Is Dr. Yunus above law? by columnisat Pir Habibur Rahman
বয়স ৬৭ হলে প্রধান বিচারপতি বা বিচারপতি এক দিনও চেয়ারে থাকতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইন প্রণেতারাও আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সময়ের ঘণ্টা বাজলে তাদেরও চলে যেতে হয়। কিন্তু ১১ বছরেও যেতে হয় না একজনকে। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের অপসারিত এমডি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইউনূস কি আইনের ঊর্ধ্বে , তাকে অনন্তকাল থাকতে হবে, আর সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের এত দিন আইনের প্রয়োগ না করার কারণ কি?
ড. ইউনূস যৌবনে যা পারেননি বার্ধক্যে এসে তা কিভাবে পারবেন! এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যখন শুনি তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ছেড়ে চলে গেলে নাকি প্রতিষ্ঠানে বিপর্যয় নেমে আসবে! ১৯৭৯ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত করে ড. ইউনূস দুনিয়া মাতিয়ে দিলেন, নোবেল অর্জন করলেন কিন্তু তার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নেতৃত্বও এত বছরে তৈরি করতে পারলেন না! এ কেমন নেতৃত্ব তার? যৌবনকালে যিনি প্রতিষ্ঠান রক্ষার কারিগর তৈরি করতে পারেননি তিনি করবেন আজ জীবনসায়াহ্নে এসে? কে দেবে এর উত্তর। ড. ইউনূস কি প্রশ্নের জবাব দেবেন? যারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি সমালোচনার তীক্ষ্ন তীর ছুড়ে বলেন, নেতারা কবরে চলে যান তবু তাদের উত্তরাধিকার তৈরি করেন না, তারা কি উত্তর দেবেন? কারওয়ানবাজারের কালের অন্ধকার গলির দৈনিকে যেভাবে ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিদায় নিয়ে নানা ইঙ্গিতবহ প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে শয়তান হাসছে। নাচছে। সাপের খেলায় নেমেছে। অতএব, দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রমনা জনগণ সাবধান। তাদের সঙ্গে যারা কোনো দূর গভীর ষড়যন্ত্রের বাতাস ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাদের কাছে প্রশ্ন রাখি ইউনূস কেন একটি প্রতিষ্ঠানে আজীবন থাকতে চান তা নিয়ে বিবেকবানরা কখনো প্রশ্ন তুলেছেন কি? ড. ইউনূস বলেছেন, তিনি চলেই যেতে চান! টিভিতে তার বক্তব্য শুনে মনে হলো যদি চলেই যেতে চান তবে এত হই-হুল্লোড় কেন? তিনি তো চলে যাননি। গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের কাছে। শুনেছি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কত দূর থেকে এসেছে টেলিফোন। যারা মন্ত্রিপাড়ায় গ্রামের মানুষের তদবির নিয়ে কথা বলেন, তারা কি ড. ইউনূসের তদবিরের আন্তর্জাতিক সংস্করণ দেখেননি? তার এ ভূমিকা তার জন্য গ্লানিময় কিনা জানি না কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি যখন বলেন, 'বিচলিত' তখন মনে হয় স্বাধীনতার লাখো শহীদের আত্মা ক্রন্দন করছে। ইউনূস বিদায় না নিয়ে গেছেন ড. কামাল হোসেনের কাছে। আইনের আশ্রয় নিয়ে পদ আঁকড়ে থাকতে। তবুও গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়েননি। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের মর্জিতে মার্কিনঘেঁষা যোগ্য মানুষদেরই নোবেল বিজয়ী করা হয়েছে। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী সোল ঝেনেথসিন সোভিয়েত রাশিয়ার কঠোর সমালোচক ছিলেন। নোবেল পেয়েছেন সাহিত্যে। কিন্তু সাহিত্যে তার অবদান অনেক বড়। শক্তিমান লেখক ছিলেন। এবারও সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হলেন ইরাকের সমালোচক ও যুদ্ধ জায়েজ করা লেখক। সোভিয়েত পতনের পর তারা যাকে খুশি তাকে দিতে পারে নোবেল। ড. ইউনূস যখন শান্তিতে নোবেল পেলেন তখন আমি খুশি হয়েছি। ছেলেবেলায় নকল করেও যখন কোনো বন্ধু-স্বজন পরীক্ষায় পাস করেছে তখন আনন্দে আত্মহারা হয়েছি। যদিও মানুষ ভেবেছে ফজলে হাসান আবেদ পাবেন নোবেল। দেশের সন্তান ইউনূস নোবেল বিজয়ী হয়েছেন এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে। যদিও শান্তিতে তার নোবেল লাভ নিয়ে বিতর্ক তো রয়েই গেল। তিনি অর্থনীতিতে এ পুরস্কার পেলে কথা থাকলেও বাদ দিতাম। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা যার সংগ্রাম আমাকে মুগ্ধ করে সেই নেলসন ম্যান্ডেলা যখন শান্তিতে নোবেল পান তখন সত্যি মাথা নত হয়। তার ২৭ বছরের দুর্বিষহ জেলজীবনের কথা বাদই দিলাম। তিনি তার ওপর নির্যাতনকারী ভোটে পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বীকে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও তার বাড়ি আক্রমণকারীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করেই থামেননি, জনগণের আবেদন থাকার পরও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে চলে যান। তাই যে পার্লামেন্টে লৌহমানবী মার্গারেট থ্যাচার তাকে সন্ত্রাসী বলেছিলেন সেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সংবর্ধনাই দেওয়া হয়নি, স্পিকার তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নিয়ে যান এবং যে মুহূর্ত তার উষ্ণ হাতের ছোঁয়া পান সেই মুহূর্তই জীবনের বড় পাওয়া বলে মন্তব্য করেন। ম্যান্ডেলা শান্তির জন্য জীবন বিলিয়ে জনগণের আবদার উপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছেড়ে দেন। মাদার তেরেসা মানবতার কল্যাণে রোগীর শয্যায় শয্যায় সেবা দিয়ে চলে গেছেন। ম্যান্ডেলা শান্তিতে নোবেল পাওয়া জীবন্ত কিংবদন্তি হলেও আমাদের ইউনূস একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ ছাড়তে পারেননি। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের স্টাফদের গণঅবসরে চলে যেতে বললেও নিজে অবসরে যেতে নারাজ। নোবেল জিতে বলেছিলেন, আজ আমাদের উচ্চতা ১০ ফুট হয়ে গেছে। কিন্তু একটি ব্যাংকের এমডি থাকার জন্য তার যে আকুতি তা আমাদের উচ্চতা বিশ্ববাসীর কাছে কতটা নামিয়ে দিয়েছে সে জবাব তিনি দেবেন কি? আর শান্তিতে নোবেল নিয়ে প্রশ্ন করলে বলতে হয়, আমাদের রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল জিতেও তার নোবেলের টাকা, বাবার জমিদারি সবই আমাদের দিয়েছেন। শান্তি নিকেতন আজ সত্যিই শান্তির স্বর্গভূমি। ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক মানেই গ্লানিকর ঋণের বোঝা। সপ্তায় সপ্তায় তার লোকজন হানা দেয়। গরিবের ভাগ্য বদলের জন্য কানের দুল খুলে নেওয়ায় আত্মহননের ঘটনা ঘটেছে। চড়া সুদের টাকায় পিষ্ট হয়েছে গ্রামের নারী। এনজিওর টাকায় হৃষ্টপুষ্ট একশ্রেণীর সুশীল তাদের অন্তহীন কান্না শোনেন না, দেখেন ইউনূসের লাভের খাতা। কাবুলিওয়ালারা আসতো বছরে একবার। ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক যায় সপ্তায়। কাবুলিওয়ালারা ঋণগ্রহীতার কবরে শাবল দিয়ে গাঁই দিত। একালের ইউনূসরা কানের দুল খুলে নিয়ে জীবন্ত মানুষকে কবরে পাঠায়। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক করে মানুষের সেবা দিয়েছেন নাকি হিলারি পরিবারের সেবা দিয়েছেন_ একদিন ইতিহাস তার অমোঘ নিয়মেই তাকে মূল্যায়ন করবে। মানুষের চোখ-কান খোলা। মানুষ জানে, দেখে ও বোঝে। রবীন্দ্রনাথ জালিওয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশের নাইট উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সাম্রাজ্যবাদের যুগে। ইউনূস সামন্ত যুগের ধ্বংসাবশেষে দাঁড়িয়ে রানীদের, মার্কিন কর্তাদের এনে দেখান গ্রামীণ ব্যাংকের মুখোশ। ভেতরে কতটা কান্না, অশ্রু তা তিনি দেখান না। গণতন্ত্রের প্রতীক যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যও কান্না দেখলে তাকে ভিড়তেই দিত না। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী পাবলো নেরুদার মৃত্যু আমাকে এখনো কাঁদায়। চিলির আলেন্দের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি নেমেছিলেন মানুষের কল্যাণে। আলেন্দের মৃত্যুশোক সইতে না পেরে তিনিও চিরবিদায় নেন। আমাদের ইউনূসকে দেখি না দানবের হাতে ধর্ষিত কোন নারীর পাশে। গ্রেনেড, বোমা, জঙ্গি হামলায় জনপদ ক্ষতবিক্ষত হয়, আমাদের ইউনূসের রক্তাক্ত জনপদ দেখে হৃদয় ব্যাকুল হয় না। চিত্তবিচলিত হয় না। বিবৃতি আসে না। সাংবাদিক খুন হন, হুমায়ুন আজাদের মতো লেখককে কুপিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়_ ইউনূসকে পাওয়া যায় না। গ্রেনেড হামলায় যন্ত্রণাকাতর মানুষের শয্যা পাশে তিনি নেই। কারও জানাজায়ও তাকে পাওয়া যায় না। এটা পশ্চিমা দুনিয়া জানে না। জানলে ক্লিনটনও লজ্জা পেতেন। আজ তার জন্য যেসব সুশীল পাখি গান গায়, কোরাস করে এসব নিয়ে তাদেরও মাথাব্যথা নেই। তারাও তেল-ডাল সিন্ডিকেটের মতো সুশীল সিন্ডিকেট যে! সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ ইউনূসকে অপসারণের ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন ব্যথিতচিত্তে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, মি. প্রেসিডেন্ট, অনুগ্রহ করে বলবেন ইউনূসের সঙ্গে সম্পর্ক কতটা? এরশাদ বললেন, তার আমলে গ্রামীণ ব্যাংককে তিনি অনুমোদন দেন গরিব যাতে কম সুদে ঋণ পায়। সেদিন কেবিনেট বৈঠকে ডাকলে ইউনূস তার সামনে আসেন আর কোনোদিন তার মুখ দেখেননি। সুখে দুঃখে পাননি।
বন্যার্ত মানুষের পাশে ইউনূসকে পাওয়া যায় না। দুর্ঘটনায়ও নয়, জাতীয় দুর্যোগেও নয়। গণতন্ত্রের সংগ্রামে তার নাম নেই। বন্যায় সেনানায়ক এরশাদও কোমরপানিতে নামেন, মতিয়া চৌধুরীরাও ভিজে চুপসে কাদায় একাকার হন। অগি্নকাণ্ডে নিভে যাওয়া জীবনের পাশে হাসিনা-খালেদা ছুটে যান। যান না একজন। তার নাম ইউনূস। গ্রামীণ চেক, পাণ্ডিত্যের মাধুর্যময় চেহারায় তিনি ঘোরেন পৃথিবীর দেশে দেশে পুরস্কার আর করতালির সম্মান বয়ে আনতে। বাইরের মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নাকি ইউনূস! তাই তাকে সরানো হয়েছে। এটা ঠিক নয়। শেখ হাসিনা সরাতে চাইলে ১৯৯৯ সালের শেষ দিকেই বিদায় জানাতে পারতেন। সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের এমডি ড. আবদুল মান্নান আইন অমান্য করায় বিদায় করা হলেও ইউনূসকে সরায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ কেন এ প্রশ্ন উঠেছে? '৯১ সালের নির্বাচনে ইউনূসের বিএনপির সঙ্গে সখ্যের খবর রটলেও শেখ হাসিনার আমলে তাকে উল্টো গ্রামীণ টেলিফোন দেওয়া হয়। তিনি হাসিনার মন্ত্রী নাসিমকে বলেছিলেন, মোবাইল পেতে এক কাপ চাও খাওয়াতে হয়নি। ওয়ান-ইলেভেনে ইউনূস সরকার প্রধানের প্রস্তাব পান। সে সময় নোবেল জিতে হাসিনা-খালেদার মুক্তি চাননি। রাজনৈতিক দল করতে গিয়ে জনমত দেখে স্বপ্ন ভেস্তে যায়। আজ বিএনপি আহম্মকের মতো পাশে দাঁড়ালেও খালেদার প্রকৃত অনুসারীরা সাবধান। সময় ভালো নয়। কারওয়ানবাজার ও ইউনূস গণতন্ত্রের শক্তি নয়। জনগণের শক্তি নয়। বাইরের প্রেসক্রিপশনে বাইরের কথা বলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন পরম শ্রদ্ধেয় ড. ফরাসউদ্দিন। বললেন, '৯৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট করতে গিয়ে দেখা যায় গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি, ডিএমডি নিয়োগ বাংলাদেশ ব্যাংক দেয়নি। এ নিয়ে তারা তখনই আপত্তি দেন। '৮৩ সালের আইনে নিয়োগ সরকারের দেওয়ার নিয়ম হলেও '৯০ সালের পরিবর্তিত আইনে নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে। এতে অবসর সময়সীমা হয়ে যায় ৬০ বছর। বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি বহাল থাকলেও গ্রামীণ ব্যাংক তাদের পরিচালনা পর্ষদের হাতে নিয়োগের ক্ষমতা দিয়ে বিধি করে। কিন্তু এরও কোনো সরকারি অনুমোদন নেয়নি। তিনি বলেন, ইউনূস একজন সম্মানিত লোক তার সম্মান যাতে থাকে, আর গরিবের জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড যাতে অব্যাহত থাকে সেটাই প্রত্যাশা করি। অনেকেরই প্রশ্ন কিভাবে তিনি সরকারের ৬০ ভাগ শেয়ার ৩ দশমিক ৫ ভাগে আনলেন? আনলেও কি সরকার আইন ও জনস্বার্থে দেখবে না? কেন তিনি চেয়ারম্যান থাকতে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন? কেন তার বিরুদ্ধে টাকা সরানোর অভিযোগ ওঠে? ড. ইউনূস সম্মানিত লোক। তিনি জানেন, বোঝেন। এমনকি দেশের একটি সাধারণ ঘটনা নিয়ে বিদেশিদের প্রভাব খাটানো এবং মানুষের মাঝে হৈচৈ ফেলা সম্মানজনক নয়। সরকারের জন্যও বিব্রতকর। তিনিই পারতেন সরে যেতে। আমৃত্যু থাকতে চান কেন?
আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে পারি, সম্মান রক্ষার দায়িত্ব নিজের কাছে। ড. ইউনূস এতদিন কেন এভাবে থাকলেন। আজও কেন থাকতে চাইছেন। লিবিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে রক্তপাত ঘটিয়ে গাদ্দাফি বলেছেন, তার তো পদই নেই। তিনি পদত্যাগ করবেন কিভাবে। ড. ইউনূসও তিনি চলে গেলে কি হবে এ দোহাই দিয়ে বিতর্কের ঢেউ তুলে ছাড়তে চাইছেন না। থাকতে চাইছেন। গাদ্দাফি চার দশক লিবিয়ার, ইউনূস তিন দশকের বেশি গ্রামীণ ব্যাংকের। ড. ইউনূস নোবেল বিজয়ী ম্যান্ডেলার কাছ থেকে শিক্ষা নেননি। নিচ্ছেন গাদ্দাফির কাছ থেকে। আর মনে রাখতে হবে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। সবাইকেই ছাড়তে হয়। পদ-পদবি এবং পৃথিবী। বাংলা সাহিত্যের প্রাণ রবীন্দ্রনাথ চলে গেলেও বাংলা সাহিত্য চলে যায়নি।
ইউনূসকে আইন কবর দিলেও তিনি আদালতে গিয়ে বলছেন এখনো তিনিই এমডি। তবে চাই ইউনূসের বিদায়ের পর দায়িত্বে আসুক সরকারি মোসাহেব নয়, দক্ষ যোগ্য লোক। যিনি গ্রামীণ ব্যাংককে নিয়ে যাবেন গরিবের কল্যাণে। যেমন এলজিইডিকে সাজিয়েছিলেন মরহুম কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী।
শেষ করতে চাই একটি গল্প দিয়ে, মুসলিম লীগের এক নেতা বলেছিলেন, তাদের নেতা সবুর খান নাকি মৃত্যুর আগেও দলের সভাপতির পদ ছাড়তে চাননি। তিনি মারা গেলে শোকাহত কর্মীরা জানাজা শেষে দাফনেও অংশ নিল। কবরে মাটি দেওয়ার পর সবাই চলে গেলেও কিছু লোক দাঁড়িয়ে থাকল। অন্য কর্মীরা এখনো দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে বলল, যদি কবর থেকে উঠে বলে, আমি মুসলিম লীগের সভাপতি!
ড. ইউনূস যৌবনে যা পারেননি বার্ধক্যে এসে তা কিভাবে পারবেন! এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যখন শুনি তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ছেড়ে চলে গেলে নাকি প্রতিষ্ঠানে বিপর্যয় নেমে আসবে! ১৯৭৯ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত করে ড. ইউনূস দুনিয়া মাতিয়ে দিলেন, নোবেল অর্জন করলেন কিন্তু তার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নেতৃত্বও এত বছরে তৈরি করতে পারলেন না! এ কেমন নেতৃত্ব তার? যৌবনকালে যিনি প্রতিষ্ঠান রক্ষার কারিগর তৈরি করতে পারেননি তিনি করবেন আজ জীবনসায়াহ্নে এসে? কে দেবে এর উত্তর। ড. ইউনূস কি প্রশ্নের জবাব দেবেন? যারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি সমালোচনার তীক্ষ্ন তীর ছুড়ে বলেন, নেতারা কবরে চলে যান তবু তাদের উত্তরাধিকার তৈরি করেন না, তারা কি উত্তর দেবেন? কারওয়ানবাজারের কালের অন্ধকার গলির দৈনিকে যেভাবে ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিদায় নিয়ে নানা ইঙ্গিতবহ প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে শয়তান হাসছে। নাচছে। সাপের খেলায় নেমেছে। অতএব, দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রমনা জনগণ সাবধান। তাদের সঙ্গে যারা কোনো দূর গভীর ষড়যন্ত্রের বাতাস ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাদের কাছে প্রশ্ন রাখি ইউনূস কেন একটি প্রতিষ্ঠানে আজীবন থাকতে চান তা নিয়ে বিবেকবানরা কখনো প্রশ্ন তুলেছেন কি? ড. ইউনূস বলেছেন, তিনি চলেই যেতে চান! টিভিতে তার বক্তব্য শুনে মনে হলো যদি চলেই যেতে চান তবে এত হই-হুল্লোড় কেন? তিনি তো চলে যাননি। গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের কাছে। শুনেছি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কত দূর থেকে এসেছে টেলিফোন। যারা মন্ত্রিপাড়ায় গ্রামের মানুষের তদবির নিয়ে কথা বলেন, তারা কি ড. ইউনূসের তদবিরের আন্তর্জাতিক সংস্করণ দেখেননি? তার এ ভূমিকা তার জন্য গ্লানিময় কিনা জানি না কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি যখন বলেন, 'বিচলিত' তখন মনে হয় স্বাধীনতার লাখো শহীদের আত্মা ক্রন্দন করছে। ইউনূস বিদায় না নিয়ে গেছেন ড. কামাল হোসেনের কাছে। আইনের আশ্রয় নিয়ে পদ আঁকড়ে থাকতে। তবুও গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়েননি। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের মর্জিতে মার্কিনঘেঁষা যোগ্য মানুষদেরই নোবেল বিজয়ী করা হয়েছে। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী সোল ঝেনেথসিন সোভিয়েত রাশিয়ার কঠোর সমালোচক ছিলেন। নোবেল পেয়েছেন সাহিত্যে। কিন্তু সাহিত্যে তার অবদান অনেক বড়। শক্তিমান লেখক ছিলেন। এবারও সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হলেন ইরাকের সমালোচক ও যুদ্ধ জায়েজ করা লেখক। সোভিয়েত পতনের পর তারা যাকে খুশি তাকে দিতে পারে নোবেল। ড. ইউনূস যখন শান্তিতে নোবেল পেলেন তখন আমি খুশি হয়েছি। ছেলেবেলায় নকল করেও যখন কোনো বন্ধু-স্বজন পরীক্ষায় পাস করেছে তখন আনন্দে আত্মহারা হয়েছি। যদিও মানুষ ভেবেছে ফজলে হাসান আবেদ পাবেন নোবেল। দেশের সন্তান ইউনূস নোবেল বিজয়ী হয়েছেন এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে। যদিও শান্তিতে তার নোবেল লাভ নিয়ে বিতর্ক তো রয়েই গেল। তিনি অর্থনীতিতে এ পুরস্কার পেলে কথা থাকলেও বাদ দিতাম। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা যার সংগ্রাম আমাকে মুগ্ধ করে সেই নেলসন ম্যান্ডেলা যখন শান্তিতে নোবেল পান তখন সত্যি মাথা নত হয়। তার ২৭ বছরের দুর্বিষহ জেলজীবনের কথা বাদই দিলাম। তিনি তার ওপর নির্যাতনকারী ভোটে পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বীকে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও তার বাড়ি আক্রমণকারীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করেই থামেননি, জনগণের আবেদন থাকার পরও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে চলে যান। তাই যে পার্লামেন্টে লৌহমানবী মার্গারেট থ্যাচার তাকে সন্ত্রাসী বলেছিলেন সেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সংবর্ধনাই দেওয়া হয়নি, স্পিকার তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নিয়ে যান এবং যে মুহূর্ত তার উষ্ণ হাতের ছোঁয়া পান সেই মুহূর্তই জীবনের বড় পাওয়া বলে মন্তব্য করেন। ম্যান্ডেলা শান্তির জন্য জীবন বিলিয়ে জনগণের আবদার উপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছেড়ে দেন। মাদার তেরেসা মানবতার কল্যাণে রোগীর শয্যায় শয্যায় সেবা দিয়ে চলে গেছেন। ম্যান্ডেলা শান্তিতে নোবেল পাওয়া জীবন্ত কিংবদন্তি হলেও আমাদের ইউনূস একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ ছাড়তে পারেননি। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের স্টাফদের গণঅবসরে চলে যেতে বললেও নিজে অবসরে যেতে নারাজ। নোবেল জিতে বলেছিলেন, আজ আমাদের উচ্চতা ১০ ফুট হয়ে গেছে। কিন্তু একটি ব্যাংকের এমডি থাকার জন্য তার যে আকুতি তা আমাদের উচ্চতা বিশ্ববাসীর কাছে কতটা নামিয়ে দিয়েছে সে জবাব তিনি দেবেন কি? আর শান্তিতে নোবেল নিয়ে প্রশ্ন করলে বলতে হয়, আমাদের রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল জিতেও তার নোবেলের টাকা, বাবার জমিদারি সবই আমাদের দিয়েছেন। শান্তি নিকেতন আজ সত্যিই শান্তির স্বর্গভূমি। ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক মানেই গ্লানিকর ঋণের বোঝা। সপ্তায় সপ্তায় তার লোকজন হানা দেয়। গরিবের ভাগ্য বদলের জন্য কানের দুল খুলে নেওয়ায় আত্মহননের ঘটনা ঘটেছে। চড়া সুদের টাকায় পিষ্ট হয়েছে গ্রামের নারী। এনজিওর টাকায় হৃষ্টপুষ্ট একশ্রেণীর সুশীল তাদের অন্তহীন কান্না শোনেন না, দেখেন ইউনূসের লাভের খাতা। কাবুলিওয়ালারা আসতো বছরে একবার। ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক যায় সপ্তায়। কাবুলিওয়ালারা ঋণগ্রহীতার কবরে শাবল দিয়ে গাঁই দিত। একালের ইউনূসরা কানের দুল খুলে নিয়ে জীবন্ত মানুষকে কবরে পাঠায়। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক করে মানুষের সেবা দিয়েছেন নাকি হিলারি পরিবারের সেবা দিয়েছেন_ একদিন ইতিহাস তার অমোঘ নিয়মেই তাকে মূল্যায়ন করবে। মানুষের চোখ-কান খোলা। মানুষ জানে, দেখে ও বোঝে। রবীন্দ্রনাথ জালিওয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশের নাইট উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সাম্রাজ্যবাদের যুগে। ইউনূস সামন্ত যুগের ধ্বংসাবশেষে দাঁড়িয়ে রানীদের, মার্কিন কর্তাদের এনে দেখান গ্রামীণ ব্যাংকের মুখোশ। ভেতরে কতটা কান্না, অশ্রু তা তিনি দেখান না। গণতন্ত্রের প্রতীক যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যও কান্না দেখলে তাকে ভিড়তেই দিত না। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী পাবলো নেরুদার মৃত্যু আমাকে এখনো কাঁদায়। চিলির আলেন্দের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি নেমেছিলেন মানুষের কল্যাণে। আলেন্দের মৃত্যুশোক সইতে না পেরে তিনিও চিরবিদায় নেন। আমাদের ইউনূসকে দেখি না দানবের হাতে ধর্ষিত কোন নারীর পাশে। গ্রেনেড, বোমা, জঙ্গি হামলায় জনপদ ক্ষতবিক্ষত হয়, আমাদের ইউনূসের রক্তাক্ত জনপদ দেখে হৃদয় ব্যাকুল হয় না। চিত্তবিচলিত হয় না। বিবৃতি আসে না। সাংবাদিক খুন হন, হুমায়ুন আজাদের মতো লেখককে কুপিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়_ ইউনূসকে পাওয়া যায় না। গ্রেনেড হামলায় যন্ত্রণাকাতর মানুষের শয্যা পাশে তিনি নেই। কারও জানাজায়ও তাকে পাওয়া যায় না। এটা পশ্চিমা দুনিয়া জানে না। জানলে ক্লিনটনও লজ্জা পেতেন। আজ তার জন্য যেসব সুশীল পাখি গান গায়, কোরাস করে এসব নিয়ে তাদেরও মাথাব্যথা নেই। তারাও তেল-ডাল সিন্ডিকেটের মতো সুশীল সিন্ডিকেট যে! সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ ইউনূসকে অপসারণের ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন ব্যথিতচিত্তে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, মি. প্রেসিডেন্ট, অনুগ্রহ করে বলবেন ইউনূসের সঙ্গে সম্পর্ক কতটা? এরশাদ বললেন, তার আমলে গ্রামীণ ব্যাংককে তিনি অনুমোদন দেন গরিব যাতে কম সুদে ঋণ পায়। সেদিন কেবিনেট বৈঠকে ডাকলে ইউনূস তার সামনে আসেন আর কোনোদিন তার মুখ দেখেননি। সুখে দুঃখে পাননি।
বন্যার্ত মানুষের পাশে ইউনূসকে পাওয়া যায় না। দুর্ঘটনায়ও নয়, জাতীয় দুর্যোগেও নয়। গণতন্ত্রের সংগ্রামে তার নাম নেই। বন্যায় সেনানায়ক এরশাদও কোমরপানিতে নামেন, মতিয়া চৌধুরীরাও ভিজে চুপসে কাদায় একাকার হন। অগি্নকাণ্ডে নিভে যাওয়া জীবনের পাশে হাসিনা-খালেদা ছুটে যান। যান না একজন। তার নাম ইউনূস। গ্রামীণ চেক, পাণ্ডিত্যের মাধুর্যময় চেহারায় তিনি ঘোরেন পৃথিবীর দেশে দেশে পুরস্কার আর করতালির সম্মান বয়ে আনতে। বাইরের মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নাকি ইউনূস! তাই তাকে সরানো হয়েছে। এটা ঠিক নয়। শেখ হাসিনা সরাতে চাইলে ১৯৯৯ সালের শেষ দিকেই বিদায় জানাতে পারতেন। সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের এমডি ড. আবদুল মান্নান আইন অমান্য করায় বিদায় করা হলেও ইউনূসকে সরায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ কেন এ প্রশ্ন উঠেছে? '৯১ সালের নির্বাচনে ইউনূসের বিএনপির সঙ্গে সখ্যের খবর রটলেও শেখ হাসিনার আমলে তাকে উল্টো গ্রামীণ টেলিফোন দেওয়া হয়। তিনি হাসিনার মন্ত্রী নাসিমকে বলেছিলেন, মোবাইল পেতে এক কাপ চাও খাওয়াতে হয়নি। ওয়ান-ইলেভেনে ইউনূস সরকার প্রধানের প্রস্তাব পান। সে সময় নোবেল জিতে হাসিনা-খালেদার মুক্তি চাননি। রাজনৈতিক দল করতে গিয়ে জনমত দেখে স্বপ্ন ভেস্তে যায়। আজ বিএনপি আহম্মকের মতো পাশে দাঁড়ালেও খালেদার প্রকৃত অনুসারীরা সাবধান। সময় ভালো নয়। কারওয়ানবাজার ও ইউনূস গণতন্ত্রের শক্তি নয়। জনগণের শক্তি নয়। বাইরের প্রেসক্রিপশনে বাইরের কথা বলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন পরম শ্রদ্ধেয় ড. ফরাসউদ্দিন। বললেন, '৯৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট করতে গিয়ে দেখা যায় গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি, ডিএমডি নিয়োগ বাংলাদেশ ব্যাংক দেয়নি। এ নিয়ে তারা তখনই আপত্তি দেন। '৮৩ সালের আইনে নিয়োগ সরকারের দেওয়ার নিয়ম হলেও '৯০ সালের পরিবর্তিত আইনে নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে। এতে অবসর সময়সীমা হয়ে যায় ৬০ বছর। বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি বহাল থাকলেও গ্রামীণ ব্যাংক তাদের পরিচালনা পর্ষদের হাতে নিয়োগের ক্ষমতা দিয়ে বিধি করে। কিন্তু এরও কোনো সরকারি অনুমোদন নেয়নি। তিনি বলেন, ইউনূস একজন সম্মানিত লোক তার সম্মান যাতে থাকে, আর গরিবের জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড যাতে অব্যাহত থাকে সেটাই প্রত্যাশা করি। অনেকেরই প্রশ্ন কিভাবে তিনি সরকারের ৬০ ভাগ শেয়ার ৩ দশমিক ৫ ভাগে আনলেন? আনলেও কি সরকার আইন ও জনস্বার্থে দেখবে না? কেন তিনি চেয়ারম্যান থাকতে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন? কেন তার বিরুদ্ধে টাকা সরানোর অভিযোগ ওঠে? ড. ইউনূস সম্মানিত লোক। তিনি জানেন, বোঝেন। এমনকি দেশের একটি সাধারণ ঘটনা নিয়ে বিদেশিদের প্রভাব খাটানো এবং মানুষের মাঝে হৈচৈ ফেলা সম্মানজনক নয়। সরকারের জন্যও বিব্রতকর। তিনিই পারতেন সরে যেতে। আমৃত্যু থাকতে চান কেন?
আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে পারি, সম্মান রক্ষার দায়িত্ব নিজের কাছে। ড. ইউনূস এতদিন কেন এভাবে থাকলেন। আজও কেন থাকতে চাইছেন। লিবিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে রক্তপাত ঘটিয়ে গাদ্দাফি বলেছেন, তার তো পদই নেই। তিনি পদত্যাগ করবেন কিভাবে। ড. ইউনূসও তিনি চলে গেলে কি হবে এ দোহাই দিয়ে বিতর্কের ঢেউ তুলে ছাড়তে চাইছেন না। থাকতে চাইছেন। গাদ্দাফি চার দশক লিবিয়ার, ইউনূস তিন দশকের বেশি গ্রামীণ ব্যাংকের। ড. ইউনূস নোবেল বিজয়ী ম্যান্ডেলার কাছ থেকে শিক্ষা নেননি। নিচ্ছেন গাদ্দাফির কাছ থেকে। আর মনে রাখতে হবে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। সবাইকেই ছাড়তে হয়। পদ-পদবি এবং পৃথিবী। বাংলা সাহিত্যের প্রাণ রবীন্দ্রনাথ চলে গেলেও বাংলা সাহিত্য চলে যায়নি।
ইউনূসকে আইন কবর দিলেও তিনি আদালতে গিয়ে বলছেন এখনো তিনিই এমডি। তবে চাই ইউনূসের বিদায়ের পর দায়িত্বে আসুক সরকারি মোসাহেব নয়, দক্ষ যোগ্য লোক। যিনি গ্রামীণ ব্যাংককে নিয়ে যাবেন গরিবের কল্যাণে। যেমন এলজিইডিকে সাজিয়েছিলেন মরহুম কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী।
শেষ করতে চাই একটি গল্প দিয়ে, মুসলিম লীগের এক নেতা বলেছিলেন, তাদের নেতা সবুর খান নাকি মৃত্যুর আগেও দলের সভাপতির পদ ছাড়তে চাননি। তিনি মারা গেলে শোকাহত কর্মীরা জানাজা শেষে দাফনেও অংশ নিল। কবরে মাটি দেওয়ার পর সবাই চলে গেলেও কিছু লোক দাঁড়িয়ে থাকল। অন্য কর্মীরা এখনো দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে বলল, যদি কবর থেকে উঠে বলে, আমি মুসলিম লীগের সভাপতি!
__._,_.___