Banner Advertise

Thursday, March 26, 2015

[chottala.com] পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হয়নি যে স্বাধীনতা



পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হয়নি যে স্বাধীনতা
মনির আহমেদ
পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হয়নি যে স্বাধীনতাআমরা স্বাধীন। এই কথা হৃদয়ে ধারণ করি, গর্ব অনুভব করি। কিন্তু তবুও একটা কষ্ট। মনে প্রশ্ন আসে- আমরা কি সত্যিই স্বাধীন। স্বাধীন বাংলাদেশ গান গেয়েও তো দেখি এই জনপদের অনেক মানুষ মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। বলতে হয়, আমরা স্বাধীন। কিন্তু পরাধীনতা এখনো বারবার আমাদের স্বাধীনতায় ছোবল মারে।

সেদিন খুলনা যাচ্ছিলাম। কাওরাকান্দি থেকে মাইক্রো সার্ভিসে উঠলাম। ছোট একটা গাড়ি। নয়টা সিট, কিন্তু আমরা বসলাম ১৮ জন। কিছুই করার নাই, যেতে হবে। সুতরাং তারা যেভাবে নেয়, সেভাবেই যেতে হচ্ছে। কোন প্রশ্ন করা মানে বিপাকে পড়া। করলেই সোজা জানিয়ে দেবে, 'আপনি যাবেন? গেলে যান না হয় অন্য গাড়িতে আসেন।' অসহায় মনে হয় নিজেকে!

এই শ্রেনীর মানুষদের কাছে যাত্রীরা জিম্মি। একটু খোঁজার, তলিয়ে দেখার প্রয়াস পেলাম। দেখা গেল ১৮ জন থেকে ৫৫০০টাকা তারা ভাড়া নেয়। কিন্তু ড্রাইভারের হাতে দেয়া হয় ৩২০০ টাকা। বাকি টাকা? বিষয়টি সবার কাছেই দিনের আলোর ন্যায় স্পষ্ট। এমপি সাহেবের ভাগ, পরিচালনা কমিটি, এলাকার বড় ভাই সবাইকে এখান থেকে একটা অংশ দিতে হবে। একই ভাবে গত ঈদের আগের দিন স্পিড বোটে করে যাচ্ছিলাম। সব সময় ভাড়া নেয় ১৫০, সেদিন নিল ২৫০ টাকা। বোটের চালককে জিজ্ঞেস করলাম, ১০০ টাকা যে বেশী সেটা কি তোমরা পাবে? তার উত্তর, 'না ভাই আমরা যা পেতাম তাই পাব। বাকিটা মন্ত্রী, এমপি, ঘাটের খরচ।'

বলছিলাম খুলনা যাওয়ার সময়ের কথা। মাইক্রোতে বেশী লোক বসায় এক জনের পায়ের সাথে অন্য জনের পা লাগছিল। সবাই স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিচ্ছিল। শুরু হল কথা। একজন সিরিয়ার কথা তুললেন। বললেন, 'সেখানে মানুষদের জীবন যাপন নিয়ে। বাশার আল আসাদ অনেক দিন থেকে সে দেশের প্রেসিডেন্ট। মানুষের স্বাধীনতা বলতে গেলে নাই-ই। জোর যার মুল্লুক তার। এভাবেই চলছে তাদের সব কিছু, প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যা বরাদ্দ তা দিয়েই চলতে হয়। এমনকি পানি পর্যন্ত সরকারের নিকট থেকে বরাদ্দ।'

আমি জানতে চাইলাম, ভাই তারা টিউবওয়েল বসায় না কেন? লোকটির উত্তর, 'মাটি খোঁড়াও নিষিদ্ধ! টিউবওয়েল বসানোর তো প্রশ্নই আসেনা।'

'পুরুষ মানুষের বয়স ১৮ এর বেশী হলে অধিকাংশকে হত্যা করা হয়, কারণ তারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে। মানুষকে সংঘবদ্ধ করতে পারে। এজন্য সেখানে পুরুষরা যারা বেঁচে থাকে তারা কোন কাজ করে না। বাইরে বের হলে গুলির মুখে পড়তে হতে পারে, তাই ক্ষেত-খামারের কাজ থেকে শুরু করে সব কাজ মহিলারাই করে। আইন-আদালত বলতে গেলে নাই। যাকে ভাল লাগছেনা গুলি করে হত্যা করছে। দেশ কয়েক  ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষ সরকার, এক পক্ষ সেনাবাহিনী, এক পক্ষ বিরোধী দল। যে যার মত করে চলছে। কাউকে ভাল না লাগলে গুলি করে হত্যা করছে। সেখানে সবার কাছে অস্ত্র থাকা বৈধ। সুতরাং কোন ঘটনা ঘটলে অস্ত্র নিয়েই সবাই বের হয়। কোন বিচার ব্যবস্থা সেভাবে নেই।'

যার কাছ থেকে শুনছিলাম তিনি মিশনে গিয়েছেন কয়েকবার। সিরিয়ায় তার বেশ কিছুদিন থাকার সুযোগ হয়েছে। সিরিয়ার এ অবস্থার কথা যখন ভাবি, তখন মনে হয় আমরা বেশ স্বাধীন আছি। এখনো আমাদের পুরুষরা বের হয়ে কাজ করতে যেতে পারে। হয়তো বিরোধী দল ঢাকা শহরে প্রকাশ্যে মিছিল মিটিং করতে পারছেনা। কিন্তু তাতে কি! আমরা তো বাজারে যাই, কাজ করি। হয়তো সংবাদপত্র সম্পাদক, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার চেয়ারম্যানদের ডেকে সরকারের পক্ষে থাকার জন্য হয়তো হুমকি দেয়া হচ্ছে, হয়তো সঠিক কথা না বলতে সুশীল সমাজকে নিষেধ করা হচ্ছে, হয়তো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলেও ক্ষমতা ছেড়ে পুনরায় নির্বাচন দিতে অস্বীকৃতি জানানো হচ্ছে, হয়তো পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবির কর্তা ব্যাক্তিদের পছন্দ মত নিয়োগ দিয়ে বিরোধী দল দমনে সরকার তাদের ওয়াদা করিয়ে নিচ্ছে, হয়তো রাষ্ট্রীয় বাহিনী কাউকে হত্যা, কাউকে গুম, কাউকে গ্রেপ্তার করে কারান্তরীণ করছে; কিন্তু তারপরও আমরা যে এখনো টিউবওয়েল বসিয়ে পানি তুলে খেতে পারছি! রাস্তায় ভয় নিয়ে হলেও চলতে পারছি। সেটাই বা কম কীসে?

বাংলা একাডেমি প্রকাশিত অভিধানে স্বাধীন শব্দের অর্থ দেয়া আছে- ১.বাধাহীন; আজাদ; মুক্ত; স্বচ্ছন্দ(স্বাধীন গতি) ২.নিজের বশে; অনন্যনির্ভর (স্বাধীন মতামত) ৩.সার্বভৌম; বিদেশী দ্বারা শসিত নয় এমন।

বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতির সাথে "স্বাধীন-স্বাধীনতা" শব্দের অর্থের কোন মিল আছে বলে আমার মনে হয় না। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে, কেন এই পরিস্থিতি? আমরা কেন পরনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিনা? ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের চেয়ে কেন অন্য রাষ্ট্রের নেতৃত্বকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে? কেনইবা অবৈধ নির্বাচনের বৈধতার সমর্থন পাওয়ার জন্য নিজের দেশের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে অন্যদের সুযোগ করে দিতে হবে? এসব বিষয় সন্দেহাতীতভাবে আলোচনার দাবি রাখে।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মুসলামানরা বড় একটা সময় পৃথিবী শাসন করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বশেষ মুসলিম শাসক ছিলেন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। সেই ১৭৫৭ সালের কথা। লর্ড ক্লাইভদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা পাওয়ার জন্য মুসলিম শাসকদের ভেতরে থাকা ব্রিটিশদের চর ঘসেটি বেগম, মীরজাফররা সেদিন ব্রিটিশদের ক্ষমতা দখলের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। পরাজিত হয়ে ইতিহাস থেকে প্রায় মুছে গিয়েছিল মুসলিম শাসন আমল। কিন্তু মুসলমানরা পরাজয় কখনো মেনে নিতে পারে না। আল্লাহর ওপর ভরসা করে তারা সব সময় এগিয়ে গিয়েছে। যদিও প্রায় দুইশত বছর আমাদেরকে ইংরেজদের কাছে পরাধীন থাকতে হয়েছে। কিন্তু অব্যাহত প্রতিরোধ ও বিরোধীতায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে এক সময় তারা নিজেদের বাঁচানোর জন্য হিন্দুদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু এর আগেই মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী  দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে বিষয়টি শেয়ার করেন। তখন মুসলমানদের প্রতিবাদের মুখে তারা শুধুমাত্র হিন্দুদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়নি। গড়ে ওঠে হিন্দু জনপদ নিয়ে হিন্দুস্থান ভারত। আর মুসলমান জনপদ নিয়ে মুসলমানদের কল্যাণ রাষ্ট্র পাকিস্তান । কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা যারা পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী ছিলাম, স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রে থেকেও অনেকটা পরাধীনের মতই ছিলাম।

দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ চলার পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বিকাল ৪.৩১ মিনিটে জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজীর নেতৃত্বে পাকিস্তানী বাহিনী লেফটেনেন্ট জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরার কাছে আত্মসমর্পন করে। গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু তখনই ভারতের কাছে যে আমাদের পরাধীন থাকতে হবে সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ক'দিন আগেও ভারত মওকা মওকা ভিডিও তৈরি করেছে। সেখানে তারা বুঝাতে চেয়েছে তারা বাংলাদেশকে আমাদের দান করেছে! যুদ্ধের পর ভারতীয় বাহিনী প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরের মূল্যবান সব সম্পদ নিয়ে যায়। আমাদের দেশকে পরিণত করে তলাবিহীন ঝুড়িতে। আমাদের দেশ পরিণত হয় তাদের বাজারে।

আমাদের দেশীয় প্রতিনিধির হাতে শাসন ক্ষমতা এলেও মূলত ইংরেজ শাসন আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতার নামে আমাদের গোলামী ও পরাধীনতার হাত বদল হয়েছে মাত্র! বর্তমানে আমরা স্বাধীন হয়েও আধিপত্যবাদী ভারতের ছোবলের শিকার হচ্ছি।

পাকিস্তানিদের হাত থেকে স্বাধীনতা অর্জন যেমন গৌরবের, তেমনি ভারতের আধিপত্যবাদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়াও অনেকটা লজ্জার। যা বর্তমান প্রজন্ম এখন কিছুটা বুঝতে শুরু করেছে।  

এই আধিপত্যবাদের হাত থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। আমাদের প্রয়োজন গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা। প্রয়োজন বিরোধী মতের যথাযথ মূল্যায়ন। প্রয়োজন সাহসী পদক্ষেপের, সৎ দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের। প্রয়োজন জনগণের অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের।


(প্রকাশিত মতামত একান্তই লেখকের নিজস্ব। শীর্ষ নিউজের সম্পাদকীয় নীতির অন্তর্ভুক্ত নয়।)
- See more at: http://www.sheershanewsbd.com/2015/03/26/74079#sthash.EbHreWA8.dpuf


__._,_.___

Posted by: Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com>


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]





__,_._,___