| আওয়ামী লীগে যুদ্ধাপরাধী - ৪ এ্যাডভোকেট নয়ন খান | | [আগের পর্বগুলো পড়তে এই লেখার বাম দিকে লক্ষ্য করুন]
আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতার বিরূদ্ধে অপরাধ সংগঠনকারীদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের তালিকাভূক্ত ব্যক্তিরা _ ১. মুক্তিবাহিনী, তাদের সমর্থক এবং সহানূভূতিজ্ঞাপনকারীদের বিরূদ্ধে পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর সদস্যদের কুমন্ত্রণা দিত, ২. অপহরণ, বন্দী এবং পরিশেষে হত্যা করতে পাকবাহিনীকে তারা সহায়তা দিত ৩. দলীয় কর্মীদের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের নিরীহ মানুষকে বিভিন্ন ক্যাম্পে বা হত্যা কেন্দ্রে প্রেরণ করত, ৪. মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক নিরপরাধ সাধারণ মানুষের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিত এবং অবাধ লুটতরাজ করত ৫. হাজার হাজার বাঙ্গালী নারীদের অপরহন করে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করত। ৬. পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের কাছেও তারা নিপীড়নের জন্য বাঙ্গালী নারীদের তুলে দিত। ৭. তাদের মদতে বা সক্রিয় অংশ গ্রহণে দুই লাখ নিরাপরাধ নারী যৌননিপীড়নের শিকার হয়। তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পাকিস্তানী সেনা বাহিনীকে সহায়তা, গণহত্যা, লুন্ঠন, অগিড়ব সংযোগ ও নারীদের ধর্ষণের ক্ষেত্রেপাকিস্তানী গণ পরিষদের ১৬ জন নির্বাচিত সদস্য, যারা আওয়ামী লীগের গুরূত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ, গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরূদ্ধে অপরাধ সংঘটনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। তারা হলেন - (১) মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান (বগুড়া) (২) লেঃ কর্নেল এ, কে, এম মাহবুবুল ইসলাম (পাবনা) (৩) ঙ্সয়দ হোসেন মনসুর (পাবনা) (৪) মোহাম্মাদ আব্দুল গাফফার (খুলনা) (৫) মোহাম্মাদ সাঈদ (খুলনা) (৬) আবুল কালাম ফায়জুল হক (বরিশাল) (৭) মোশারফ হোসেন শাহজাহান (বরিশাল) (৮) এ, বি, এম নুরূল ইসলাম (ফরিদপুর) (৯) আমজাদ হোসেন খান (ফরিদপুর) (১০) মোহাম্মাদ নুরূল ইসলাম (ঢাকা) (১১) জহীরূদ্দীন (ঢাকা) (১২) মোহাম্মাদ ওবায়দুলাহ মজুমদার (নোয়াখালী) (১৩) শামছুল হক (চট্টগ্রাম) (১৪) আখতারূজ্জামান (ময়মনসিংহ) (১৫) সৈয়দ বদরূজ্জামান (এস,বি, জামান, ময়মনসিংহ) (১৬) ডাঃ আবুল হাসেম (সিলেট)
তাদের ১৯৭২ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলীয় শৃংখলা, স্বার্থ ও নির্দেশনাবলী বিরোধী কার্যকলাপ ও দালালীর অভিযোগে গণ পরিষদ থেকে বহিষ্কারকরেন। দৈনিক আজাদ ৭ এপ্রিল ১৯৭২ তারিখে আরো জানায়, "এদের মধ্যে জনাব জহিরূদ্দীন ঢাকা শহরের একটি এলাকা থেকে এম, এন, এ নির্বাচিত হয়েছিল। বাংলাদেশের সব লোক যখন মুক্তিযুদ্ধে লিপ্ত ছিল, তখন তিনি ইয়াহিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকরেছিলেন। নোয়াখালী থেকে এম, এন, এ নির্বাচিত জনাব ওবায়দুলাহ মজুমদার পাকিস্তানী গভর্নর ডাঃ মালিকে তথাকথিত মন্ত্রী পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি এখন কারাগারে আছেন। ময়মনসিংহ থেকে এম, পি, এ নির্বাচিত জনাব এস, বি জামান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরূদ্ধে ইয়াহিয়া সরকার কর্তৃকআনীত মিথ্যা মামলায় প্রতিহিংসামূলক আচরণে লিপ্ত ছিল। তিনি এ মামলায় সাক্ষীর ব্যবস্থাও করেছিলেন এবং ইয়াহিয়া সরকারের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করেছেন বলে প্রকাশ। ফরিদপুরের এ, বি এম নুরূল ইসলামও ইয়াহিয়া সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন বলে জানা গেছে। তিনিও কারাগারে আছেন।" তথ্য সূত্র: (দৈনিক আজাদ, ৭-৪ -৭২, পৃষ্ঠা-১, কলামঃ ১-৩, ঢাবি; লাই)
এদের বিভিন্ন জনের কর্মকান্ডের আমরা কোন যোগ ছাড়াই আরো বিবরণ সেসময়ের জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক আজাদ থেকে জানতে পারি। ১. আওয়ামীলীগ সদস্যের দলত্যাগ "মোমেনশাহী হইতে নির্বাচিত এম.পি.এ এবং বেআইনী ঘোষিত আওয়ামীলীগের একজন বিশিষ্ট সদস্য জনাব এস.বি.জামান দলের দেশদ্রোহীদের সাম্প্রতিক জঘন্য কার্যকলাপে বীতশ্রদ্ধ হইয়া উক্ত দলের সহিত সম্পর্ক ছিন্নকরিয়াছেন।তিনি এক বিবৃতিতে বলেন , তাহার মত বহু সংখ্যক দেশপ্রেমিক আওয়ামী লীগের এম.পি.এ ও এম.এন.এ এই সব দূষ্কৃতকারীদের (অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের) আসল মতলব সম্পর্কে কিছুই জানিতেন না। তিনি পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি রক্ষাকল্পে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও সশস্ত্রবাহিনীকে সাহায্য কল্পে আগাইয়া আসার জন্য মোমেনশাহী জেলার সকল দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রতি আকুল আবেদন জানান। তথ্য সূত্র: দৈনিক আজাদ,তাং ২-৫-১৯৭১ , পৃ: ১-ক-১-২, প্রকাশ-ঢাকা)
২. আওয়ামী লীগ নেতার বিবৃতি একই ধরণের সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের এম. পি. এ অধ্যাপক শামসুল হক গতকাল বলেন যে, নির্বাচনের পর যে সকল ঘটনা ঘটিয়াছে তাহাতে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে বাধ্য হইয়াছি যে, শেখ মুজিবর রহমান সহ বেআইনী ঘোষিত আওয়ামীলীগের উচ্চ পদস্থ নেতারা পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার জন্য মানুষের প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা করিয়াছেন । বেআইনী ঘোষিত আওয়ামীলীগের সহিত সকল সম্পর্ক ছিন্নকরার কথা ঘোষণা করিয়া অধ্যাপক শামসুল হক বলেন আমি তাহাদের এই খেলায় কখনই অংশ গ্রহণ করিব না। তিনি ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী ও শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাহাদের এজেন্টদের পাকিস্তানের প্রকৃত শত্রূ বলিয়া আখ্যায়িত করিয়া তাহাদের ভূমিকার নিন্দা করেন। ৩ . আওয়ামীলীগ নেতার বিবৃতি হবিগঞ্জে ২৮ আগস্ট আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ডাঃ আবুল হাশিমসহ প্রায় ৪৮ জন বিদ্রোহী স্থানীয় শান্তি কমিটির নিকট আত্মসমর্পণ করিয়া একটি বিবৃতি প্রদান করিয়াছেন। তাহারা বিবৃতিতে বলেন যে, আমরা পবিত্র কোরান শরীফ স্পর্শ করিয়া শপথ করিয়াছি যে, পাকিস্তানেরআজাদী ও সংহতির জন্য জান-মাল কোরবান করিতে প্রস্তুত থাকিবো। তাহারা এই অভিযোগ উত্থাপন করিয়াছে যে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মকর্তারা তাহাদিগকে দুষ্কৃতিকারীদের দলে যোগদান করিতে বলপূর্বক বাধ্য করিয়াছে। ইহা ছাড়া তাহারা আওয়ামীলীগের কার্যকলাপের নিন্দা করিয়া উহার সহিত সকল প্রকার সম্পর্কচ্ছেদের কথাও উলেখ করেন। তথ্য সূত্র: দৈনিক আজাদ, তাং ৩০-৮-১৯৭১ , পৃ ২-ক-১-৩, প্রকাশ-ঢাকা)
এসছাড়া আরো তিন জন আওয়ামী লীগ এমপিএ মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেনঃ ১. যশোরের মোঃ মইনুদ্দিন মিয়াজী , ২. খুলনার জনাব হাবিবুর রহমান খান ও ৩. জনাব মোঃসাঈদ তথ্য সূত্র: দৈনিক আজাদ , তাং ১৬-৫-১৯৭১ , পৃ ১-ক-৭-৮, প্রকাশ-ঢাকা)
তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি সূত্র থেকে এভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছেঃ 'তিন আওয়ামী লীগ নেতার বিবৃতি বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের তিন জন এম পি পৃথক পৃথক বিবৃতিতে যে কোন উপায়ে পাকিস্তানের সংহতি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরূত্ব আরোপ করিয়াছেন। তাহারা বলেন যে , পাকিস্তান এক ও অভিন্ন । বিশ্বের কোন শক্তি ইহা ধ্বংস করিতে পারিবে না। তাহারা কঠোর ভাষায় পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সশস্ত্র অনুপ্রবেশ এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে হস্তক্ষেপেরতীব্র নিন্দা জানাইয়াছেন। এই তিনজন এম পি হইতেছেন যশোরের জনাব মোঃমইনুদ্দিন মিয়াজী , খুলনার জনাব হাবিবুর রহমান খান ও জনাব মোঃ সাঈদ।'
(চলবে) | | http://www.sonarbangladesh.com/articles/AdvNayanKhan | | | | | | |
বড়ই জনহিতকর কাজ করছেন এ্যাডভোকেট সাহেব।
নয়ন খান জিন্দাবাদ।