পাকিস্তান প্রশ্নে বেগম জিয়া চুপ কেন-জবাব দিন
জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে আলোচনায় আসুন, সমঝোতা হলে মধ্যবর্তী নির্বাচন ॥ প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ পাকিস্তান প্রশ্নে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া নিশ্চুপ কেন তা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আন্দোলনের মাঠে নামার আগে এর জবাব জনগণকে দেয়ার জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে খালি মাঠে গোল হতে দেখে বিরোধী দল কপাল চাপড়াচ্ছে। খালি মাঠ, শূন্য মাঠ, গোল তো হবেই। মাঠে খেলোয়াড় নেই, আমি কী করব? খেলা হচ্ছে মাঠে, কিন্তু গোলকিপার নেই, গোল তো হবেই!
জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে আলোচনায় আসার জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আলোচনা চলছে, আলোচনা চলতে থাকবে। আমি তো বলেই দিয়েছি, আসুন আলোচনায় বসি। ভবিষ্যতে সমঝোতা হলে, যদি আপনাদের (বিএনপি) দাবি (ডিমান্ড) থাকে তাহলে এ নির্বাচনের পর আমরা সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন করব। তবে এজন্য আপনাদের স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে হবে, হত্যা বন্ধ করতে হবে, বিভিন্ন স্থানে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে তা থামাতে হবে। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াত নির্বাচন করতে পারছে না। তাই উনিও (খালেদা জিয়া) করবেন না। জামায়াত ছাড়া উনার চলে না।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে গৃহীত 'নিন্দা প্রস্তাব'র বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ চললেও আপনি (খালেদা জিয়া) নিশ্চুপ রয়েছেন কেন? শুনছি আপনি নাকি আন্দোলনের মাঠে নামবেন! তবে আন্দোলনে মাঠে নামার আগে জনগণের কাছে এই প্রশ্নের জবাব দেবেন। নইলে দেশবাসী আপনাকে সমুচিত জবাব দেবে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য খালেদা জিয়া এতদিন মুখোশ পরে থাকলেও পাকিস্তানের অবস্থান প্রশ্নে নীরব থাকার কারণে তাঁর আসল চেহারা বেরিয়ে গেছে। মানুষ বুঝতে পারছে বিএনপি কিসের জন্য রাজনীতি করে? পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বলতে উনার (খালেদা জিয়া) লজ্জা হয়! পাকিস্তানের জন্যই ওনার এত দরদ, এত কষ্ট। তাহলে আর বাংলাদেশে থাকার দরকার কী? পাকিস্তানে চলে গেলেই তো পারেন। এখানে থেকে জনগণকে কষ্ট দিয়ে লাভ কী? এ সময় প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য একেএম এনামুল হক শামীম, আসাদুজ্জামান খান কামাল। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে বিজয়ী দেখতে পছন্দ করেন না। বাংলাদেশ বিজয়ী জাতি হিসেবে থাকুক এটা ওনার (খালেদা জিয়া) মোটেও পছন্দ নয়। এ কারণে কাদের মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে পাকিস্তান পার্লামেন্টে নেয়া নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে তাঁর মুখ দিয়ে 'টু' শব্দ বের হলো না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের একজন সাবেক রিটায়ার্ড (অবসরপ্রাপ্ত) সেনা কর্মকর্তা জানজুয়া মারা গেলে আপনি (খালেদা জিয়া) শোকবার্তা পাঠান। এর রহস্যটা কী? এটা আমি জানি না, জানতে চাই। পাকিস্তানের যেসব দল নিন্দা প্রস্তাবে সমর্থন করেনি তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে কাদের মোল্লার পক্ষে বিবৃতি দেয়ায় নিয়াজির ভাতিজা সাবেক তারকা ক্রিকেটার ইমরান খান নিয়াজিরও কঠোর সমালোচনা করেন।
চলতি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৪ প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জনকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা জানতাম, বিরোধী জোট নির্বাচনে আসছে। এজন্য আমরা মহাজোট আসন ভাগাভাগি করে নিয়েছি। আমাদের দলের অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিরোধী দল এলে তো ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হত না। বিরোধী দল এলো না, এতে আমাদের দোষ না। খেলার মাঠে অপর দিকে গোলকিপার নেই। তাহলে তো আমরা গোল দিয়েই যাব।
একতরফা নির্বাচন হচ্ছে বলে বিএনপির দাবির জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ধরেই নিয়েছিলাম বিএনপি নির্বাচনে আসবে। কিন্তু তারা এলো না। আমার আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বার বার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী। এখন নির্বাচন বানচাল করতে জামায়াত-শিবিরকে দিয়ে একাত্তরের মতো হত্যাকা- চালাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি আসলে জামায়াত ছাড়া নির্বাচনে আসতে ভয় পাচ্ছে। আর হাইকোর্ট জামায়াতকে জঙ্গী সংগঠন আখ্যায়িত করে নির্বাচনে তাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।
জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি থেকে কিভাবে এত অর্থ-সম্পদের মালিক হলেন তার জবাব জনগণকে দেয়ার জন্য বিরোধী দলের নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য নয়। নিজের লাভ-লোকসানের বা ক্ষমতায় আসার জন্য নয়। আমার কাছে ক্ষমতা মানেই হচ্ছে জনগণের কল্যাণ করা।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। এ কারণে খালেদা জিয়ার হƒদয় ব্যথিত হচ্ছে। কাদের মোল্লার ফাঁসি স্থগিতের জন্য বিভিন্ন বড় জায়গা থেকে ফোন এসেছে। আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। তবে আমি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। তাদের কাছেই আমার জবাবদিহিতা। জনগণের কাছে যে অঙ্গীকার করেছি তা বাস্তবায়ন করেছি। ক্ষমতার লোভ কিংবা মোহ আমার নেই, ছিলও না। আমি মৃত্যুকে পরোয়া করি না, পরোয়া করি শুধু জনগণের। কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী জনগণের সুদের টাকায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে এমন ব্যক্তির সমালোচনা করে বলেন, এ খেলা আমরা খেলতে দেব না। প্রত্যেক মানুষ তার নিজের পায়ে দাঁড়াবে। এটা তার মৌলিক অধিকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দোসর যে স্বাধীনতাবিরোধীরা তা আজ জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে আন্দোলনের নামে তারা মানুষ হত্যা করছে, হাজার হাজার গাছ কাটছে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত একাত্তরের মতোই মানুষ হত্যায় মেতেছে। খুনীদের মদদ দেয়া, লালন-পালন করাই বিএনপির চরিত্র। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুকে সাহস নিয়ে চলতে হবে। সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সজাগ থাকতে হবে। তারা একাত্তরের মতো মানুষ হত্যা করছে। আরও হত্যা করবে। নতুন প্রজন্মের যারা একাত্তর দেখেনি। তারা নতুন করে দেখল স্বাধীনতাবিরোধীরা কিভাবে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আত্মনির্ভরশীল হতে, নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে। বিশ্বমন্দায় অনেক উন্নত দেশ হিমশিম খেলেও আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯৪ ভাগই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। রিজার্ভ ১৮ বিলিয়নের উপরে। ৩ কোটি ৮৬ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ১ কোটি তরুণকে চাকরি দেয়া হয়েছে। পাঁচ কোটি মানুষ নি¤œবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ৫৭টি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এখন ১ হাজারেরও অধিক মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হচ্ছে। আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছি। সাত বিভাগে ৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিচ্ছি এটা অনেকের পছন্দ নয়। এ কারণে তারা সবকিছু নেগেটিভ করে দেখায় ও মানুষকে বিভ্রান্তি ফেলার চেষ্টা করে। যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়, তারাই চায় না আমরা আত্মনির্ভরশীল হই, নিজেদের পায়ে দাঁড়াই। অবশ্য দরিদ্র দেখিয়ে তারা বিদেশ থেকে অর্থ এনে আত্মসাৎ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমান হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেন। লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে তুলে দেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্তও বানান। সে সময় হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করা হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯টি ক্যু হয়েছে। একেকটা ক্যুর পর জেনারেল জিয়া হাজার হাজার সেনা অফিসারকে নির্বিচারে হত্যা করেন। শুধু বিমানবাহিনীর ৬৬২ জন অফিসারকে হত্যা করা হয়। দেশে ভোট কারচুপি, ঋণ খেলাপিসহ বিভিন্ন অনিয়ম তিনি চালু করে যান। আর জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসেও যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী-এমপি বানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে শুধু নিজেদের ভাগ্য গুছিয়েছে। আর এলিট শ্রেণী তৈরি করে নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। আর যারা দরিদ্র তাদেরকে আরো দরিদ্র হতে হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জনগণ প্রথম বুঝতে পারে যে, সরকার মানে জনগণের সেবক। আমরা উন্নয়নের সুফল গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেই। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত ছিল স্বর্ণযুগ। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে অত্যাচার, খুন, ধর্ষণসহ একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীদের মতো আচরণ করছে-যা জাতির জন্য দুঃখজনক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। একাত্তরের মতো তারা মানুষ হত্যা করছে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, দেশী-বিদেশী কোন শত্রুকেই আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। আমাদের কেউ দয়া করে স্বাধীনতা দেয়নি। নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। তাই ভয় পেলে চলবে না, সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সবকিছু আছে। আমাদের মাঝে আছে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা, আমাদের দল উপমহাদেশের একটি প্রাচীন দল, সারা দেশে আমাদের কোটি কোটি কর্মী-সমর্থক রয়েছে। আমরা কেন ভয় পাব?
তিনি আরও বলেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পুরোপুরি বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাবে দেশ। বর্তমান সরকার সংবিধানকে অনেক গণতান্ত্রিক করেছে। কিছু গণমাধ্যমের সমালোচনা করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, কিছু পত্রিকা আন্দাজনির্ভর সংবাদ প্রকাশ করে গুজব ছড়াচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে জনগণ সংবাদ মাধ্যমের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে। এটা গণতন্ত্রের জন্য সুখবর নয়। স্বাধীন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ মাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। এ সময় টেলিভিশনের টকশো'র বক্তাদের সমালোচনা করেন আশরাফ।
যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদ- কার্যকর করে আমেরিকা। তারা বেয়ানতানামো কারাগারে বন্দীদের অমানবিক নির্যাতন করে। তাদের হাতে বিনা বিচারে নির্মমভাবে মারা গেছে লাদেন-গাদ্দাফি। সাদ্দামের ফাঁসির সময় তার মাথা আলাদা হয়ে গিয়েছিল। লাদেনের লাশও সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এসব কোন্ ধরনের মানবতা? আমরা কিছু বললেই তারা নাখোশ। আবার আমাদের দেশের কিছু দালাল আছে যারা তাদের লেজুড়বৃত্তি করে। এ সময় মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার বিরোধিতা ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সপ্তম নৌ-বহর পাঠানোর বিষয় এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারতের সহযোগিতার বিষয়টি উল্লেখ করেন সৈয়দ আশরাফ।
জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে আলোচনায় আসার জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আলোচনা চলছে, আলোচনা চলতে থাকবে। আমি তো বলেই দিয়েছি, আসুন আলোচনায় বসি। ভবিষ্যতে সমঝোতা হলে, যদি আপনাদের (বিএনপি) দাবি (ডিমান্ড) থাকে তাহলে এ নির্বাচনের পর আমরা সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন করব। তবে এজন্য আপনাদের স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে হবে, হত্যা বন্ধ করতে হবে, বিভিন্ন স্থানে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে তা থামাতে হবে। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াত নির্বাচন করতে পারছে না। তাই উনিও (খালেদা জিয়া) করবেন না। জামায়াত ছাড়া উনার চলে না।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে গৃহীত 'নিন্দা প্রস্তাব'র বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ চললেও আপনি (খালেদা জিয়া) নিশ্চুপ রয়েছেন কেন? শুনছি আপনি নাকি আন্দোলনের মাঠে নামবেন! তবে আন্দোলনে মাঠে নামার আগে জনগণের কাছে এই প্রশ্নের জবাব দেবেন। নইলে দেশবাসী আপনাকে সমুচিত জবাব দেবে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য খালেদা জিয়া এতদিন মুখোশ পরে থাকলেও পাকিস্তানের অবস্থান প্রশ্নে নীরব থাকার কারণে তাঁর আসল চেহারা বেরিয়ে গেছে। মানুষ বুঝতে পারছে বিএনপি কিসের জন্য রাজনীতি করে? পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বলতে উনার (খালেদা জিয়া) লজ্জা হয়! পাকিস্তানের জন্যই ওনার এত দরদ, এত কষ্ট। তাহলে আর বাংলাদেশে থাকার দরকার কী? পাকিস্তানে চলে গেলেই তো পারেন। এখানে থেকে জনগণকে কষ্ট দিয়ে লাভ কী? এ সময় প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য একেএম এনামুল হক শামীম, আসাদুজ্জামান খান কামাল। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে বিজয়ী দেখতে পছন্দ করেন না। বাংলাদেশ বিজয়ী জাতি হিসেবে থাকুক এটা ওনার (খালেদা জিয়া) মোটেও পছন্দ নয়। এ কারণে কাদের মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে পাকিস্তান পার্লামেন্টে নেয়া নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে তাঁর মুখ দিয়ে 'টু' শব্দ বের হলো না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের একজন সাবেক রিটায়ার্ড (অবসরপ্রাপ্ত) সেনা কর্মকর্তা জানজুয়া মারা গেলে আপনি (খালেদা জিয়া) শোকবার্তা পাঠান। এর রহস্যটা কী? এটা আমি জানি না, জানতে চাই। পাকিস্তানের যেসব দল নিন্দা প্রস্তাবে সমর্থন করেনি তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে কাদের মোল্লার পক্ষে বিবৃতি দেয়ায় নিয়াজির ভাতিজা সাবেক তারকা ক্রিকেটার ইমরান খান নিয়াজিরও কঠোর সমালোচনা করেন।
চলতি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৪ প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জনকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা জানতাম, বিরোধী জোট নির্বাচনে আসছে। এজন্য আমরা মহাজোট আসন ভাগাভাগি করে নিয়েছি। আমাদের দলের অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিরোধী দল এলে তো ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হত না। বিরোধী দল এলো না, এতে আমাদের দোষ না। খেলার মাঠে অপর দিকে গোলকিপার নেই। তাহলে তো আমরা গোল দিয়েই যাব।
একতরফা নির্বাচন হচ্ছে বলে বিএনপির দাবির জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ধরেই নিয়েছিলাম বিএনপি নির্বাচনে আসবে। কিন্তু তারা এলো না। আমার আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বার বার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী। এখন নির্বাচন বানচাল করতে জামায়াত-শিবিরকে দিয়ে একাত্তরের মতো হত্যাকা- চালাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি আসলে জামায়াত ছাড়া নির্বাচনে আসতে ভয় পাচ্ছে। আর হাইকোর্ট জামায়াতকে জঙ্গী সংগঠন আখ্যায়িত করে নির্বাচনে তাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।
জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি থেকে কিভাবে এত অর্থ-সম্পদের মালিক হলেন তার জবাব জনগণকে দেয়ার জন্য বিরোধী দলের নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য নয়। নিজের লাভ-লোকসানের বা ক্ষমতায় আসার জন্য নয়। আমার কাছে ক্ষমতা মানেই হচ্ছে জনগণের কল্যাণ করা।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। এ কারণে খালেদা জিয়ার হƒদয় ব্যথিত হচ্ছে। কাদের মোল্লার ফাঁসি স্থগিতের জন্য বিভিন্ন বড় জায়গা থেকে ফোন এসেছে। আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। তবে আমি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। তাদের কাছেই আমার জবাবদিহিতা। জনগণের কাছে যে অঙ্গীকার করেছি তা বাস্তবায়ন করেছি। ক্ষমতার লোভ কিংবা মোহ আমার নেই, ছিলও না। আমি মৃত্যুকে পরোয়া করি না, পরোয়া করি শুধু জনগণের। কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী জনগণের সুদের টাকায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে এমন ব্যক্তির সমালোচনা করে বলেন, এ খেলা আমরা খেলতে দেব না। প্রত্যেক মানুষ তার নিজের পায়ে দাঁড়াবে। এটা তার মৌলিক অধিকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দোসর যে স্বাধীনতাবিরোধীরা তা আজ জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে আন্দোলনের নামে তারা মানুষ হত্যা করছে, হাজার হাজার গাছ কাটছে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত একাত্তরের মতোই মানুষ হত্যায় মেতেছে। খুনীদের মদদ দেয়া, লালন-পালন করাই বিএনপির চরিত্র। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুকে সাহস নিয়ে চলতে হবে। সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সজাগ থাকতে হবে। তারা একাত্তরের মতো মানুষ হত্যা করছে। আরও হত্যা করবে। নতুন প্রজন্মের যারা একাত্তর দেখেনি। তারা নতুন করে দেখল স্বাধীনতাবিরোধীরা কিভাবে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আত্মনির্ভরশীল হতে, নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে। বিশ্বমন্দায় অনেক উন্নত দেশ হিমশিম খেলেও আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯৪ ভাগই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। রিজার্ভ ১৮ বিলিয়নের উপরে। ৩ কোটি ৮৬ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ১ কোটি তরুণকে চাকরি দেয়া হয়েছে। পাঁচ কোটি মানুষ নি¤œবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ৫৭টি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এখন ১ হাজারেরও অধিক মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হচ্ছে। আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছি। সাত বিভাগে ৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিচ্ছি এটা অনেকের পছন্দ নয়। এ কারণে তারা সবকিছু নেগেটিভ করে দেখায় ও মানুষকে বিভ্রান্তি ফেলার চেষ্টা করে। যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়, তারাই চায় না আমরা আত্মনির্ভরশীল হই, নিজেদের পায়ে দাঁড়াই। অবশ্য দরিদ্র দেখিয়ে তারা বিদেশ থেকে অর্থ এনে আত্মসাৎ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমান হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেন। লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে তুলে দেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্তও বানান। সে সময় হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করা হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯টি ক্যু হয়েছে। একেকটা ক্যুর পর জেনারেল জিয়া হাজার হাজার সেনা অফিসারকে নির্বিচারে হত্যা করেন। শুধু বিমানবাহিনীর ৬৬২ জন অফিসারকে হত্যা করা হয়। দেশে ভোট কারচুপি, ঋণ খেলাপিসহ বিভিন্ন অনিয়ম তিনি চালু করে যান। আর জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসেও যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী-এমপি বানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে শুধু নিজেদের ভাগ্য গুছিয়েছে। আর এলিট শ্রেণী তৈরি করে নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। আর যারা দরিদ্র তাদেরকে আরো দরিদ্র হতে হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জনগণ প্রথম বুঝতে পারে যে, সরকার মানে জনগণের সেবক। আমরা উন্নয়নের সুফল গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেই। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত ছিল স্বর্ণযুগ। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে অত্যাচার, খুন, ধর্ষণসহ একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীদের মতো আচরণ করছে-যা জাতির জন্য দুঃখজনক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। একাত্তরের মতো তারা মানুষ হত্যা করছে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, দেশী-বিদেশী কোন শত্রুকেই আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। আমাদের কেউ দয়া করে স্বাধীনতা দেয়নি। নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। তাই ভয় পেলে চলবে না, সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সবকিছু আছে। আমাদের মাঝে আছে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা, আমাদের দল উপমহাদেশের একটি প্রাচীন দল, সারা দেশে আমাদের কোটি কোটি কর্মী-সমর্থক রয়েছে। আমরা কেন ভয় পাব?
তিনি আরও বলেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পুরোপুরি বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাবে দেশ। বর্তমান সরকার সংবিধানকে অনেক গণতান্ত্রিক করেছে। কিছু গণমাধ্যমের সমালোচনা করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, কিছু পত্রিকা আন্দাজনির্ভর সংবাদ প্রকাশ করে গুজব ছড়াচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে জনগণ সংবাদ মাধ্যমের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে। এটা গণতন্ত্রের জন্য সুখবর নয়। স্বাধীন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ মাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। এ সময় টেলিভিশনের টকশো'র বক্তাদের সমালোচনা করেন আশরাফ।
যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদ- কার্যকর করে আমেরিকা। তারা বেয়ানতানামো কারাগারে বন্দীদের অমানবিক নির্যাতন করে। তাদের হাতে বিনা বিচারে নির্মমভাবে মারা গেছে লাদেন-গাদ্দাফি। সাদ্দামের ফাঁসির সময় তার মাথা আলাদা হয়ে গিয়েছিল। লাদেনের লাশও সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এসব কোন্ ধরনের মানবতা? আমরা কিছু বললেই তারা নাখোশ। আবার আমাদের দেশের কিছু দালাল আছে যারা তাদের লেজুড়বৃত্তি করে। এ সময় মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার বিরোধিতা ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সপ্তম নৌ-বহর পাঠানোর বিষয় এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারতের সহযোগিতার বিষয়টি উল্লেখ করেন সৈয়দ আশরাফ।
__._,_.___