Banner Advertise

Sunday, March 29, 2015

[chottala.com] আইনশৃঙ্খলা রক্ষা



এবনে গোলাম সামাদ

২৯ মার্চ ২০১৫,রবিবার, ১৬:৫১



আইনশৃঙ্খলা রক্ষা


একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা হলো রাষ্ট্রের প্রধান প্রাথমিক করণীয় বিষয়। মানুষ শান্তিতে বাস করতে চায়। প্রগতির লক্ষণ হলো, একটা দেশের মানুষ কতটা শান্তিতে বাস করতে পারছে। ছোট শিশুরা রাজনীতি করে না, কিন্তু পত্রপত্রিকা খুললেই আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি, বহু শিশু অপহৃত হচ্ছে। শিশু অপহরণ করে অপহরণকারীরা দাবি করছে মুক্তিপণ। শিশুর বাবা-মা তা দিতে না পারলে খুন করা হচ্ছে তাদের। পত্রপত্রিকায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অপহরণের ঘটনাও অহরহ প্রকাশিত হচ্ছে। তবে এ দুই অপহরণের চরিত্রকে এক করে দেখার সুযোগ নেই। যদিও সব অপহরণই গর্হিত কাজ এবং উন্নত রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিচায়ক নয়। সব দেশেই পুলিশ প্রশাসন আছে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজন পূরণের জন্য। অন্য দিকে সেনাবাহিনী পূরণ করে বহিরাক্রমণ থেকে দেশ রার প্রয়োজন। আমাদের দেশে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উভয়ই আছে। আমরা একটি আদর্শ দুনিয়ায় বাস করছি না। মানবজীবনে রয়েছে প্রচুর অসঙ্গতি। সাধারণভাবে মানুষ শান্তি চাইলে শান্তি রক্ষার জন্য রাষ্ট্রকে পালন করতে হয় বিশেষ ভূমিকা। যে রাষ্ট্র এই ভূমিকা পালনে যতটা সম, তা দিয়েই হতে হয় সেই রাষ্ট্রের সার্থকতার বিচার।

এক সময় আমাদের দেশে শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটত না। সাবেক পাকিস্তান আমলেও এটা ঘটেনি। কিন্তু বাংলাদেশ হওয়ার পর এটা ঘটতে পারছে। আগে আমরা খবরের কাগজে পড়তাম, কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশু অপহরণ ঘটে। অপহরণকারীরা মার্কিন ধনকুবেরদের শিশু অপহরণ করে। মুক্তিপণ পেয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। কিন্তু এখন আমাদের দেশে শিশু অপহরণ ঘটছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনকুবের আমাদের দেশে নেই। কী করে, কী কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এ দেশে শিশু অপহরণ ঘটতে পারছে, সেটা ভেবে দেখা দরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নানা দেশ থেকে মানুষ যেয়ে নাগরিক হচ্ছে সে দেশের। এদের মধ্যে থাকছে মারাত্মক অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিরাও। এদের নিয়ন্ত্রণ করা যথেষ্ট কঠিন কাজ। কিন্তু বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাইরে থেকে মানুষ আসছে না। তবুও বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। বিশেষ করে শিশু অপহরণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের মাত্রা।

ইতিহাসে দেখি, যোগ্যতা ও সদিচ্ছা থাকলে একজন ব্যক্তির পক্ষে মারাত্মক অপরাধ দমন সম্ভব। দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্রিটিশ আমলে লর্ড বেন্টিংকের শাসনকালের (১৮২৮-১৮৩৫) কথা উল্লেখ করা যায়। এ সময় দেশে ঠগী বলে এক ভয়ঙ্কর দস্যু সমাজ ছিল। যারা লোকের বন্ধু সেজে পরে তাদের খুন করে সর্বস্ব অপহরণ করত। ঠগীরা ছিল খুবই সুসংহত। সারা ব্রিটিশ ভারতে এদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১২ লাখের কাছাকাছি। লর্ড বেন্টিংক মেজর শ্লিম্যান (Major Sleeman)-এর সাহায্যে করেছিলেন ঠগীদের দমন। শ্লিম্যান ঠগীদের দলে যোগ দেন। তিনি ঠগীদের সাঙ্কেতিক ভাষা শেখেন। তারপর ঠগীদের ভেতরে থেকেই আরম্ভ করেন ঠগী দমন করতে। তিনি হত্যা করেন তিন হাজার ঠগী নেতা। ফলে ঠগীরা হয়ে পড়েন ছত্রভঙ্গ। হতে পারে ঠগী দমন। এটা করতে তার সময় লেগেছিল প্রায় সাত বছর (১৮৩১-১৮৩৭)। একজন ঠগী স্বীকার করেছিল, সে ৭১৯ জন মানুষকে হত্যা করে তার সর্বস্ব অপহরণ করেছিল। ঠগীরা লোক খুন করত মানুষের গলায় সিল্কের রুমালের ফাঁস জড়িয়ে। তাদের হাতে কোনো অস্ত্র থাকত না। ঠগীরা পথিকজনের সাথী হতো। তাদের সাহায্য করত। সুযোগ পেলে রেশমি রুমালের ফাঁস জড়িয়ে করত তাদের খুন। অপহরণ করত তাদের সর্বস্ব। এজন্য তাদের নাম হয়েছিল ঠগ। ঠগীরা বলত লোক ঠকানো অপরাধ নয়। এভাবে নরহত্যাও অপরাধ নয়। তারা করত মা ভবানীর পূজা। মা ভবানীর নির্দেশেই তারা বেছে নিয়েছে এই পথ। তাদের কর্মের পিছে আছে ধর্মের সমর্থন। ঠগীরা এক দিকে যেমন ছিল দস্যু সম্প্রদায়, তেমনি আবার হয়ে উঠেছিল একটি ধর্ম সম্প্রদায়। আমি আমার ছেলেবেলায় শুনেছি, আমাদের রাজশাহী অঞ্চলে একদল ডাকাত আছে, যারা মা কালীর পূজা দিয়ে ডাকাতি করতে যায়। হিন্দু যুবকেরা বছরে এক দিন রাতে চুরি করতে বের হতো এবং কিছু না কিছু চুরি করত। যাকে বলা হতো 'নষ্ট-চন্দ্র'। নষ্ট-চন্দ্র ছিল তাদের ধর্মবিশ্বাসের অঙ্গ। তারা মনে করত, নষ্ট-চন্দ্রের রাতে চুরি করলে তাদের পুণ্য হবে। আজকের নীতিচেতনার সাথে অতীতের নীতিচেতনার বহু দিক থেকেই মিল নেই। অতীতে অনেক দেশেই মানুষ মনে করেছে জনদস্যুতা কোনো অপরাধ নয়, বরং গৌরবের বস্তু। মানুষ জলদস্যুতা করেছে খ্যাতিমান হওয়ার জন্য। কিন্তু এখন আমরা আর তা মনে করি না। মানুষের নীতিচেতনার পেছনে কাজ করছে একটি বিশেষ দর্শন। তা হলো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা। যা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে তাই হলো নৈতিকতার ভিত্তি। নৈতিকতার আর কোনো অন্তিম ভিত্তি নেই।

আমাদের দেশে হঠাৎ করেই যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এতটা অবনতি ঘটতে পেরেছে, তা নয়। একদল মানুষ এ দেশে করতে চেয়েছেন শ্রেণিশত্রু খতমের রাজনীতি। এরা মনে করেছেন, যারাই একটু বিত্তবান অথবা সচ্ছল, তাদের খুন করতে হবে। খুন করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে গরিব-রাজ। গরিব-রাজ এরা প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। কিন্তু এদের মধ্যে কেউ কেউ গরিব-রাজ প্রচেষ্টার মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন বিত্তবান। এদের তুলনা করা যায় কতকটা সেই আমলের ঠগীদের সাথে। দেশে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন করতে গেলে এই ঠগীদের দমন করতে হবে। না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হতে পারবে না।
আমরা বলেছি, যোগ্যতা ও নিষ্ঠা থাকলে অপরাধ দমন সম্ভব। আমরা দৃষ্টান্ত দিয়েছি লর্ড বেন্টিংকের। আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হতে হলে এ রকম ব্যক্তির আসতে হবে ক্ষমতায়। পত্রিকায় খবর পড়ে বিস্মিত হলাম, শিশু অপহরণের অপরাধে পুলিশের লোকও জড়িত হয়ে পড়ছে। প্রচলিত প্রবচনে বলা হয়- সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে সে সরিষার সাহায্যে ভূত তাড়ানো যাবে না। পুলিশ প্রশাসনকে করতে হবে আত্মশুদ্ধি। রাজনীতির ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো বাধ্য হচ্ছেন এমন কিছু করতে, যা তাদের মনঃপূত নয়। কিন্তু শিশু অপহরণ ব্যাপারটা কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। এটাকে কঠোর হাতে দমন করা তাই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে অসম্ভব নয়। কেননা এর জন্য তাদের পড়তে হবে না ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কোপানলে।
লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

- See more at: http://dev.dailynayadiganta.com/detail/news/11390#sthash.w4ywEwUp.dpuf


__._,_.___

Posted by: Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com>


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___