অনেকে বলেন, আমাদের কথাসাহিত্য দুর্বল। আমাদের গল্প-উপন্যাস নাকি চল্লিশ বছরে তেমন সবল হয়নি। হতে পারে এটা প্রতিষ্ঠিত কথাসাহিত্যিকদের ব্যর্থতা। কিন্তু সমাজে গল্প বানানোর অসাধারণ ক্ষমতাধর লোকের কমতি নেই। যারা সত্য-মিথ্যা তথ্য নিয়ে আগডুম বাগডুম গল্প বানিয়ে তিলকে তাল করতে পারে। হাতি-ঘোড়া মেরে ফেলতে পারে। মাঠের গরুকে গাছে কিংবা জলের নৌকাকে পাহাড়ে চড়াতে পারে। হাওয়া থেকে পাওয়া অবাস্তব, অদৃশ্য, অবান্তর এবং অসত্য কিছু একটা নিয়ে রসালো গল্পের শাখা-প্রশাখা ছড়াতেও তারা সিদ্ধহস্ত। এসব তুখোড় স্টোরি টেলারের কাছে শরৎচন্দ্র কিংবা হুমায়ূন নস্যি। স্টোরি টেলারদের গল্প বেশ আকর্ষণীয় এবং অনেকে তা শোনেও। অনেকে বলতে আমি নুন আনতে পান্তা ফুরোয় জাতীয় সাধারণ মানুষের কথা বলছি না। বলছি, প্যান্ট-কোট-টাই-জুতো কিংবা নকশীদার কুর্তা পরিহিত কিছু ‘ভদ্দরনোক’দের কথা। এদের বেশিরভাগই ঢাকার অভিজাত এলাকায় ঘোরাঘুরি করে, খবরের কাগজের কলাম পড়ে, টেলিভিশনে চ্যানেলের টকশো দেখে। সুশীল সমাজওয়ালাদের গোলটেবিল এবং সেমিনার টেমিনারের খবরও রাখে তারা। এদের প্রত্যেকের আবার একটা করে নিজ¯^ ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরি আছে যার মেইন প্রোডাক্টের নাম গুজব। কে না জানে যে গুজবের মার্কেটিং করতে পয়সা লাগে না। গুজব আপনাআপনি দাবানলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে যায় এবং স্থানান্তরে ধাপে ধাপে চেহারা পাল্টায়। সেই যে রূপকথার গল্পের মতো। রাজরানীর গর্ভে একটা কালো সন্তান হলো। স্টোরি টেলারদের হাতে পড়ে কিছুদূর যেতেই তথ্যটি কিছুটা বিকৃত হয়ে হলো এই রকম যে রাজরানীর গর্ভে কাকের মতো কুচকুচে কালো একটা সন্তান হয়েছে। এর পর ধাপে ধাপে এটা দাঁড়ালো, রাজরানীর গর্ভে কাকের মতো সন্তান হয়েছে এবং শেষমেশ গুজব, রাজরানীর গর্ভে কাক হয়েছে। মানুষের গর্ভে কাক জন্ম নিতে পারে না। এটি অবাস্তব ব্যাপার। তবু গুজব বলে কথা। বলতে ও শুনতে একটা রগরগে আনন্দ পাওয়া যায়। তবে গুজব যে কখনও কখনও ক্ষতিকর হতে পারে তা স্টোরিটেলার এবং গুজব ম্যানুফ্যাকচারাররা বুঝতে পারে না। কিন্তু সুযোগসন্ধানী সেয়ানারা বোঝে এবং তারা গুজবের ছাইতে হাওয়া দিয়ে আগুন জ্বালবার ক্ষতিকর চেষ্টাও করে। যেমন ক’দিন আগে করেছেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি প্রকাশ্য জনসভায় সেনাবাহিনী সম্পর্কিত একটি আংশিক খবরে উস্কানির হাওয়া দিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করতে চেষ্টা করেছেন। এটা যে বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
পিলখানার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরও এই রকম উস্কানিমূলক প্রচারণা চালানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু হালে পানি পাওয়া যায়নি। সকল গুজব এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রচার শক্ত ও নৈতিকভাবে মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাবাহিনী যে অনমনীয় দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন তা এদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এবারেও বেগম জিয়ার উস্কানিকে আমল দেয়নি সেনাবাহিনী। কঠোর ও তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনী ও ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে কেন যে বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর অনুগতদের এত আগ্রহ ও উৎসাহ! হতে পারে এটা তাদের রাজনীতির আতুরঘর। হতে পারে অন্যরকম কোন প্রত্যাশা। কিন্তু দিন যে আগের মতো নেই। তাছাড়া একটা বিষয় ভুলে গেলে চলবে না যে সেনাবাহিনীর নিজ¯^ একটা ডিসিপ্লিন আছে যেখানে বেগম জিয়া কেন, কারোরই নাক গলানো উচিত নয়। আগ বাড়িয়ে উস্কানিমূলক কথা বলে, গুজবের কল্কেতে আগুন দিয় অনভিপ্রেত ধোয়া তোলার চেষ্টা তো সীমানা লংঘন করা এবং অনধিকার চর্চার শামিল। ক্যান্টনমেন্টের ভেতর শৃক্সখলা ভঙ্গ অথবা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রবিরোধী কিছু ঘটলে সেনাবাহিনী নিজ¯^ ডিসিপ্লিন মোতাবেক তা মোকাবেলা করবে, সেটাই ¯স্বাভাবিক। পিলখানা ঘটনার পর বর্তমান সেনাবাহিনী তাই করে প্রশংসিত হয়েছে। আর এবারে, ১৯ জানুয়ারির প্রেস ব্রিফিংয়ের পর প্রমাণিত হয়েছে যে বর্তমান সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিক চর্চায় বিশ্বাসী, আধুনিক, বিশ্বস্ত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাশ্রিত জনক্যাণমুখী একটি শক্তিশালী ইনস্টিটিউশন। ঐদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে দেশের জনগণকে জানিয়ে দিয়েছে কতিপয় ধর্মান্ধ সেনা কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রকে নস্যাত করার ঘটনা। কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কিছু সেনাকর্মকর্তা যারা সরকার উৎখাতের প্রচেষ্টায় গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাকে নষ্ট করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল তাদের অপপ্রয়াস সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিচক্ষণতায় প্রতিহত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর নিজ¯^ ডিসিপ্লিন অনুযায়ী ষড়যন্ত্রকারী দুর্বুত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও সোজাসাপ্টা জানানো হয় খোলামেলা প্রেস ব্রিফিংয়ে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এ এক অনন্য নজির, অভ‚তপর্ব ঘটনা। পঁচাত্তর এবং পরবর্তীকালে ছোট-বড় ক্যু, সেনাবিদ্রোহ, রক্তপাত ইত্যাদি ঘটনা তো কম ঘটেনি। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে প্রায় কুড়িটি ক্যুর কথা শোনা যায় যেখানে অনেক সেনাকর্মকর্তা ও সদস্যকে জীবন দিতে হয়েছিল। বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদেরও জীবন দিতে হয়েছে ঐসব ক্যুতে। সেসব ঘটনা কিন্তু কখনই পুরোপুরি জানা যায়নি। বরং প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে জনগণকে কিভাবে অন্ধকার ও অনিশ্চয়তার ভেতর রাখা যায় তারই চেষ্টা করা হয়েছে। নানা রকম মিথ্যা দিয়ে প্রকৃত সত্যকে চাপা দেবার প্রাণান্তকর চেষ্টা করা হলেও পর্দার অন্তরালে ঘটে যাওয়া অন্ধকারের ঘটনা প্রায় সবই পরবর্তী সময়ে জানা গেছে। তাই বলছিলাম, সম্প্রতি ক্যান্টনমেন্টের ভেতর ঘটে যাওয়া বিশৃক্সখলা সৃষ্টির ঘটনা প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়ে দেবার ব্যাপারটি দেশের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই দৃষ্টান্ত বাংলাদেশকে একটি উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত হবার ক্ষেত্রে যথাযথ ইঙ্গিতও দেয়। তাছাড়া সত্য চেপে রেখে মানুষের মনে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক ছড়ানোর পরিবর্তে সেনাবাহিনী, সরকার ও জনগণের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস আর দূরত্বের দেয়াল অপসৃত হলো ১৯ জানুয়ারির সংবাদ সম্মেলনের ফলে। প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীকে এজন্য সাধুবাদ জানাতেই হয়। তবে সতর্ক থাকতে হবে ভবিষ্যতে যাতে কোন অঘটনের সুযোগ না আসতে পারে। দুর্বৃত্তের তো ছলের অন্ত নেই। এবার না হয় শুরুতেই ষড়যন্ত্রের বিড়াল ধরে ফেলা গেছে। কিন্তু অন্য কোন কালো বিড়াল যে অধিকতর বুদ্ধি ও কৌশল খাটিয়ে বেরিয়ে আসবে না সে আশঙ্কাই বা উড়িয়ে দেই কিভাবে। সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগকে তাই আরও সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি গণতন্ত্রমনা দেশপ্রেমিক মানুষকেও চোখ-কান রাখতে হবে খোলা।
কিছু কিছু রাজনৈতিক দল, দলের নেতা-নেত্রী এবং তথাকথিত সুশীল সমাজের কোন কোন ব্যক্তির মুখোশের আড়ালে ঢাকা আসল চেহারাটাও ভাল করে এখন দেখা দরকার। লক্ষ্য রাখা দরকার তাদের কথাবার্তা এবং কাজকর্মের গতিবিধির ওপরও। যদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই এদের আচরণ সন্দেহজনক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে গোলাম আযমের গ্রেফতারের দাবি যখন থেকে তীব্র হয়েছে তখন থেকেই তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে মরণকামড় দেবার জন্য। তাদের অশুভ পাঁয়তারা এবং নাশকতা সৃষ্টির আশঙ্কার কথা আলোচিত হয়েছে বিভিন্ন ফোরামে, লেখা হয়েছে পত্র-পত্রিকায়। গোলাম আযমের গ্রেফতার হবার কথা ছিল ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে। প্রায় একই সময় থেকেই সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করা ষড়যন্ত্রকারী মেজর জিয়া পলাতক। তারপর পলাতক অবস্থায় থেকে ইন্টারনেট এবং ব্লগে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা শুরু করেছে মেজর জিয়া। মেজর জিয়া প্রচারিত বিভ্রান্তিকর এবং উস্কানিমূলক বার্তা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ‘আমাদের দেশ’ নামের একটি জাতীয় দৈনিক যা উদ্দেশ্যমূলক এবং যার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব বলেই জানি। ১৯ জানুয়ারির সাংবাদিক সম্মেলনে এই পত্রিকাটির নাম এবং তার ‘হলুদ সাংবাদিকতা’র কথা উল্লেখ করা হয়। এসবের, ধারাবাহিকতায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মান্ধ জঙ্গী সংগঠন ‘হিজবুত তাহরীর’ পলাতক মেজর জিয়ার ইন্টারনেটের বার্তাটিকে ভিত্তি করে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লিফলেট বিতরণ করে এবং পরবর্তী সময়ে দেয়াল পোস্টারও লাগায়। ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সেনা সদরের প্রেস ব্রিফিংয়ের খবর আমার নিয়মিত পড়া দশটি পত্রিকার ভেতর সবচেয়ে গুরুত্বসহকারে ছেপেছে ‘আমার দেশ।’ তারা লাল কালিতে ব্যানার করে ছেপেছে প্রেস ব্রিফিংয়ের খবর। পাশাপাশি আমার দেশের রিপোর্টকে ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ বলায় সেনা সদরকে পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠিও দিয়েছেন। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে যে পত্রিকাটি জাতীয় ¯^ার্থের পক্ষে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে। প্রশ্ন হলো, প্রজাতন্ত্রের একজন সুবিধাভোগী কর্মকর্তা এবং সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্রকারী পলাতক মেজর জিয়ার ইন্টারনেটে পাঠানো ‘সারভার্সিভ’ বক্তব্য যাচাইবাছাই না করে রিপোর্ট হিসেবে ছেপে ‘আমার দেশ’ পত্রিকা এবং তার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কি জাতীয় ¯^ার্থের পক্ষে ভাল কাজ করেছেন? পাঠকমাত্রই বুঝবেন যে এই রিপোর্ট সরকারের বিরুদ্ধে সূ² ষড়যন্ত্র ও উস্কানিমূলক। একই সঙ্গে সেনাসদস্যদের ভেতর বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টাও বটে। মেজর জিয়ার ইন্টারনেট বার্তা, আমার দেশের রিপোর্ট, হিজবুত তাহরীরের লিফলেট এবং নিজ¯^ গোপন সূত্রের ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বেগম জিয়া প্রকাশ্য জনসভায় ‘সেনাবাহিনীর ভিতর গুমের ঘটনা ঘটেছে’ বলে যে অসত্য অভিযোগ তুললেন, তা কি দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি বিকাশে অন্তরায় নয়? তাও আবার রাজাকার প্রধান গোলাম আযমের গ্রেফতারের আগ মুহ‚র্তে! এটা কি তিনি নিজ দায়িত্বে করেছেন, নাকি জামায়াত এবং দেশের ¯^ার্থবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের চাপে করতে বাধ্য হয়েছেন। যেটাই হোক, বেগম জিয়ার দেয়া জনসভার বক্তব্য গণতান্ত্রিক রাজনীতি বিকাশের পরিপন্থী। প্রায় একই সময়ে ‘সেভ গোলাম আযম ক্যাম্পেইন’-এর ব্যানারে মালয়েশিয়ার এক টেলিভিশনে প্রচার করা গোলাম আযমের ছেলে নুমান আযমী সরকার, রাষ্ট্র, আদালত ও পবিত্র বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য দিয়ে পানি ঘোলা করার চেষ্টা চালায়। বক্তব্যটি প্রচারিত হয়েছে মালয়েশিয়ার পিআরসি টেলিভিশন চ্যানেলে যার নেপথ্যে রয়েছে ইসলামিক পার্টি অব মালয়েশিয়া। ‘সেভ গোলাম আযম ক্যাম্পেইন’-এর কোঅর্ডিনেটর হচ্ছে নুমান আযমী এবং যার মূল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে পাকিস্তান থেকে। টেলিভিশনে প্রচারিত বক্তব্যে আওয়ামী লীগকে বলা হয়েছে ‘ইসলামবিরোধী’ একটি রাজনৈতিক দল যার ক্যাডাররা হত্যাসহ নানারকম অপকর্ম করে যাচ্ছে। দেশের পুলিশ বাহিনী হচ্ছে সরকারের গুণ্ডা যারা শত শত মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করছে। ৭ মিনিটের ভিডিওতে নুমান সচেতনভাবে মিথ্যার বেসাতী করেছে নির্লজ্জভাবে। এদিকে দেশের ভেতরেও বেসরকারী কিছু টিভি চ্যানেল গোলাম আযমকে আত্মপক্ষ সাফাই গাইবার সুযোগ করে দিয়ে বিতর্কিত হয়েছে।
শোনা যায় ১১ জানুয়ারি গোলাম আযমকে গ্রেফতার করার পর তার ছেলে সেনাবাহিনীর প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের একটি বিশেষ সাক্ষাতকার প্রচারেরও উদ্যোগ নিয়েছিল একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেল। গোলাম আযমের ছেলে কি এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যে তার বিশেষ সাক্ষাতকার প্রচারের দায়িত্ব নিতে চেয়েছিল বেসরকারী টিভি চ্যানেলটি? তাও আবার গোলাম আযমকে গ্রেফতার করার পর। এটাও কি গোলাম আযম ও জামায়াতের পক্ষে সাফাই গাওয়ানোর চেষ্টা? এখানেও কি শেখ হাসিনা, তাঁর দল ও সরকারকে ইসলামবিরোধী হিসেবে প্রচার করা? এখানেও কি সেনাবাহিনীর ভেতর বিভ্রান্তি ও উস্কানি ছড়ানোর প্রয়াস? উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর সঙ্গে কি সেনাবাহিনীর কতিপয় ক্যু-ষড়যন্ত্রকারীর অপকর্মের কোন না কোন সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না? খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে সব বিষয় একসূত্রে গাঁথা অর্থাৎ আন্তঃসম্পর্কীয় এবং তা জাতীয় চেতনা ও গণতান্ত্রিক ধারার বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং তাদের দোসররা দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে চ‚ড়ান্ত খেলায় নেমেছে। এ কথা বহুবার বহুভাবে বলা হয়েছে। ষড়যন্ত্রের ডালপালা ছড়িয়েছে বিভিন্ন স্তরে, অক্টোপাসের মতো। জ্ঞানপাপী-লোভাতুর একশ্রেণীর ‘ভদ্দরনোক’ জুটেছে ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষে। এদের রুখতে হবে। হেসেখেল, ইয়ার্কিতে চলে গেছে অনেক সময়। কেবল সরকার, প্রধানমন্ত্রী এবং আইনশৃক্সখলা বাহিনীর ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে গা ভাসালে আর চলবে না। নিজেদেরও দায়িত্ব পালন করতে হব্ েনিজ নিজ ক্ষেত্রে। সম্মিলিতভাবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। গণতান্ত্রিক ধারাকে বেগবান করার লক্ষ্যে। মনে রাখতে হবে, অশুভ শক্তিকে ছাড় দেয়া মানে নিজের অস্তিত্বের ওপর আঘাত ডেকে আনা। তবে ইতিহাস বলে শুভবাদীদের সম্মিলিত শক্তির কাছে অশুভ দানব সব সময় পরাজিত হয়েছে।
লেখক: সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ও কলামিস্ট