রাজউক প্রধানের ‘ডিল’ করেন পুত্র
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দুর্নীতি কিছুতেই সহনীয় পর্যায়ে আনা যাচ্ছে না। বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীনরা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলেও কোন কাজ হয়নি। বরং রাজউকের দুর্নীতি দিন দিন আরো বাড়ছেই।
রাজউক সূত্র জানায়, বর্তমান সময়ের দুর্নীতি অতীতের যে কোন সময়ের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদা স্বয়ং রাজউকের দুর্নীতিবাজদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামও গতবছর রিহ্যাব মেলা উদ্বোধন করতে গিয়ে বলে ছিলেন, রাজউকের দুর্নীতি বেড়েছে। সরকার উপায়ান্তর না দেখে রাজউকের দুর্নীতি তদন্তে সংসদীয় উপ-কমিটি গঠন করে ছিল। সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি এম গোলাম মোস্তফা তখন সাংবাদিকদের বলেন, রাজউকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখতেই উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনও এক এক রহস্যময় কারণে এ বিষয়টি আর এগোয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের একজন উপ-পরিচালক বলেন, রাজউকের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর খুবই ঘনিষ্ঠ হিসেবে দাবি করেন এবং এটা জাহির করে বেড়ান। এই পরিচয় দিয়ে সবাইকে ভয় দেখান এবং তটস্থ রাখেন।
সূত্র জানায়, রাজউকের দুর্নীতির সঙ্গে চেয়ারম্যান নূরুল হুদার ছেলেও জড়িত রয়েছেন। তার ছেলে ডাক্তার হলেও ডাক্তারি পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করেন। নামে-বেনামে বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির শেয়ার আছে চেয়ারম্যানের ছেলের। সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান নূরুল হুদার পক্ষে বিভিন্ন ‘ডিল’ তার ডাক্তার-ছেলেই করেন।
সূত্র জানায়, রাজউকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উঠলেই কোন এক রহস্যজনক কারণে সেটা থেমে যায়। চেয়ারম্যান সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে ফেলেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি জরিপ থেকে জানা যায়, রাজউকে প্রতি বছর ৫০ কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্য হয় শুধু নকশা অনুমোদন শাখাতেই। এটা তো মাত্র একটা সেকশনের দুর্নীতি। আসলে রাজউকে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়।
টিআইবি’র ওই জরিপ রিপোর্ট বলা হয়, এই ঘুষের পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে এবং টাকা না দিলে কোন প্ল্যানই পাস হয় না। প্রতিটি প্ল্যান পাস করতে কত টাকা লাগে তাও উল্লেখ করেছে টিআইবি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে প্রতিবছর ঢাকায় প্রায় ৭-৮ হাজার ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা পাস হয়।
রাজউকের সঙ্গে অবৈধ লেনদেন ছাড়া কোনো ধরনের পরিকল্পনা অনুমোদন সম্ভব হয় না। এভাবে রাজউক কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে বিভিন্ন অনিয়মকে জায়েজ করে নেওয়া হয়। আর এই কাজে সহযোগী হিসেবে কাজ করে রাজউক কর্মকর্তাদের পালিত দালাল চক্র।
এলাকাভেদে নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ঘুষের পরিমাণ কম-বেশি হয়। তবে একেকটি নকশা অনুমোদনের জন্য বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী কমপক্ষে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। এই হিসাবে ৭ হাজার নকশার অনুমোদন দেওয়া হলেও বছরে ঘুষের অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
এমন অনিয়ম-দুর্নীতির কথা স্বীকার করে রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদা জানান, এসব অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে মুক্ত করে প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অতীতে রাজউকে যারা কর্মরত ছিলেন, তাদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রাজউকের ভেতর-বাহিরের একটি সিন্ডিকেটের চাপে কাজ করা কষ্টকর হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
বেসরকারি কোম্পানিগুলোর আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে নানা আপত্তি তুলে রাজউকই আপত্তিকর কাজ করছে। খাল-জলাশয় ও নিম্নাঞ্চল ভরাট করে একেকটি আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়নই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পূর্বাচল নতুন শহর, উত্তরা আবাসিক প্রকল্প ও ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে রাজউক ইতোমধ্যে হাজার হাজার একর জমিতে আগ্রাসন চালাচ্ছে।
এতে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। এ আগ্রাসনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল প্রকল্প এলাকার ছোট ছোট টিলা উধাও হয়ে গেছে। একইভাবে উত্তরা মডেল টাউন বাস্তবায়নের নামে রাজউক নগরীর উত্তরাঞ্চলীয় সব নিম্নাঞ্চল, জলাশয় ও খাল ভরাট করে ফেলেছে। ফলে মিরপুর ও পল্ল¬বীসহ আশপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
রাজউক প্রণীত স্ট্রাকচারাল প্ল্যানে কেরানীগঞ্জের যেসব এলাকাকে সাব-ফ্লাড ফ্লো (উপ-বন্যাপ্রবাহ) জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, রাজউক ইতোমধ্যেই সেসব নিম্নাঞ্চল-জলাশয় বালি দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘন্টা, ২৫ জানুয়ারি, ২০১২
রাজউক সূত্র জানায়, বর্তমান সময়ের দুর্নীতি অতীতের যে কোন সময়ের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদা স্বয়ং রাজউকের দুর্নীতিবাজদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামও গতবছর রিহ্যাব মেলা উদ্বোধন করতে গিয়ে বলে ছিলেন, রাজউকের দুর্নীতি বেড়েছে। সরকার উপায়ান্তর না দেখে রাজউকের দুর্নীতি তদন্তে সংসদীয় উপ-কমিটি গঠন করে ছিল। সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি এম গোলাম মোস্তফা তখন সাংবাদিকদের বলেন, রাজউকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখতেই উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনও এক এক রহস্যময় কারণে এ বিষয়টি আর এগোয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের একজন উপ-পরিচালক বলেন, রাজউকের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর খুবই ঘনিষ্ঠ হিসেবে দাবি করেন এবং এটা জাহির করে বেড়ান। এই পরিচয় দিয়ে সবাইকে ভয় দেখান এবং তটস্থ রাখেন।
সূত্র জানায়, রাজউকের দুর্নীতির সঙ্গে চেয়ারম্যান নূরুল হুদার ছেলেও জড়িত রয়েছেন। তার ছেলে ডাক্তার হলেও ডাক্তারি পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করেন। নামে-বেনামে বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির শেয়ার আছে চেয়ারম্যানের ছেলের। সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান নূরুল হুদার পক্ষে বিভিন্ন ‘ডিল’ তার ডাক্তার-ছেলেই করেন।
সূত্র জানায়, রাজউকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উঠলেই কোন এক রহস্যজনক কারণে সেটা থেমে যায়। চেয়ারম্যান সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে ফেলেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি জরিপ থেকে জানা যায়, রাজউকে প্রতি বছর ৫০ কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্য হয় শুধু নকশা অনুমোদন শাখাতেই। এটা তো মাত্র একটা সেকশনের দুর্নীতি। আসলে রাজউকে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়।
টিআইবি’র ওই জরিপ রিপোর্ট বলা হয়, এই ঘুষের পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে এবং টাকা না দিলে কোন প্ল্যানই পাস হয় না। প্রতিটি প্ল্যান পাস করতে কত টাকা লাগে তাও উল্লেখ করেছে টিআইবি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে প্রতিবছর ঢাকায় প্রায় ৭-৮ হাজার ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা পাস হয়।
রাজউকের সঙ্গে অবৈধ লেনদেন ছাড়া কোনো ধরনের পরিকল্পনা অনুমোদন সম্ভব হয় না। এভাবে রাজউক কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে বিভিন্ন অনিয়মকে জায়েজ করে নেওয়া হয়। আর এই কাজে সহযোগী হিসেবে কাজ করে রাজউক কর্মকর্তাদের পালিত দালাল চক্র।
এলাকাভেদে নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ঘুষের পরিমাণ কম-বেশি হয়। তবে একেকটি নকশা অনুমোদনের জন্য বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী কমপক্ষে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। এই হিসাবে ৭ হাজার নকশার অনুমোদন দেওয়া হলেও বছরে ঘুষের অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
এমন অনিয়ম-দুর্নীতির কথা স্বীকার করে রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদা জানান, এসব অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে মুক্ত করে প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অতীতে রাজউকে যারা কর্মরত ছিলেন, তাদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রাজউকের ভেতর-বাহিরের একটি সিন্ডিকেটের চাপে কাজ করা কষ্টকর হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
বেসরকারি কোম্পানিগুলোর আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে নানা আপত্তি তুলে রাজউকই আপত্তিকর কাজ করছে। খাল-জলাশয় ও নিম্নাঞ্চল ভরাট করে একেকটি আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়নই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পূর্বাচল নতুন শহর, উত্তরা আবাসিক প্রকল্প ও ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে রাজউক ইতোমধ্যে হাজার হাজার একর জমিতে আগ্রাসন চালাচ্ছে।
এতে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। এ আগ্রাসনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল প্রকল্প এলাকার ছোট ছোট টিলা উধাও হয়ে গেছে। একইভাবে উত্তরা মডেল টাউন বাস্তবায়নের নামে রাজউক নগরীর উত্তরাঞ্চলীয় সব নিম্নাঞ্চল, জলাশয় ও খাল ভরাট করে ফেলেছে। ফলে মিরপুর ও পল্ল¬বীসহ আশপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
রাজউক প্রণীত স্ট্রাকচারাল প্ল্যানে কেরানীগঞ্জের যেসব এলাকাকে সাব-ফ্লাড ফ্লো (উপ-বন্যাপ্রবাহ) জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, রাজউক ইতোমধ্যেই সেসব নিম্নাঞ্চল-জলাশয় বালি দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘন্টা, ২৫ জানুয়ারি, ২০১২
__._,_.___