টবি ক্যাডম্যানের মতো একটা গুরম্নত্বপূর্ণ মামলা লড়তে আসতেন মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে, তাহলে কি হতো আপনারা কি কল্পনা করতে পারেন?? তাঁকে কয়েক ঘণ্টার ভেতরই আদালতে প্রেরণ করা হতো এবং এক মাসের ভেতরই তাকে শাসত্মি দেয়া হতো এবং যুক্তরাজ্যে ১০ বছরের জন্য ব্যান করা হতো।
অথচ, শুধু প্রোপাগান্ডা ছড়াবার জন্যই আজ জামায়াতীরা টবি ক্যাডম্যানের এই জালিয়াতি চেপে গিয়ে 'তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি' 'আইনের শাসন লঙ্ঘিত হয়েছে' ইত্যাদিভাবে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের নামে দুর্নাম ছড়ানো হচ্ছে। একজন বিদেশী আইনজীবী কি চাইলেই বাংলাদেশে ওকালতি করতে পারেন? এটা কি সম্ভব? বাংলাদেশের বার কাউন্সিলে প্রতি ডিসেম্বর ও ফেব্রম্নয়ারিতে লোয়ার কোর্টে পরীক্ষা হয় এবং তারপর অনুষ্ঠিত হয় ভাইবা। এসব পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হলেই একজন ব্যক্তি বাংলাদেশের আদালতে প্র্যাক্টিস করতে পারবেন। এই যে আমি পরীক্ষা আর ভাইবার কথা বললাম, সেটা হলো লোয়ার কোর্টে প্র্যাক্টিস করবার নিয়ম। এই সার্টিফিকেট পেতেই লেগে যায় এক থেকে দেড় বছরের মতো। সেখানে আবার দুই বছর প্র্যাক্টিস করে আসতে হয় আপার কোর্টে। লম্বা প্রসিডিওর।
অথচ, বাংলাদেশ যেন টবি ক্যাডম্যানের বাবার সম্পত্তি। উনি চাইলেন আর মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশে আসবার পরও আদালত তাকে স্যার স্যার বলে সেখানে প্র্যাক্টিস করার সুযোগ করে দিল। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অবশ্য কিছুরুলস এবং রেগুলেশন রয়েছে বিদেশী আইনজীবীদের ক্ষেত্রে তথা আন্তর্জাতিক লইয়ার লাইসেন্স হোল্ডারের। কিন্তু সেটাও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অনেক ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ করতে হবে, সেটার জন্য যোগ্য হতে হবে এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে ফরমাল আবেদন করলে তারা সব কিছু ক্ষতিয়ে দেখে উক্ত আইনজীবীকে বাংলাদেশে প্র্যাক্টিস করার অনুমতি দিতে পারে। সেটাও সময়সাপেক্ষ। হুট করে আসলাম আর মামলায় লড়লাম, ব্যাপারটা তা নয়।
আমরা দরিদ্র দেশ হতে পারি। গরিব হতে পারি। আমাদের হয়ত ইংল্যান্ডের মতো উন্নত অবকাঠামো নেই। কিন্তু যারা নিজ দেশে সুবোধ বালকের মতো আইন মেনে চলেন, তারা আমাদের মতো দরিদ্র দেশে আসলে গলার হাঁকে সব কিছু কিনে নিতে চান। পার পেয়ে যেতে চান। এখনও এরা মনে করে বাংলাদেশ ওদের সেই রানীর কলোনি। তারা উপলব্ধি করতে পারেন না যে, রক্তক্ষয়ী একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশটি স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
লেখক : সমাজতত্ত্ববিদ এবং অধ্যাপক, চ.বি.
কিন্তু আসলে কি ঘটেছে এটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা জানতে পারলাম, তাতে আসলেই বিস্মিত হয়েছি। বিস্ময়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্যই আসলে খুব কষ্ট হলো। একটা দরিদ্র দেশের ওপর সবাই চেপে বসতে চায়। যেন ক্ষমতা আর সাদা চামড়ার ছড়ি ঘোরালেই কেল্লাফতে। জামায়াত ও তাদের দোসররা অন্তত এই-ই মনে করে। কি ঘটেছিলে আসলে? টবি ক্যাডম্যান প্রথমত নিজেকে জামায়াতের আইনজীবী পরিচয় দিলেও কাগজেকলমে তিনি জামায়াতের তথা সাঈদী, নিজামী, সাকা কিংবা কারও আইনজীবী নন। স্টিভেন কে কিউসি এবং টবি ক্যাডম্যানসহ আইনী খরচ চালাবার জন্য লন্ডন থেকে প্রায় ৫ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহ করেছে লন্ডনের জামায়াত নেতারা। সেই অর্থেই টবি ক্যাডম্যান এবং স্টিভেন কে কিউসি মূলত জামায়াতের আন্তর্জাতিক লবিস্ট হিসেবে কাজ করে। তাদের মূল কাজ হলো বিভিন্ন টিভি, পত্রিকা, টক শো, জার্নালে তারা বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের হয়ে কাজ করবে এবং বাংলাদেশের সরকার ও আইনের বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য রাখবে। স্টিভেন কে কিউসি বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি এবং সংশোধনীগুলো সম্পর্কে বিভ্রানত্মিমূলক মিথ্যা তথ্য মিডিয়াতে প্রচার করছে। এসব মিথ্যাচারের আইনী উত্তর দিতে গেলে আরও একটা বিশেস্নষণী নিবন্ধ রচনা করতে হবে। প্রয়োজন হলে যথাসময়ে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করব। জানি না, লবিস্ট আইনজীবী তার লবিং থেকে অবশেষে সড়ে দাঁড়াবেন কিনা, তবে তার মিথ্যাচার-অপব্যাখ্যার জন্য তাকে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে বিচারাধীন করা যায়।
গত জুলাই মাসের মধ্যভাগে টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের ভিসার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন বরাবর একটি্ আবেদনপত্র দাখিল করেন। এই আবেদনপত্র দাখিলের আগে টবি ক্যাডম্যান দুইবার বাংলাদেশ ঘুরে যান জামায়াতীদের উদ্যোগে দু'টি সেমিনারে অংশগ্রহণ করার জন্য। টবি ক্যাডম্যানের এসব কর্মকাণ্ড জানবার পরও এবং আওয়ামী লীগের মতো এমন একটা ফ্যাসিস্ট (জামায়াতীদের মতে) দল ক্ষমতায় থাকবার পরও এই টবি ক্যাডম্যানকে তৃতীয়বারের মতো ভিসা দেয় বাংলাদেশ সরকার। এই ভিজিট ভিসায় টবি ক্যাডম্যান লিখিতভাবে জানান যে, তিনি বাংলাদেশে ঘুরতে যাবেন এবং সেই কারণে তিনি ভিজিট ভিসার জন্য তার আবেদন পেশ করেন। বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডন টবিকে ৩ মাসের মাল্টিপল ভিসা প্রদান করে। টবি ক্যাডম্যান ৫ আগস্ট এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে পেঁৗছেন। টবিকে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তার বাংলাদেশে আসার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। এটি একটি প্রথাগত প্রশ্ন। সব দেশের ইমগ্রেশনই এই কমন প্রশ্নটি করেন। এই প্রশ্নের উত্তরে টবি ক্যাডম্যান খুব দাম্ভিকভাবে জানান যে, তিনি বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ আইনে অভিযুক্ত সাঈদী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী। তাদের আইনী ব্যাপারে তদারকি ও বাংলাদেশের কোর্টে আইনী লড়াই করতেই তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা টবিকে জানান যে, তিনি ভিজিট ভিসায় বাংলাদেশে এসেছেন, কিন্তু আপনি পেশাগত কারণে বাংলাদেশে এসেছেন এটি আপনার ভিসা আবেদনে বলেননি। এ কারণে আপনাকে আবার লন্ডন থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে আসতে হবে। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা টবিকে এও বলেন যে, তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করেছেন, এই ক্ষেত্রে তার এখতিয়ার রয়েছে টবিকে আইনের হাতে সোপর্দ করার। এই কথা শুনে টবি ক্যাডম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং সে সময় ইমিগ্রেশন পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং টবিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটা কক্ষে নেয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে টবি সাঈদী ও সাকার আইনজীবী বলে নিজেকে পরিচয় দিলে আবারও ওয়ার্ক পারমিট ভিসার কথা বলে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশের কর্মকর্তারা এবং তারা ইমার্জেন্সি বেসিসে যোগাযোগ করেন বার কাউন্সিলের সঙ্গে। বার কাউন্সিল ইমিগ্রেশন পুলিশকে জানায় যে, টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের সদস্য নন এবং তিনি সাঈদী ও সাকার আইনজীবী, এমন কোন তথ্য তাদের কাছে নেই। সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম ও বদরম্নদ্দোজা বাদল বলে তথ্য দেয় বার কাউন্সিল। এসব তথ্য দেয়া-নেয়ার এক পর্যায়ে খবরটি জানাজানি হয় বাংলাদেশের ব্রিটিশ হাইকমিশনে এবং তারা বিমানবন্দরে ছুটে যান। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশে আসার জন্য টবি ক্যাডম্যানের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে সিদ্ধানত্ম নিলে ব্রিটিশ হাইকমিশনের মধ্যস্থতায় ওই যাত্রা টবি ক্যাডম্যানকে শুধু ডিপোর্ট করে দেয় ইমিগ্রেশন।
পাঠক, আমি জানি না আপনারা জানেন কি-না, ইংল্যান্ডে বসবাসরত শত শত বাঙালী রয়েছেন যাঁরা সেই দেশের পাস করা এবং স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার এ্যাট ল করেছেন এবং তারা অনারেবল বিভিন্ন ইনস-এর সদস্য। অথচ এঁরা কেউই ব্রিটেনে মেইন স্ট্রিমে মামলা লড়তে পারবেন না। কারণ 'পিপোলেজ' নামে একটি বাধা তৈরি করে এসব বাঙালী ও অন্যান্য দেশী ব্যারিস্টারকে আটকে দেয়া হয়েছে। একজন বাংলাদেশের আইনজীবী যদি আজকে টবি ক্যাডম্যানের মতো একটা গুরম্নত্বপূর্ণ মামলা লড়তে আসতেন মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে, তাহলে কি হতো আপনারা কি কল্পনা করতে পারেন?? তাঁকে কয়েক ঘণ্টার ভেতরই আদালতে প্রেরণ করা হতো এবং এক মাসের ভেতরই তাকে শাসত্মি দেয়া হতো এবং যুক্তরাজ্যে ১০ বছরের জন্য ব্যান করা হতো।
অথচ, শুধু প্রোপাগান্ডা ছড়াবার জন্যই আজ জামায়াতীরা টবি ক্যাডম্যানের এই জালিয়াতি চেপে গিয়ে 'তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি' 'আইনের শাসন লঙ্ঘিত হয়েছে' ইত্যাদিভাবে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের নামে দুর্নাম ছড়ানো হচ্ছে। একজন বিদেশী আইনজীবী কি চাইলেই বাংলাদেশে ওকালতি করতে পারেন? এটা কি সম্ভব? বাংলাদেশের বার কাউন্সিলে প্রতি ডিসেম্বর ও ফেব্রম্নয়ারিতে লোয়ার কোর্টে পরীক্ষা হয় এবং তারপর অনুষ্ঠিত হয় ভাইবা। এসব পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হলেই একজন ব্যক্তি বাংলাদেশের আদালতে প্র্যাক্টিস করতে পারবেন। এই যে আমি পরীক্ষা আর ভাইবার কথা বললাম, সেটা হলো লোয়ার কোর্টে প্র্যাক্টিস করবার নিয়ম। এই সার্টিফিকেট পেতেই লেগে যায় এক থেকে দেড় বছরের মতো। সেখানে আবার দুই বছর প্র্যাক্টিস করে আসতে হয় আপার কোর্টে। লম্বা প্রসিডিওর।
অথচ, বাংলাদেশ যেন টবি ক্যাডম্যানের বাবার সম্পত্তি। উনি চাইলেন আর মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশে আসবার পরও আদালত তাকে স্যার স্যার বলে সেখানে প্র্যাক্টিস করার সুযোগ করে দিল। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অবশ্য কিছুরুলস এবং রেগুলেশন রয়েছে বিদেশী আইনজীবীদের ক্ষেত্রে তথা আন্তর্জাতিক লইয়ার লাইসেন্স হোল্ডারের। কিন্তু সেটাও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অনেক ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ করতে হবে, সেটার জন্য যোগ্য হতে হবে এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে ফরমাল আবেদন করলে তারা সব কিছু ক্ষতিয়ে দেখে উক্ত আইনজীবীকে বাংলাদেশে প্র্যাক্টিস করার অনুমতি দিতে পারে। সেটাও সময়সাপেক্ষ। হুট করে আসলাম আর মামলায় লড়লাম, ব্যাপারটা তা নয়।
আমরা দরিদ্র দেশ হতে পারি। গরিব হতে পারি। আমাদের হয়ত ইংল্যান্ডের মতো উন্নত অবকাঠামো নেই। কিন্তু যারা নিজ দেশে সুবোধ বালকের মতো আইন মেনে চলেন, তারা আমাদের মতো দরিদ্র দেশে আসলে গলার হাঁকে সব কিছু কিনে নিতে চান। পার পেয়ে যেতে চান। এখনও এরা মনে করে বাংলাদেশ ওদের সেই রানীর কলোনি। তারা উপলব্ধি করতে পারেন না যে, রক্তক্ষয়ী একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশটি স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
লেখক : সমাজতত্ত্ববিদ এবং অধ্যাপক, চ.বি.
__._,_.___