শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে ব্লেক
0%
গড় রেটিং:
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ খুঁজে বের করুন
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রবার্ট ও. ব্লেক সমকাল
সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও. ব্লেক সুষ্ঠু, অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে একটি উপায় খুঁজে বের করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে একসঙ্গে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশে তিন দিনের সফর শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা ও আগামী নির্বাচন সম্পর্কে ব্লেকের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে যে কোনো ধরনের অভ্যুত্থানের
নিন্দা করে যুক্তরাষ্ট্র। তার দেশ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে সমর্থন করে।'
নির্বাচন সম্পর্কে ব্লেক বলেন, 'সুষ্ঠু, অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে একটি উপায় খুঁজে বের করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বা দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।'
গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি সোনারগাঁয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শাখা পরিদর্শনে যান ব্লেক। পরে ঢাকায় অ্যামচেম আয়োজিত যুক্তরাষ্ট্র ট্রেড শোতে বক্তব্য রাখেন। সংবাদ সম্মেলনের আগে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন।
বাণিজ্য-বিনিয়োগ সহযোগিতা কাঠামো চুক্তি : টিফা চুক্তি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ব্লেক সাংবাদিকদের বলেন, ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন অ্যান্ড ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করতে দুই দেশ কাছাকাছি পেঁৗছেছে। টিআইসিএফএ হচ্ছে এমন একটি কাঠামো, যেখানে বাণিজ্য ও বিনিয়াগ ক্ষেত্রে যে কোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা হওয়ার সুযোগ থাকবে। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্রুত বাণিজ্য বাড়ছে। গত বছর ৬ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য হয়েছে। আমি আশা করি, বাণিজ্য আরও দ্রুত বাড়বে। গতকাল জেনারেল ইলেকট্রিক এবং সামিটের মধ্যে মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য ২৫ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে বলে তিনি জানান।
গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গ :গ্রামীণ ব্যাংকের ড. ইউনূস ইস্যুর ওপর এক প্রশ্নের জবাবে ব্লেক বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ড. ইউনূসের এক যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজে বের করার কথা বলছি আমরা, যিনি একই সঙ্গে ব্যাংকটির সততা ও কার্যকারিতা এবং শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ বজায় রাখতে পারবেন।
সোনারগাঁয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা পরিদর্শনের সময় এক প্রশ্নের জবাবে ব্লেক বলেন, ইউনূস ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তিনি বলেন, গ্রামীণ দরিদ্র নারী ও তাদের পরিবারের জীবিকার সুযোগ বাড়াতে গ্রামীণ ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
মানবাধিকার পরিস্থিতি :মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন জানতে চাইলে ব্লেক বলেন, গত বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো ছিল না। এ ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে বাংলাদেশে। সরকার এ পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করছে। গণমাধ্যম, এনজিওসহ সর্বক্ষেত্রে মানবাধিকার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
এক প্রশ্নের জবাবে ব্লেক বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। আমরা এ অগ্রগতিকে উৎসাহিত করি। বিএসএফের গুলিতে নিরীহ বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ব্লেক বলেন, ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। সীমান্ত ঘটনার সংখ্যাও কমছে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে দুই দেশ কাজ করবে। মালদ্বীপের সরকার পরিবর্তন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্লেক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোথাও কোনো অভ্যুত্থান সমর্থন করে না। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নাশিদ ক্ষমতা বর্তমান প্রেসিডেন্টে ওয়াহিদের কাছে হস্তান্তর করেছে। যে পরিস্থিতিতে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে নতুন সরকার তদন্ত করছে।
অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা :গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত ২১তম ইউএস ট্রেড শো অনুষ্ঠানে ব্লেক গত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন। ব্লেক বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। আমরা বাংলাদেশের বৃহত্তম একক রফতানি বাজার, এ দেশে বিনিয়োগের প্রধান উৎস এবং রেমিট্যান্সের তৃতীয় বৃহত্তম উৎস। ২০১১ সালে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি বাণিজ্যের মূল্যমান ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দশ হাজার কর্মসংস্থানের সহায়ক হয়েছে।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কোম্পানিগুলো বিশেষ করে শেভরন ও কনোকো-ফিলিপ্স জ্বালানি খাতে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে চায়।
অনুষ্ঠানে অ্যামচেমের নির্বাহী পরিচালক গফুর ও সভাপতি আফতাব উল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
__._,_.___