Banner Advertise

Tuesday, November 22, 2011

[chottala.com] Re: [KHABOR] বিজ্ঞান কেন মাতৃভাষায়? No - No



Dear Readers:
 
With due honor to the originator of this discussion, I request all Bangladeshi students to please emphasize on English for their higher studies if they really want to shine in their life; there is simply no alternate to that.
 
Your rich neighbors are sending their kids to foreign countries or English Medium schools for English, but suggesting you to stick with Bangla to avoid competition, keep you down for generations, and satisfy their ill-motives; please don't be a victim.

With best regards,
Dr. Emarat Hossain Pannah
Maryland, USA
 

--- On Sat, 11/19/11, Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com> wrote:

From: Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com>
Subject: [KHABOR] বিজ্ঞান কেন মাতৃভাষায়?
To: "Bangladeshi American" <bangladeshiamericans@googlegroups.com>, "Khobor Yahoo" <khabor@yahoogroups.com>, "Alochona Groups" <alochona@yahoogroups.com>
Date: Saturday, November 19, 2011, 1:41 PM

 

তানভীরুল ইসলাম

বিজ্ঞান কেন মাতৃভাষায়?

নভেম্ভর ১৯, ২০১১
tanvir-fমাতৃভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষা কেন জরুরী, সে আলোচনা প্রায়ই ঘুরে যায় বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষা কেন সম্ভব নয়, সে দিকে।
এ প্রসঙ্গে যে ক'টি বাধার কথা প্রায়ই শুনি সেগুলো হলো-
মিথস্ক্রিয়ায় বাধা: বিজ্ঞান সাধক কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নন। জ্ঞানের বহু শাখা, বহু মতের সাথে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমেই একজন হয়ে ওঠেন সফল বিজ্ঞানী। বাংলায় বিজ্ঞান শিখে আমরা কি সেই মিথস্ক্রিয়ার দ্বার রুদ্ধ করে ফেলবো না?
অবকাঠামোগত বাধা: বাংলায় কি বিজ্ঞান শিক্ষার যথেষ্ট অবকাঠামো আছে? বিজ্ঞান নিয়ে বাংলায় লেখা ভালো বই, বা গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি বইয়ের বাংলা অনুবাদ কি সহজে (বা আদৌ) পাওয়া যায়?
চাকরি ক্ষেত্রে বাধা: বাংলায় বিজ্ঞান বা প্রকৌশল শিখে বিদেশে গিয়ে কি কেউ চাকরি পাবে? ইংরেজীটা ভালোভাবে শিখে নিয়ে পার্শবর্তীদেশ কীভাবে তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে সে তো আমরা সবাই দেখছি। এসময় আবার উলটো কথা কেন?
পারিভাষিক বাধা: বাংলায় তো বিজ্ঞানের বেশিরভাগ শব্দের কোনো পরিভাষাই নেই। বিদঘুটে একটা বাংলা পরিভাষা শেখার চেয়ে ইংরেজিটা শিখতে বাধা কোথায়? যে যার ইচ্ছা মত পরিভাষা বানিয়ে নিলে চলবে?
হীনম্মন্যতার বাধা: বাংলায় দুটো সুখ-দুখের কথা চললেও, জ্ঞান-বিজ্ঞানের গভীর সব তত্ত্ব, ধারনা, এসব কি বাংলা ধারণ করতে পারবে? ভাষা হিসাবে বাংলা কি ইংরেজী বা জার্মানের মত জাতে উঠতে পেরেছে?

এসব নানান কথার উত্তর খোঁজার আগে আসুন আমরা মূল বিষয়, মাতৃভাষায় বিজ্ঞান, নিয়ে একটু চিন্তা ভাবনা করি।
একটু ভেবে বলুন তো, বিজ্ঞানের কি নিজস্ব কোনো ভাষা আছে? একভাবে দেখলে উত্তরটা 'হ্যাঁ'। আর সেটা হচ্ছে গণিত। বিজ্ঞানকে হতে হয় গণিতের মত সুনির্দিষ্ট। এ নিয়ে আলোচনার ভাষা, লেখার ভাষা, শেখার ভাষা, জনগোষ্ঠিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এত সব ভিন্নতার মধ্যেও বিজ্ঞানকে উৎরে যেতে হয় যুক্তির নিরিখে। গণিতের হিসাবে। আবার শিল্পকলা বা অন্যান্য সুকুমারবৃত্তির মত এখানেও, সৃষ্টিশীলতা এবং কল্পনাশক্তিই শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক বিজ্ঞান এমনকি দ্বৈততার ধারনাকেও ধারণ করতে পারে। এবং করে। কিন্তু এতে স্ববিরোধিতার কোনো স্থান নেই। এগুলো মেনে নিলে, বিজ্ঞানের কোনও একটা কথা কোন ভাষায় বলা হচ্ছে, সেটা হয়ে পড়ে গৌণ। অর্থাৎ, আমি বিজ্ঞানের একটা কথা ইংরেজীতে না বলে বাংলায় বললাম, এতে আমার প্রকাশিত ধারণাটা একটুও খেলো হয়ে যাবে না।
ভাষা যদি গৌণই হয়, তাহলে মাতৃভাষা এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে কেন? কারণ এর ফলে সকল মানব ভাষাই 'বিজ্ঞানের' দৃষ্টিতে হয়ে উঠেছে সমান। কিন্তু আমরা যারা মানুষ, আমাদের কাছে কি সকল মানব ভাষা সমান? এই প্রশ্নের উত্তরেই আসছে মাতৃভাষা, বা আরো নির্দিষ্ট করে বললে 'প্রথম শেখা ভাষার' কথা।
মাতৃভাষা আমরা কীভাবে শিখি? ভাষা শিক্ষার ক্ষমতা মানব শিশুর সহজাত প্রবৃত্তির অংশ। এর কিছু অংশ মানব শিশু শেখে অনুকরণ করে। অনেক সময় অর্থবোঝার আগেই, সে সহজ কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে শিখে নেয়। এবং তার উচ্চারিত শব্দ আশেপাশের মানুষের উপর কী প্রভাব ফেলছে সেটা সে লক্ষ্য করে। এক সময় সে ওই শব্দটা কী 'ধারনা'কে প্রকাশ করছে সেটা বুঝে যায়। উদাহরণস্বরূপ, শিশুরা যেভাবে 'মা' ডাকতে শেখে। আবার এটা অন্যদিক দিয়েও হতে পারে। কখনো সে পরিচিত হয় কোনো অনুভূতির সাথে। এরপর আশেপাশের মানুষের আচরণ থেকে, উচ্চারিত ধ্বনি থেকে, সেই অনুভূতির আনুসাঙ্গিক শব্দটি শিখে নেয়। যেমন 'ব্যাথা'। কখনো ভুল শেখে। শুধরে নেয় পরে। এভাবে ক্রমাগত সে জটিল থেকে জটিলতর ধারনাকে মস্তিস্কে ধারণ করতে থাকে।
এই পুরো প্রক্রিয়াতে শুধু যে সে একটা ভাষা শিখছে তা-ই নয়। সে ভাবতেও শিখছে। মাতৃভাষা তাই হয়ে যাচ্ছে তার ভাবতে শেখার ভাষাও। এ ভাষাতে ভর করেই তার মাঝে নব নব বোধের উন্মেষ ঘটছে। চেতনার মর্মমূলের প্রতিটি স্থরেই তাই এই ভাষার ঠাই। মাতৃভাষার সাথে মানুষের সম্পর্কটা তাই শুধু আবেগী নয়, গাঠনিকও।
এখন বাংলাভাষাভাষী একটা জনগোষ্ঠিকে যদি বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে হয়, বিজ্ঞানের অপার সৌন্দর্য আর বিষ্ময়কর জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হয় তাহলে বিজ্ঞানকে পৌঁছে দিতে হবে তার সেই চেতনার মর্মমূলেই। ওখানে পৌঁছানোর ভাষাটা তাদের সেই প্রাণের ভাষা বাংলাই। এর ফলে নতুন ধারনাগুলোকে আত্মস্থ করতে যেমন সহজ হবে। সেগুলোকে ইতোমধ্যেই মস্তিষ্কে থাকা ধারনাসমষ্টির সাথে মিলিয়ে নিতেও সহজ হবে। এমন কি নতুন ধারনার উন্মেষ ঘটাও সহজ হয়ে যাবে তখন। আর মানব মস্তিষ্কের মহত্ব তো শুধু নতুন ধারনাকে আত্মস্থ করতে পারায় নয়; বরং সেই ধারনাকে নেড়ে-চেড়ে, উলটে-পালটে, বদলে, অন্য আরো ধারনার সাথে মিলিয়ে, নতুন ধারনার উন্মেষ ঘটানোর ক্ষমতাতে। খেয়াল করুন এখানে শুধু বিজ্ঞানের সাহায্যে ঘটনার বর্ণনা-ব্যাখ্যা ইত্যাদি করতে পারার কথা বলা হচ্ছে না। বিজ্ঞানবোধ গড়ে ওঠা আরো গভীর কিছু।
এ গেল মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার অন্তর্নিহিত গুরুত্ব। এছাড়াও ব্যবহারিক গুরুত্ব নিয়েও ভাবা যেতে পারে।
বিজ্ঞান একটা নৈবর্ক্তিক ব্যাপার। এটা মানবপ্রজাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন। বিজ্ঞান চর্চার অধিকারও তাই মৌলিক। কিন্তু আমরা যখন দাবি করে বসি, বিজ্ঞান শিখতে হবে ইংরেজীতে, কারণ ইংরেজীই এখন বিজ্ঞান চর্চার ভাষা, তখন কি আমরা ভিন্ন ভাষাভাষি মানুষের উপর বাড়তি একটা বোঝা চাপিয়ে দেই না? হ্যাঁ, সর্বজনস্বীকৃত আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে ইংরেজী শেখার গুরুত্ব কম নয়। কিন্তু সবাই কি ভিনদেশি একটা ভাষা শেখায় সমান পারঙ্গম? ব্যবসা বা কাজকর্ম চালিয়ে নেবার মত ইংরেজী হয়তো সবাই শিখে নিতে পারবে। কিন্তু বিজ্ঞানবোধের মত বিমুর্ত ব্যাপারকে উপলব্ধি করতে যতটা ইংরেজী জানা লাগে, ততটা কতজন পারে? একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে গত মাসে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছেন ১৬০৩০ জন আবেদনকারী। প্রশ্নপত্রে কয়েকটি সেকশন, তার মধ্যে ইংরেজী সেকশনে পাশ করা বাধ্যতামূলক। সে অংশে পাস নম্বর পেয়েছেন মাত্র ২৯০ জন আবেদনকারী। প্রায় একই চিত্র সারা দেশ জুড়েই, প্রায় সকল বিষয়ে ভর্তিচ্ছুকদের মধ্যে।
এমনকি বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান অনুষদের অনেক ছেলেকেও দেখেছি শুরুতে প্রোগ্রামিংয়ের উপর বাংলা ভাষায় লেখা বই খুঁজছেন। তারা তো ইংরেজীতে ভালো নম্বর পেয়ে পাস করেই বুয়েটে আসেন। তারপরও তাহলে বাংলায় লেখা বই খোঁজেন কেন? কারণ প্রোগ্রামিংয়ের মত বেশ অভিনব আর কিছুটা জটিল একটা বিষয়, তাকে মাতৃভাষায় কেউ বুঝিয়ে বললে ধারনাগুলো আত্মস্থ করা তার জন্য সহজ হয়। আর, ঐ যে ইংরেজী না জানা বিপুল জনগোষ্ঠি, তারা কী দোষ করেছে? ইংরেজী জানে না বলে কি জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের অন্ধকারেই থাকতে হবে? ইংরেজীকে বিজ্ঞানের 'পূর্বশর্ত' ভাবছি কেন আমরা? হ্যাঁ, এখন এটা প্রচলিত। কিন্তু, অতীতে অন্য কোনও ভাষা ছিলো বিশ্ব জুড়ে বিজ্ঞানবিষয়ক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে। এ ধারায় ভবিষ্যতে অন্য কোনো ভাষা ইংরেজীর স্থান নিয়ে নেবে। আবার এযুগেও মাতৃভাষায় উচ্চতর বিজ্ঞান শিখছে, এমন অনেক উদাহরণও আছে। যেমন চীন, জার্মানি, রাশিয়া… ইত্যাদি। তারা কি জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রকৌশল–কোনো কিছুতে পিছিয়ে পড়েছে? আমরা তাহলে কোন জুজুর ভয় পাচ্ছি?
এবার আসি শুরুতে উল্লেখ করা নানাবিধ বাধা প্রসঙ্গে-
মিথস্ক্রিয়া:
হ্যাঁ, মিথস্ক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সবার আগে গুরুত্বপূর্ণ, বিজ্ঞানকে বুঝতে পারা। বিজ্ঞানবোধ গঠন। ভৌত ঘটনাবলীকে বিজ্ঞান কীভাবে বর্ণনা, ব্যাখ্যা করছে সে উপলব্ধি লাভ। মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শেখানো হলে, ধারনার গভীরে পৌঁছানো যায় সহজেই। সহজেই জটিল বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে আসে মানুষের কাছে। প্রথমে বিজ্ঞানের মূল সুরটা ধরতে পারলে, তবেই না আসবে আন্তর্জাতিক মিথস্ক্রিয়ার প্রসঙ্গ। কিন্তু সেটাকেও কেন বিরাট কোন বাধা ভাবছি? একটু দেখার চেষ্টা করি বিজ্ঞানীদের মধ্যে কী ধরনের মিথস্ক্রিয়া হয়।

সামাজিক মিথস্ক্রিয়া:
যেখানে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা বা ধারণার আদান প্রদান হয়, লক্ষ্য করুন, সেখানে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা করার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে কেউ কিন্তু বলেনি যে কোনো আন্তর্জাতিক ভাষা এমনকি টুকটাক কাজ চালিয়ে নেবার মত করেও শেখা যাবে না! তাই এ ধরনের মিথস্ক্রিয়া করতে শিখে নেওয়া একজন বিজ্ঞানীর জন্য তাই কঠিন কিছু নয়। আর বাংলাদেশের ইংরেজী শিক্ষিত নয় তেমন জনগোষ্ঠি এমনিতেও এ ধরনের মিথস্ক্রিয়ায় পারঙ্গম নয়। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শিখে ফেললে তাই তারা কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না।

আনুষ্ঠানিক মিথস্ক্রিয়া:
গবেষণাপত্র, বা কনফারেন্স বক্তৃতা, ইত্যাদি এ ধরনের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যম। কিন্তু নিজের গবেষণার বিষয় নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকলে ইংরেজীতে গবেষণাপত্র পড়তে শিখে নেওয়া, বা লিখতে শিখে নেওয়াটা সহজ হয়। এবং কেউ যদি ইংরেজীতে একেবারেই পারঙ্গম না হয়। তাহলে অনুবাদককে দিয়ে অনুবাদ করিয়ে নিতে পারে। এ ধরনের অনুবাদকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা কঠিন কিছু নয়। যদি এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তখন এক ভাষায় লিখিত বিজ্ঞান গবেষণাপত্র অন্য ভাষায় অনুবাদ করানোর ব্যাপারে পারদর্শী জনশক্তিও গড়ে উঠবে। রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় এ ধরনের অনুবাদ প্রকল্প চালানোর সফল উদাহরণ আছে পৃথিবীতে। অনেকে যুক্তি দেখাবেন এত অনুবাদের ঝামেলা না করে ইংরেজীতে বিজ্ঞান চর্চা করলেই হয়! হ্যাঁ, হয়। ইংরেজীতে বিজ্ঞান শিখে অনেক বাঙালীই বড় বিজ্ঞানী হয়েছেন। হচ্ছেন। কিন্তু, এ যুক্তিধারীরা যে বিষয়গুলো খেয়াল করছেন না তা হলো:
১. অনুবাদ একবার করা হলে সেটা বার বার করার প্রয়োজন নেই।
২. বিজ্ঞানকে নিজ ভাষায় শিখলে আত্মীকরণের মাত্রা বাড়বে। ব্যাপারটা অনায়াসসাধ্যও হবে।
৩. ধারণা আত্মীকরণ হয়ে গেলে, কোন একটা বিষয়কে ইংরেজীতে কী বলে, জার্মানে কী বলে, রাশিয়ান বা চায়নিজে কী বলে, সেটা দেখে নেওয়া এ যুগে একেবারেই সহজ। তাই আনুষ্ঠানিক মিথস্ক্রিয়াতেও বড় কোনো বাধা থাকে না।
খেয়াল করুন, (মাতৃভাষা বা অন্য ভাষায়) বিজ্ঞান শিখে ফেলার পরে একজনের বিজ্ঞানবোধ পরিণত হয়ে গেলে ভিন্ন ভাষায় নিজস্ব ধারনাগুলো প্রকাশ করতে শিখে নেওয়া কঠিন নয়। কিন্তু শুরুতেই, একটা ভিনদেশি ভাষায় জটিল কোন তত্ত্ব অনুধাবন করে নিজের মননকে ঐ বৈজ্ঞানিক পরিণতাবস্থায় নিয়ে যাওয়া কঠিন।

যৌথ গবেষণা:
এ বিষয়ে নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অতীতে রাশিয়ান ও বর্তমানে জার্মান, ইটালিয়ান গবেষকদের সাথে গবেষণা করার সুযোগ হয়েছে। এরা নিজ নিজ মাতৃভাষাতেই বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। এখন ভিন্ন ভাষাভাষিদের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতেও শিখে নিয়েছেন। শুরুতে হোঁচট খেলেও নিজেদের বৈজ্ঞানিক ধারনাগত ভিত্তি মজবুত হওয়ায়, গবেষণার মান ও পরিমান কিছুই প্রভাবিত হয়নি। রাশিয়ান বিজ্ঞানী তো সেই শৈশবেই, উচ্চতরগণিত/বিজ্ঞানের নানান বিষয়ে পড়েছেন নিজে থেকেই। সে সময় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড, দাবা ইত্যাদি টুর্নামেন্টে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছেন তাই। মাতৃভাষায় লেখা চমৎকার সব বিজ্ঞানের বই সে সময় তার নাগালের মধ্যে না থাকলে এটা এত সহজে সম্ভব হতো কি?

আবারো বলি মিথস্ক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিজ্ঞান চর্চার মূল ভাগে থাকে, নিবিড় সাধনা এবং একাগ্র গবেষণা। এই মূল ভাগে বলিয়ান জনগোষ্ঠির পক্ষে মিথস্ক্রিয়ার ব্যাপারটা সহজেই সামলে নেওয়া সম্ভব। আধুনিক প্রযুক্তিও ভিন্ন ভাষাভাষি মানুষের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার ব্যাপারটাকে সহজ করে তুলছে ক্রমাগত।
অবকাঠামো:
হ্যাঁ, বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার প্রয়াস অবকাঠামোগতভাবেই (বই-পুস্তক, বিজ্ঞান সাহিত্য) পিছিয়ে আছে বেশ। কিন্তু সবার আগে আমাদেরকে অনুধাবন করতে হবে যে, মাতৃভাষায়(আমাদের ক্ষেত্রে বাংলা) বিজ্ঞান শিক্ষা খুবই জরুরী। একবার এই প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একমত হতে পারলে, অবকাঠামোগত উন্নয়নের ব্যাপারে কিছু করাও সহজ হয়। আর কোন একটা ব্যাপারে পিছিয়ে আছি বলেই এগোনোর চেষ্টা না করে আরো পিছিয়ে পড়তে হবে– এমন হেরে যাওয়া মানসিকতা আমরা মনে ঠাই দেব কেন? বিজ্ঞান মানুষের চেতনার মুক্তি ঘটাতে পারে। বিজ্ঞানবোধ সম্পন্ন মানুষ হয়ে ওঠে কৌতূহলী। একবার বিজ্ঞানের কোন বিষয় আত্মস্থ করতে পারলে তাই ও বিষয়ে আরো পাঠের চাহিদা সহজেই সৃষ্টি হয় তার মাঝে। এভাবে প্রকাশক-অনুবাদক-মৌলিক লেখকদের মধ্যেও প্রণোদনা বাড়তে পারে বাংলায় বিজ্ঞানের বই প্রকাশের। সম্প্রতি গণিত অলিম্পিয়াডের কল্যাণে গণিতের বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। গত কয়েক বছরে অনেকগুলো গণিতের বই প্রকাশিত হয়েছে। এবং মানুষ পড়ছে, শিখছে। উচ্চতর গণিতসহ, বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাকেও এভাবে এগিয়ে নিতে হবে। এক সময় বিজ্ঞানের বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার মত বইয়ের সংগ্রহ গড়ে তোলা সম্ভব হবে তখন। আর এখনো, উচ্চতর বিজ্ঞানের বা গণিতের কোন বই যদি সহজ সাবলীল বাংলায় লেখা হয় তাহলে স্রেফ নিজের আগ্রহেই পড়ার জন্য সংগ্রহ করবে শিক্ষার্থীরা।

চাকরিক্ষেত্র:
বিদেশে গিয়ে চাকরি বাকরির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোনো ভাষা শিখে নেওয়া জরুরী। কিন্তু আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং শেখার সময় অন্য কোন ভাষায় পড়াশুনা করেছেন বলে আপনাকে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে অযোগ্য দাবি কেউ করবে না। এখানে মূখ্য হচ্ছে আপনার নকশা করা সেতু, ইমারত, যন্ত্রপাতি এগুলোর মান। আপনার সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা। আমরা দেশে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট করার কথা ভাবছি। কথা চলছে রাশিয়ার সাথে। রাশান ইঞ্জিনিয়াররা রাশান ভাষায় পড়ালেখা করেছে বলে কি তাদের পাওয়ার প্লান্ট অকেজো হয়ে যাবে? বিজ্ঞানী বা ইঞ্জিনিয়ারের মূল্য তাদের কর্মক্ষমতায়, মেধায়। এগুলো ভাষার গণ্ডিতে আটকায় না। জাপানিজ বা জার্মানদের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মান সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। আর বিদেশে গিয়ে চাকরি করে কতজন? বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠি দেশের মধ্যে থেকেই বিশ্বমানের কাজ করতে পারবেন। যেমন করছে অনেক দেশ। ওদিকে বিশ্বমানের বিজ্ঞান শিক্ষা মাতৃভাষায় অর্জন করা সহজসাধ্য।

পরিভাষা:
নতুন পরিভাষা মানুষ কেন সৃষ্টি করে? বিদেশি শব্দটা ব্যবহার করলেই হয়? না, সব সময় হয় না। প্রতিটি জনগোষ্ঠি, যে মাতৃভাষা শিখে বড় হয়, সেই ভাষার বহুলব্যবহৃত ধ্বনিসমষ্টিকে সহজে উচ্চারন ও আত্মস্থ করতে পারে। নিজস্ব উদাহরণ দেই, আমার রাশিয়ান সহগবেষকের নাম ছিলো 'মাস্তিশ্লভ মাস্লেনন্নিকভ' বাংলা হরফে লিখলাম বলে নামটা হয়তো সহজেই পড়া যাবে। কিন্তু এর উচ্চারণ এমন নয়। এবং আমার জন্য খুবই কঠিন। আমরা সংক্ষেপে তাকে 'স্টিভ' ডাকতাম। কিন্তু রাশিয়ানদের কাছে এই নামটাই হয়তো সহজ, একবার শুনেই মনে রাখার মত। বর্তমানেও, ইটালীয়, ফরাসি, চায়নিজদের নাম নিয়েও আমাকে এমন সমস্যায় পড়তে হয়। ওরাও আমার সহজ সরল নামটা নিয়েও কঠিন সমস্যায় পড়ে প্রায়ই। কারণ সেই, নিজস্ব ভাষায় আমরা কেউ ওধরনের শব্দ সচরাচর উচ্চারণ করি না।

এ ঘটনা নতুন বিজ্ঞানবিষয়ক শব্দের ব্যাপারেও ঘটবে। সব রাশিয়ান শব্দই যেমন আমাদের কাছে 'কঠিন' নয়, তেমন কিছু ইংরেজি বিজ্ঞান বিষয়ক শব্দ পাওয়া যাবে যেগুলো আমরা সহজেই ব্যবহার করতে পারছি। কিন্তু নিজস্ব ধ্বনিসমষ্টি দিয়ে গঠিত পরিভাষা মস্তিস্কে ঠাই পায় সহজেই। এমন কি ধ্বনিবিন্যাস থেকে এটা কী ধরনের অর্থবহন করছে সেটারও একটা ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়। পরিভাষানির্মাতা সাবলীলতার দিকে নজর দিলে খটমটে শব্দ এড়িয়েও সুন্দর পারিভাষিক শব্দ সম্ভার গড়ে তোলা সম্ভব।
আর পরিভাষা যদি সব বানানো নাও হয়, বিদেশি শব্দগুলো রেখেই, আলোচনা তো মাতৃভাষায় হতে পারে। ধারণাগুলোকে কী নামে ডাকছি তার চেয়ে বড় হচ্ছে, তারা আদতে কী এবং কীভাবে অন্যান্য ধারণার সাথে সম্পর্কিত, সেই জ্ঞান। সহজ সাবলীল বাংলায় বললে বাঙালির পক্ষে সেটা আত্মস্থ করা খুবই সহজ।
আর প্রমিত পরিভাষা নিয়ে শেষ কথা হলো- আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে কেন বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষা জরুরী। একবার এই গুরুত্বটা আমরা সবাই বুঝতে পারলে, পারিভাষিক শব্দগুলোকে প্রমিতকরণের ব্যাপারে সম্মিলিত প্রয়াশ নেওয়া যাবে।
হীনম্মন্যতা:
বাংলা নিয়ে অজানা কোন কারণে কিছু ব্যক্তি হীনম্মন্যতায় ভোগেন। তারা মনে করেন এ ভাষাটি ঠিক জাতে ওঠেনি। এটি নতুন কিছুকে আত্মস্থ করতে পারে না। ইংরেজী, জার্মান, গ্রীক-এ জটিলতর যে সব ভাবনা ভাবা সম্ভব, বাংলায় হয়তো সেটা সম্ভবই নয়। এরা স্রেফ বাংলা নিয়ে নিজেদের অজ্ঞতার দায়টি চাপাচ্ছেন পুরো ভাষাটির উপরেই। সে অজ্ঞতা কাটানো এই আলোচনার লক্ষ্য নয়। এ প্রসঙ্গে, কোন ধারণার সাথে সেই ধারণাকে প্রকাশকারী শব্দ কীভাবে জড়িত হয় তা নিয়ে ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই- 'ডেমক্রেসি' শব্দটার কথাই ভাবুন। যে ভাষাভাষীদের মধ্যে এ ধারণার উৎপত্তি, তারা কি তাদের ভাষায় শব্দটা ছিলো বলেই ধারণাটা ভাবতে পেরছে? না কি আগে ডেমক্রেসির ধারণাটিকে তারা উদ্ভাবন/আবিষ্কার করেছে পরে সেটাকে নাম দিয়েছে 'ডেমক্রেসি'। আমরা এর পরিভাষা করেছি 'গণতন্ত্র'। আমাদের ভাষাটাও সমৃদ্ধ হয়েছে এতে।

অনেকে ইংরেজী শিখে ফেলেছেন বা নতুন ব্যবস্থায় অভ্যস্থ হয়ে গেছেন। এবং শুরুতে ভিনদেশি ভাষায় বিজ্ঞান শিখতে গিয়ে যে 'লড়াই'টা তাদের করতে হয়েছে সেটাও ভুলে গেছেন। অনেকটা বড় হয়ে আমরা যেমন শিশু-কিশোরদের মন কী চায় সেসব ভুলে যাই তেমন। কিন্তু আমাদের পুরো বাঙালি জাতিই পিছিয়ে আছে বিজ্ঞান শিক্ষায়। তাদের বিজ্ঞানমনস্ক, বিজ্ঞান শিক্ষিত হয়ে ওঠার পথে ভিনদেশি একটা ভাষাকে কেন অন্তরায় হতে দিচ্ছি?
একটা কথা এখানে স্পষ্ট করে বলা উচিৎ, বাংলায় 'বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচারণা চালানো', মানে 'ইংরেজী ত্যাগ করো' আন্দোলন করা নয়। আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে ইংরেজিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই শিখতে হবে। কিন্তু কাব্য চর্চার পূর্বশর্ত যেমন ইংরেজী হতে পারে না তেমনি, সেটাকে অযাচিতভাবে, বিজ্ঞানের মত নৈর্ব্যক্তিক একটা বিষয়কে শেখার পূর্বশর্ত বানালে চলবে না। খুবই টেকনিক্যাল বিষয়ে যোগাযোগের জন্য বর্তমান বিশ্বে সবাই ইংরেজীর দ্বারস্থ হয় ঠিকই। তবে 'বিজ্ঞানের ভাষা ইংরেজী' বা 'ইংরেজী ছাড়া বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব নয়'–এই ভাবনা পুরোপুরি ভুল।
আমরা চাই, বিজ্ঞানের সৌন্দর্যের সাথে, এর ক্ষমতার সাথে, এর জীবনদায়িনী আলোর সাথে সবাই পরিচিত হোক। মানুষ বিজ্ঞানকে অন্তরে ধারণ করতে শিখুক। বিজ্ঞানে যিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবেন, হয়ে উঠবেন বিজ্ঞানী; বিজ্ঞানকে পৌঁছাতে হবে তার চেতনার মর্মমূলে। সেখানে পৌছানোতে মাতৃভাষার জুড়ি নেই।

তাই মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা ততোটাই জরুরী যতটা জরুরী সে ভাষায় কাব্য চর্চা। বিজ্ঞান চর্চায় মাতৃভাষার অপরিহার্যতা যারা বোঝেন না, আমি নিশ্চিত, বিজ্ঞানের এই কাব্যময়তার সাথে তারা পরিচিত নন।
তানভীরুল ইসলাম : তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান ও কোয়ান্টাম ইনফরমেশন তত্ত্ব নিয়ে পিএইচডি করছেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের সেন্টার ফর কোয়ান্টাম টেকনলজিসএ।


__._,_.___


[* Moderator�s Note - CHOTTALA is a non-profit, non-religious, non-political and non-discriminatory organization.

* Disclaimer: Any posting to the CHOTTALA are the opinion of the author. Authors of the messages to the CHOTTALA are responsible for the accuracy of their information and the conformance of their material with applicable copyright and other laws. Many people will read your post, and it will be archived for a very long time. The act of posting to the CHOTTALA indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator]




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___