ড্রাইভারের স্ত্রী বললেন
বস্তা বস্তা ঘুষের টাকা বহন করত ফারুক
গাড়িচালক আলী আজমের স্ত্রী স্বপ্না আক্তার বলেছেন, আমার স্বামীর কাছে শুনেছি এপিএস ফারুক পাঁচ মাস ধরে বস্তায় বস্তায় ঘুষের টাকা বহন করতেন। এ ঘুষের টাকা বহনে আমার স্বামীকে বাধ্য করা হতো। ১০-১৫ দিন আগে আজম আমাকে জানায়, স্বপ্না আমি আর ঘুষের টাকা বহন করতে পারব না। আমি তাকে বলেছিলাম, তুমি গাড়িচালক। ঘুষের টাকার বিষয়ে তোমার বেশি কিছু জানার দরকার নেই। গতকাল রাতে বেসরকারি টেলিভিশন মাছরাঙ্গার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন আজমের স্ত্রী স্বপ্না। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্বপ্নার মা। ফারুকের অর্থ কেলেঙ্কারির পর থেকে স্বপ্না তার ৮ বছরের মেয়ে রিয়াকে নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি ১৩টি বাসা পরিবর্তন করেছেন। স্বপ্নার দাবি, ঘটনার পর থেকে আজমের খবর জানাতে তাদের ওপর হুমকি আসায় তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। আজমের অবস্থান সম্পর্কে তিনি জানেন না। স্বামীর নিরাপত্তায় স্বপ্না প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান।
সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে স্বপ্না আক্তার বলেন, '৯ এপ্রিল রাত ১টার দিকে মোবাইল ফোনে আজমের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় আলী আজম আমাকে বলে, স্যারের (এপিএস ফারুক) অনেক অনৈতিক কর্মকাণ্ড তিন বছর ধরে সহ্য করেছি। কিন্তু আমার পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হলো না। এ কারণে স্যারকে (ওমর ফারুককে) ধরিয়ে দিয়েছি। এবার ধরিয়ে না দিলে তাকে ধরিয়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল না। এ ঘটনার পর আমাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হতে পারে। এরপর রাত ২টায় তার সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আমার কথা হয়। ওই সময় আজম জানায়, আমার জন্য দোয়া করিও।'
স্বপ্না বেগম জানান, তিন বছর ধরে এপিএস ওমর ফারুকের ব্যক্তিগত গাড়ি চালাত আলী আজম। বেতন ৯ হাজার টাকা। বেতনের বাইরে আর কোনো রকম সহায়তা করেননি ফারুক। তিনি আরও জানান, এক বছর আগে আলী আজম চাকরি ছেড়ে চিল্লায় গিয়েছিল। পরে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ওমর ফারুক তাকে চাকরিতে ফেরত আনেন।
স্বপ্না জানান, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলমন্ত্রী হওয়ার পর প্রায়ই গভীর রাতে বস্তাভর্তি টাকা বহন করতেন ফারুক। এ নিয়ে ফারুকের সঙ্গে কয়েকবার আলী আজমের বাকবিতণ্ডাও হয়েছে। ওমর ফারুক এ নিয়ে তাকে বকাঝকাও করেছেন।
ঘটনার পর বাসা ছেড়ে পালালেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে স্বপ্না বলেন, ঘটনার পরের দিন তাদের মোহাম্মদপুর এলাকার (বাসার ঠিকানা বলেননি) গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বাসা খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিষয়টি তিনি আঁচ করতে পেরে মেয়েকে নিয়ে আত্মগোপনে যান। আলী আজমের একমাত্র সন্তান রিয়া আক্তার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী।
আলী আজমের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে স্বপ্না বলেন, সোমবার রাতের পর তার সঙ্গে বা তার কোনো আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আলী আজমের কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই।
গাড়িচালক আজম এখন কোথায়। এ প্রশ্ন এখন সবার কাছে। পুলিশ বলছে, তার কোনো সন্ধান তাদের জানা নেই। ঘটনার পর বিজিবি থেকে বলা হয়েছে মঙ্গলবারই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আলী আজমের পরিবার থেকে বলা হয়েছে, আজম কোথায় আছেন তারা জানেন না।
৯ এপ্রিল মধ্যরাতে 'সত্তর লাখ' টাকাসহ গাড়ি নিয়ে আজম ঢুকে পড়েছিলেন রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতরে। এ ঘটনার পর থেকে আজম নিখোঁজ রয়েছেন। বিজিবির দাবি, ওই দিন সকালেই তারা আলী আজমকে ছেড়ে দিয়েছে।
আলী আজমের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উত্তর উপাদী ইউনিয়নের উত্তর নওগাঁও গ্রামে। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আলী আজম চতুর্থ। আলী আজম স্থানীয় নওগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে ঢাকায় ট্যাক্সিক্যাব চালাতেন। পরে এপিএস ওমর ফারুকের গাড়ি চালানোর চাকরি নেন।
----------
__._,_.___