Banner Advertise

Wednesday, March 23, 2011

[chottala.com] UNDISCLOSED stoty behind Col Taher's secret "TRIAL" (কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের অজানা কাহিনী) from Daily Ittefaq



 
Links:
 
 
 
কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের অজানা কাহিনী

০০ সালেহ উদ্দিন

যে সামরিক আদালতে কর্নেল (অব:) আবু তাহের বীরোত্তমের বিচার হয়, তার গঠন, কার্যক্রম, বিধিমালা কোনো কিছুই আইন ও সংবিধান সম্মত ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পরও যে সামরিক কর্মকর্তা চার বছর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন তাকে করা হয়েছিল ট্রাইবু্যনালের চেয়ারম্যান। এমনকি ওই বিচারক কর্নেল ইউছুফ হায়দার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশে অবস্থান করেও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেননি। চার সদস্যের ট্রাইবু্যনালের অপর সদস্য হলেন উইং কমান্ডার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, কমান্ডার সিদ্দিক আহমদ, ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মোর্শেদ ও ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবদুল আলী। ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস শেষোক্তজন ছাড়া আর কেউ জীবিত নেই।

কর্নেল তাহেরকে যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় তার জন্য মৃতু্যদণ্ড দেয়ার কোনো বিধান ছিল না। ফাঁসি কার্যকরের দশদিন পর আইন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত সামরিক আইনের সংশোধনী এনে "বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের অপরাধের শাস্তি মৃতু্যদণ্ডের বিধান করে।" সম্পূর্ণ মামলাটিই চলছিল জবরদস্তিমূলকভাবে। এই মামলার কোনো আদেশ কিংবা তার রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর কোনো কতর্ৃপক্ষ বা আদালতে আপিল করার কোনো সুযোগ ছিল না ।

১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমাণ্ডার কর্নেল (অব.) আবু তাহের বীরোত্তমকে সামরিক আদালতে গোপন বিচারের রায়ে ফাঁসি দেয়া হয়। সামরিক আইনের বাধার কারণে ওই সময় দেশের কোনো সংবাদপত্রেই ট্রাইবু্যনালের কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। একমাত্র দৈনিক ইত্তেফাক "ষড়যন্ত্র মামলা শুরু"! এই শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। এজন্য ইত্তেফাকের সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে সেনা সদরে ডেকে নেয়া হয়েছিল । এজন্য তাকে অনেক হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের সেই অজানা তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদনটি রচনা করা হয়েছে।

বিস্তারিত:

কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের অজানা কাহিনী

সালেহ উদ্দিন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকেই বাংলাদেশ কার্যত সামরিক কতর্ৃপক্ষ ও সামরিক আইন দ্বারা চালিত হচ্ছিলো। স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের সামরিক শাসনের প্রথম দফা এ কালপর্ব স্থায়ী হয়েছিল প্রায় ৪৭ মাস। এর মধ্যে দেশ তিনজন 'প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) পেয়েছিল। আলোচ্য এ তিন 'প্রশাসক' যথাক্রমে খন্দকার মোশতাক আহমদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান নিজস্ব এবং গোষ্ঠীগত ইচ্ছা ও স্বেচ্ছাচারিতা চরিতার্থ করার জন্য ১৫ আগস্টের পর থেকে নূ্যনপক্ষে ২৩টি সামরিক ফরমান ও অধ্যাদেশ জারি করেছেন। এমনি একটি অধ্যাদেশ ছিল বিশেষ সামরিক আইন ট্রাইবু্যনাল। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বিচারপতি সায়েম ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঠিক ১০ মাস পর ১৯৭৬-এর ১৪ জুন এ অধ্যাদেশটি জারি করেন। এ অধ্যাদেশ জারির উদ্দেশ্য ছিল মূলত একটি। তা হলো ইতিমধ্যে গ্রেফতারকৃত "৭ নভেম্বরের সিপাহী অভু্যত্থানের" নেতা কর্নেল আবু তাহের ও জাসদ নেতৃবৃন্দের 'বিচার' করা। জেনারেল জিয়াউর রহমানের ইচ্ছা ও নির্দেশেই সায়েম এ অধ্যাদেশটি জারি করেছিলেন। সায়েম রাষ্ট্রপতি ও সিএমএলএ হলেও দেশের সর্বময় ক্ষমতা তখন প্রকৃত অর্থে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের হাতেই কেন্দ্রীভূত ছিল। অর্থ, স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছাড়াও তিনি তখন অন্যতম ডিসিএমএলএ (উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক)ও ছিলেন।

বিচারপতি সায়েম কতর্ৃক জারিকৃত উপর্যুক্ত বিশেষ সামরিক আইন ট্রাইবু্যনাল অধ্যাদেশে বলা হয় :

'যেহেতু নিম্নবর্ণিত কারণে একটি সামরিক আইন বিধি জারি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, সেহেতু ১৯৭৫ সালের আট নভেম্বরের ঘোষণা অনুসারে এবং এসব ঘোষণায় প্রাপ্য সমুদয় ক্ষমতাবলে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিম্নোক্ত সামরিক আইন বিধি জারি করেন: এই বিধি ১৯৭৬ সালে 'বিশেষ সামরিক আইন ট্রাইবু্যনাল বিধি' নামে অভিহিত হবে;

এই বিধির সার্বিক কার্যকারিতা :অন্য কোনো সামরিক আইন বিধি বা আপাতত বলবৎ অপর যেকোনো আইনে এই বিধির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ কোনো কিছু বিধৃত থাকে, তা সত্ত্বেও এক্ষেত্রে এই বিধির কার্যকারিতা থাকবে;

ট্রাইবু্যনালের চেয়ারম্যান কর্নেলের পদমর্যাদার নিচে নয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এমন অফিসারদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হবেন। অপর ৪ জন সদস্যের মধ্যে ১ জন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এমন অফিসারদের মধ্য থেকে যার পদমর্যাদা কমান্ডারের নিচে নয়, ১ জন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এমন অফিসারদের মধ্য থেকে যার পদমর্যাদা উইং কমান্ডারের নিচে নয় এবং অপর ২ জন সদস্যকে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্য থেকে নিয়োগ করা হবে;

চেয়ারম্যান বা চেয়ারম্যানের নির্দেশ মোতাবেক ট্রাইবু্যনালের যে কোনো সদস্য প্রত্যেক সাক্ষীর সাক্ষ্যের সারাংশের স্মারকলিপি লিখে নেবেন এবং চেয়ারম্যান বা সংশিস্নষ্ট সদস্য তাতে স্বাক্ষর দেবেন এবং এটা হবে রেকর্ডের অংশ;

ট্রাইবু্যনালের বিচারকার্য রুদ্ধদার কক্ষে অনুষ্ঠিত হলে ট্রাইবু্যনালের চেয়ারম্যান সেখানে উপস্থিত কিংবা বিচার পরিচালনায় অংশগ্রহণকারী যে কোনো ব্যক্তিকে এই গোপনীয়তা রক্ষার শপথ গ্রহণ করতে বলতে পারেন যে, তিনি তার জ্ঞাত কিংবা এ বিচারের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট কোনো তথ্যই প্রকাশ করবেন না। এ শপথ লংঘন করে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হলে তার জন্য জরিমানা এবং ৩ বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ড দেয়া হবে।

উপযর্ুক্ত সামরিক আইন ট্রাইবু্যনাল বিধি জারি এবং সামরিক ট্রাইবু্যনাল গঠন প্রক্রিয়া থেকে দেখা যায়, আইনি দিক থেকে এ উদ্যোগটি মূলত মোশতাক-রশীদ-ফারুকদের 'প্রথম সামরিক আইনের ফরমানের ভিত্তিতেই নেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট অভু্যত্থানের পর, খন্দকার মোশতাক প্রথম যে সামরিক ফরমানটি জারি করেছিলেন তারই 'বেনিফিসিয়ারি' হিসেবে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ও বিচারপতি সায়েমের মাধ্যমে আলোচ্য ট্রাইবু্যনাল নাজেল হয়।

৫ সদস্য বিশিষ্ট এ ট্রাইবু্যনালে চেয়ারম্যানসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী থেকে আগত, যাদের আইনগত অভিজ্ঞতা বা চর্চার অভাব ছিল। তদুপরি, এরা সবই ছিলেন সামরিক প্রশাসনের অংশ।

সামরিক অধ্যাদেশেই বলে দেয়া হয়েছে, ট্রাইবু্যনালের রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করা যাবে না, বিচারকার্য চলবে রুদ্ধদ্বার কক্ষে এবং বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ থেকে বিচার সম্পর্কে শুরুতেই জনমনে যে সংশয় ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়, পরবর্তী মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে তার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছিল।

কর্নেল তাহের ও জাসদ নেতৃবৃন্দের বিচারের লক্ষ্যে বিশেষ সামরিক আইন ট্রাইবু্যনাল অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল ১৯৭৬ সালের ১৪ জুন। এ অধ্যাদেশের আলোকে ট্রাইবু্যনালটি গঠিত হয় পরদিন ১৫ জুন এবং ওইদিন ট্রাইবু্যনালের সদস্যরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন। বস্তুত ঊর্ধ্বতন কতর্ৃপক্ষের নির্দেশে ১২ জুন থেকেই কারাগারের ডিআইজি প্রিজনের অফিস কক্ষটি খালি করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছিল। অধ্যাদেশ জারি, ট্রাইবু্যনাল গঠন ও ডিআইজি প্রিজনের কক্ষকে আদালত হিসেবে প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সমগ্র বিচারটি ছিল আসলে পূর্বপরিকল্পিত।

২২ মে তাহেরকে রাজশাহী কারগার থেকে হেলিকপটারে করে ঢাকা কারাগারে নিয়ে আসা হয়। মেজর এম এ জলিল ও আ স ম আব্দুর রবকেও একইভাবে দেশের অন্যত্র থেকে ঢাকা কারাগারে আনা হয়েছিল। ১৮ জুন ভোরে একে একে মামলার সকল আসামিকে ঢাকা কারগারের ডিআইজি প্রিজনের কক্ষস্থ নবগঠিত আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তারা প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারেন, ষড়যন্ত্র মামলা: রাষ্ট্র বনাম মেজর (অব.) এম এ জলিল গং; শীর্ষক মামলার বিষয়বস্তু সম্পর্কে। মেজর জলিলের নামে মামলার নামকরণ করা হলেও বাস্তবে মামলার মূল আসামি তথা 'টার্গেট' ছিলেন কর্নেল আবু তাহের।

আলোচ্য মামলার অভিযুক্তের সংখ্যা ছিল ৩২। যাদের মধ্যে বিভিন্নভাবে সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিলেন ১৮ জন। 'আসামীদের মধ্যে ২১ জনকে পূর্ব থেকেই দেশের বিভিন্ন কারগারে ডিটেনশনে আটক করে রাখা হয়েছিল। বাকি ১১ জন সম্পর্কে ১৭ জুন সংবাদপত্র একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, বিশেষ সামরিক ট্রাইবু্যনালের চেয়ারম্যান নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের আগামী ২১ জুন অথবা তার আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারে ট্রাইবু্যনালে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ উপস্থিত হতে ব্যর্থ হলে তার অনুপস্থিতিতে বিচার করা হবে এবং সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।

যাদের ট্রাইবু্যনালে হাজির হতে বলা হয়েছে তারা হলেন-

সিরাজুল আলম খান ওরফে দাদা, শরীফ নূরুল আম্বিয়া, ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার সিদ্দিকী, কর্পোরাল আলতাফ হোসেন, নায়েক সুবেদার জালাল উদ্দিন, হাবিলদার এম এ বারেক, নায়েক এ বারী, জাসদ কর্মী মহিউদ্দিন, সার্জেন্ট সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, ফ্লাইট সার্জেন্ট কাজী রোকন উদ্দিন, সার্জেন্ট কাজী আবদুল কাদের।

আলোচ্য মামলায় 'আসামীদের বিরুদ্ধে মূলত দু'ধরনের অভিযোগ আনা হয়। প্রথমত, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র এবং দ্বিতীয়ত, সশস্ত্র বাহিনীকে বিদ্রোহে প্ররোচনা দান। অভিযোগনামাটি ছিল সংক্ষেপে নিম্নরূপ :

'অধুনালুপ্ত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কতিপয় নেতা যেমন মেজর (অব.) এম এ জলিল, এ এস এম আব্দুর রব, সিরাজুল আলম খান, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, হাসানুল হক ওরফে ইনু, লে. কর্নেল (অব.) আবু তাহের ও মেজর জিয়াউদ্দিন (পলাতক) অন্যান্য আরও কতিপয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো, প্রচণ্ড আক্রমণে একে উৎখাত করা এবং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের গৌরবোজ্জ্বল বিপস্নবের, যা বাংলাদেশের জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনীর বিপস্নব, তার ফলশ্রুতিকে সম্পূর্ণরূপে বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিলেন; ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে লে. কর্নেল (অব) আবু তাহের এবং তার কতিপয় সঙ্গী দেশ রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বিপথে পরিচালিত করেন অথবা করতে চেষ্টা করেন। যে দেশরক্ষা বাহিনী একটি সার্বভৌম দেশের গৌরব, শক্তির উৎস এবং জনগণের পবিত্র আমানত তাতে তারা রাজনৈতিক শিক্ষার ক্লাস চালায়, অনিষ্টকর পুস্তক, প্রচারপত্র ও অর্থ বিলি করে। ষড়যন্ত্রকারীদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল নিয়মিত বাহিনীকে নিমর্ূল ও ধ্বংস করে তার স্থলে জেএসডি'র (অর্থাৎ জাসদের) এবং কাদের সিদ্দিকীর তথাকথিত গণবাহিনীকে বসানো। কাদের সিদ্দিকী অভিযুক্ত লে. কর্নেল (অব.) আবু তাহেরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন। ১৯৭৫ সালের ঐতিহাসিক পরিবর্তনের পর নাশকতামূলক পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখলের জন্য ষড়যন্ত্রকারীদের তৎপরতা পরিচালিত হয়। বিরাজমান অবস্থার সুযোগ নিয়ে তথাকথিত গণবাহিনীর নেতৃবর্গ ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর গৌরবোজ্জ্বল বিপস্নবের সাফল্যের সকল কৃতিত্বকে নিজেদের কৃতিত্ব বলে দাবি করেন। কিন্তু শিগগির তা প্রকাশ পেয়ে যায়। দেশপ্রেমিক সৈন্যরা তাদের স্টাফ প্রধানকে উদ্ধার করেন এবং চিফ অব স্টাফের আহ্বানে অস্ত্র জমা দিয়ে ব্যারাকে ফিরে আসেন। জেএসডি ও গণবাহিনীর নেতৃবর্গ সশস্ত্র বাহিনীর এই দেশপ্রেম ও শৃঙ্খলায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েন এবং তাদের বেতনভুক্ত এজেন্টদের মাধ্যমে সৈন্যদের অস্ত্র জমা না দেয়ার অনুরোধ করেন। নিয়মিত বাহিনীকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলে তাদের হীন ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর তারা ৭ নভেম্বরের বিপস্নবের অপবাদ দিয়ে বাংলাদেশের সকল সেনানিবাসের সৈন্যদের প্রতি বিদ্রোহ অপবাদ দিয়ে বাংলাদেশের সকল সেনানিবাসের সৈন্যদের প্রতি বিদ্রোহ ঘোষণার আহ্বান জানায়।ঃএ ষড়যন্ত্রের একটা অদ্ভুত ঘটনা হলো এই যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সামরিক অভু্যত্থানের পর থেকে বাংলাদেশের বেশকিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী ও আদর্শ-প্রেমিক লোক প্রতিবেশি দেশে পালিয়ে যায়, যার প্রতিক্রিয়া আমাদের প্রতি শত্রুতামূলক। এটা রেকর্ডকৃত আছে যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর জাসদের একজন নেতা ৭ বার ভারত সফর করেছেন।ঃএ পৈশাচিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা ও সুন্দরবন এলাকায় অপারেশন ঘাঁটিসমূহ তৈরি করা হয় এবং এসব স্থানে অভিযুক্ত মেজর জিয়াউদ্দিন আহমদ (সেনাবাহিনী থেকে দলত্যাগী) একদল ষড়যন্ত্রকারী নিয়ে লঞ্চ হাইজ্যাক, অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের জন্য থানা লুট, ব্যাংক লুট এবং ফরেস্ট অফিসমূহ আক্রমণ করে তা পুড়িয়ে দেয়ার কাজে লিপ্ত হয়।

১৯৭৫ সালের ২১ জুন মামলায় বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। কর্নেল তাহের সেদিন শুরুতে গোপন বিচারালয়ে উপস্থিত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন এবং এ নিয়ে ফাঁসির আসামীদের জন্য নির্দিষ্ট (!) ৮ নম্বর সেলে কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাহেরের বাদানুবাদও হয়। পরে অবশ্য আদালতে উপস্থিত আইনজীবীদের অনুরোধে কর্নেল তাহের তার মত পরিবর্তন করেন। আদালতে হাজির হন তিনি। উলেস্নখ্য, আলোচ্য এ মামলায় 'আসামী' পক্ষে আইনি লড়াই চালাবার জন্য মামলা শুরুর দিনেই প্রচুর আইনজীবী উপস্থিত হন।

আদালত কক্ষে সেদিন সে সমস্ত আইনজীবীকে দেখা যায় তাদের মধ্যে ছিলেন পূর্ববাংলার এককালীন মুখ্যমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে জেনারেল এরশাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান, সাবেক রাষ্ট্রদূত জুলমত আলী খান, কে জেড আলম, সাবেক এটর্নি জেনারেল আমিনুল হক, সিরাজুল হক, গাজীউল হক, আব্দুল মালিক, কাজী শাহাদৎ হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি আব্দুল রউফ, বর্তমান বিচারপতি শরীফ উদ্দিন চাকলাদার, আব্দুল হাকিম, আলতাফুর রহমান, মহীউদ্দিন আহমেদ, জিন্নাত আলী, খাদেমুল ইসলাম, শামসুর রহমান, শরিফ উদ্দিন ভুঁইয়া প্রমুখ। সরকারি পক্ষে প্রধান আইনজীবী বা পাবলিক প্রসিকিউটর ছিলেন তৎকালীন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এটি এম আফজাল, যিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন।

মামলার সাক্ষ্য পরিচালনা করেন সে সময়কার স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুর রাজ্জাক খান। সরকার পক্ষের এই দুই আইনজীবীকে সহযোগিতা করেছিলেন তৎকালীন অ্যাসিসটেন্ট এটর্নি জেনারেল কাজী আবদুল ওহাব।

উদ্বোধনী অধিবেশনে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হবার পর ট্রাইবু্যনাল মুলতবি হয়ে যায় আট দিনের জন্য। মামলাটি সাজাতে সরকারের সময় লেগেছিল ছয় মাসেরও বেশি, বিপরীতে আসামী পক্ষের উকিলদের মামলার কাগজপত্র ও আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির জন্য সময় দেয়া হয় মাত্র ওই আট দিনই। মামলার কার্যক্রম যেদিন শুরু হয়, কেবল সেদিনই আসামি পক্ষের উকিলদের সুযোগ দেয়া হয় ক্লায়েন্টদের সঙ্গে দেখা করার। আত্মপক্ষ সমর্থন ও মামলা মোকাবেলার প্রস্তুতির জন্য এতো স্বল্প সময় বরাদ্দ বিচারের ইতিহাসে সত্যিই বিরল। শুধু তাই নয়, অভিযুক্তদের অনেকে বেশ কয়েক মাস যাবৎ নিরাপত্তামূলক আইনে বন্দি ছিলেন এবং তাদেরকে আত্মীয়স্বজন বা আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। আর অবাক হবার মতো ঘটনা হলো, অভিযুক্তরা তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কেবল কোর্টে থাকার সময়টাতেই কথা বলতে পারতেন।

ব্যক্তিগতভাবে, নিভৃতে কিংবা নিজের মতো করে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলা বা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মামলাটির আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগই দেয়া হয়নি। বাইরে (অর্থাৎ কারগারের বাইরে) কোনো কাগজপত্র আনতে দেয়া হতো না। এমনকি অভিযোগের সপক্ষে যে সমস্ত প্রমাণাদি রেকর্ড করা হয়, সেগুলোর কপি পর্যন্ত আইনজীবীদের দেয়া হয়নি। প্রত্যহ দু'বার জেল গেটে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আইনজীবীদের দেহ তলস্নাশি করা হতো। তাঁদের সকলকে এ মর্মে শপথও করানো হয় যে, মামলার কার্যপ্রণালির কোনো কিছুই বেধে দেয়া সময়ের আগে তাঁরা বাইরে প্রকাশ করবেন না। ব্যতিক্রম ঘটেছে এমন প্রমাণিত হলে তাদেরকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবার বিধান রাখা হয়। মামলাটিতে সাক্ষী করা হয়েছিল সাত জনকে। প্রধান রাজসাক্ষী ছিলেন কর্পোরাল ফখরুল আলম। এছাড়া ছিলেন হাবিলদার বারী, সুবেদার মাহবুব, কর্পোরাল মোয়াজ্জেম, হাবিলদার শাহদাৎ আলী প্রমুখ। ফখরুল ব্যতীত বেশিরভাগ সাক্ষীর ওপরই কঠিন নিপীড়ন চালিয়ে সরকার বাধ্য করেছিল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে। সাক্ষীদের কয়েকজন ছিল সহঅভিযুক্ত। সরকার তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে রাজসাক্ষী করে। তাদের ক্ষমা প্রদর্শনের কাজটিও আশ্চর্যজনকভাবে সমাধা করা হয় ট্র্যাইবু্যনাল গঠনের মাত্র একদিন পর, ১৫ জুন তারিখে। সাধারণত সাক্ষীদের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করার জন্য নিরপেক্ষ প্রত্যক্ষদর্শী থাকে। এ মামলায় সে বিধানটিও অগ্রাহ্য হয়। ৩ জুলাই আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রাজসাক্ষী ফখরুল আলমকে (এর সাক্ষ্য দিয়ে মামলার সূচনা ঘটে) বিস্তারিতভাবে জেরা করার জন্য ট্রাইবু্যনালের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করলে সে আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। এ মামলা কিংবা তার রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর কোনো কতর্ৃপক্ষের কাছে আপিল করার কোনো সুযোগ ছিল না। সম্পূর্ণ মামলাটিই চলছিলো অনেকটা জবরদস্তিমূলকভাবে।

যারা এ মামলা সাজিয়েছিলেন তাদের কথা মতোই সাক্ষীরা মামলা চলাকালে সাক্ষ্য দিচ্ছিলো। ফলে সেসব সাক্ষ্যে মিথ্যাচার আর গরমিলের ছিলো ছড়াছড়ি। যেমন রাজসাক্ষী ফখরুল এক পর্যায়ে বলেন যে, ড. আখলাকুর রহমানের মোহাম্মদপুরস্থ বাসায় লে. কর্নেল তাহেরকে দেখেছে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা কর্নেল ভোরার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে। অথচ বাস্তব সত্য হলো_সেসময় ড. আখলাকের বাসায় কোনো ফোনই ছিল না। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা রাজসাক্ষীদের বক্তব্যের এসব অসারতা তুলে ধরার পরও তাতে মামলার ফলাফল প্রভাবিত হয়নি।

মামলা চলাকালীন কর্নেল তাহের ট্রাইবু্যনালের কাছে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েম, তিনজন উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (ডিসিএমএলএ) এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু ট্রাইবু্যনাল ওই আবেদন নাকচ করে দেন।

২১ জুন যে দিন বিচার শুরু হয়েছিল সে সম্পর্কে এ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের আইনজীবীরা সরকারি অভিযোগনামা ও রাজসাক্ষীদের ভাষ্য চাইলেন। রাজসাক্ষীদের সাক্ষ্য সরবরাহ করতে কোর্ট রাজি হলো না। আমরা অত্যন্ত জোরের সঙ্গেই বললাম যে, আমরা তা মানবো না। এ বিচারও মানবো না আমরা। খোদ বিচার প্রক্রিয়াটির বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করলাম আমরা। কর্নেল তাহের এক পর্যায়ে তার আসন থেকে উঠে দাঁড়ান ও হাতের ওয়ার্কিং স্টিকটি উঁচিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমরাও তার সাথী হলাম। শেস্নাগান দিতে দিতে ডিআইজি প্রিজনের অফিস থেকে জেলগেটের দিকে রওয়ানা হলাম আমরা। এটা ছিল এক অভাবনীয় দৃশ্য। পরে যখন বিচার বসলো, তখন থেকে আমাদের বিচারালয়ে নিয়ে আসা হতো খালি পায়ে ও হাতকড়া পরিয়ে। আমাদের বসানো হতো যে লোহার খাঁচায়_তাতে তালা দেবারও ব্যবস্থা হয়। উপরন্তু, লোহার সে খাঁচাকে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়, যাতে করে আমরা লোহার শিকও ধরতে না পারি।' উলেস্নখ্য, আলোচ্য এ বিচার প্রক্রিয়া চলেছিল ১২ জুলাই পর্যন্ত মোট ১৫ দিন। এরই মধ্যে অভিযুক্তরা একে একে তাঁদের বক্তব্য রেখেছেন।

সওয়াল জবাবের পর আসামীদের সবাই তাঁদের জবানবন্দি দিয়েছিলন। সবার শেষে জবানবন্দি দেন কর্নেল তাহের। ট্রাইবু্যনালের পুনঃপুনঃ আপত্তি এবং বাধা সত্ত্বেও কয়েকদিন ধরেই তাহের তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। বাঙালি জাতির বীরত্বগাথা, স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলার সংগ্রাম ও তার ব্যর্থতা, সেনাবাহিনীর গণতন্ত্রায়নের প্রশ্ন এবং নভেম্বর অভু্যত্থানের পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা ছিল তাহেরের বক্তব্যে। তার ওই 'শেষ কথার শেষাংশ ছিল সহকর্মীদের জন্য বিশেষভাবে উদ্দীপনায়। সেখানে তিনি বলেন :সাড়ে সাত কোটি মানুষের এই জাতি মরে যেতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ বীরের জাতি। সাতই নভেম্বরের অভু্যত্থান এ জাতিকে অদম্য সাহস যোগাবে। এ অভু্যত্থান থেকে যে শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা তারা পেয়েছে, তা ভবিষ্যতে তাদেরকে সব কাজে পথ দেখাবে। আমি ভীত নই। আমার দেশ ও জাতিকে আমি ভালোবাসি। এ জাতির অস্তিত্বে আমি মিশে রয়েছি। কার সাহস আছে আমাদের আলাদা করার! নিঃশঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর কোনো বড় সম্পদ নেই। আমি তার অধিকারী। আমি আমার জাতিকে তা অর্জন করতে ডাক দিয়ে যাই। তাড়াহুড়ার মধ্যদিয়ে ১২ জুলাই এ মামলার বিচারকার্য শেষ হয়। ১৭ জুলাই বিকেল ৪টায় কর্নেল ইউসুফ হায়দার অভিযুক্ত ও আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে রায় পড়ে শোনান।

মামলার রায়ে বলা হয় :'সরকার উৎখাত ও সশস্ত্র বাহিনীকে বিনাশ করার চেষ্টা চালানোর দায়ে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২১ (ক) ধারা ও ১৯৭৫ সালে ১ নম্বর রেগুলেশনের ১৩ নম্বর সামরিক আইন বিধি বলে তথাকথিত গণবাহিনী ও অধুনালুপ্ত জাসদের কয়েকজন নেতা সম্পর্কে বিশেষ সামরিক ট্রাইবু্যনাল নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

১) ড: আখলাকুর রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, মাহমুদুর রহমান মান্না, প্রকৌশলী আনোয়ার সিদ্দিকি, কে বিএম মাহমুদ, শরীফ নূরুল আম্বিয়া, মহিউদ্দিন(পলাতক), নায়েক সুবেদার বজুলুর রহমান, ওয়ারেছোত হোসেন বেলাল, হাবিলদার সুলতান আহমেদ, নায়েক বারী, সার্জেন্ট কাজী রোকনউদ্দিন, নায়েক সুবেদার লতিফ আকন্দ, নায়েক শামসুদ্দিন, সার্জেন্ট সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বেকসুর খালাস। ২) হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার ও কর্পোরাল মজিদের ৫০০টাকা জরিমানাসহ ১বছরের সশ্রম কারাদন্ড। ৩) রবিউল আলম, সালেহা বেগম, সুবেদার জালাল উদ্দিন (পলাতক), হাবিলদার বারেক (ঐ) এবং নায়েক সিদ্দিকের ৫বছর করে সশ্রম কারাদন্ড ও ২ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ১বছরের সশ্রম কারাদন্ড । ৪) সিরাজুল আলম খান, কপের্ারাল সামসুল হক এবং কপের্ারাল আলতাফের ৭বছর করে সশ্রম কারাদন্ড ও ১০হাজার টাকা জরিমানা। ৫) আ স ম আবদুর রব, হাসানুল হক ইনু ও অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের ১০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড এবং জরিমানা ১০ হাজার টাকা করে। ৬) মেজর জিয়াউদ্দিনের ১২ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা। ৭) মেজর এমএ জলিল ও আবু ইউসুফের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত। ৮) বীরোত্তম কর্নেল আবু তাহেরের মৃতু্যদন্ড এবং তা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কার্যকর হবে। উলেস্নখ্য, মেজর জলিল ও আবু ইউসুফের জন্য নির্ধারিত রায় পড়ার সময় বলা হয়েছিল 'এদের জন্য নির্ধারিত দন্ড হচ্ছে ফাঁসি। তবে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁদের ফাঁসি থেকে অব্যহতি দেয়া হচ্ছে। এখন তাদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করলেই চলবে। তবে এ দুজনের সমস্ত ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হবে।' বিচারের এ অংশটুকু সম্ভবত সবচেয়ে হাস্যকর ও কপটতাপূর্ণ। কারণ 'মুক্তিযোদ্ধা' বিবেচনায় জলিল ও ইউসুফের দণ্ডাদেশ লঘু করা হচ্ছে, অথচ একজন বীরোত্তম মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসি ঠিকই দেয়া হচ্ছে। রায় ঘোষণার পর শেস্নাগান উঠলো -'কর্নেল তাহের লাল সালাম'। মেজর জলিল দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে ছোট্ট একটা বক্তব্য রাখলেন । তাহেরের কাছ থেকেও কিছু শুনতে চাইলো সবাই। তিনি বললেন 'আমি যখন আপনাদের সবার মাঝে থাকি, সব ভয় তখন দূরে চলে যায়। সাহসী হয়ে উঠি আমি। এক অপরাজেয় শক্তি তখন আমার মধ্যে কাজ করে। সমস্ত ধরনের একাকিত্বকে বিসর্জন দিয়ে সকলের মাঝে প্রকাশিত হতে চাই আমি। সেটাইতো ছিল সংগ্রাম। আমাদের হত্যা করে আন্দোলন রোধ করা যাবে না। যে আন্দোলন রচনা করা হয়েছে, তা ইতিহাসে ঠাঁই খুঁজে নেবেই।'

২১ জুলাই ভোর ৩.৪৯ মি: এ তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ২০ জুলাই লণ্ডন ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ ফাঁসির আদেশ স্থগিতের জন্য জিয়া ও সায়েম সরকারের কাছে এক আবেদন জানায়। বলা বাহুল্য হয় তা গৃহীত হয়নি। কর্নেল তাহেরের ফাঁসির আদেশ পুনর্বিচনার জন্য মিসেস তাহের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমের কাছে যে আবেদন করেন তা গৃহীত না হলেও সায়েম তাঁর একটি জবাব দিয়েছিলেন।

লুৎফা তাহের ছাড়াও দেশের অনেক আইনজীবী তাহেরের মৃতু্যদণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা জন্য তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সায়েমের কাছে আবেদন করেন। ১৯ জুলাই সকাল ১১টায় আইনজীবীদের যৌথ স্বাক্ষর সম্বলিত ঐ আবেদনপত্রটি সায়েমের কাছে নিয়ে যান এ্যাডভোকেট আতাউর রহমান। বলা বাহুল্য সেটিও অগ্রাহ্য হয়। সবচেয়ে কলঙ্কিত ঘটনা হলো তাহেরকে যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়, তার জন্য মৃতু্যদণ্ড দেয়া সম্ভব ছিল না -দেশে সে ধরনের আইনই ছিল না। অবশ্য ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার দশ দিন পর আইন মন্ত্রণালয় এই আইনগত অসংগতি দূর করে। ৩১জুলাই আইন মন্ত্রণালয় সামরিক আইনের ২০তম সংশোধনী জারি করে। যাতে বলা হয়, বাংলাদশের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের অপরাধের শাস্তি মৃতু্যদণ্ড।

তথ্য সূত্র- লরেন্স লিফসুলজ-এর কর্নেল তাহের; অসমাপ্ত বিপস্নব, কর্নেল তাহের স্মৃতি সংসদের বিভিন্ন প্রকাশনা ও কর্নেল তাহেরের বিচার অবৈধ ঘোষণা সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় থেকে ।

[লেখক:দৈনিক ইত্তেফাকের কর্মরত সাংবাদিক ]
 
Link:
 
 



__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___