একমাত্র আহাম্মক ছাড়া কেউ ভাল নেই।
১০ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৩:৪৮
*আমীর খসরু*
পশ্চিমি দুনিয়ায় টেক কেয়ার বা সাবধানে থাকুন কথাটা বলা হয় বিদায় বেলায়। এখন বাংলাদেশে ভাল থাকুন না বলে বেঁচে থাকুন এ কথাটি বলাই মনে হয় যুক্তিযুক্ত হয়ে পড়েছে। কারণ, বেঁচে থাকাটাই এখন একটা বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। [/sb
এ সমস্যা শুধু হতদরিদ্র কিংবা দরিদ্র মানুষের জন্যই নয়, মধ্যবিত্তের জন্যও। আর বেঁচে থাকার সীমাহীন সংগ্রামের আঁচড় উপরের দিকেও লাগতে শুরু করেছে। আমি স¤প্রতি খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ ঘুরে এসেছি। গিয়েছি একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সে সব অঞ্চলের মানুষের যে সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট তা ঢাকায় বসে আঁচ করা খুবই কঠিন। যদিও ঢাকায়ও এ সঙ্কটের সামান্যই বোঝা যাচ্ছে। মোড়েলগঞ্জের সিডর আক্রান্ত অসংখ্য মানুষের গত নভেম্বর থেকে যে সঙ্কট তা এ দ্রব্যমূল্য হাজার গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। সিডর আক্রান্ত হয়নি এমন এলাকায়ও মানুষ এখন সীমাহীন দুঃখ-কষ্টের মধ্যে জীবন-যাপন করছে। অসংখ্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমি কথা বলেছি এবং কথা বলে একটি বিষয় বুঝেছি যে, তাদের এখন মূল সমস্যা খাদ্যদ্রব্যের ক্রয়ক্ষমতা।
চাল কিংবা অন্য যে কোন খাদ্যদ্রব্যই হোক তা কেনার সক্ষমতা, যাকে অমর্ত্য সেন বারবার তার দুর্ভিক্ষ বিষয়ক রচনাবলিতে ঊহঃরঃষবসবহঃ তত্ত্ব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গ্রামে কোন কাজ নেই। এমন অনেক মধ্যবিত্তকে বিদেশী দাতা সংস্থার রিলিফের লাইনে দেখেছি যা ওই অঞ্চলে অবিশ্বাস্য। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা বলেছেন, এই জীবনে প্রথম কোন রিলিফের লাইনে তারা দাঁড়িয়েছেন।
একই অবস্থা ঢাকার বিডিআরের চালের লাইনেও। আমি নিজে কলাবাগান, খেজুরবাগান, গ্রিন রোডের বিডিআরের চালের দোকানের দীর্ঘ লাইনে অনেক মধ্যবিত্তকে দেখেছিÑ যারা জীবনে এই প্রথম চালের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। আমি যখন এদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে চলে আসি তখন তাদের একজন এসে আমাকে বারবার অনুরোধ করছিলেনÑ তার বক্তব্য যেন আমি না ব্যবহার করি। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন তার লজ্জার কথা। এরকমটা অসংখ্য মানুষের ক্ষেত্রে হয়েছে। একটি বিষয় আমার মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যে একটি বিকাশমান ধারা ছিল তা এখন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
বগুড়ায় কথা বলেছি উত্তরাঞ্চলের প্রবীণ সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বললেন, মানুষ এখন চালের বদলে সস্তার বেগুন, আলু এবং লাউ খাচ্ছে বিকল্প খাদ্য হিসেবে। কিন্তু তা যোগাড় করাও এখন অসংখ্য মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর এডওয়ার্ড ক্যালনের আমি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তিনি পুরো সাক্ষাৎকার জুড়েই একটি মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করলেন, আর তা হলোÑ বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতি সঙ্কটজনক এবং গুরুতর। তিনি ওই সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে এবং কর্মসংস্থানের তীব্র অভাবের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ নিয়েছে।
সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বাজার ঘুরতে গিয়ে বলছেন, কোন সঙ্কট নেই। এখানে একটি কথা বলতে চাই, দুর্ভিক্ষ নিয়ে যারা সামান্য চিন্তা-ভাবনা করেন বা জানেন, তারা এ কথাটি ভালই জানেন যে, দুর্ভিক্ষ শুধু খাদ্যদ্রব্যের মজুত কম থাকলেই যে হবে তা নয়, আসল বিষয়টি হচ্ছেÑ মানুষের সেই খাদ্য কেনার সক্ষমতা আছে কিনা। মানুষ সেই সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ কিংবা উত্তরাঞ্চলÑ সব জায়গা থেকেই একটিই খবর পাওয়া যাচ্ছে, মানুষের হাতে কোন কাজ নেই, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নেই, মানুষ না খেয়ে আছে। এটাকে নীরব দুর্ভিক্ষ কিংবা হিডেন হাঙ্গার যে নামেই ডাকা হোক, কথা একটি: মানুষ না খেয়ে আছে। তবে আমার মতে, দুর্ভিক্ষ কেউ যদি না বলতে চান, তাহলে তারা অন্তত বলুন এটা গণখাদ্যাভাব।
অমর্ত্য সেনসহ দুর্ভিক্ষ নিয়ে যারা কাজ করেছেন গভীরভাবে, তারা বারবারই মানুষের খাদ্য ক্রয়ের ক্ষমতা আছে কিনা সে কথাটির ওপরেই জোর দিয়েছেন। ১৯৪৩ এবং '৭৪-এ এ অঞ্চলের দুর্ভিক্ষ কিংবা ভারতের বিভিন্ন সময়ের দুর্ভিক্ষ বিশ্লেষণে যে সত্যটি বেরিয়ে এসেছে তা হলোÑ মানুষের খাদ্য ক্রয়ের সক্ষমতার অভাবই ছিল সে সময়ের দুর্ভিক্ষের কারণ, খাদ্য মজুত নয়। এবারে বাংলাদেশে খাদ্যদ্রব্যের মজুতে সঙ্কট আছে, আবার মূলত মানুষের হাতে কোন কাজও নেই।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার কথা এ সরকারের সবাই বলছেন। তারা আলু খেতে বলেছেন। সিরাজগঞ্জের মানুষকে কিংবা অন্যত্র যারা না খেয়ে আছেন, তাদের বলে দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। তারা নিজেরাই জীবন বাঁচানোর তাগিদে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছেন। বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জসহ ওই অঞ্চলের অতিশয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, যারা আগে তিন বেলা খেতেন, তারা এখন অতি কষ্টেসৃষ্টে দু'বেলা কিংবা এক বেলা খান। আর যারা আগে দু'বেলা খেতেন তারা এখন বলছেন, জীবন তাদের আল্লাহ চালান। আল্লাহ চালানোর অর্থ কি জানতে চেয়েছিলাম তাদের কাছেÑ তাদের জবাব, তারা অনিয়মিত খাচ্ছেন বা না খেয়ে থাকছেন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনীতিতে সংস্কার, অর্থনীতিতে সংস্কারসহ নানা সংস্কার কর্মসূচি চালু করেছিলেন। এসব সংস্কারের কি হাল হয়েছেÑ তা আমরা এখন বুঝতে পারছি। এমনকি টিআইবি'র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ বলেছেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পরও ২০০৭ সালে মাঠপর্যায়ে দুর্নীতি কমেনি, বরং বেড়েছে। মানুষ এখন সংস্কার শব্দটি শুনলে ভয়ে থরকম্প হয়ে যায়। সরকার এখন খাদ্যাভ্যাসে সংস্কারের কথা বলছেন। আল্লাহ জানেন, এই সংস্কারের পরিণতি কি? একজন পাঠক টেলিফোন করে বলেছেন, তার এক বন্ধু এখন একটি রবীন্দ্র সংগীত নিজের মতো করে গাইতে শুরু করেছেনÑ আলু আমার আলু ওগো আলুই কিচেন ভরা/আলু আমার আলু জীবন আলু এখন সেরা/আছে আলু আছে ও ভাই আমার মুখের কাছে/দিনে আলু রাতে আলু জীবন না আর বাঁচে।
এই অবস্থায় একটি কথাই শুধু বলতে হয়Ñ কোন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ এখন বলতে পারবেন না, তারা ভাল আছেন। একমাত্র আহাম্মক ছাড়া কেউ ভাল নেই। আমীর খসরু (বিশ্লেষক)
Alhamdulillah - All praise to be of Allah
Allah hu Akbar - Allah, the Greatest
__________________________________________________
Do You Yahoo!?
Tired of spam? Yahoo! Mail has the best spam protection around
http://mail.yahoo.com __._,_.___
[* Moderator's Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.
* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe
__,_._,___