সাত জেলায় জামায়াতের সহিংসতা
অনলাইন ডেস্ক | তারিখ: ০১-০৩-২০১৩
দেশের সাতটি জেলায় আজ শুক্রবার জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা হামলা, ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ করেছেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজশাহীতে পুলিশ ও জামায়াত-শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে দুজন সাংবাদিক রাবার বুলেট লেগে আহত হন। এ ছাড়া জামায়াত-শিবিরের হামলায় চট্টগ্রামে ও নরসিংদীতে পুলিশের ১১ জন সদস্য আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
চট্টগ্রাম
জুমার নামাজের পর চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা থেকে জামায়াত-শিবির একটি মিছিল বের করে। মিছিল থেকে ট্রাইব্যুনালবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিলটি আন্দরকিল্লা থেকে সিরাজদৌলা সড়ক দিয়ে চকবাজারে যায়। এ সময় মিছিল থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল ও পাথর ছুড়ে রাস্তার দুই পাশের বিভিন্ন বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের কাচ ভাঙচুর করেন। চকবাজারে অলি খাঁ মসজিদের সামনে জামায়াত-শিবিরের মিছিল থেকে সাত-আটটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় ওই এলাকায় কর্তব্যরত চার পুলিশ আহত হন। তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কক্সবাজার
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আজ সকাল আটটা থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চুনতি, আধুনগর, আমিরাবাদ এলাকায় সকালে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা যানবাহন ভাঙচুর ও গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারমুখী এবং কক্সবাজার-টেকনাফ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়েছে। এতে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিত কুমার বড়ুয়া প্রথম আলো ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে চকরিয়া উপজেলার ৩৯ কিলোমিটার মহাসড়কে কোনো অবরোধ নেই। সেখানে পুলিশ টহল দিচ্ছে।
রাজশাহী:
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমার নামাজ শেষে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা নগরের বিনোদপুর বাজার থেকে মিছিল নিয়ে রাজশাহী-নাটোর সড়কে ওঠার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও ককটেল ছোড়েন। পুলিশ পাল্টা তাঁদের ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়েন। একপর্যায়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বাজারের ভেতর চলে যান। এ সময় দায়িত্ব পালনরত মোহনা টেলিভিশনের রাজশাহী প্রতিনিধি মেহেদী হাসান ও চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের ক্যামেরাম্যান তারেক মাহমুদ রাসেল রাবার বুলেটে আহত হন। তাঁরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছেন। এ ঘটনায় অন্তত ১০জন আহত হন।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী বাজার এলাকার ফেনী-নোয়াখালী সড়কে জুমার নামাজ শেষে প্রায় ছয়-সাত শ জামায়াত-শিবিরের সমর্থক একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি রেলগেট এলাকায় ভাঙচুর চালায়। বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসানুল ইসলাম জানান, মিছিল থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা একটি ব্রোকার হাউস, তিনটি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ১৬টি ট্রাক, একটি পিকআপ ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ধাওয়া করলে তাঁরা পালিয়ে যান। পরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগও তাঁদের ধাওয়া করে। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা ইসলামী ব্যাংকের গোলাবাড়িয়া শাখায় ভাঙচুর চালান। এর আগে সকালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিষদের কাছ থেকে বাগাদিয়া এলাকা পর্যন্ত সড়ক জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা অবরোধ করেন। এ সময় একটি মোটরসাইকেল ও একটি ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। এ ব্যাপারে সোনাইমুড়ী থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে দুপুরের দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় জামায়াত-শিবিরের হামলায় জালালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে। জালালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ জানান, হঠাত্ করে দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে তা ভাঙচুর করেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় দলীয় নেতা-কর্মীরা কেউ সেখানে ছিলেন না।
এনায়েতপুর থানার ওসি ওয়াহেদুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
নরসিংদী
ঘোড়াদিয়া এলাকায় বেলা আড়াইটার দিকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পুলিশ মিছিলে লাঠিপেটা করে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জেলার সহকারী পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানান, এই সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের সাতজন সদস্যসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশ বিকেল পৌনে চারটার দিকে ঘোড়াদিয়া এলাকার শাকুরঘাট মহল্লা থেকে তিনজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছে। তবে আটক হওয়া তিনজন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন তাঁরা জামায়াত-শিবিরের কর্মী নন।
গতকাল বৃহস্পতিবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সহিংসতা ঘটান দলের নেতা-কর্মীরা। আজও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা চলছে।
নীলফামারী:
জুমার নামাজ শেষে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা শহরের কাঁঠালতলি মসজিদ এবং ভূমি অফিস মসজিদ থেকে তৌহিদী জনতার ব্যানারে মিছিল বের করেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। কিশোরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ আলম জানান, দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একে অন্যকে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় কিশোরগঞ্জ থেকে তিনজনকে পুলিশ আটক করে। তাঁরা হলেন, মাগুড়া ইউনিয়নের আনসার আলী (৬০), ডাঙ্গাপাড়া পুটিমারী এলাকার জামিয়ার রহমান (৩৫) ও নিতাই ইউনিয়নের লিওন হোসেন (২২)। ওসি জানান তাঁরা জামায়াত-শিবিরের কর্মী।
- See more at: __._,_.___