ন্যায় বিচার হত্যার আগে সরকারি ইচ্ছার বাস্তবায়ন
বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
মানবজমিন ডেস্ক: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায়কে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছেন সৌদি আরবের সাবেক কূটনীতিক ড. আলী আল-ঘামদি। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশেষজ্ঞ। গতকাল অনলাইন সৌদি গেজেটে প্রকাশিত হয় তার লেখা মন্তব্য প্রতিবেদন ‘ট্রাইব্যুনাল ভার্ডিক্ট: এ পলিটিক্যাল ভেনডেটা’। এতে তিনি লিখেছেন বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ আদালতের রায়ের বিষয়ে আমি এর আগের লেখায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত অনুপস্থিতিতে আবুল কালাম আযাদকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রথম রায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। তিনি কোথায় কেউ তা জানে না। ওই লেখায় আমি বাংলাদেশের দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনামের সমালোচনা করেছি। কারণ, আদালতের ওই রায়ের পর তিনি তা সেলিব্রেট করেছিলেন। তার পত্রিকায় একটি লেখায় তিনি বলেছেন, ওই রায়কে সেলিব্রেট করার লাখ লাখ কারণ আছে। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে ওই রায়টি যেহেতু ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা তাই আমি একে সেলিব্রেট করার কোন কারণ দেখি না। আমি আরও বলেছিলাম, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন ওই রায় ছিল সেই মূল্যবোধের বিরোধী। তিনি আরও লিখেছেন, আজ আমি ওই আদালত থেকে দেয়া আরেকটি রায়ের বিষয়ে লিখছি। এবার আদালত রায় দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই রায় দেয়ার পর বিপুল সংখ্যক মানুষ তার ফাঁসি দাবিতে ঢাকার শাহবাগ স্কোয়ারে সমবেত হয়েছে। ওই লেখায় তিনি বলেন, আরও একবার এটা অবাক হচ্ছি ও বিস্ময় প্রকাশ করছি যারা এই র্যালি ও ধর্মঘট আয়োজন করছেন তাদের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে। বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে যে প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে তারও কঠোর নিন্দা জানিয়েছি আমি। এর প্রতিবাদ শুধু আমি একা করছি না। বাংলাদেশের রাজনীতিক ও আইনজীবী মওদুদ আহমদও আমার মতো অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেক্রেটারি হিসেবে প্রথম দিকে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরের সরকারগুলোতে তিনি ঊর্ধ্বতন পদে দায়িত্ব পালন করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি মন্ত্রী ছিলেন। প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদের সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার সরকারে তিনি আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি খ্যাতনামা একজন আইনজীবী হওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে বাংলাদেশের সংবিধান রচয়িতাদের অন্যতম ছিলেন। সম্প্রতি তিনি শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা করেছেন। সরকার আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায়কে অপর্যাপ্ত বলে মনে করে। যারা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে রাজপথে তরুণদের উস্কে দিয়েছেন তিনি তাদেরও সমালোচনা করেন। রায় নিয়ে সরকার ও তার মিত্রদের অবস্থানের কারণে মওদুদ আহমদ আদালতের বিচারকদের পদত্যাগ করা উচিত বলে দাবি করেন। এছাড়া আইনজীবী ছাড়াও মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো কাদের মোল্লার রায়ের বিষয়ে পরিষ্কার করে বলেছেন, অভিযুক্ত সুবিচার পাননি। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো বিচার প্রক্রিয়া বিচারের মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মেনে চলেনি। কারণ, এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য সরকার নিয়োগ দিয়েছে বিচারক, প্রসিকিউটর ও তদন্তকারী, যারা তাদের প্রতি অনুগত।
এমনকি সরকারও রায় নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। সরকারি কিছু কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন জোট বলেছে, কাদের মোল্লা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত অন্যদের ফাঁসি দেয়া হলে তারা সন্তুষ্ট হতেন। বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আগে থেকেই তারা এমন কথা বলে যাচ্ছেন। বৃটিশ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট সম্প্রতি স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ করে দেয়। সে ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের একজন চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেন। ড. আলী আল ঘামদি লিখেছেন, এটা হচ্ছে ন্যায় বিচার হত্যার আগে আবদুল কাদের মোল্লাসহ রাজনৈতিক বিরোধীদের হত্যায় সরকারের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন মাত্র। বলা হয়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঢাকাতেই ছিলেন না কাদের মোল্লা। ’৭১ সালের ওই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়। ওই সময় কাদের মোল্লা দেশের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে ছিলেন। তার আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন যে, তিনি কেবল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজধানী ঢাকায় এসেছেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। স্নাতক পাস করা পর্যন্ত মোল্লা তার এক ছাত্র বন্ধুর বাসায় ছিলেন। তারপর তিনি বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের পরিচালিত একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ঘটনাচক্রে তিনি সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন ও ঢাকার সাংবাদিক ফেডারেশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। গত ৪০ বছরে তার নিষ্কলুষ নাগরিক জীবন নিয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও রেকর্ড করা হয়নি। কিন্তু এখন ত্রুটিযুক্ত বিচারের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আজীবন সাজার রায় দেয়া হয়েছে। যাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কোন ধরনের বালাই ছিল না। ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেবা দিয়েছেন এমন কোন বিচারক ও আইনজীবী ছিলেন না। এমনকি এমন কাউকে বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতেও দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের সঙ্গে বৈঠককালে বৃটিশ হাউজ অব লর্ডসের লর্ড কার্লাইল দাবি করেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ পর্যবেক্ষণ করার জন্য হাউজ অব লর্ডের একটি ল’ ডেলিগেশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো। এ বিষয়ে লন্ডনে এক বৈঠকে কার্লাইলকে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শফিক আহমেদ। কিন্তু পরে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন চিঠি ইস্যু করা হয়নি। এমনকি বিশ্বখ্যাত যুদ্ধাপরাধ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান ট্রাইবুনালের বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের অনুমতি চাইলে তাকে সেটা দেয়া হয়নি। তাকে ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছার পর বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। বিমানবন্দর থেকে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে খ্যাতিমান ওই আইনজীবীকে। তুরস্কের একটি ডেলিগেশন বাংলাদেশে গেছে বিচার প্রক্রিয়া দেখতে। তারা সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বিবাদীদের পক্ষ অবলম্বন করে কিছু বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু এতেও সরকারের মনোভাব ও অবস্থানের মধ্যে কোন ধরনের পরিবর্তন আসেনি। এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ সরকার বিরোধী রাজনীতিবীদদের থেকে নিজেদের মুক্ত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, ইসলামিক সংগঠন এমনকি স্থানীয় কোন সংগঠনের সমালোচনায়ও তারা কান দিচ্ছে না। এর ফলে আরও একবার সংঘাত ঘটতে পারে।
এমনকি সরকারও রায় নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। সরকারি কিছু কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন জোট বলেছে, কাদের মোল্লা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত অন্যদের ফাঁসি দেয়া হলে তারা সন্তুষ্ট হতেন। বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আগে থেকেই তারা এমন কথা বলে যাচ্ছেন। বৃটিশ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট সম্প্রতি স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ করে দেয়। সে ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের একজন চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেন। ড. আলী আল ঘামদি লিখেছেন, এটা হচ্ছে ন্যায় বিচার হত্যার আগে আবদুল কাদের মোল্লাসহ রাজনৈতিক বিরোধীদের হত্যায় সরকারের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন মাত্র। বলা হয়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঢাকাতেই ছিলেন না কাদের মোল্লা। ’৭১ সালের ওই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়। ওই সময় কাদের মোল্লা দেশের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে ছিলেন। তার আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন যে, তিনি কেবল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজধানী ঢাকায় এসেছেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। স্নাতক পাস করা পর্যন্ত মোল্লা তার এক ছাত্র বন্ধুর বাসায় ছিলেন। তারপর তিনি বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের পরিচালিত একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ঘটনাচক্রে তিনি সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন ও ঢাকার সাংবাদিক ফেডারেশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। গত ৪০ বছরে তার নিষ্কলুষ নাগরিক জীবন নিয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও রেকর্ড করা হয়নি। কিন্তু এখন ত্রুটিযুক্ত বিচারের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আজীবন সাজার রায় দেয়া হয়েছে। যাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কোন ধরনের বালাই ছিল না। ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেবা দিয়েছেন এমন কোন বিচারক ও আইনজীবী ছিলেন না। এমনকি এমন কাউকে বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতেও দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের সঙ্গে বৈঠককালে বৃটিশ হাউজ অব লর্ডসের লর্ড কার্লাইল দাবি করেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ পর্যবেক্ষণ করার জন্য হাউজ অব লর্ডের একটি ল’ ডেলিগেশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো। এ বিষয়ে লন্ডনে এক বৈঠকে কার্লাইলকে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শফিক আহমেদ। কিন্তু পরে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন চিঠি ইস্যু করা হয়নি। এমনকি বিশ্বখ্যাত যুদ্ধাপরাধ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান ট্রাইবুনালের বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের অনুমতি চাইলে তাকে সেটা দেয়া হয়নি। তাকে ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছার পর বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। বিমানবন্দর থেকে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে খ্যাতিমান ওই আইনজীবীকে। তুরস্কের একটি ডেলিগেশন বাংলাদেশে গেছে বিচার প্রক্রিয়া দেখতে। তারা সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বিবাদীদের পক্ষ অবলম্বন করে কিছু বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু এতেও সরকারের মনোভাব ও অবস্থানের মধ্যে কোন ধরনের পরিবর্তন আসেনি। এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ সরকার বিরোধী রাজনীতিবীদদের থেকে নিজেদের মুক্ত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, ইসলামিক সংগঠন এমনকি স্থানীয় কোন সংগঠনের সমালোচনায়ও তারা কান দিচ্ছে না। এর ফলে আরও একবার সংঘাত ঘটতে পারে।
__._,_.___