Banner Advertise

Wednesday, December 22, 2010

[chottala.com] House no 32 & Sudha Sadan Dhanmondi : Background Report refutes Delware (BNP) Propaganda ! (Must Read)



House no 32 & Sudha Sadan Dhanmondi
 
৩২ নম্বরের বাড়ি ও সুধা সদন ॥
যে ইতিহাস সবার জানা দরকার
 
Read the 5 part series in Janakantha:
 
 
 
 
 
 
Related BNP-Delwarian Propaganda:
 
নয়াপল্টন কার্যালয়ে বিএনপি'র সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সমকাল
" খোন্দকার দেলোয়ার বলেন, 'তার (বঙ্গবন্ধুর) কোনো বৈধ আয়ের উৎস না
থাকলেও তিনি কীভাবে ধানমণ্ডি বত্রিশ নম্বরের মতো জায়গায় বাড়ি নির্মাণ
করেছেন?' তিনি প্রধানমন্ত্রীকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, 'ধানমণ্ডিতে
প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার নামে সুধা সদন এবং লন্ডনে শেখ রেহানার
বাড়ির নির্মাণের অর্থ কীভাবে এসেছে তা আগামী সরকারের আমলে খতিয়ে
দেখা হবে। ...................."
 

 

 
Part 1:
৩২ নম্বরের বাড়ি ও সুধা সদন ॥ যে ইতিহাস সবার জানা দরকার
এম নজরুল ইসলাম
দেশের রাজনীতি আজ কি বাড়িকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে? দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখন বাড়ি নিয়ে ব্যসত্ম। এ ব্যসত্মতার পেছনের কারণ হচ্ছে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া। আদালতের রায়ে বাড়িটি বেগম জিয়ার হাতছাড়া হয়ে গেল। বাড়ি নিয়ে এরই মধ্যে দুই-দু'টি হরতাল করেছে বিএনপি। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া নিয়ে বেগম জিয়া, তাঁর দল বিএনপির বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় আইএসপিআর। আইএসপিআরের বক্তব্য হচ্ছে, বেগম জিয়া আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে স্বেচ্ছায় এ বাড়ি ছেড়ে গেছেন। অন্যদিকে বিএনপির দাবি, বেগম জিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। বেগম জিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, তাঁকে একবস্ত্রে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। যেদিন বেগম জিয়া বাড়ি ছাড়লেন, সেদিনই ঢাকার একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে বেগম জিয়ার বাড়ি ছাড়া নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি ছিল ঐদিনের পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদন। প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তিনি আগে থেকেই বাড়ি ছেড়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁর এই প্রস্তুতির বিষয়টি ঐ দৈনিককে নিশ্চিত করেন তাঁর প্রেস সেক্রেটারি। দৈনিকে প্রকাশিত ঐ খবরে বলা হয়েছে, 'বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সেনানিবাসের বাড়ি ছেড়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতোমধ্যে ওই বাড়ির মালামাল স্থানানত্মর করা শুরম্নু হয়েছে বলে জানা গেছে।'
সেনাবাহিনীর এক পদস্থ কর্মকর্তা ঐ দৈনিককে জানান, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে ২৯ মিন্টো রোডের বাসভবনে মালামাল স্থানানত্মরের জন্য বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে সেনা প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ...এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপার্সনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান ঐ দৈনিকটিকে বলেন, 'আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তাতে মনে হচ্ছে, সরকার আইনের তোয়াক্কা না করে খালেদা জিয়াকে বাড়িছাড়া করতে যাচ্ছে। সরকার যদি চায়, তাহলে আমাদের পক্ষে কী করার আছে। তবে আমরা আমাদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছি।'
ঐ দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, 'গতকাল শুক্রবার রাতে সেনাসূত্র জানায়, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর থেকেই বিরোধীদলীয় নেত্রী বাড়িটি ছেড়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত ১ নবেম্বর থেকে তাঁর বাসার মালামাল সরানো শুরু হয়। এর মধ্যে ১, ৪, ৯ ও ১০ নবেম্বর ছোট-বড় অর্ধ শতাধিক কার্টন, কয়েকটি বড় ব্যাগ, বড় স্টীলের ট্রাঙ্ক ইত্যাদি সরিয়ে নেয়া হয়।
জানা যায়, এসব মালের বেশিরভাগই তাঁর ভাই মেজর (অব) সাঈদ এস্কান্দারের বাসায় নেয়া হয়। কিছু জিনিস ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর শাশুড়ির বাসায় নেয়া হয়।
দৈনিকটিতে প্রকাশিত ওই খবরের কোন প্রতিবাদ করেনি বিএনপি। কাজেই ধরেই নেয়া যায়, বাড়ি তিনি ছেড়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু যে কোন কারণেই হোক শেষ সময়ে এসে বাড়ি ছাড়ার ব্যাপারটি তাঁর কাছে 'ইজ্জত কা সওয়াল' বলে মনে হতে পারে। বিশেষ করে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া। কারণ এই ক্যান্টনমেন্টের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের স্মৃতি। একাত্তরে যখন মানুষ প্রাণের ভয়ে ঢাকা ত্যাগে ব্যসত্ম তখন চট্টগ্রাম থেকে বেগম জিয়া সড়কপথে ঢাকা এসেছিলেন। উঠেছিলেন এই ক্যান্টনমেন্টেই। সেখানে কিভাবে তিনি একাত্তরে ন'টি মাস কাটিয়েছেন সে বিষয়টি এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। কাজেই ওটা তোলা থাক। আপাতত এই বাড়ি নিয়ে বলা যাক। কারণ বাড়িটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় ইসু্য। সংবাদপত্রের পাতায় প্রতিদিন এখন এই বাড়ি নিয়ে খবর। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মতো বিএনপির ওল্ড গার্ডও দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে গেছেন এই বাড়ির মামলা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে। খবরের কাগজের পাতায় এই বাড়ি নিয়ে কলাম লেখা হচ্ছে। গত ১৬ নবেম্বর ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে বাম ধারার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী বদরম্নদ্দিন উমর লিখেছেন, 'ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই তার ফেরত দেয়া উচিত ছিল। তার দুঃসময়ে যে বাড়িটি তাঁকে দেয়া হয়েছিল, আইনত তার মালিক সেনাবাহিনী হলেও তার আসল মালিক জনগণ। কাজেই নিজের অবস্থা পরিবর্তনের পর জনগণের সম্পত্তি জনগণের কাছে ফেরত দিলে তার সম্মান রক্ষা হতো। তাঁর যে অসম্মান ১৩ নবেম্বর হয়েছে, তার কোন সুযোগ থাকত না। কিন্তু তিনি সেভাবে বিষয়টি একেবারে চিনত্মা না করায় এবং যেভাবেই হোক বাড়িটি অাঁকড়ে ধরে থাকার সিদ্ধানত্মে শেষ পর্যনত্ম অটল থাকায় তাকে চরমভাবে অপমানিত ও নিগৃহীত হতে হলো। এটা শুধু তাঁর নিজের ব্যাপারই নয়, এর মধ্য দিয়ে এই বাঙালী জাতির শাসকশ্রেণীর চরিত্রের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তার থেকে কুৎসিত জিনিস আর কী হতে পারে? শাসকশ্রেণীর দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ ঘটনার মাধ্যমে পুরো জাতিকে বিশ্বের সামনে কলঙ্কিত করেছে। এ অধিকার কি জনগণ তাদের দিয়েছেন? এই স্বার্থপর হানাহানির জন্যই কি তারা পাঁচ বছর অনত্মর পালাপালি করে এ দুই দলকে ক্ষমতায় বসান?'
বদরম্নদ্দিন উমর আরও লিখছেন, 'বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ির বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইসু্য হিসেবে উপস্থিত করে বলেছিলেন, এর মীমাংসা রাজনৈতিকভাবে ও রাজপথেই হবে। এর জন্য রাজনৈতিক সংগ্রাম করা হবে। কেন হবে? জনগণের কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে, কোন দলের নেতা-নেত্রীর বাড়ি রক্ষার জন্য তাঁরা আন্দোলনে নামবেন?
বিশেষত এমন অবস্থায় যেখানে শাসকশ্রেণীর সব দলের লোকই দেশজুড়ে ভূমিদসু্যতার মাধ্যমে গরিব লোকদের ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করছে এবং তার কোন প্রতিকার হচ্ছে না। রাজনৈতিক দল হিসেবে আন্দোলনের অন্য কোন গ্রাহ্য ইসু্য কি বিএনপির নেই? জনগণ হাজারও সমস্যায় জর্জরিত। তাদের কোন সমস্যা সমাধানের জন্য বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কি কোন আন্দোলন করে? কোন হরতালের ডাক দেয়? অথচ খালেদা জিয়ার বাড়ি রক্ষার জন্যই রাজনৈতিক কর্মসূচী হিসেবে ১৪ নবেম্বর বিএনপি দেশব্যাপী এক হরতালের আহ্বান জানায়।
তাদের এই সাফল্যের খেসারত আবার দিতে হয়েছে রাজধানী থেকে ঈদ উপলক্ষে নিজেদের বাড়িমুখো মানুষকে। আওয়ামী লীগও বিএনপির এই প্রতিক্রিয়া বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই এ কাজ করেছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনস্বার্থের বিরম্নদ্ধে কাজ করা যাদের শ্রেণীগত চরিত্র এবং অভ্যাস, জনগণের দুর্ভোগে তাদের কী এসে যায়?'
একই পত্রিকায় গত ২০ নবেম্বর বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলাম লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছেন, 'বিএনপি নেত্রীর অতীত ইতিহাস বলে না, তিনি বাধ্য না হলে এ বাড়ি ছাড়তেন। আর এখন সুপ্রীমকোর্টের শুনানির পর রায় যদি তাঁর অনুকূলে যায় তাহলে তিনি বৈধভাবেই এ বাড়িতে ফিরে আসতে পারেন। সে কথা এ্যাটর্নি জেনারেল প্রকাশ্যে বলেছেন। তাহলে হাইকোর্টের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে বাড়িটা ছেড়ে দিয়ে ভাইয়ের বাসায় দু'সপ্তাহের জন্য বেড়াতে গেলে এমনকি মহাভারত অশুদ্ধ হতো? এমন তো তিনি বহুবারই গেছেন।
ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি ছেড়ে দেয়ায় খালেদা জিয়া কি আশ্রয়চু্যত হয়ে আকাশের নিচে দাঁড়িয়েছেন? মোটেই না। সরকারের দেয়া তঁাঁর আরেকটি বাড়ি গুলশানে আছে। সেটিও বিরাট ও প্রাসাদোপম? সেটি ভাড়া দিয়ে অথের্াপার্জনের জন্য দেশনেত্রীকে দেয়া হয়নি। ঈদের পরদিন ঢাকার লেডিস ক্লাবে ঈদ রিইউনিয়ন সমাবেশে তিনি নিজেকে 'বাস্তুহারা' বলে দাবি করেছেন, সে দাবিটিও সত্য নয়। তিনি একবস্ত্রেও ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছেড়ে আসেননি। আসলে তিনি জনসমক্ষে কেঁদে নিজেকে হোমলেস প্রমাণ করে ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটিকে একটি রাজনৈতিক ইসু্য করার চেষ্টা করছেন। দেশের বড় দু'টি দলের একটির নেতা হিসেবে তাঁর যা করা উচিত ছিল, তা হলো হাইকোর্ট বেঞ্চের সর্বসম্মত রায় ঘোষিত হওয়ার পরই আদালতের রায় এবং দেশের জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে বাড়িটি ছেড়ে দেয়া। তাতে তাঁর নিজের এবং দলের ভাবমূর্তি আরও অনেক বাড়ত।
খালেদা জিয়ার যে আদালতের রায় ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেয়ার আদৌ ইচ্ছা ছিল না, তার প্রমাণ পাওয়া যায় হাইকোর্ট বেঞ্চের সর্বসম্মত রায় ঘোষিত হওয়ার আগে ও পরে বিএনপি নেতা-নেত্রীদের পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা থেকেই। মওদুদ বলেছেন, রাজপথে আদালতের নির্দেশ মোকাবেলা করা হবে। হুমকিটা কি ছিল সরকারের বিরুদ্ধে, না আদালতের বিরম্নদ্ধে? খোন্দকার দেলোয়ার ও এ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন চেয়েছেন রাজনৈতিক সমঝোতা। অথর্াৎ আদালতের নির্দেশ এড়িয়ে বাড়িটি রাখার সমঝোতা। অন্যদিকে বাড়িটিতে খালেদা জিয়ার গত ৩৫ বছরের অবস্থান যে একেবারেই অবৈধ ও অনৈতিক সম্ভবত এটা জেনেই মির্জা ফখরম্নল চেয়েছেন সরকারের কাছে মানবিক বিবেচনা।
অথর্াৎ ক্যান্টনমেন্টে বিএনপির দুর্গটি ছলে-বলে-কৌশলে যেভাবে হোক রাখতে হবে। এই কলাকৌশল এবং সমস্যাটি ঝুলিয়ে রাখার চাতুরী ব্যর্থ হওয়ার পরই মির্জা ফখরুল এখন হুঙ্কার দিয়েছেন, ঈদের পরই আন্দোলন।'
বেগম জিয়া বাড়ি ছেড়ে আসার কয়েকদিন পরেই ঈদের ছুটি শুরম্নু হয়। এই ছুটি শুরম্নর প্রথমদিনেই বিএনপির মহাসচিব একটি বেসামাল উক্তি করে বসেন। আইএসপিআরকে উপদেশ দিতে গিয়ে তিনি অনাবশ্যকভাবে টেনে এনেছেন আরো দু'টি বাড়ির প্রসঙ্গ। এর একটি হচ্ছে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন। অন্যটি বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী মরহুম ওয়াজেদ মিয়ার বাড়ি সুধা সদন। এই দুই বাড়ি সম্পর্কে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর প্রশ্ন হচ্ছে, 'মরহুম শেখ মজিবুর রহমান তো নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের সনত্মান ছিলেন, তিনি কীভাবে ৩২ নম্বরের বাড়িটি বানালেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী হলেও তিনিও নিম্নমধ্যবিত্তের সনত্মান ছিলেন। তিনি কীভাবে ধানম-িতে বাড়ি বানান?' অনাবশ্যক বেসামাল উক্তি, সন্দেহ নেই। বক্তৃতার মঞ্চে উঠে যিনি নিজের পরিধেয় সামাল দিতে পারেন না, তিনি বোধহয় এমন বেসামাল উক্তি করতেই পারেন। হয়ত এটা অস্বাভাবিক নয়। খোন্দকার দেলোয়ার অনেকদিন বিষয়টি নিয়ে দ্বিতীয় কোন কথা উচ্চারণ করেনি। বিএনপিও তাদের মহাসচিবের এই উক্তিকে ক্যাশ করতে চায়নি। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, তাঁর এই কথার কোন সারবস্তু নেই। কিন্তু সম্প্রতি আবার বিএনপি মহাসচিব এই বাড়িটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কাজেই প্রশ্ন যখন উঠেছে, তখন দু'টি বাড়িরই ইতিহাস সবার জানা দরকার।
বেগম জিয়া কেমন করে দুই-দু'টি বাড়ির মালিক হয়েছেন সেটা সবার জানা। কিন্তু ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি সাধারণ কোন বাড়ি নয়। এ বাড়িটি দেশের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অর্থাৎ বাড়িটি ইতিহাসের বাড়ি। যেমন ইতিহাসের বাড়ি, তেমনি বাড়িটির একটি ইতিহাসও আছে। সে ইতিহাস তো সবার জানা দরকার। ৩২ নম্বরের বাড়িটির প্রসঙ্গেই আগে আসা যাক।
সবাই জানেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনীতিঅনত্মপ্রাণ। বাড়িঘর-সংসারের খবর খুব একটা রাখতেন না। সংসার সামলাতেন যে মহীয়সী নারী, তিনি বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। ৩২ নম্বরের এই বাড়িটির ইতিহাস নেড়েচেড়ে দেখতে গিয়ে একটু পেছনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হন। কিন্তু সে সরকার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ, কংগ্রেস, তফসিলি ফেডারেশন ও গণতন্ত্রী পার্টি_ এই চার দল মিলে যে সরকার গঠন করে, সে সরকারের চীফ মিনিস্টার ছিলেন আতাউর রহমান খান। আর, বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই মন্ত্রিসভার বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্প এবং দুর্নীতিদমনমন্ত্রী। সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরম্নদ্দোজা চৌধুরীর পিতা কফিলউদ্দিন চৌধুরী, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, মনোরঞ্জন ধর, গৌরচন্দ্র বালা , মসিউর রহমান, দিলদার আহমদ, মাহমুদ আলী প্রমুখ ছিলেন ঐ মন্ত্রিসভার সদস্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রী হিসেবে সপরিবারে থাকতেন আবদুল গণি রোডের ১৫ নম্বর বাড়িতে। ঐ সময় বঙ্গবন্ধুর পিএস ছিলেন জনৈক নূরম্নজ্জামান। ঐ সময়ে ধানমণ্ডিতে পস্নট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছিল পিডবিস্নউডি থেকে। নূরম্নজ্জামান পিডবিস্নউডি থেকে একটি আবেদন ফরম নিয়ে আসেন। ফরমটি বেগম মুজিবের নামে পূরণ করে জমা দেয়া হয়। ১৯৫৭ সালের প্রথমদিকে বেগম মুজিবের নামে এক বিঘার এই পস্নটটি বরাদ্দ দেয়া হয়। সে সময়ে পস্নটটির দাম ধরা হয়েছিল ৬ হাজার টাকা। এককালীন জমা দিতে হয়েছিল ২ হাজার টাকা। বাকি ৪ হাজার টাকা কিসত্মিতে পরিশোধ করা হয়। ১৯৫৭ সালেই শেখ মুজিবুর রহমান দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেন। দলের সাংগঠনিক কাজ করার জন্য ঐ সময় তাঁকে একটি জীপ দেয়া হয়। লাল রঙের এই উইলিজ জীপটির নম্বর ছিল ইবিডি-১১১ (ঊইউ-১১১). ১৯৫৮ সালে টি-বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু সপরিবারে থাকতেন সেগুনবাগিচার একটি বাড়িতে। বাড়িটি ছিল টি-বোর্ডের চেয়ারম্যানের নামে বরাদ্দ করা। আইয়ুবের সামরিক শাসন জারির পর এ বাড়ি থেকেই ১৯৫৮ সালের ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। তখন শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে তিনদিনের মধ্যে বাসা ছেড়ে দেয়ার জন্য বলা হয়। ১৫ অক্টোবর মুজিব পরিবারকে বাসা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। বাসা ছাড়ার সময় সরকারের লোকজন ঐ জীপটি নিয়ে যায়। নিয়ে যায় জমির কিসত্মির টাকা দেয়ার জন্য বাসায় রাখা ২০০০ টাকা ও ঘরের কিছু মাল। তখন এমন অবস্থা যে, কেউ আর বঙ্গবন্ধু পরিবারকে বাড়ি ভাড়া দিতে চায় না। অনেক কষ্টে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি বাসা ভাড়া নেন। সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুলের মাঠের পাশের সেই বাড়িটির ভাড়া ছিল ২০০ টাকা। বাড়িটির মালিক ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। অল্পদিনের মধ্যেই বেগম মুজিবের বাসা ভাড়া নেয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেল। বাড়ির মালিক তাঁকে বাসা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানালেন। সিদ্ধেশ্বরী ছেড়ে বেগম মুজিব সনত্মানদের নিয়ে চলে আসেন সেগুনবাগিচা এলাকায়। ওঠেন ৭৬ সেগুনবাগিচার দোতলায়। এ বাড়িটির মাসিক ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা। (চলবে)

লেখক : অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী, লেখক ও সাংবাদিক
nazrul@gmx.at
 
Part 2:
৩২ নম্বরের বাড়ি ও সুধা সদন যে ইতিহাস সবার জানা দরকার
 
এম নজরুল ইসলাম
(পূর্ব প্রকাশের পর)
১৯৬০ সালের ১ অক্টোবর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বঙ্গবন্ধু আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কন্ট্রোলার অব এজেন্সিস পদে চাকরি নেন। পদটি ছিল পূর্ব পাকিসত্মানের শীর্ষ পদ। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই কোম্পানির অফিস ছিল। পাকিস্তানের এই ইন্সু্যরেন্স কোম্পানির ঢাকা অফিস ছিল তৎকালীন ১৪ জিন্নাহ এ্যাভিনিউতে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ)। আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অফিস বাড়িটি ছিল চারতলা। অফিস বাড়িটির মালিক ছিলেন বলাকা সিনেমা হলের মালিক এম হাসান। আলফা ইন্সু্যরেন্স কোম্পানির মালিক ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের ইউসুফ হারুন। এই ভবনের তিনতলায় বসতেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর মাসিক সম্মানী ভাতা ছিল তিন হাজার টাকা। এছাড়াও তিনি প্রিমিয়াম থেকে কমিশন পেতেন। নিজের ব্যবহারের জন্য অফিস থেকে একটি প্রিফেক্ট প্রাইভেট কার দেয়া হয়েছিল তাঁকে। প্রাইভেট কারটির নম্বর ছিল ইবিডি-৭১৭১ (ঊইউ-৭১৭১). গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন মঈন নামের এক অবাঙালী। উল্লেখ করা যেতে পারে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এই ইউসুফ হারম্নন ১৯৬৯ সালের ১৫ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানের গবর্নর মনোনীত হন।
১৯৫৮ সালে সরকারী বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরই বেগম মুজিব বুঝেছিলেন, যে কোনভাবেই হোক মাথা গোঁজার একটি ঠাঁই করতে হবে। ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি তাঁকে বরাদ্দ পাওয়া পস্নটে বাড়ি নির্মাণের কথা জানালেন। হাত দিলেন বাড়ি নির্মাণের কাজে। ১৯৬০-৬১ সাল থেকেই ৩২ নম্বরের বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়। এ সময় হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে ঋণ নেয়া হয়েছিল। পিডবিস্নউডি'র তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী (পরবর্তী সময়ে পূর্ত সচিব ও ঢাকা মোহামেডান ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক) মাইনুল ইসলাম এ বাড়ির নির্মাণ কাজ তদারকীও করেছেন। বাড়ি নির্মাণের কাজে নানাভাবে সহকর্মীদের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এঁদের একজন নুরম্নল ইসলাম। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন নিষ্ঠাবান কর্মী। বঙ্গবন্ধুর প্রিয়ভাজন নূরুল ইসলামের বাড়ি ছিল চাঁদপুরের হাজিগঞ্জে। আওয়ামী লীগের প্রচার কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। সবাই তাঁকে একডাকে 'পোস্টার নুরুল ইসলাম' নামে জানতেন। তিনিও চাকরি করতেন আলফা ইন্সু্যরেন্স কোম্পানিতে। ১৯৬০ বা ১৯৬১ সালে নুরুল ইসলাম যক্ষা রোগে আক্রান্ত হন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। প্রতি রবিবার সময় করে বঙ্গবন্ধু তাঁর এই প্রিয় কর্মীকে হাসপাতালে দেখতে যেতেন। তখন দীর্ঘ সময় তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। ৩২ নম্বরের বাড়ি তৈরির কাজে নুরুল ইসলামও অনেক সহযোগিতা করেছেন। হাসপাতালে থাকার সময় নূরুল ইসলাম 'ক্রস ওয়ার্ড' লটারি খেলতেন। লটারিতে নাম-ঠিকানা দেয়া বাধ্যতামূলক ছিল। একদিন তিনি লটারিতে ব্যবহার করেছিলেন শেখ রেহানার নাম। সেই দিনই তিনি পেয়ে যান ছয় হাজার টাকা। এই টাকা বেগম মুজিবের কাছে গচ্ছিত ছিল। বাড়ি নির্মাণের সময় টাকার সঙ্কট দেখা দিলে নূরুল ইসলাম এই টাকা ব্যবহার করতে বলেন। তাঁর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সেই টাকা ঋণ হিসেবে নেয়া হয়। পরে সেই টাকা পরিশোধও করা হয়। নূরুল ইসলাম আজও জীবিত। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তিনি ৩২ নম্বরের বাড়ি তৈরির সাক্ষী। বাড়ির নির্মাণ কাজ দেখাশোনার জন্য কেয়ারটেকার হিসেবে নিয়ে আসা হয় আরজ আলী নামে একজনকে। আরজ আলী ছিলেন টুঙ্গিপাড়ার পাশের গ্রাম পাঁচকহনিয়ার বাসিন্দা। ৩২ নম্বরের বাড়ির সামনের ঝাউ গাছের চারা এনে দিয়েছিলেন বদরুন্নেসা আহমেদের স্বামী নূরুদ্দিন আহমেদ। এই বাড়ির জানালার লোহার গ্রিল সরবরাহ করেছিলেন রংপুরের মতিউর রহমান। তিনি ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। 'রংপুরের মতিউর রহমান' নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন। ঢাকার তেজগাঁওতে তাঁর একটি লোহার ইন্ডাস্ট্রি ছিল। বঙ্গবন্ধু পরিবার-পরিজন নিয়ে এই বাড়িতে ওঠেন ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর। একতলা বাড়িটিতে তখন বেডরুম ছিল মাত্র দুটো। এক রুমে থাকতেন বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিব। অন্যকক্ষে থাকতেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পাশে ছিল আর একটি কক্ষ।
(চলবে)

লেখক : অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী, লেখক ও সাংবাদিক
nazrul@gmx.at
 
Part 3:
 
৩২ নম্বরের বাড়ি ও সুধা সদন যে ইতিহাস সবার জানা দরকার
এম নজরুল ইসলাম
(পূর্ব প্রকাশের পর)
সেই কক্ষটি রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এই কক্ষেরই একপাশে থাকতেন শেখ কামাল ও শেখ জামাল। বাড়িতে ঢুকতেই ছিল ছোট একটি কক্ষ। এই কক্ষটি ড্রইং রুম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কক্ষে ছিল কম দামের এক সেট বেতের সোফা। বঙ্গবন্ধুর নবনির্মিত এই বাড়িতে প্রথম যে টেলিফোন সংযোগ দেয়া হয়, সেই টেলিফোনের নম্বর ছিল ২৫৬১। উলেস্নখ্য, ১৯৬২ সাল থেকে আইয়ুব সরকার বঙ্গবন্ধুর বাড়ির টেলিফোনে আড়িপাতা শুররু করে। এ সময় ছাত্রনেতারা বঙ্গবন্ধুকে ফোন করার সময় ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। যেমন_ শেখ ফজলুল হক মণি ফোন করে নিজেকে 'বালিঅলা' বলে পরিচয় দিতেন। সিরাজুল আলম খান ফোন করে নিজের পরিচয় দিতেন 'ইটাঅলা' বলে। এভাবে একটু একটু করে গড়ে উঠেছে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি। এটি কারও দয়ার দানে পাওয়া বাড়ি নয়। যে বাড়িটি আজ ইতিহাসের সাক্ষী। বাড়িটি আজ ইতিহাসের বাড়ি। বাঙালীর তীর্থ আজ ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন।
৩২ নম্বরের এই বাড়িটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ছিল সরকারের নিয়ন্ত্রণে। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর শেখ হাসিনা বাড়িটি বুঝে পান। ঐ বছরের শেষের দিকে একবার খবরের কাগজে একটি নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে তাঁর চোখ আটকে যায়। হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের সে নিলাম বিজ্ঞাপ্তির তালিকায় ধানম-ির ৩২ নম্বরের বাড়িটিও ছিল। শেখ হাসিনা ছুটে যান হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের অফিসে। ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বকেয়া পরিশোধের পর বাড়ির দলিল শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে বাড়ি বুঝে পাওয়ার পর তিনি ঘোষণা করেছিলেন ইতিহাসের এই বাড়িটি হবে জনগণের। এরপর ৩২ নম্বরের বাড়ি ও টুঙ্গিপাড়ার বাড়ি দেখাশোনা করার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেন। ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট ৩২ নম্বরের বাড়িটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে শুভ উদ্বোধন করা হয়। সে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল।
অথচ কুচক্রী মহল এই বাড়িটিকে নিয়েই প্রশ্ন তুলছে। অন্যের দয়ার দানে যাদের সম্পদ হয়েছে, যাদের সনত্মানাদি জবরদখল করতে জানে; তাদের দ্বারাই সম্ভব এমন অবাসত্মব কল্পনা। কারণ তাদের মাইন্ড-সেটের মধ্যে তো জবরদখল ছাড়া আর কিছু নেই। বিএনপি মহাসচিব শেখ রেহানার লন্ডনের বাড়ি নিয়েও অবাসত্মব কল্পকাহিনী ফেঁদেছেন। এই কাহিনী যে কতটা তাঁর নিরেট মসত্মিষ্কপ্রসূত, সেটা প্রমাণ তিনি নিজেই করতে পারেন। লন্ডনে তাঁর দলের নেতাকর্মীদের যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলে দেবেন লন্ডনে শেখ রেহানা কেমন সাধারণ জীবন যাপন করেন। হঁ্যা, সাধারণ জীবন যাপন করেও তিনি তাঁর সনত্মানদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। তাঁর পুত্র দেলোয়ারপুত্রদের মতো দখলবাজ-মসত্মান হয়নি। উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে এখন ব্রাসেলসে কর্মরত। মেয়ে টিউলিপ লন্ডনে কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত। এখানেই খোন্দকার দেলোয়ারের সঙ্গে শেখ পরিবারের পার্থক্য। শেখ পরিবারে বিদ্যার চর্চা আছে, দেলোয়ারের উত্তরসূরিদের তা নেই। খোন্দকার দেলোয়ারের নেত্রীর পরিবারের দিকে তাকালেও একই দৈন্য চোখে পড়ে। কাজেই তাঁদের ঈর্ষার কারণ কেবল বাড়ি নয়, যোগ্যতাও।
এবার আসা যাক সুধা সদন নামের বাড়িটি প্রসঙ্গে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া আণবিক শক্তি কমিশনে যোগ দেন ১৯৬৩ সালের ৮ এপ্রিল। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন আণবিক শক্তি কমিশনের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ১৯৬৭ সালে। ঢাকাতে তাঁর কোন বাড়ি ছিল না। (চলবে)

লেখক : অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী, লেখক ও সাংবাদিক
হধুৎঁষ@মসী.ধঃ
 
Part 4:
c৩২ নম্বরের বাড়ি ও সুধা সদন যে ইতিহাস সবার জানা দরকার
এম নজরুল ইসলাম
(পূর্ব প্রকাশের পর)
১৯৭১ সালের মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ড. ওয়াজেদ মিয়া ধানমণ্ডির ১৫ নম্বর সড়কের ১৭৭ নম্বর বাড়ির নিচতলা ভাড়া নেন। ঐ সময় বাড়িটির ভাড়া ছিল ৯০০ টাকা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিনি শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে নিয়ে ঐ বাড়িতে চলে যান। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ তিনি তাঁদের নিয়ে খিলগাঁওতে তাঁর বন্ধু ড. মোজাম্মেলের বাসায় ওঠেন। একাত্তরের ১ এপ্রিল তিনি খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ায় একটি বাসা ভাড়া নেন। বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে নতুন ভাড়াবাসায় ওঠেন। কিন্তু এপ্রিলের ৫ তারিখেই বাড়িঅলা ভাড়ার টাকা ফেরত দিয়ে তাঁকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন। কারণ, ঐ চারদিনেই এলাকায় জানাজানি হয়ে যায় যে, বঙ্গবন্ধুর পরিবার ঐ বাড়িতে আছে। বাড়িঅলা নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তাঁদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন। বাধ্য হয়েই পরদিন ৬ এপ্রিল ঐ বাড়ি ছেড়ে তাঁদের চলে আসতে হয়। তাঁরা চলে আসেন মগবাজার চৌরাস্তার কাছে নূরম্নদ্দিন আহমদের বাসায়। একাত্তরের ১২ মে মগবাজারের ঐ বাসা থেকেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে ধানমণ্ডির ১৮ নম্বর রোডের ২৬ নম্বর বাড়িতে নিয়ে আসে, অন্তরীণ রাখে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু এই বাড়িতেই উঠেছিলেন। স্বাধীন দেশে তিনি নিজের বাড়িতে ওঠেন ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষার্ধে। ধানমণ্ডির ১৮ নম্বর সড়কের এই ২৬ নম্বর বাড়ি থেকেই শেখ হাসিনাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ১৯৭১ সালের ১৫ জুলাই।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও গণহত্যা কনভেনশন সমূহের উপরোক্ত সর্বসম্মত প্রস্তাব ও সিদ্ধানত্মসমূহের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ধারার আলোকে '৭১ সালে বাংলাদেশে হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী মিলিশিয়া বাহিনী, রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনীর দ্বারা যে ত্রিশ লাখ গণহত্যা, দু'লাখ ধর্ষণ, জ্বালাও, পোড়াও এবং নির্যাতন-নিপীড়নের হৃদয় বিদারক ও লোমহর্ষক ঘটনার অপরাধে এসব যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সার্বজনীন আন্তর্জাতিক আইনে বিচার কার্য বাংলাদেশে অথবা হেগস্থ আন্তর্জাতিক আদালতে শুরু করা অপরিহার্য। সমপ্রতি বসনিয়া, কসভো ও পূর্ব তিমুরের যুদ্ধাবসানের পর সেখানকার জেনারেল ও যুদ্ধবাজদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বন্দী করে হেগস্থ আনত্মর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে এবং বিশ্ববাসী তাঁদের বিচার কার্যক্রম প্রতিদিন বিবিসি এবং সিএনএনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করছেন।
ওই আন্তর্জাতিক ও সার্বজনীন বিধি বিধানের অধীনে '৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা ও অন্যান্য যুদ্ধাপরাধে অপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করা বাঙালী জাতি ও বিশ্ব মানবজাতির বর্তমান ভবিষ্যত শানত্মি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের স্বার্থে একান্তভাবে অপরিহার্য। কারণ, যুদ্ধাপরাধী যেই হোক, যে দেশের হোক, যে ধর্ম বা বর্ণ বা গোত্রের হোক_সে বিশ্ব মানবজাতির অসত্মিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্ব মানবজাতির শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। সেই নিরিখে '৭১ সালে বাংলাদেশের সব যুদ্ধাপরাধী বাঙালী জাতি ও মানবজাতির জন্য হুমকি ও বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি। এই হুমকির অবসান ঘটানো বাঙালী জাতি ও বিশ্ব মানবজাতির পরম কর্তব্য। (চলবে)

লেখক : অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী, লেখক ও সাংবাদিক

nazrul@gmx.at
 
Part 5:
৩২ নম্বরের বাড়ি ও সুধা সদন যে ইতিহাস সবার জানা দরকার
এম নজরুল ইসলাম
(পূর্ব প্রকাশের পর)
একাত্তরের ২৭ জুলাই রাত আটটায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জয়ের জন্ম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১ মার্চ ড. ওয়াজেদ মিয়া স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাড়ির একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠেন। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী সোহরাব হোসেন বরাবর একটি পস্নটের জন্য আবেদন করেন তিনি। ১৯৭৪ সালের প্রথমদিকে ধানমণ্ডির এই পস্নটটি ড. ওয়াজেদ মিয়ার নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। ১৪ কাঠার পস্নটটির মূল্য তখন ছিল ৭০ হাজার টাকা। এই টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করা হয়।
১৯৭৫ সালে ড. ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন জার্মানিতে। তিনি একটি বৃত্তি নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। ঐ বছর ৩০ জুলাই শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেখানে যান। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘটে যায় মর্মানত্মিক ট্র্যাজেডি। ঐ বছর ২৫ আগস্ট ড. ওয়াজেদ মিয়া স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভারতের দিল্লী আসেন। সেখানে তাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয় পান। দিল্লীতে পান্ডারা রোডে একটি ছোট বাড়িতে সাড়ে ছয় বছর কাটে তাঁদের। শেখ হাসিনা দিল্লী থেকে দেশে ফিরে আসেন ১৯৮১ সালের ১৭ মে। দেশে ফিরে তিনি প্রথমে উঠেছিলেন তাঁর ছোট ফুফু খাদিজা খানমের লালমাটিয়ার বাসায়। ড. ওয়াজেদ মিয়া দিল্লী থেকে ঢাকায় আসেন ১৯৮২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ঢাকায় ফিরে তিনি ওঠেন তাঁর ভাগি্নজামাই সিদ্দিক হোসেন চৌধুরীর মোহাম্মদপুরের ১১/১২ ইকবাল রোডের বাসায়। ১৯৮২ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তিনি মহাখালীতে আণবিক শক্তি কলোনিতে একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পান। ১৯৮২ সালেই ধানমণ্ডিতে সুধা সদনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বাড়ির আর্কিটেক্ট ছিলেন আলমগীর কবির। বাড়ি নির্মাণের সময় হাউস বিল্ডিং কর্পোরেশন থেকে ৬ লাখ টাকা ঋণ নেয়া হয়। পরে ঋণ নেয়া হয় আরব বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। পরে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ৩৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আরব বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা হয়। এতেও বাড়ি নির্মাণের ব্যয় সংকুলান না হওয়ায় একই ব্যাংক থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নেয়া হয়। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে মোট ঋণের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা। বাড়ি নির্মাণ শেষে এটি ভাড়া দেয়া হয়। ড. ওয়াজেদ মিয়া সপরিবারে এই বাড়িতে ওঠেন ১৯৯৫ সালের জানুয়ারি মাসে। এই বাড়িতে যাঁরা গেছেন, তাঁরা জানেন বাড়ির আসবাবপত্র কত সাধারণ। বাড়িটিও একটি সাধারণ বাড়ি। অথচ এই বাড়িটিও এখন খোন্দকার দেলোয়ারদের ঈর্ষার কারণ।
খোন্দকার দেলোয়াররা এ রকমই। লন্ডনে তারেকের বাড়ি কিংবা মালয়েশিয়ায় তারেক-কোকোর সেকেন্ড হোম তাঁদের চোখে পড়ে না। কিংবা ইচ্ছা করেই তাঁরা সেগুলো দৃষ্টির আড়ালে রাখতে চান। খুঁজে বের করেন লন্ডনে শেখ রেহানার কাল্পনিক বাড়ি। সাধারণত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু ও ড. ওয়াজেদ মিয়াকে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সনত্মান বলতেও তাঁদের বাধে না। শেখ মুজিবুর রহমানকে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সনত্মান বলার আগে তাঁর খেয়াল রাখা উচিত ছিল যে, যথেষ্ট সম্পদশালী পরিবারের সনত্মান না হলেও শেখ মুজিবুর রহমান সম্ভ্রানত্ম পরিবারের সনত্মান। সেই সময়ে তাঁর পিতা তাঁকে কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে লেখাপড়া করতে পাঠিয়েছিলেন। তিনি সেখানে বেকার হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতেন। ঐ সময় পারিবারিক সঙ্গতি ছিল বলেই সেটা সম্ভব হয়েছিল। অন্যদিকে ড. ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন একজন খ্যাতিমান পরমাণু বিজ্ঞানী। বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর প্রবন্ধ-নিবন্ধ পড়ানো হয়। ভাঙা সু্যটকেসের ম্যাজিক তত্ত্ব যে সব পরিবারের জন্য খাটে না, সেটা খোন্দকার সাহেবরা অনুধাবন করতে পারেন না। (সমাপ্ত)

লেখক : অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী, লেখক ও সাংবাদিক
nazrul@gmx.at


__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___