Banner Advertise

Friday, October 4, 2013

[chottala.com] পদ্মার অতলে জাতীয় মর্যাদা



পদ্মার অতলে জাতীয় মর্যাদা

আলাউদ্দিন আরিফ
শুধু বিগত সংসদ নির্বাচনেই নয়, এর আগের দুটি সংসদ নির্বাচনী ইশতেহারে পদ্মা সেতু ছিল আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অঙ্গীকার। ক্ষমতার শেষ বেলায় এসে এখনও পদ্মা সেতুর কাজই শুরু করতে পারেনি মহাজোট সরকার। প্রধানমন্ত্রী পরিবারসহ সরকারের প্রভাবশালীদের বেশুমার দুর্নীতিতে যেন পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে পদ্মা সেতু। দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন বাতিল করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের এখন নতুন পরিচিতি দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র। দেশে-বিদেশে পরিস্থিতি এমন হয়েছে, পদ্মার অতলে বিলীন হয়ে গেছে জাতীয় মর্যাদা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পদ্মা কেলেঙ্কারি বহু আগেই স্থান করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। পদ্মা কেলেঙ্কারি নিয়ে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, জাইকা, আইডিবি ও এডিবির সঙ্গে। কানাডার আদালতে অভিযুক্ত করা হয়েছে আওয়ামী সরকারের একজন প্রভাবশালী সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে। খোদ প্রধানমন্ত্রী পরিবারের প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে বিদেশি গণমাধ্যম। এর পরও পদ্মা নিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের বাগাড়ম্বর থেমে নেই। দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু করা, মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা, চীনের বিনিয়োগে পদ্মা সেতু করা, পদ্মা সেতুর চাঁদা নেয়ার জন্য ব্যাংকে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে বাধ্য করা, চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী খুন ও স্কুলছাত্রদের টিফিনের টাকা থেকে পদ্মা সেতুর জন্য টাকা নেয়া, মোবাইল ফোনে প্রতি মিনিটে ২৫ পয়সা সার চার্জ আরোপ করার প্রস্তাবসহ হেন কাজ নেই যা এই পদ্মা নিয়ে হয়নি। কিন্তু তার পরও শুরু হয়নি পদ্মা সেতুর কাজ। বরং এই প্রকল্প দেশের কপালে পরিয়েছে দুর্নীতির কলঙ্ক তিলক।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০১ সালের ৪ জুলাই তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়া ঘাটে পদ্মা সেতুর নামমাত্র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছিলেন। বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প ছিল এই সেতু। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে ১/১১-পরবর্তী কারসাজির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার মেয়াদ প্রায় শেষ, কিন্তু সেতু আর হলো না। বরং দুর্নীতির কারণে পদ্মা কেলেঙ্কারির অতলে হারিয়ে গেছে দেশের জাতীয় মর্যাদা ও ভাবমূর্তি সবকিছু। সেতু হয়নি তাতে কি! জমি অধিগ্রহণ, অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি, ঠিকাদার নিয়োগ, কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক নিয়োগ, দরপত্র ও আর্থিক মূল্যায়ন কমিটি গঠন আর ভাঙ্গায় সরকারি দলের প্রভাবশালীদের বেপরোয়া লুটপাট এই সেতু বাংলাদেশের কপালে পরিয়েছে কলঙ্কের তিলক। শুধু দেশেই নয়, বিদেশের মাটিতেও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির পরিচিতি পেয়েছে একটি দুর্নীতিপরায়ণ দেশ হিসেবে। অযোগ্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কানাডিয়ান কোম্পানি এসএনসি লাভালিনকে কাজ দেয়ার জন্য মোটা অঙ্কের কমিশন চাওয়া থেকে এই কেলেঙ্কারির সূত্রপাত। কাজের কাজ কিছুই হয়নি, কিন্তু সেতুকে ঘিরে সরকারের ব্যয় হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি। পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক, জাইকা, আইডিবি ও এডিবির সঙ্গে চুক্তি, দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিয়ে প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে গেছে। মালয়েশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশের অর্থায়নের গল্পও শুনিয়েছে সরকার। শুনিয়েছে, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার খবরও। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের জন্য সারা দেশের প্রায় প্রতিটি ব্যাংকে বিশেষ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। পদ্মা প্রকল্পের নামে সরকারি চাঁদাবাজি চলেছে দেশজুড়ে। প্রকল্পের জন্য তোলা টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে খুন হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা। সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পরও বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারের ফরমায়েশমতো একটি লোকদেখানো তদন্ত করেছে। বিশ্বব্যাংকসহ দাতারা প্রকল্প থেকে সরে গেলেও পদ্মা নিয়ে মন্ত্রীদের বাগাড়ম্বর থেমে নেই। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, 'পদ্মায় বসে জ্যোত্স্নার আলো দেখব সেদিন আর বেশি দূরে নয়।' সেই আশায় গুড়ে বালি।
এর জন্য দায়ী কে। সমালোচকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী পরিবারের প্রভাবশালী এক সদস্য, মন্ত্রী পরিবারের ঘনিষ্ঠ সৈয়দ আবুল হোসেন, আবুল হাসান চৌধুরী, নিক্সন চৌধুরী, সেতু বিভাগের মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও কয়েকজন প্রকৌশলী বাঁচাতে গিয়েই ভেস্তে গেছে পদ্মা সেতু। প্রকৃত অপরাধীদের বাঁচিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের পরমায়েশি তদন্তে নাখোশ হয়ে ফিরে গেছে বিশ্বব্যাংকসহ দাতারা। এর আগে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলও সৈয়দ আবুল হোসেনকে মামলায় আসামি করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। কিন্তু তাদের কোনো যুক্তি গ্রাহ্য করেনি দুর্নীতি দমন কমিশন।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মংলা বন্দরের সঙ্গে রাজধানীর দ্রুত যোগাযোগের পথ সুগম করবে পদ্মা সেতু। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালে পরিচালিত সম্ভব্যতা সমীক্ষা অনুযায়ী ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়সম্বলিত প্রকল্পের প্রস্তাব ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট অনুমোদিত হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দ্রুত সেতুর কাজ শুরু করার জন্য নকশা প্রণয়ন শুরু হয়। এ সময় মূল সেতু, নদীশাসন ও অ্যাপ্রোচ সড়কসহ আনুষঙ্গিক নকশা চূড়ান্ত হয়। এই নকশার ভিত্তিতে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়সম্বলিত সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব একনেক সভায় অনুমোদন হয়।
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মূল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে ২০১৩ সালের মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। এখন ২০১৩ সাল শেষ হতে চলল, কিন্তু দুর্নীতির কারণে সেই প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। প্রস্তাবিত পদ্মা সেতু করার পরিকল্পনা ছিল চার লেনবিশিষ্ট। এর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার, প্রস্থ ২২ মিটার। প্রণীত নকশা অনুযায়ী সেতুটি হওয়ার কথা দ্বোতলা রেল ও সড়ক সেতু।
পদ্মা কেলেঙ্কারির খবর প্রথম ফাঁস হয় কানাডিয়ান পুলিশের কাছে বিশ্বব্যাংকের দেয়া একটি অভিযোগের ভিত্তিতে। ২০১১ সালের আগস্টে কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ পেতে নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন (ঘুষ) দেয়ার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্ট অভিযোগটি করেন। অভিযোগের তদন্ত শুরু হলে 'দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল' বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি তদন্তে কানাডার পুলিশ শিরোনামে একটি সংবাদ বিশ্বজুড়ে হৈ-চৈ ফেলে দেয়। ওই মাসেই তদন্তে নামে কানাডিয়ান পুলিশ। ২০১১ সালে ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে যে আন্তর্জাতিক তদন্ত শুরু হয়েছে, তাতে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন।
২০১১ সালের ১ সেপ্টেম্বর কানাডার পুলিশ টরেন্টো শহরের উপকণ্ঠে এসএনসি লাভালিনের অফিসে হানা দেয়। তারা সেখান থেকে কম্পিউটারসহ বেশ কিছু আলামত জব্দ করে এবং দুর্নীতির পক্ষে প্রমাণ পায়। ওই সময় জব্দ করা একটি ডায়েরিতে হাতে লেখা 'পারসেন্টেজ টু বি অ্যালোটেড টু স্পেসিফাইড পারসন ইন কানেকশন উইথ দ্য অ্যাওয়ার্ড অব দ্য সিএসসি কন্ট্রাক্ট।' ওই ডায়েরিতে সংক্ষিপ্ত নামে কিছু নির্দিষ্ট পার্সেন্ট উল্লেখ ছিল। তাদের মন্ত্রীর নামে ছিল চার শতাংশ।
২০১১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্সির পক্ষ থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকারের প্রভাবশালী একটি অংশ থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন চাওয়ার অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। যার একটি অনুলিপি তদন্তের জন্য দুদক চেয়ারম্যানকেও দেয়া হয়। ওই চিঠিতে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও তার প্রতিষ্ঠান সাকোর ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক সাকোকে কমিশনের (ঘুষ) ভিত্তিতে এজেন্ট নিয়োগের জন্য চাপ দেয়ার প্রমাণসহ অভিযোগ ছিল।
বিশ্বব্যাংকের দাবি ও দেশজুড়ে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতে নজিরবিহীন ব্যর্থ্যতার কারণে সৈয়দ আবুল হোসনেক যোগাযোগমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে তথ্য-যোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নেয়া হয়। ওই সময় সৈয়দ আবুল হোসেনের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে থাকে দুদক। এক পর্যায়ে অভিযোগ 'দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়নি' উল্লেখ করে ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ওই চিঠি অনুসন্ধান সমাপ্ত করে। একই সঙ্গে সৈয়দ আবুল হোসেন এবং তার সহযোগীদের দায়মুক্তি দেয়া হয়।
দুদকের ওই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হয়ে বিশ্বব্যাংক আবার ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল আরেকটি চিঠিতে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সাকোর ঊর্ধ্বতন সব কর্মকর্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ভ্রমণ বৃত্তান্ত জব্দ করার জন্য বলে। অনুসন্ধান পর্যায়ে 'সার্চ অ্যান্ড সিজার'-এর ক্ষমতা নেই উল্লেখ করে দুদক অপারগতা জানায়। দুদকের ওই বক্তব্য গ্রহণ না করে বিশ্বব্যাংক অনুসন্ধান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের বেতনভুক একটি 'ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড প্রসিকিউটর প্যানেল'কে দেয়ার প্রস্তাব করে। কিন্তু আইনের কথা তুলে দুদক তাতে অসম্মতি জানায়।
ওই পরিস্থিতিতে গত ২০১২ সালের ২৩ থেকে ২৫ জুন বিশ্বব্যাংকের ৫ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করেন। তারা সরকার ও দুদকের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে অনুসন্ধানের অগ্রগতি জানতে চান। কিন্তু তারা দুদক ও সরকারের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হয়ে গত ২৯ জুন একটি বিবৃতি দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা চুক্তি বাতিল করে।
২০১১ সালের ১ সেপ্টেম্বর জব্দকৃত এসএনসি লাভালিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহার ডায়েরিতে কাজ পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জনকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত ঘুষ দেয়ার তথ্য ছিল। ওই তথ্য ৬ জনের জন্য মোট কাজের ১২ শতাংশ অর্থ ঘুষ হিসেবে দেয়ার 'ষড়যন্ত্র' হয়েছিল। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ বরাদ্দ ছিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নামে। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী ওরফে কায়সারের নামে ২ শতাংশ, মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর নামে ২ শতাংশ, প্রাধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমানের নাম রয়েছে 'মসি রহমানের' নামে এক শতাংশ, সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার নামে ১ শতাংশ লেখা ছিল। নিক্সনের নামের পরেই রয়েছে আরেকটি নাম। তার জন্য বরাদ্দ ২ শতাংশ বলে ডায়েরিতে উল্লেখ রয়েছে। ওই নামটি কার এ বিষয়ে কোনো সূত্র নিশ্চিত করেনি। তবে কানাডিয়ান সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত সিবিসি নিউজ পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে ১৫ মিনিটের একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা হয় যে, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানাও কমিশন নিতে চেয়েছিলেন। এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি নিজে বা তার মন্ত্রিসভার কোনো সদস্য এ ধরনের কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত নন। এই সংবাদ থেকে পরিষ্কার যে, প্রধানমন্ত্রীর আপন বোন শেখ রেহানা পদ্মা সেতু প্রকল্পে এসএনসি লাভালিনকে কাজ দিয়ে দুই শতাংশ কমিশন নিতে চেয়েছিলেন।
বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর সরকারের নানামুখী তদবিরের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ৫ জুন চারটি শর্তসাপেক্ষে বিশ্বব্যাংক ফিরে আসার ঘোষণা দেয়। প্রথম শর্ত সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও অর্থ উপদেষ্টা এবং প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজার ড. মশিউর রহমানসহ দুর্নীতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্ব পালন থেকে ছুটি প্রদান। দ্বিতীয় শর্ত ছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করে এ দুর্নীতি তদন্ত করা। তৃতীয় শর্ত ছিল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল বা 'ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড প্রসিকিউটর প্যানেল' দিয়ে দুদকের তদন্ত পর্যবেক্ষণ করা। চতুর্থত সেতু নির্মাণ পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে হবে, যাতে বিশ্বব্যাংক ও অপর ঋণদাতারা প্রকল্পের ক্রয় কর্মকাণ্ড আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেতে পারে।
সেই শর্ত অনুযায়ী ২০১২ সালের ২৩ জুলাই সৈয়দ আবুল হোসেন মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ড. মশিউর রহমানকে এক মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি আবার কাজে যোগ দেন। ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ টিম ঢাকায় আসে। টিমের প্রধান ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর লুই গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো। অপর দুই সদস্য ছিলেন হংকংয়ের দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন কমিশনের সাবেক কমিশনার টিমোথি টং ও যুক্তরাজ্যের গুরুতর প্রতারণা দমন কার্যালয়ের সাবেক পরিচালক রিচার্ড অল্ডারম্যান। তারা ওই বছরের ১৫ ও ১৬ অক্টোবর দুই দফায় দুদকের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা দুদকের ওই সময় পর্যন্ত তদন্তের অগ্রগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে আবার তদন্তের পরামর্শ দিয়ে যান।
সেই প্রেক্ষিতে দুদক সৈয়দ আবুল হোসেনসহ আসামিদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। অনুসন্ধান পর্যায়ে দুদক সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সংসদের হুইপ ও প্রধানমন্ত্রীর ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে জাতীয় সংসদের হুইপ নূরে আলম চৌধুরীর ভাই মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, পদ্মা সেতুর সাবেক প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাকো ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান মো. নূরুল হক এফসিএ, পরিচালক খন্দকার এনআই ইসলাম, সাকোর এমডি ও পরে আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, ড. দাউদ আহমেদ, প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ড. আইনুন নিশাত, পরামর্শক নিয়োগ সংক্রান্ত মূল্যায়ন কমিটির প্রধান ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ অন্তত ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রমাণ নিয়ে দুদক প্রতিবেদন তৈরি করে। এই পর্যায়ে ২০১২ সালের ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর বিশেষজ্ঞ টিম আবার বাংলাদেশে আসে।
সূত্র জানায়, বিশেষজ্ঞ দলের দ্বিতীয় সফরে দুদকের প্রতিবেদন ও তদন্তের নানা অসঙ্গতি, সৈয়দ আবুল হোসেন, আবুল হাসান চৌধুরী ওরফে কায়সার, নিক্সন চৌধুরীসহ সরকারের চার ব্যক্তিকে আসামি না করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়। এক পর্যায়ে তারা বৈঠক ভেঙে দিয়ে চলে যান। দেশে গিয়ে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি লেখেন প্যানেলের প্রধান মোরিনো ওকাম্পো। সেখানেও সৈয়দ আবুল হোসেন, আবুল হাসান চৌধুরী, নিক্সন চৌধুরীসহ প্রকৃত অপরাধীদের আসামি না করা প্রসঙ্গে ক্ষোভ জানিয়ে তাদের আসামি করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। তবে প্যানেলের চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আগেই দীর্ঘ টানাপড়েনের এক পর্যায়ে ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ না নেয়ার ঘোষণা দেয়। ২০১৩ সালের ১৩ জুন বিশ্বব্যাংকের প্যানেল সৈয়দ আবুল হোসেনকে এজাহারভুক্ত আসামি না করায় তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তারা বলেন, তাদের অভিযোগ ছিল সঠিক, কিন্তু দুদকের তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঘুষ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) বাংলাদেশের আবুল হাসান চৌধুরী, কানাডিয়ান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সাবেক কর্মকর্তা কেভিন ওয়ালেস ও কানাডীয় নাগরিক জুলফিকার আলী ভূঁইয়াকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দেয়। এর ১০ দিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর ১০ দিন তদন্ত শেষে আরসিএমপি আদালতে সাবেক পরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পরিবারের সদস্যসহ সরকারের প্রভাবশালী আরও কয়েক ব্যক্তি পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারিতে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।


__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___