আর এসব ঘটনা বাঙালিদের 'অন্তর্কলহের' ফল বলেও দাবি করেছেন তিনি।
'পাকিস্তান অবজারভার' পত্রিকায় 'বাংলাদেশে প্রহসনের বিচার' শিরোনামে লেখা ওই নিবন্ধে একাত্তরের ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নারী ধর্ষিত হওয়ার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন পাকিস্তানের সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। একে আওয়ামী লীগের 'প্রচারণা' বলে মন্তব্য করেন তিনি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে 'ভারত পরিকল্পিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংগ্রাম' বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপির শাসনামলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভারত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বৈরী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চায় বলেও দাবি করেন তিনি।
হানিফ বর্তমানে ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইন্সস্টিটিউটে (আইপিআরআই) কর্মরত, যে প্রতিষ্ঠানটি পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত বলে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার বক্তব্য উদ্ধৃত করে হানিফ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ধরনই 'এটাকে নিয়ে অনেক বেশি সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।'
কিন্তু হানিফের বক্তব্যের যে দিকটি সবাইকে হতবাক করার মতো তাহলো, তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে 'নিরপরাধ' (ধোয়া তুলসি পাতা) হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন।
"তারা (পাকিস্তানি সেনাবাহিনী) মানবাধিকার বিষয়ে সচেতন ছিলেন এবং বেসামরিক জনগণ ও নিরপরাধ মানুষের কোনো ক্ষতি করেনি," দাবি পাকিস্তানের সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা 'ভারতের নির্দেশনায়' এবং আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের আওয়াজ তুলছেন।
'সন্ত্রাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নির্বিচারে হত্যা, নিপীড়ন ও মানুষকে অপদস্ত করেছে' বলেও দাবি করেন তিনি।
এই পাকিস্তানি এমন এক সময় এসব অভিযোগ করলেন যখন ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিএনপি নেতারা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে যারা গণহত্যা ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়ার পর পাকিস্তান পার্লামেন্ট একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। এরপর ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার জন্য পাকিস্তানি দূতকে কঠোরভাবে বলে দেয়া হয়।
তারপরেও পাকিস্তানে সাবেক কর্নেল হানিফ তার প্রবন্ধে লিখেছেন, "যাই হোক, হত্যাকাণ্ড, নিপীড়ন, ধর্ষণ এবং অন্যান্য মানবাধিকার লংঘটের ঘটনা অবশ্যই ১৯৭১ সালে হয়েছিল। সেগুলো প্রকৃত অর্থে ঘটিয়ে ছিল সেইসব বাঙালি গোষ্ঠীগুলো, যারা এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল। আর তার অধিকাংশের দায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের, যারা ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে সমর্থন আদায়ের জন্য নির্বিচার হত্যা ও নির্যাতন চালিয়েছে এবং মানুষকে অপদস্ত করেছে।"
__._,_.___